আল্লাহ ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু ছেড়ে দেবেন না
হুজুর হওয়ার একটা বিপদ আছে। আপনি কী বলেন আর করেন সেটার চুলচেরা বিশ্লেষণ মানুষ করবে। ব্যাপারটা মেনে নিয়েছি। যখন কিছু লিখি বা কোনো ছবি পোস্ট করি – সবসময় চিন্তা করি এটাতে কী মানুষের মঙ্গল আছে? ইসলামী শরীয়া লঙ্ঘন করে এমন কিছু শেয়ার করি না, ছবি-ভিডিও কিছুই না।
তবে আজ এমন একটা ছবি শেয়ার করব যেটার ব্যাপারে শরঈ বিধান নিয়ে কেউ কেউ আপত্তি তুলতে পারেন, কিন্তু আমার বুঝে ছবিটা শরঈ আপত্তিগুলোকে ছাপিয়ে উঠেছে এর মানবিক দিকটা। কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা নিয়ে পেঁয়াজ কেনার লাইনে একজন মা দাঁড়িয়ে আছেন।
বাংলাদেশের ধনীরা অনেক রকম মশলা খান – তাদের তরকারীতে পেঁয়াজ না হলেও চলে। কিন্তু গরীব মানুষের তরকারীতে লাগে তেল-নুন-হলুদ-মরিচ আর পেঁয়াজ। আরো গরীব যারা তাদের পান্তা ভাতে তরকারি – লবন, মরিচ আর পেঁয়াজ। তারা তাই অনেক দাম হলেও বাধ্য হয়ে পেয়াঁজ কেনেন। খুচরা দোকানে কিনতে না পারলে ট্রাকসেল থেকে কেনেন। লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থেকে হলেও কেনেন। কোলের বাচ্চাটাকে কারো কাছে রেখে আসার সুযোগ না থাকলে কোলে নিয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। আপনারা ছবিটা দেখেন।
এই দৃষ্টিতে একটা অভিশাপ আছে। যারা মানুষকে পেঁয়াজ দুর্গতিতে ফেলেছে তাদের জন্য। আপনি যদি সরকারের অংশ হয়ে থাকেন – সম্ভাবনা আছে এই অভিশাপ আপনার ওপরে পড়বে। অথবা আপনার পরিবারের ওপরে। হত্যা-গুম-জেল-যুলম অনেকদিন ধরেই চলছে। অর্থনৈতিক অরাজকতা চরমে। তরুণরা বেকার। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। লুটেরারা দেশের টাকা বাইরে নিয়ে চলে যাচ্ছে – ব্যাংক দেউলিয়া করে, শেয়ারবাজারের ব্যবসায়ীদের নিঃস্ব করে। এখন একেবারে প্রান্তিক মানুষদের রিযিকে হাত দিয়েছে এরা।
এই ‘এরা’টা কারা – এটা আমি বলতে পারব না। আমি খালি আপনাদের অনুরোধ করতে পারি এই ‘এরা’দের কাছে এই বার্তাটুকু পৌঁছে দিতে যে এরা বিপদে আছেন।
আল্লাহ আর মজলুমের মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের। গরীব থেকে মধ্যবিত্ত সবারই কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্টগুলো কারো গলা দিয়ে বের হচ্ছে, কারো চোখ দিয়ে, কারো চোখের পানি দিয়ে। আল্লাহ তো আল-আদল, সর্বোত্তম ন্যায়-বিচারক। তিনি কিন্তু এই অন্যায়গুলোর ভয়ংকর শাস্তি দেবেন। তিনি ছাড় দিয়েছেন, কিন্তু ছেড়ে দেবেন না। সাবধান হওয়ার সুযোগ সম্ভবত কমে আসছে। আল্লাহ মাফ করুন।
– শরীফ আবু হায়াত অপু