কাজের লোক নেই?
অনেকদিন আগের কথা।
সেসময় অটো আটার মিল ছিল না। মানুষকে যব বা গম হাতে যাঁতাতে পিষে আটা বানাতে হতো।
আমাদের প্রজন্মের সৌভাগ্য যে আমাদের যাঁতা ঘুরিয়ে আটা বানাতে হয়নি। আমরা আসলে কল্পনাও করতে পারব না কাজটা কতটা পরিশ্রমের, কষ্টের।
তো একজন শাসকের মেয়ে একদিন খবর পেলেন যে তার বাবার কাছে কিছু যুদ্ধবন্দী এসেছে যাদের দাস হিসেবে ব্যবহার করাই সে সময়ের চল ছিল।
মেয়েটার হাতে কড়া পড়ে গেছে যাঁতা ঘুরাতে ঘুরাতে। সে তার বাবার কাছে গেল একজন খাদিম বা কাজের লোক চাইতে।
মেয়েটার বাবা সেসময় ছিলেন না।
বাবা মেয়েকে খুব ভালোবাসতেন। যখন তিনি জানতে পারলেন মেয়ে তাঁর কাছে এসেছিল, তিনি নিজেই মেয়ের বাড়িতে গেলেন।
মেয়ে তখন বিছানায় চলে গেছেন। সে যুগে মানুষেরা ঘুমাতো তাড়াতাড়ি, ফজরের আগেই ঘুম থেকে উঠতো, তাহাজ্জুদের সলাত পড়ত।
বাবা এসে বসলেন বিছানায়। মেয়ে আর মেয়ের জামাইয়ের মাঝখানে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ধরফড় করে উঠে পড়তে গেলেন। বাবা বললেন, ওঠার দরকার নেই, শুয়েই থাক।
তারপর বললেন,
তোমরা যা চেয়েছ তার চেয়ে ভালো কিছু দিই তোমাদের?
যখন রাতে বিছানায় শুতে যাবে তখন সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আর আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পড়বে। এটা কাজের লোকের চেয়ে অনেক ভালো হবে।
এই বাবার নাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
মেয়ের নাম ফাতিমা, তাঁর স্বামী আলী – রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।
এই হাদিসটা আজকের যুগে আমরা যারা কাজের মানুষের জন্য নাকাল হচ্ছি তাদের জন্য বড় একটা শিক্ষা।
এই যুগে বিশ্বাসী মানুষ পাওয়া খুব কঠিন।
আবার আমাদের অনেকের হয়ত একজন ফুলটাইম কাজের মানুষ রাখার সামর্থ্য নেই।
অনেকের হয়ত সামর্থ্য আছে কিন্তু তারা ধর্মীয় বিবেচনায় রাখেন না।
আর এটাতো সত্যি যে একজন স্থায়ী কাজের বুয়াকে তার স্বামী বা সন্তানের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় – যেটা এক ধরণের অন্যায়। আর এই অন্যায়ের ফলে তাদের মধ্যে এমন অনেক সমস্যা তৈরি হয় যেটা আমাদের পরিবারকেও আক্রান্ত করে।
আমরা যারা ঘরের গেরস্থালী কাজ করতে গিয়ে কষ্টের মধ্যে পড়ছি তাদের জন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়ে গেছেন যে কাজ করার শক্তি এবং সামর্থ্য আল্লাহর কাছ থেকে আসে।
কাজটা যতই কঠিন হোক আমরা যদি প্রতি রাতে কিছু সহজ যিকর – সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ আর আল্লাহু আকবার বলি তাহলে সারাটা দিন চলার যে শক্তি সেটা আল্লাহ আমাদের দেবেন।
কাজটা যতই কঠিন হোক না কেন সেটা করার সামর্থ্য তিনিই যোগাবেন।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে, টিকে থাকতে আমাদের দুনিয়াবি কাজ করা লাগবেই – কিন্তু এই কাজের জন্যেও যখন আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব তখন আল্লাহ পার্থিব মানুষ বা উপকরণের ওপরে আমাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেবেন।
তিনি আমাদের জন্য দুনিয়াবি কাজগুলো সহজ করে দেবেন।
এ কারণেই রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায়ই বলতেন, ‘লা হাউলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” – যত শক্তি যত সামর্থ্য সব একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।
আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা দিনভর অফুরান কাজ করার ব্যাটারিটা প্রতিরাতে এই সহজ আমলটা করার মাধ্যমে রিচার্জ করার তাওফিক দিন।
[মূল হাদিস – সহীহ বুখারি ৩৭০৫, ৫৩৬১, ৬৩১৮; সহীহ মুসলিম ৪৮/১৯ হাঃ ২৭২৭]