নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল প্রজেক্ট : সাপ্লায়ারের কান্না

পদ্মা সেতু,মেট্রো রেল প্রজেক্টের অনেক সাপ্লায়ার কাঁদছে। বিল পাচ্ছে না।

মেট্রো রেলে একটি বিদেশী কোম্পানির কাছে জেনারেটর সাপ্লাই করেছিল। আজকে ১১ মাস হলো সেই সাপ্লাইয়ারের কাছে বিল পায় নাই। পার্টি বিল দিচ্ছে না। কারণ, পার্টির বক্তব্য পার্টি সরকারের কাছে বিল পায় নাই।

এই ধরনের অজস্র সাপ্লায়ার এখন মাঠে মাঠে বিলের আশায় ঘুরছে।
সিচুয়েশান টা আর একটু জটিল।
আজকে থেকে বছর খানেক আগেও, মাঠে মাঠে অনেক সাপ্লায়ার ঘুরতেছিল, ইট দিতে চায়, পাথর দিতে চায়, গাড়ী দিতে চায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
এখন মনে করুন, কাজ পেয়েছে সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ বড় সাপ্লায়ার। সে এদেরকে ডেকে ভালো সাপ্লাইয়ার দেখা কাজ দিয়েছে। কিন্ত তারপরে যখন পেমেন্ট করতে পারে নাই, আর একটা সাপ্লাইয়ারকে কাজ দিয়েছে। এখন এই পার্টিরা অনেকেই নতুন পার্টি। বিদেশের টাকা। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেইল মাতাবাড়িতে কাজ করবে – এই আশায় এরা ফান্ড এরেঞ্জ করেছে।
বেশী রেটে কাজ পেয়েছে সে লাফায় লাফায়, কাজ ধরে ইম্পোরট করে এনে দিয়েছে।
কিন্ত, সে জানে না সে কাজ পেয়েছে কারণ তার কন্ট্রাক্টর আরেকটা পার্টিকে পেমেন্ট করতে না পেরে তাকে কাজ দিয়েছে। এখন সে বিলের জন্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কাঁদছে। কিন্ত, নতুন মুরগা তার সামনে দিয়া নতুন কাজ নিচ্ছে।

এই ভাবেই পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলের অনেক কাজ হয়ে গ্যাছে।
পিলার দাড়ায় গ্যাছে, পদ্মা সেতুর জন্যে মানত করা কল্লা পরে গ্যাছে কিন্ত পার্টি পেমেন্ট পায় নাই।
এই ভাবে অনেক সাপ্লায়ার কাঁদতেছে। আমার বন্ধু বললো , ম্যাক্স তমা বেশির ভাগ বড় পার্টি পেমেন্ট করছে না।

এবং এই সমস্যার মূল কারণ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের গত সেপ্টেম্বর মাসের ডেভেলপমেন্ট আপডেটে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক জানাচ্ছে, সরকার তার অপারেটিং কস্ট এক বছরে ৩৭% বাড়িয়ে ফেলেছে।

একটা দেশ কোন ধরনের কোয়ালিটিটিভ ইম্প্রুভমেন্ট না করে, এক বছরে তার অপারেটিং কস্ট ৩৭% বাড়িয়ে ফেলা একটা কবিরা গুনা। আমার হিসেবে ১০ বছরে অপারেটিং কস্ট ৩৭.% বাড়তে পারে, এক বছরে বাড়লে যে ক্রাইসিস হবে সেই টা এখন দেখা যাচ্ছে।

এবং বন্ধুর আলাপের ভেরিফিকেশান পেলাম, ইবিএল রিসার্চের সিমেন্ট এবং রড নিয়ে তৈরি করা দুইটি ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্টে। রিপোর্ট গুলো গত বছর নভেম্বরের দিকে পড়েছি। সেখানে উভয় রিপোর্টেই সাপ্লায়াররা জানাচ্ছে, গত বছর থেকেই সরকারের পেমেন্ট স্লো হয়ে গ্যাছে। এবং এই অর্থ বছরের ফার্স্ট কোয়ার্টারে সরকারের মেগা প্রোজেক্ট থেকে চাহিদাও কমে গ্যাছে।

এখন মেগা প্রজেক্টের পেমেন্ট না করতে পারলে বা সাপ্লাই কমে গেলে অর্থনীতি কেন মন্দার মধ্যে দিয়ে যাবে ?

এইটা একটা ভালো প্রশ্ন। এবং সব চেয়ে ক্রিটিকাল প্রশ্ন। আমাদের কিছু রিসার্চ বলছে, যদিও বিবিএস বলছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ড্রাইভার রেমিটেন্স এবং আরএমজি। কিন্ত, ইন রিয়ালিটি বিগত বছর গুলোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ড্রাইভার ছিল, নন পারফর্মিং ঋণ যা ইনভেস্টমেন্টর জন্যে নেওয়া হলেও মূলত কঞ্জাম্পশান হয়েছে, সরকারের খুবই উচ্চ স্কেলে নেওয়া রেভেনেউ, এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ত প্রবৃদ্ধি করে যাবে এই আশায় এবং নিত্য নতুন মেগা মেগা-প্রজেক্ট হবে এই আশায় ভিত্তিক বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, স্টিল ইত্যাদি সেক্টরে স্পেকুলেটিভ ইনভেস্টমেন্ট।

কিন্ত ইন রিয়ালিটি অর্থনীতি সরকার যেভাবে দেখাচ্ছিল, সেই ভাবে বেড়ে উঠছিল না। অর্থনীতির মূল ড্রাইভার মোটেও ম্যানুফাকচারিং নয়, অর্থনীতিতে কঞ্জাম্পশনের মূল ড্রাইভার ছিল সরকারী কর্মচারীর বেতন এবং সরকারের অপারেটিং ব্যয়। এবং ইনভেস্টমেন্টের ড্রাইভার ছিল সরকারী প্রোজেক্ট।

এবং এই দুইটা মূলত সোনার ডিম পাড়া হাসের ক্লাসিক গল্প। অর্থনীতির রিয়েল সেক্টরের কোন এক্সপানশান না হলেও নিত্য নতুন সিস্টেমে যেমন ব্যাংকের সেভিং থেকে ১০ হাজার টাকা, মোবাইলে ফোনে খরচ বাড়ানো, পৃথিবীর সর্বোচ্চ ডিউটি টু ইম্পোরট কস্ট রেশিও তে আমদানি শুল্ক ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার তার রেভেনিউ বাড়িয়ে নিচ্ছিল। ফলে সরকার গলা চাপা দিয়ে জনগণ এবং বিজনেস থেকে অতিরিক্ত শুল্ক আদায় করতে গিয়ে অনেক গুলো বিজনেসে সেল কমে গ্যাছে, ফলে আলটিমেটলি রেভেনিউ কমে গ্যাছে।

অর্থনীতিতে এই সম্পর্ক টাকে বলে লেফার কার্ভ।

ফলে, সরকারী আয় নির্ভর অর্থনীতিতে যখন আয় কমে গ্যাছে তখন সরকার সাপ্লায়ার পেমেন্ট করতে পারে নাই। সাপ্লায়ার তখন সাপ্লাই কমিয়ে দিয়েছে। তার প্রডাকশন কমে গ্যাছে।

এই অবস্থা মরার উপরে খাড়ার ঘা ছল, ২০১৯ সালের বাজেট এবং ভ্যাট আইন। এই বাজেটে প্রতিটা পণ্যের উপরে ৫% এডভান্সড ডিউটি বসানো হয়েছে। এই টাকা নাকি সরকার ফেরত দিবে। বাংলাদেশের প্রতিটা ব্যবসায়ী জানে, এই দেশের সরকার টাকা নিলে ফেরত দেয় না। এই আইন টা বাচ্চাদের দুধ থেকে কমপ্লেক্স মেশিনারি প্রতিটা আইটেমের খরচ ৫% বাড়িয়ে দিয়েছে।

টাকার জন্যে পাগল হয়ে সরকার গ্রামীণ ফোনের সাথে কি করতেছে সেইটা দেখে মানুষ এই সিগনাল ও পেয়েছে সামনের অবস্থা আরো খারাপ। সাইক্লিকালি সরকারের আয় বৃদ্ধির চাপ বাড়বে জনগণের উপরে ট্যাক্স নির্যাতন এবং ফলে দেশের প্রডাক্টিভ সেক্টর আরো ছোট হবে, সরকার আরো পাগল হয়ে আর ডিউটি বসাবে, প্রডাক্টিভ সেক্টর আরো ছোট হবে- এই ভিশাস সাইকেলে ব্যবসা বাণিজ্যে বিগত এক বছরে যে ভাবে সংকুচিত হয়েছে তা আরো সংকুচিত হবে।

এবং এইটা শুধু পারসেপ্সান নয় বিগত এক বছরে এইটা পরিষ্কার দেখা গ্যাছে সরকার কিভাবে পেমেন্ট করতে পারছে না, তার ফলে কীভাবে আরো শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে, ফলে কিভাবে বিজনেস আরো সঙ্কুচিত হয়েছে।

এইটাই বিগত ছয় মাসের মন্দার প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি।//

আমার মন্তব্য –
১/ ক্যাপিটাল মার্কেট, মানে শেয়ার বাজার পড়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দা।
২/ ব্যাংকগুলো যখন কোনো একটা সরকারী ফান্ডে টাকা দেয় এবং সেটার ফটোসেশন করা হয়, বুঝে নিয়েন পেছনে বড় ঝামেলা চলছে। ব্যাপারটা বেশ কষ্টের, কারণ ইসলামী ব্যাংকগুলো যে টাকাটা দিতে বাধ্য হচ্ছে সেটা মূলত ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার এবং ব্যাংক জামানতকারীদের পাওয়ার কথা ছিল।
৩/ আপনারা যারা নতুন ব্যবসা করতে চাচ্ছেন তারা সরকারী কোনো কাজে ঢোকার আগে চিন্তা করে নিয়েন।

 

পোস্ট: শরীফ আবু হায়াত অপু (জিয়া ভাইয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ)

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button