হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমির সিদ্ধান্ত
হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক সম্পর্কে শরিয়তের হুকুম কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) আন্তর্জাতিক ফিকহ বোর্ডের এক অধিবেশনে এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয় আজ থেকে বহু বছর আগে। সম্প্রতি এ ধরনের উদ্যোগ রাজধানীতেও শুরু হতে যাচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ, যা সচেতন ইসলামি মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সময়ের প্রয়োজন মনে করে পাঠকদের জন্য আন্তর্জাতিক ফিকহ বোর্ডের সেই ফতোয়াটির অনুবাদ প্রকাশ করা হলো:
হিউম্যান মিল্ক ব্যাংকের উৎপত্তি পাশ্চাত্য ধ্যান-ধারণা থেকে। পাশ্চাত্যের সামাজিক বিশৃঙ্খলা, পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা এবং আশঙ্কাজনক হারে অশ্লীলতা বৃদ্ধির ফলে মিল্ক ব্যাংকের আবিষ্কার। এ পদ্ধতির বিকাশে ধর্মীয় ও স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যার দেখা দেবে। বিভিন্ন মায়ের দুধ একত্রিত করে, এগুলোর মিশ্রণ ঘটিয়ে শিশুকে পান করানোর ফলে অন্যতম সমস্যা হলো, দুগ্ধদানকারিণী, দুগ্ধমাতার পরিচয় থাকবে না। ফলে পরবর্তী সময়ে মানুষ অজ্ঞাতসারে তার দুধ-বোন, দুধ-মা, দুধ-খালা বা দুধ-ফুফুকে বিবাহ করে ফেলবে বা পারস্পরিক দুই দুধ-বোনকে একসঙ্গে বিবাহ করে ফেলবে। ফলে মানুষ এমন জটিল সমস্যার জেনেটিক সম্মুখীন হবে যার কোনো সীমা-পরিসীমা থাকবে না। বিশুদ্ধ হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘বংশসূত্রে যারা হারাম (অর্থাৎ, যাদের সঙ্গে বিবাহ হারাম, দেখা দেওয়া জায়েজ) তারা দুধপানের কারণেও হারাম হবে।’ (বোখারি : ২৬৪৫)।
আরেকটি সমস্যা হলো, দুধে রোগ-জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটবে। দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকার জন্য তাতে বিভিন্ন উপকরণ মিশ্রিত করা হবে, যা শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তাছাড়া এ ব্যবস্থাপনার কারণে অনেক বিলাসী রমণী শিশুদের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকবে। মিল্ক ব্যাংকের দুধের ওপরই ভরসা করে বসে থাকবে। ফলে শিশু সরাসরি মায়ের বুকের দুধের উপকারিতা থেকে বঞ্চিত হবে। অথচ মায়ের দুধের উপকারিতা ব্যাপক, যা চিকিৎসকরা বর্ণনা করেছেন।
স্বাস্থ্যগত ও ধর্মীয় উভয় দিকের বিবেচনায় মিল্ক ব্যাংক সম্পর্কে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক ফিকহ বোর্ডে। তারা উভয় গবেষণার ফল নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন। বিভিন্ন দিক থেকে বিষয়টি নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা করেছেন। সর্বশেষ ‘ইসলামি সম্মেলন সংস্থা’ (বর্তমানে ‘ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা’) জেদ্দায় ১০ থেকে ১৬ রবিউস সানি ১৪০৬ মোতাবেক ২২ থেকে ২৮ ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে তার দ্বিতীয় সম্মেলনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আলোচিত হয়।
১. মিল্ক ব্যাংকের ধারণা তৈরি হয়েছে পাশ্চাত্য জাতিগুলো থেকে। তারাই এটা সর্বপ্রথম আবিষ্কার করে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার মধ্যে ধর্মীয় ও বৈষয়িক কিছু নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ফলে তার পরিধি সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং তার প্রতি গুরুত্ব কমে যায়।
২. ইসলামের দৃষ্টিতে দুগ্ধপান দ্বারা রক্তের সম্পর্ক (বা আত্মীয়তা) তৈরি হয়। সুতরাং সব মুসলমানের ঐকমত্যে, রক্ত সম্পর্কের দ্বারা যা হারাম হবে (অর্থাৎ যাদের বিবাহ করা হারাম, দেখা দেওয়া জায়েজ) দুধপানের দ্বারাও তারা হারাম হবে। শরিয়তের বড় একটি উদ্দেশ্য হলো বংশ সম্পর্ক রক্ষা করা। আর এ মিল্ক ব্যাংক বংশ সম্পর্ক নষ্ট করবে বা সন্দেহপূর্ণ করে তুলবে।
৩. ইসলামি বিশ্বের সামাজিক ব্যবস্থাপনা বিশেষ ক্ষেত্রে স্বভাবজাত মাতৃদুগ্ধপানের ব্যবস্থা করে থাকে যখন বাচ্চা অপূর্ণাঙ্গ বা স্বল্পওজনি হয় কিংবা মাতৃদুগ্ধের মুখাপেক্ষী হয়। এ ব্যবস্থাপনা থাকলে মিল্ক ব্যাংকের প্রয়োজন পড়বে না।
উপরোল্লেখিত পরিস্থিতির বিবেচনায় তারা দুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমত, ইসলামি বিশ্বে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে হুরমতে রেজাআত তথা বংশীয় সম্পর্কের মতো পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি হবে।
অনুবাদ : যাইনুল আবেদীন ইবরাহীম (আলোকিত বাংলাদেশ)
জাযাকাল্লাহু খাইরান