দেশপ্রেমের চেয়ে বেশি দেশপ্রেমের প্রদর্শন
এক.
বাঙালির দেশপ্রেম বেশি। দেশপ্রেমের চেয়ে বেশি দেশপ্রেমের প্রদর্শন। প্রেমে সমস্যা নেই। প্রেমের প্রদর্শনেও সমস্যা নেই। প্রেমের চেয়ে প্রেমের প্রদর্শন বেশি— এইখানেই সমস্যা।
দুই.
দেশপ্রেম প্রদর্শনের চেয়ে দেশপ্রেম ধারণ করার ফযীলত যে বেশি, এর একটা ভুল উদাহরণ প্রচলিত আছে। বলা হয়— দেশপ্রেমের প্রমাণ হলো কলা খেয়ে খোসাটি রাস্তায় ফেলে দেশের পথঘাট নোংরা না করা, চানাচুরের খালি প্যাকেটটি যেথাসেথা না ফেলে ডাস্টবিনে রাখা, ঘুষ না খাওয়া, দুর্নীতি না করা। এটি একটি ভুল উদাহরণ। এগুলোতে দেশপ্রেমের কিছুই প্রমাণিত হয় না। ধরুন— আপনি আমেরিকায় থাকেন, আমেরিকার প্রতি আপনার কোনোই প্রেম নেই, তাই বলে কলা খেয়ে খোসাটি এবং চানাচুরের খালি প্যাকেটটি কি রাস্তায় ফেলে রাখা উচিত হবে? আমেরিকার প্রতি ভালোবাসা নেই বলে কি আমেরিকায় ঘুষ খাওয়া উচিত হবে? এসব দিয়ে দেশপ্রেম প্রমাণিত হয় না। পৃথিবীর যেখানেই থাকেন, এসব দ্বারা পরিচ্ছন্ন মানসিকতা, সুস্থরুচি ও নীতিপরায়ণতা প্রমাণিত হয়।
তিন.
দেশপ্রেমের চেয়ে বেশি দরকার দায়িত্বপরায়ণ হওয়া, রুচিশীল হওয়া, নীতিবান হওয়া। মনে করুন— আপনি ফেরেশতাবৎ প্রাণী। আপনার মধ্যে মোটেই মানবিক প্রেম নেই, আছে ফেরেশতাবৎ দায়িত্বপরায়ণতা। আপনি কলা খেয়ে খোসাটি রাস্তায় ফেলেন না, চানাচুরের খালি প্যাকেট ডাস্টবিনে রাখেন, ঘুষ খান না, দুর্নীতি করেন না; তাহলে আপনার দ্বারা দেশ লাভবান হবে, আপনি দেশপ্রেমী না হওয়া সত্ত্বেও। অন্যদিকে আপনি যদি দায়িত্বপরায়ণ না হন, ঘুষ খান, দুর্নীতি করেন; তাহলে বুকভরা দেশপ্রেম নিয়ে শুয়ে পড়লেও আপনার দ্বারা দেশের কোনো উপকার হবে না। অসুস্থরুচির দুর্নীতিবাজ দেশপ্রেমীর চেয়ে দেশের উপকারী সুস্থরুচির নীতিপরায়ণ অদেশপ্রেমী নাগরিক বেশি দরকার। প্রেমহীনতা ঘৃণার সমার্থক নয়।
চার.
জাতীয় সঙ্গীতে দেশপ্রেম থাকে না, এক মিনিট নীরবতা পালনে দেশপ্রেম থাকে না, পুষ্পস্তবকে দেশপ্রেম থাকে না, প্রোফাইল পিকচারে দেশপ্রেম থাকে না। দেশপ্রেমের প্রদর্শন থাকে। প্রেমের প্রদর্শনে যে সমস্যা নেই, তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। তবে দেশপ্রেম প্রদর্শনে বা বিশেষ পদ্ধতিতে দেশপ্রেম প্রদর্শনে অনেচ্ছুকদের নিন্দা করা গর্হিত কাজ। কেউ প্রেম প্রদর্শ করবে কি না, করলে কীভাবে করবে— তা নাগরিকদের ইচ্ছাধীন থাকা উচিত। দেশপ্রেমের বিশেষ পদ্ধতিতে বাধ্য করা অনুচিত।
পাঁচ.
দেশপ্রেম ভালো হলেও দেশপ্রেমের নামে বিদেশঘৃণা অযৌক্তিক, পরিত্যাজ্য।
– আবুল কাসেম আদিল