মুক্তির শান্তি
চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। উৎকণ্ঠিত। কী জানি কী হয়। অবশেষে কি হবে? মুক্তি কি মিলবে?
নাফসি। নাফসি। মালিক যদি দয়া করে।
সিজদা করো।
সবাই মাটির ‘পর মাথা ঠেকাতে উদ্যত হলো। একটু আগেও ডানে-বামে দুজন মানুষ দাঁড়ানো ছিল। তারা সিজদায়। মাঝখানের জন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আগের মতো। একটু আগেও সামন-পেছনে অসংখ্য মানুষ দাঁড়ানো ছিল। তারা সিজদায়। মধ্যখানে একজন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আগের মতো। এখানে সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে এরকম অসংখ্য মানুষ দাঁড়ানো। কোনোভাবেই মেরুদণ্ড বাঁকাতে পারছে না। ঘাড়টা একটু সামনে ঝুঁকিয়ে প্রচণ্ড চেষ্টা করছে। সিজদাতেই মুক্তি পারছে না।
দুনিয়াতে এরকম কত সিজদা দিয়েছে লোকদেখানোর জন্য। নামকুড়ানোর জন্য। কিন্তু আজই প্রথম সিজদার জন্য সিজদা দিতে চাচ্ছে। পারছে না।
কতবার আল্লাহু আকবার শুনে ঘুমিয়ে ছীল, আড্ডায় ছিল, পার্টিতে ছিল, মিটিঙে ছিল। সিজদা দেয়নি। কখনো কখনো তো এমন জায়গায় ছিল যেখানে আল্লাহু আকবার শোনাই যেত না। সিনেমা হল। কনভেনশন সেন্টার। কখন কোন ফাঁকে সিজদার সময় চলে গেছে, দেওয়া হয়নি।
আজ সত্যি সত্যি মন চাচ্ছে। জীবন প্রথমবার হৃদয়ের গভীর থেকে সিজদায় লুটিয়ে পড়তে মন চাচ্ছে। মহান প্রভুর সামনে নিজেকে সঁপে দিয়ে মুক্তির জন্য প্রাণ হাঁসফাঁস করছে।
হায়! একবার! একটা বার। দয়াময়! মালিক! আমার আর্জি শোনো। আমাকে সিজদায় ভেঙে পড়তে দাও। বিশ্বাস করো, আমার এই সিজদা লোকদেখানোর জন্য না। নামখ্যাতির জন্য না। শুধু তোমার জন্য। শুধু তোমার জন্য…
…আল্লাহু আকবার…
ইমামের তাকবির শুনে শিফনসহ মাসজিদের সবাই সিজদায় চলে গেল। আজ অনেকদিন পর শিফন সিজদার কথাগুলো মন থেকে বলছে। অর্থ বোঝার চেষ্টা করছে।
সুবহানাকা: আপনি যে সব দোষত্রুটি থেকে মুক্ত।
আল্লাহুম্মা রাব্বানা: আল্লাহই তো আমাদের প্রভু।
ওয়া বিহামদিক: সব তারিফ কেবল আপনারই জন্য।
আল্লাহুম্মা-গ্ফিরলি: আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করে দিন।
শিফন নিজেকে আজ আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছে। কোমল করে কপালটা মখমলের কার্পেটে আলতো করে ছুঁইয়ে দিয়েছে। হাতের তালু দুখানা বিছিয়ে দিয়েছে। সিজদার কথাটা বলেই যাচ্ছে। ঝাপসা হয়ে আসছে কার্পেটের সবুজ গালিচা। টপটপ করে পানি ঝরছে চোখের পাপড়ি বেয়ে।
ইশ, এই সিজদা যদি শেষ না হতো!
– মাসুদ শরীফ