ভারতে হিন্দু শাসন বনাম মুসলিম শাসন
তেরশ থেকে আঠারশ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলিম শাসকরা ভারত শাসন করেছিল।
সতীদাহ – বিধবা মেয়েদের স্বামীদের সাথে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার প্রথাটা পর্যন্ত মুসলিমরা বন্ধ করেনি। হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিল এতটাই।
নিম্ন বর্ণের হিন্দুরা মুসলিম হতো – অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য।
হয়ত কোনো কোনো বিধবাও হয়েছিল – হিন্দুদের হাত থেকে, সমাজপতিদের হাত জান বাঁচানোর জন্য।
সতীদাহ ইংরেজরা বন্ধ করেছিল। রামমোহন রায় বেদ ঘেটে প্রমাণ করেছিলেন সতীদাহ প্রথা ঠিক না।
মুসলিম শাসকরা সবাই খুব ধার্মিক ছিল এমন দাবী করছি না।
বন্ধু আসিফের ভাষায়, “অধিকাংশ মুসলিম শাসকই এত আল্লাহ্ওয়ালা ছিলো না। যারা ছিলো তারাও রাজনৈতিক ঘটনা পরিক্রমা সবসময় সামলাতে পারতো না। অনেকেই ধার্মিক হলেও রাজনৈতিক দিক থেকে উচ্চাভিলাষী ছিলো।”
তারপরেও, হিন্দুদের গলায় ছুরি ধরে বলেছে – মুসলিম হও; এমন নজির কটা? কারণ, একজন সত্যিকার বিশ্বাসী মুসলিম জানেন, লিঙ্গ শীর্ষক চামড়া কেটে মুসলিম হওয়া যায় না, মুনাফিক – বড় জোর।
কিন্তু হিন্দু জমিদাররাদের অত্যাচারের তালিকাটা ছিল অনেক লম্বা। গরু নিয়ে কী হেনস্থা হতে হতো সেটা শরতচন্দ্রের কলম মারফত আমরা অনেকেই জানি।
আমরা যদি ম্যাক্রোদৃষ্টিতে দেখি – স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসানের পরে সেখানে মুসলিমদের কচু কাটা করা হয়েছে – টোট্যাল অ্যানিহিলেশন। কিন্তু মুসলিমরা স্পেন দখল করার পরে সব খ্রিষ্টানদের মেরে সাফাই করা হয়নি, হলে রিপারকাশনটা হতো না। একই ঘটনা জেরুজালেমে হয়েছে।
পাঁচশ বছর শাসনের পরেও ভারতে হিন্দুরাই সংখ্যাগুরু থেকেছে। দেশভাগের আগে কী ভয়াবহ সব রায়ট হতো। হিন্দুরা মারত মুসলিমদের। ইংরেজ শাসকেরা বসে বসে দেখত। এমন দাঙ্গা মুসলিম শাসকদের সময় কটা পাওয়া যায়?
জোর করে অমুসলিমদের মুসলিম বানানোর ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?
কুরআনের সবচেয়ে দামী আয়াত আয়াতুল কুরসির পরেই বলেছেন, ‘লা ইকরাহা ফিদ দ্বীন’ – জোর করে মুসলিম বানানোর দরকার নেই।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে কোনো মু’আহাদকে হত্যা করে, সে জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না। আর জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছরের দুরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।
মু’আহাদ মানে ইসলামী শাসনের অধীনে বসবাসকারী অমুসলিম।
[সহীহ বুখারী, জিহাদ অধ্যায়]
গত দুদিন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মুসলিমদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে। মাসজিদ-বাড়িঘর-দোকান ভাঙা হচ্ছে, পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশ দেখছে, কাউকে থামাচ্ছে না। হিন্দুরা কপালে তিলক দিয়ে আক্রমণে যাচ্ছে। কাপড় খুলে মুসলমানির নিদর্শন পাওয়া গেলে পেটানো হচ্ছে।
এগুলো আমাদের কষ্ট দেয়। কারণ আমরা সারা দুনিয়ার মুসলিমরা একটা দেহের মতো। আমাদের চোখে কান্না আসে।
আমরা যেন সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি এটা থামানোর জন্য।
আমাদের সাথে কোনো নেতার পরিচয় থাকলে তাকে বলি সরকার যেন অন্তত কিছু একটা বলে। আমরা যে-ই যে দেশে আছি – সেই দেশের সরকারকে বলি।
আমাদের পরিচিত কোনো ভারতীয় থাকলে তাকে বলি – সচেতন করি।
ভারতে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা থাকলে সেই এজেনটকে বলি – এমন হলে তোমাদের দেশে আমরা আসব না।
কিছু একটা লেখেন। ফেসবুক বা টুইটারে। ইংলিশে। না পারলে বাংলায়। ইন্ডিয়ান হাই কমিশনে মেইল করেন।
যে যেভাবে পারেন সেভাবে চেষ্টা করেন। আল্লাহ জানবেন আপনার চেষ্টাটা কতটা আসল ছিল তিনি এটার প্রতিদান দেবেন।
সবচেয়ে বড় আশ্রয় আল্লাহ। তাঁর কাছে কেঁদে দু’আ করি।
আল্লাহ, ভারতে – দিল্লী আর কাশ্মির, আহমেদাবাদ বা গুজরাট – যেসব মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে তাঁদের শহীদ হিসেবে কবুল করুন।
আল্লাহ, আপনি মুসলিমদের জেগে ওঠার – আপনার কাছে ফিরে আসার একটা মাধ্যম হিসেবে এই ঘটনাটাকে বানিয়ে দিন।
আল্লাহ, বিবেকমান হিন্দুদের ইসলাম কবুলের একটা মাধ্যম হিসেবে এই ঘটনাগুলো কবুল করে নিন।
মালিক, আমাদের জান-মাল-ইযযাত আর ঈমানকে আপনি নিরাপত্তা দিন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
নিশ্চয় আমরা আপনার কাছ থেকে এসেছি এবং নিশ্চয় আমরা আপনার কাছেই ফিরে যাব।
– শরীফ আবু হায়াত অপু