নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

যদি দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই সংসার চান…

আমরা ছোটবেলা, মানে স্কুলে পড়ার সময় সোবহানবাগ কলোনিতে থাকতাম। ভ্যালেনটাইন্স ডে এলে মনে ধুকপুক বেড়ে যেত। বন্ধুরা বলেছিল, এটা এমন এক দিন যেদিন কোনো মেয়েকে প্রপোস করলে সে না বলতে পারে, কিন্তু স্যান্ডেল ছুড়ে মারতে পারবে না। এদিন প্রেমের দিন। সবারই অধিকার আছে – মনের কথাটা বলতে পারার।

কলোনিতে থাকি, ভালো ছেলে হিসেবে সবাই চিনে। বন্ধুদের কথার উপর ভিত্তি করে কখনও কাউকে কিছু বলা হয়নি। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, কারণ যারা মনের কথা খুলে বলেছিল, প্রেম করেছে, কেউ কেউ সেটা বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়েছে – এদের অনেকেই খুব ভালো নেই।

ব্যাপারটা কীভাবে ঘটে বুঝিয়ে বলি।

ধরেন, একটা মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে দেখা করার সময় সবচেয়ে ভালো জামা-কাপড় পরে, সাজে। শয়তান ফ্যাক্টরের কারণে ওই সময়টা মন ভালো থাকে। এক দুই ঘন্টার জন্য এই মেয়েটার সঙ্গ একটা ছেলের কাছে খুবই উপভোগ্য। কিন্তু বিয়ের পরে ব্যাপারগুলো ২৪ ঘন্টার মামলায় দাঁড়ায়। মেয়েটার মুখের গন্ধ (যদি থাকে) টের পাওয়া যায়। অন্যান্য বদভ্যাসগুলোও নজরে পড়ে। বিয়ের আগের সময়ের সাথে মেলালে হচকিত হতে হয়।

একই কথা ছেলেটার ক্ষেত্রেও খাটে। কোথায় সেই মাঞ্জা মারা যুবক আর কোথায় ঘরের মধ্যে খালি গা আর লুঙ্গি পরে ঘোরা একটা লোক। আদরের ডাক বের হয় না, খালি কর্কশ গলার আদেশ। কাজে কর্মে হাত লাগায় না, খালি খাবারের খুঁত ধরে। বিয়ের আগে তো এমন ছিল না।

বিয়ের আগে প্রেম চলাকালীন সময় ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে প্রতিযোগীতা চলে – নিজের সবচেয়ে ভালো সত্ত্বাটাকে উপস্থাপন করার। বিয়ের পরে – এই প্রতিযোগীতার কোনো দরকার থাকে না।

আসল চেহারা যখন বের হয়ে আসে, তখন আশা ভংগ শুরু হয়।

এই আশা ভংগ পৃথিবীর সব সংসারের সব অনিষ্টের মূল।

আমাদের দাদা-দাদী, নানা-নানীরা ৪০-৫০ বছর একে অপরের সাথে সংসার করেছেন – ছোট্ট বেলা বিয়ে হয়েছে – কেউ কাউকে চিনত না।

দুজন এক সাথে বড় হয়েছে, ম্যাচিউর হয়েছে।

মেয়েটা অল্প বয়সে পরিবারের দায়িত্ব পেয়ে বাস্তবতাকে চিনেছে।

ছেলেটা অল্প বয়স থেকে আয় করে পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছে।

বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লা রোমান্টিকতাকে একটা বাস্তবতার সীমায় বেঁধে দেন। এটা তখন ক্ষতি করতে পারে না।

এই যে বিয়ের আগে না চেনা – এতে লাভ কী হতো?

একজনের কাছে আরেকজনের আশা-আকাংখার তালিকা থাকত না।

‘তুমি আর নেই সে তুমি’ এফেক্ট থাকত না।

যা পেয়েছি তাতেই খুশি থাকার ব্যাপার ছিল।

আমি আমার স্ত্রীর সাথে প্রায় ১০ বছর ধরে সংসার করছি, আলহামদুলিল্লাহ – কখনও আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়নি।

সিহিন্তা যখন ঘর গুছিয়ে রাখে – আমি খুশি হই। যখন ঘর অগোছালো থাকে তখন নিজেকে বলি – তিনটা ছেলে বাচ্চা – ঘর এমন হবেই। উপেক্ষা করি। ওর পক্ষে যুক্তি খুঁজে নিই – শেষ।

কিছু জায়গায় আমি খুব কড়া – সলাত সময় মতো পড়তে হবে, খাবার নষ্ট করা যাবে না, আমার মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না – যে কয়টা ব্যাপারে আমি ছাড়

দেব না – সেটা তাকে জানিয়ে দেওয়া আছে। বাকি সব কিছুতে খুঁতখুঁত করি না। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ ভালো রেখেছেন।

আপনারা যদি জীবনে সুখী হতে চান তাহলে বিয়ের আগে প্রেম কোরেন না। জানা-পরিচয়ের দরকার নেই। আপনার পরিবারকে বলেন – তারাই পাত্র/পাত্রীর চরিত্র এবং অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে খোঁজ নেবে।

ব্যক্তিগত খুব বড় কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকলে অল্প কথায় সেটা মেয়ে/ছেলে দেখার সময় বলে দেন।

আপনি দুই রাকাত ইস্তেখারার সলাত আদায় করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর বিয়ের পরে যা জানা-শোনা করার দরকার করে নেন।

কিছু ছেড়ে দেন, কিছু মানিয়ে নেন, কিছু ছাড়তে অনুরোধ করেন। দেখবেন আসলেই শান্তিতে থাকবেন।

যদি দীর্ঘমেয়াদি এবং টেকসই সংসার চান, ভালোবাসা দিবসের গুষ্টি কিলান।

 – শরীফ আবু হায়াত অপু

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button