হঠাৎ দুপুর

ডালের চচ্চড়িটা খুন্তি দিয়ে নাড়তে নাড়তে হঠাৎ পোলাউ এর ঘ্রাণ পায় সুমনা। না ঠিক পোলাউ না, পোলাউতে দেওয়া ঘিয়ের ঘ্রাণ।
বাসাবাড়িগুলো সব একটা আরেকটার গায়ে লাগানো। এক বাসার রান্নার খবর আরেক বাসায় পৌঁছে যায় বাতাসেই।
পাশে থাকা ননদ রিনুর কথায় ধ্যান ভাংগে সুমনার।
– ইশ কারা যেন পোলাউ রাঁধছে।
– হুম ঘ্রাণ ছুটছে, না?
– ছাইয়ের ঘ্রাণ। পেট খারাপ হোক সব ক’টার। আমাদের কি ছাতার রান্না আজকে! আর দুপুরে এই ক্ষুধার মধ্যে এরা পোলাউ এর ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে।
গজগজানি শুনে ফিক করে হেসেই চুপ হয়ে যায় সুমনা।
– যার যার রিজিক তার তার ম্যাডাম। কপালে যে রিজিক লেখা আছে সেটা কেউ ফেরাতে পারবেনা।
– থামো তো ভাবী, এখন লেকচার শুনতে পারবো না। গোসলে গেলাম, ভাতটা দেখো।
রিনুর কথাবার্তা বড্ড তিতকুটে। মনে মনে ভাবে সুমনা।
“আল্লাহ এই পোলাউ এ বারাকাহ দিন, যারা খাবে তাদের হিদায়াহ দিন, তাদের মনের দুয়া কবুল করেন নিন।”
দুয়া করে নিজেই হেসে দেয়। কী আজব দুয়া করলাম!
টেবিলে প্লেট সাজাচ্ছিল, হঠাৎ কলিংবেল।
পাঁচতালার ভাবী ট্রে হাতে দাঁড়িয়ে।
– ভাবী আমার ছোটবোন আসছে বেড়াতে, একটু ভালোমন্দ রাঁধলাম। আপনাদের কথা মনে হচ্ছিল বারবার।
– আল্লাহ! ভাবী, কি দরকার ছিল এত কষ্ট করার!
– না না কষ্ট কিসের। আচ্ছা ভাবী এখন আসি, পরে কথা হবে।
ট্রে টেবিলে নামিয়ে ঝাপি সরাতেই চক্ষু চড়কগাছ। বড় এক বাটি পোলাউ আর ছোট বাটিতে মুরগির মাংস।
“রিজিক!”
স্বগতোক্তি করে সে।
হঠাৎ তাকিয়ে দেখে রিনু দাঁড়িয়ে আছে।
– রিনু পেট খারাপ হবেনা তো আবার?
বলতেই হেসে ফেলে দুজনে।
© রৌদ্রময়ী