বাংলাদেশটা আমাদের, মুসলিমদের ইনশা আল্লাহ
এক সময় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটির খুব কর্মঠ সদস্য ছিলাম। কার্জন হলে ক্লাসের সময়টা বাদ দিয়ে একটা বড় সময় কেটেছে টিএসসিতে।
আমি তানভির মোকাম্মেলের কাছে চিত্রনাট্য লেখা শিখেছি, সুভাষ দত্তের কাছ থেকে ফিল্ম ক্রিটিসিজম শিখেছি, মইনউদ্দিন খালেদের কাছ থেকে আর্ট অ্যাপ্রেসিয়েশন শিখেছি, শিশির ভট্টাচার্যের কাছ থেকে ক্যারিকেচার কারে কয় – সেটা।
আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, জাফর ইকবাল, আনিসুল হক – প্রতিটা তথাকথিত আলোকিত বাতিঘরের সাথে বসে কথা বলেছি, মুখোমুখি।
কেন?
এটা আমার একটা জেদ।
১৯৯৮ থেকে ২০০৮ অবধি কুইজ করেছি, ডিবেটও। যারা বিতার্কিক, যারা ‘তুখোড়’ তাদের যুক্তি আর সততা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়েছি।
মানুষের চোখের দিকের তাকালে তার হৃদয়ের একটা ঝলক পাওয়া যায়।
সেই ঝলকটা আমাকে বার বার বলে দিয়েছে – এই বাংলাদেশে যাদের জ্ঞানী হিসেবে পূজা করা হয়, বুদ্ধিজীবি হিসেবে সম্মান দেখানো হয়, সুশীল-সুভব্য হিসেবে শ্রদ্ধা করা হয় এদের প্রায় শতভাগই ঠগ।
সমকালীন প্রকাশনীর বইগুলো বস্তাবন্দী হয়ে আজকে যেভাবে চট্টগ্রামের মাঠে পড়েছিল, ২০১৬ সালের একটা দিন এভাবেই আমাদের অনেকগুলো বই ডিবি অফিসের মিন্টো রোডে পড়েছিল। অনেকদিন পরে বইগুলো ফেরত পেয়েছিলাম। সরোবর প্রকাশন চালানোর অনুমতি পাইনি।
ব্যাপারটা এমন না, হঠাৎ পুলিশের কাছে মনে হয়েছে আমাদের বই ভয়ংকর। তারা আমাদের বইগুলো পড়েছে, সমস্যা খুঁজে পায়নি। কিন্তু তাহলেও কেন এই নিষেধ?
কারণ প্রগতিশীল পরিব্রাজক দলের কেউ গিয়ে বলে এসেছে এরা জঙ্গী। এদের বই নিষিদ্ধ করেন। পুলিশ পপুলার বুদ্ধিজীবি ন্যারেটিভ ঘাটায়নি।
গত বছর একুশের বইমেলায় আরিফের বই বিক্রি বন্ধ করাটা ছ্যাঁচড়ামোর লেভেলে নেমে গিয়েছিল। তারপরেও ওরা দমেনি।
ওরা তারা যারা এন্টেলেকচুয়াল বেটারমেন্টের কথা বলে। ‘মাজল মি নট’ ওরাই আমাদের শিখিয়েছিল যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্লগ বন্ধ করে দিয়েছিল। ওরা মুক্ত বুদ্ধির কথা বলে। ওদের ব্লগের নাম মুক্তমনা।
ওরা স্বাধীনতার কথা বলে। স্বাধীনতার চেতনার দোহাই দেয় দুই বেলা, সপ্তাহে সাতদিন, বছরে ৩৬৫ দিন।
আর ওরা সুযোগ পেলে আমাদের গলায় গামছা পেচিয়ে মারতে চায়। সাহস পায় না দেখে ছাত্রলীগকে কাজে লাগায়। আবরারের লাশ বের হয়।
পুলিশকে কাজে লাগায়, গার্ডিয়ান প্রকাশনীর নূর মোহাম্মদ ভেতরে ঢুকে যায়।
আমি হুজুর। আমি পষ্ট বলি – বাক স্বাধীনতায় আমি বিশ্বাস করি না। তুমি কাফির ভালো কথা – আমার রসুলকে নিয়ে, আল্লাহকে নিয়ে বাজে কথা বলতে পারবা না।
তুমি প্রগতি ফেরি করে বেড়াও। তুমি আমাকে বলো ধর্মান্ধ, কারণ তোমার ফ্যালাসির স্তুতি আমি করি না। তুমি আমাকে বলো, তুমি আমার চেয়ে ভালো – কারণ তুমি উদার, আমি উদার নই। তোমার ধর্মে বাক-স্বাধীনতা আছে, আমার ইসলামে নেই।
এই তোমার উদারতা? জাতীয় মেলায় আমার বই তুমি বিক্রি করতে দাও না?
তুমি আসলে ভন্ড। তুমি জানো তোমার কথাগুলো ট্র্যাশের মতো লাগে আমার যুক্তির সামনে।
তুমি বুদ্ধিতে আমার কাছে হেরে গেছ, যুক্তিতে হেরেছ। তোমার চেয়ে আমি সিনেমা ভালো বুঝি। আর্ট ভালো বুঝি, সংষ্কৃতি কী আর সেটা কীভাবে কাজ করে তোমার চেয়ে কম জানি না আমি।
বিজ্ঞান? প্রযুক্তি? ব্যবসা? আসো তোমাকে শেখাই কোনটা কী। তুমি ইংলিশ গান শুনো আর আমি ইংলিশে জার্নাল লেখি। তোমার পিএইচডি থিসিসের মতো কপি পেস্ট না, নিজের মৌলিক লেখা।
আমি জানি আমার সাথে কথা বলতে তোমার লজ্জা লাগে। তোমার জ্ঞানের দৈন্যতাতে তোমার নিজের কাছে তোমাকে ফকিন্নি গোছের মনে হয়।
মোরালিটির একটা ভাব ধরতে সেটাও আর রইল না।
বাফা, ছায়ানট, উদীচি, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, একুশে বই মেলা, শিল্পকলা একাডেমি, সংষ্কৃতি মন্ত্রণালয় – তোমার সব ঐশ্বর্য আর প্রতীক নিয়ে হেরে গেলে?
এত এত সব টিভি চ্যানেল নিয়েও তুমি দুটা মাত্র চ্যানেল – ইসলামী টিভি আর পিস টিভিকে সহ্য করতে পারলে না, বন্ধ করে দিলে?
প্রথম আলো, জনকন্ঠ, যুগান্তর, সমকাল, কালের কন্ঠ, ডেইলি স্টার – এত নামী-দামী ব্র্যান্ড যারা প্রতিদিন শত শত পৃষ্ঠা ভর্তি করে তোমাদের ধর্ম প্রচার করছ, সেই তোমরা হেরে গেলে হুজুরদের দুই বছরে বের হওয়া দুটো বইয়ের কাছে?
তোমরা কী করে খাও সেটা আমরা জানি। যারা তোমাদের মতো চাটে না তাদেরকে তোমরা এইটুকু সহ্য করতে পারো না?
তোমরা আখিরাতে হেরেছ আগেই। এবার দুনিয়াতেও হারলে। তোমাদের জন্য আমাদের করুণা।
তোমরা বিজেপির ভারতে চলে যাও।
বাংলাদেশটা আমাদের, মুসলিমদের ইনশা আল্লাহ।
– শরীফ আবু হায়াত অপু
جزاك الله خيرا