নির্বাচিত ফেসবুক স্ট্যাটাস

রাসায়নিক দিয়ে ফল পাকানো প্রসঙ্গ

আমি তখন ভার্সিটি ফাইনাল ইয়ারে। ঢাবির জেনেটিক এনজিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনলজি বিভাগে।
পেপারে বড় বড় ছবি আসছে – বিভিন্ন ল্যাগুন থেকে মাছ উঠিয়ে বুলডোজার দিয়ে পিষে ফেলা হচ্ছে।
দেখে খারাপ লাগল। যদিও পেপারে এসেছে ওইসব মাছে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া আছে, কিন্তু আসলে কী আছে কেউ গবেষণা করে দেখেছে কি? দেখলে সেটা সরানোর উপায় কী?
কত গরীব মানুষ আমিষ খেতে পায় না, এরা কম দামে কিনে খেত ল্যাগুনের মাছগুলো। এখন তাও বন্ধ
ডিপার্টমেন্টে গিয়ে বললাম, ব্যাচেলরসে যে প্রজেক্ট আছে তাতে আমি এই বিষয়ে গবেষণা করতে চাই।
সম্ভবত তখন স্যারদের সামর্থ্য ছিল না। উনারা রাজি হলেন না। আমি নাচার হয়ে আইসিডিডিআরবিতে গেলাম ঠিকই, কিন্তু মন ঠিক করে ফেললাম বাংলাদেশে মাস্টার্স করব না।
আজ অনেকদিন পরে ঘটনাটা মনে আসল।
পত্রিকায় এমন একটা খবর এসেছে যা অনেকের নজরে পড়বে না।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নামে একটা নখ-দাঁতবিহীন সরকারি সংস্থা বাজারে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার মন আম ধ্বংস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
পুলিশের অভিযোগ কাঁচা আম কার্বাইড আর ইথোফেন দিয়ে পাকানো হচ্ছে।
সংস্থাটি বলছে, ইথোফেনের ব্যবহার অনুমোদিত আর কার্বাইডের কোনো রেসিডিউ থাকে না।
কথাটা সত্যি। আমাদের এইচএসসির কেমিস্ট্রি বইতে ক্যালশিয়াম কার্বাইড থেকে ইথাইন তৈরি এবং ফল পাকাতে তার প্রয়োগের কথা লেখা ছিল। ইথাইন অনেকটা প্রাকৃতিক ইথিন গ্যাসের কাজ করে। বায়োলজি বইতেও ইথিন গ্যাসের বিস্তারিত ব্যবহার ছিল।
র‍্যাব-পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বোধহয় কেউ ইন্টারে সায়েন্স পড়েননি। বা পড়লেও ভুলে গেছেন।
কার্বাইড ব্যবহারকারীর কিছু ক্ষতি হতে পারে বলে কার্বাইড বাংলাদেশে ব্যবহার নিষিদ্ধ। কিন্তু কার্বাইড তো আর ফলের ভেতরে যায় না, যায় ইথাইন গ্যাস।
ফলে যে আমগুলো নষ্ট করা হচ্ছে সেটা নষ্ট করার মতো কিছু ছিল না।
কতগুলো মানুষের ব্যবসায়ের পুঁজি শেষ হয়ে গেল এই ‘নাম-কামানো’, ‘লোক-দেখানো’ অভিযানগুলোতে।
কার্বাইড-ফরমালিনের জুজু গত কয়েক বছর ধরে অনেক দেখানো হয়েছে। পত্রিকাগুলোর হুজুগে খবরে মানুষ দেশি ফল খেতে ভয় পায়। দেশি ফলের চাষীরা খুব বিপদে আছে। গত কয়েকবছর ধরে আমের দাম নেই। ব্যবসায়ীরাও ভালো নেই।
ভালো আছে বিদেশ থেকে আমদানি করা আপেল-মাল্টা-আঙুরের সিন্ডিকেটগুলো।
এর আগে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগে প্রচুর আম ও অন্যান্য ফল ধ্বংস করা হয়েছিল। পরে দেখা যায়, যে যন্ত্র দিয়ে ফরমালিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা বাতাসে ফরমালডিহাইড মাপার যন্ত্র। পরে হাইকোর্ট সেই যন্ত্রটি দিয়ে ফল ও মাছে ফরমালিন পরীক্ষা অকার্যকর ঘোষণা করে।
কিন্তু মানুষের মনে যে ভয় ঢোকার সেটা ততদিনে ঢুকে গেছে। আর এটা তো প্রতিষ্ঠিত যে খারাপটা ছড়ায়, ভালোটা কেউ বলে না।
ফল পাকানোর বৈজ্ঞানিক বিষয়াদি জানাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নিয়ে যে আয়োজন করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তা সফল হোক।
ফল-সবজি উৎপাদকদের সচেতন করা হোক কীটনাশক, ছত্রাকনাশক এবং আগাছানাশক বিষের ব্যাপারে।
বিজ্ঞানমনষ্ক কলাবিজ্ঞানী না, সত্যিকারের বিজ্ঞান জানে, বোঝে এমন মানুষদের এসব কাজের দায়িত্ব দেয়া হোক।
দেশের ফল, সবজি এবং মাছের ব্যবসাকে ধ্বংসের হাত থেকে আল্লাহ যেন হিফাজত করেন।

মন্তব্য করুন

Back to top button