নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

বাঙালি ইসলামিস্টদের পাঠ-সংকীর্ণতা

বাঙালি ইসলামিস্টদের পাঠ-সংকীর্ণতা প্রবল। এরা “ইসলামিক বই” এর বাইরে কিছু পড়তে নারাজ। সেই ইসলামিক বইও নির্দিষ্ট ঘরানার, এর বাইরে কারো কথা শুনবে না। আলেমদের মধ্যে ক্যাটাগরি বানিয়ে ঠিক করে ফেলে “কাদের কথা শোনা যাবে না”। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। চিন্তা-সংকীর্ণতার বড় কারণ এই পাঠ-সংকীর্ণতা।

এই খাসলতের কারণে জ্ঞানের জগতে বিচরণ থেকে এরা বঞ্চিত থাকে। তথাকথিত বই রিভিউ গ্রুপগুলোর অবস্থা তথৈবচ। একেকটা টপিকে বই সাজেস্ট করতে বললে কমেন্টবক্সের যে চেহারা দাঁড়ায় তাতে পোস্টদাতা নিজেই হয়তো বিব্রতবোধ করেন। একবার প্যারেন্টিং বিষয়ে বইয়ের নাম জানতে চাওয়ায় তাকে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ সাজেস্ট করা হয়। তুলনায় সেক্যুলার বুক রিভিউ গ্রুপগুলোতে বেশ কাজের কথা হয়।

বড় সমস্যা হলো জ্ঞানের অভাবকে ইসলামিস্টরা উপলব্ধি পর্যন্ত করতে পারেন না। স্ট্যাটাস, এমনকি বই পর্যন্ত লেখা শুরু হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান ছাড়াই। এসব লেখাঝোকা আবার বাহবাও পায়, কারণ পাঠকদের জ্ঞানের বহর তো আরও কম।

উদাহরণ দিই। ফেমিনিজম নিয়ে লিখতে দেখি অনেককে। মনমতো ন্যারেটিভ বানিয়ে তাকে রিফিউট করা আর কী। চূড়ান্ত অসততার পরিচয় দেওয়া হয় বেশিরভাগ লেখায়। ফেমিনিজম নিয়ে লিখতে হলে জানতে হবে। প্রথমে ফেমিনিস্টদের বই পড়ুন। অন্তত সেকেন্ড সেক্স আর ভিন্ডিকেশন অব রাইটস পড়ুন। জানুন তারা কী বলতে চায়। অন্যের মুখে “তারা এগুলো বলে” চালিয়ে আর কতদিন? এরপর জানতে হবে দর্শন। স্কলাস্টিক যুগে ফেমিনিজমের স্বরূপ কেমন ছিল, এনলাইটমেন্ট তাকে কীভাবে পরিবর্তন করেছে, সেক্যুলার লিবারেল যুগে মডার্নিজম আর পোস্ট মডার্নিজমের ক্ল্যাশে ফেমিনিজম নতুন রূপ নিয়েছে কীভাবে, ফার্স্ট ওয়েভ আর সেকেন্ড ওয়েভের সাথে থার্ড-ফোর্থ ওয়েভ ফেমিনজমের কী পার্থক্য, ফেমিনিস্ট ন্যারেটিভগুলোর ফিলোসফিক্যাল পারপাস কী, উপমহাদেশে এই ন্যারেটিভগুলো কতটা চেঞ্জ হয়েছে- এসব জানতে হবে। জানতে হবে বাংলাদেশের গ্রামীণ আর নাগরিক জীবনের দ্বন্দ্ব, জানতে হবে মানুষের মনস্তত্ত্ব, জানতে হবে মেয়েদের সমস্যাগুলো কী।

কী, কঠিন শোনায়? হ্যাঁ, আসলেই কঠিন বিষয়গুলো। এগুলো অধ্যয়নের জন্য যেরকম অনুসন্ধিৎসু মন, ধৈর্য আর অধ্যবসায় দরকার তা বাঙালি ইসলামিস্টদের মধ্যে অতি বিরল। আর তাই ফেমিনিজম ইস্যুতে তাদের লেখা থাকে টিপিক্যাল ইসলামিস্টদের “ঘর না বাহির” ক্লিশে তর্কে সীমাবদ্ধ। তারা সর্বোচ্চ এনাম চাচার বইখানা পড়ে, আর কিছু এমন আলেমের বই পড়ে যাদের সেক্যুলার লিবারেল সোসাইটির সাথে সম্পর্ক নেই, অভিজ্ঞতাও নেই। আপনি যে সমাজে কাজ করবেন, যাদের নিয়ে কাজ করবেন, তাদের সাথে সম্পর্কহীন মানুষের বই পড়ে শিখতে চান? হাইস্যকর।

– MuHammad Jubaer

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button