তারুণ্যের আলোচিত দুইটা বিষয়: জিহাদ এবং বিয়ে
দ্বীনে আসার শুরুর দিকে রক্ত গরম তারুণ্যের কাছে সবচেয়ে আলোচিত দুইটা বিষয় থাকে জিহাদ এবং বিয়ে। এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি এই দুইটা ব্যাপারেই শুরুর দিকে বেশীরভাগ ছেলেরা এক ধরণের ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকে, একটা ঘোরের মত। এই দুইটা বিষয় নিয়ে ফেসবুকে গরম গরম স্ট্যাটাস দেওয়া, দল বেঁধে কমেন্টস ,দ্বীনি সার্কেলে আড্ডা, দিনে তিনবেলা ভাত খাওয়ার মতই তা একসময় স্রেফ একটা অভ্যাস হয়ে উঠে। অথচ জিহাদ কিংবা বিয়ে দুইটার একটাও স্রেফ একঘেয়ে আসর মাতানো আড্ডার উপলক্ষ্য নয়, কখনো ছিলও না।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই সামাজিক, পারিবারিক এবং অন্যান্য পারিপার্শিক অবস্থার কারণে আজকের মুসলিম সমাজে যে কয়টা জিনিস কঠিন হয়ে গেছে বিয়ে তার মধ্যে একটি। এর মধ্যে ছেলেরা যদি আবার এই বিয়ে নিয়ে ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকে তবে সেটা এই কঠিন বিষয়টাকে অসম্ভবের কাছাকাছি ঠেলে দেওয়ার মত। আমার বোনের বিয়ে, জাহিলিয়াতের কিছুই আমি আটকাতে পারি নি। তার অন্যতম কারণ আমার পরিবার আমার টাকায় চলে না। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই কঠিন বাস্তবতা, আপনি তখনই পরিবারের লাগাম ধরে রাখতে পারবেন যখন পরিবার আপনার টাকায় চলবে, তখনই আপনি ভালো মন্দ নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। যে আপনি পরিবারের কোন ভাইটাল ইশ্যুতে ডিসিশান মেকিং পজিশন রাখতে পারেন না আপনার পক্ষে বিয়ে করে সেই পরিবারে নিজের বউকে শরিয়া মোতাবেক রাখাও সম্ভব নয়। বিশেষ করে যেসব ভাইরা দ্বীনি কিন্তু তাদের ফ্যামিলি দ্বীনি নয়। একদিকে পরিবারের কাছে নতজানু অন্যদিকে বউকে আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থাও করে দিতে না পারা, এর ফলাফল খুবই ভয়াবহ হয়ে উঠে। অনেক ভাই ফেসবুকে সারাদিন আহাজারি করেন, মেয়েরা দাড়িওয়ালা পছন্দ করেনা, মেয়েরা দ্বীন খোঁজে না টাকা খোঁজে, মেয়ের বাবা মা প্রতিষ্ঠিত ছেলেদের কাছেই মেয়ে বিয়ে দেয় ইত্যাদি ইত্যাদি, এবং তাদের বিয়ের চেষ্টা হলো এতি ফেসবুক পর্যন্ত। এসব ফ্যান্টাসিবয়দের ধরে যদি বলেন, এই যে এই হল পাত্রী আর এই হল কাজি, নে এবার বিয়া কর, তারপর আমতা আমতা করে বলবে না মানে ইয়ে……আমার আম্মু……মানে আমার বাসায়……! That’s it bro, that’s it! .
তার মানে এই নয় যে সব পরিবারই এমন কিংবা সব দ্বীনি ভাইদের পরিস্থিতিই এমন। তবে আমার মতে এক্ষেত্রে মেয়ে পক্ষের দিক থেকে একটু ছাড় দেওয়ার মানসিকতাটা বেশি দেখানো উচিত। কেননা এই সমাজে যতই দ্বীনি পাত্র খোঁজা হোক না কেন দিনশেষে কেন জানি তা দুনিয়াবি কোয়ালিফিকেশনের মানদণ্ডে গিয়ে ঠেকে। সেদিন একটা ঘটনা শুনে খুব খারাপ লাগল। দ্বীনি পাত্র খোঁজার পরও এক দ্বীনি ভাইয়ের বিয়ে আর হয়নি কারণ ঐ দ্বীনি ভাই মাত্র(!) বিশ হাজার টাকা বেতন পান বলে। খুবই দুঃখজনক বাস্তবতা এই যে আমাদের বোনেরা আইশা (রাঃ) এর মত হতে চান, স্বামী হিসেবেও রাসূল (সাঃ) এর মত মানুষ চান কিন্তু মা আইশার মত রাসূল (সাঃ) এর দারিদ্রতা, দিনের পর দিন না খেয়ে থাকা, তালি জোড়া দেওয়া কাপড় পরে সুখে থাকার বাস্তবতাটা নিতে চান না। যদিও সেরকম এক্সট্রিম কেস এই জমানায় “দ্বীনি পাত্রদের” নেই বললেই চলে। তারপরও সারাদিন সাহাবাদের সাদাসিধে, দুনিয়াবিমুখ, হতদরিদ্র জীবনের আবেগাপ্লুত আলোচনা শেষে ঐ দুনিয়াবি “প্রতিষ্ঠিত” পাত্রটিরই মার্কেট ডিমান্ড বেশি থাকে। বংশ ভালো, দুনিয়াবি শুশিক্ষিতা, দেখতে শুশ্রী মেয়েটিরই পাত্রের “অপশন” বেশি থাকে।
দ্বীন এবং দুনিয়া দুইটাই যদি পাওয়া যায়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা, কিন্তু বাস্তবতা হলো “সত্যিকারের” দ্বীন আর দুনিয়ার সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক, দুইটা একসাথে চলে না, অতীতের কারো চলে নি। দারিদ্রতা, অভাব অনটন, অনাহার এসব রহমানের বান্দাদের অলংকার। কেউ যদি চায় সে একজন সত্যিকারের আল্লাহর বান্দাকে বিয়ে করবে তার উচিত মুমিনের এসব অলংকার গলায় বেঁধে নেওয়ার মত ঈমানও অর্জন করা। উম্মাহর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম সাহাবিরা আজকের দ্বীনি পাত্রদের চেয়ে অবিশ্বাস্য রকম দারিদ্রতা আর অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে গেছে। হযরত আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি তাঁদের কারো কারো চাদর ছিল না। কারো হয়তো একটি লুঙ্গি আর কারো একটি কম্বল ছিল। তারা এটাকে নিজেদের গলায় বেঁধে রাখতেন। কারোরটা হয়ত তাঁর পায়ের গোছার অংশ পর্যন্ত পৌঁছত; আর কারোরটা হাঁটু পর্যন্ত। লজ্জাস্থান দেখা যাওয়ার ভয়ে তারা হাত দিয়ে এটাকে ধরে রাখতেন। (বুখারী) ।
ইসলামকে ভালোবাসি আমরা সবাই, কিন্তু ইসলামের জন্য ভালোবাসা আর ইসলামের সাথে জীবন যাপন করা এক জিনিস নয়। এই ফ্যান্টাসি থেকে যত দ্রুত বের হয়ে আসা যায় ততই উত্তম। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করে দিন। আমীন।
(Bujhtesina Bishoyta পেইজ থেকে নেওয়া)
ভাই গরিব, আল্লাহ ভিতু ছেলেরা সব সময় চিন্তাই থাকে । তাদের কে, কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চাই না । মেয়েরাও টাকা ওয়ালা ছেলে ছারা বিয়ে করতে চায় না । বড় লোকের মেয়ে । গরিব দিনদার ছেলের সাথে কেউ বিয়ে দেয় না । বিয়ের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাই