বিজ্ঞান শরীফ
বিজ্ঞানমনস্করা কিন্তু বিজ্ঞানী না। তারা বড়জোর বিজ্ঞানান্ধ—ইতিবাচক অর্থে অন্ধ।
একজন বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে আমি কিন্তু কখনো বিজ্ঞানীদের কাছে দাবি করিনি, স্যার আপনার পরীক্ষাটা আমি নিজে না-করে বিশ্বাস করব না। আপনার পর্যবেক্ষণটা আমি নিজে করে দেখে প্রমাণ পেতে চাই। গবেটের মতো এরকম কোনো কথা বলে আমি মানুষের হাসির পাত্র হইনি।
তারা বলেছেন মঙ্গল গ্রহ লালচে, আমি বিশ্বাস করে নিয়েছি। তারা বলেছেন, শনির চারপাশে বলয় আছে, আমি বিশ্বাস করে নিয়েছি। তারা হিসেব করে দেখেছেন সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে এত সেকেন্ড সময় লাগে, আমি জ্বি হুজুর করেছি। পূর্ণ ইয়াকিনের সাথে আমি তাদের কথার উপর ঈমান এনেছি। তাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, কাজের ধরন-পদ্ধতির উপর আমার আস্থা আছে। তারা এই বিষয়ের একজন পুরোধা।
কোনো দার্শনিক চিন্তা, কোনো যুক্তি খাটাইনি। খালি চোখে যদিও দেখি চন্দ্র-সূর্য দুটোই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে, কিন্তু বিজ্ঞানীরা যেহেতু বলেছেন পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘোরে, আমি দ্বিমত করিনি। আমি বলিনি, স্যার আমাকে একটু নভোযানে করে উপরে নিয়ে গিয়ে দেখান। আমি চর্মচক্ষু দিয়ে দেখতে চাই। ইয়াকিন নেহি হোতা হ্যায়, হামারে পৃথবি ক্যায়সে ঘুমতা হ্যাঁ।
বিজ্ঞানী বলতে আমি অন্ধ।
কাল ওরা যদি বলে, টেলিস্কোপ দিয়ে ওরা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে নতুন গ্রহের সন্ধান পেয়েছে, তাতে আমার চোখ কপালে উঠবে না।
পরশুদিন যদি বলে, বুধ গ্রহ সূর্যের প্রখর তাপ সইতে না-পেরে ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে, আমার মুখ হা হবে না। বলব না, বলে কী! পাগল নাকি! গাঁজা খেয়ে বিজ্ঞানী হয়েছে নাকি? বলব না, এলিয়েনরা তাকে এই খবর দিয়েছে নাকি। আমি তাদের বিশ্বাস করি। নিজের চোখের চেয়ে তাদের দক্ষতায় আমি আস্থা রাখি।
আমি বিজ্ঞানমনস্ক। আমি বিজ্ঞানান্ধ। যারা বিজ্ঞানমনস্ক না, তারা মধ্যযুগীয়। তারা ১৪ শ বছরের পুরোনো মাক্কার কুরাইশ নেতাদের মতো। অবিশ্বাসী-কাফিরদের মতো। ব্যাকডেইটেড।
নবিজি সা. সরাসরি আল্লাহর প্রত্যাদেশ নিয়ে আসার পরও এই মূর্তান্ধরা তাঁর অথরিটি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছিল।
আজও অনেকে করে।
নবিজি সা. পরকালের ভিভিড বর্ণনা দেওয়ার পরও, এই ধর্মান্ধরা বলেছে, মরে যাওয়ার পর হাড্ডিমাংস ক্ষয় হয়ে গেলে তা আবার কীভাবে ফিরে আসবে।
আজও অনেকে এরকম ভাবে।
যুক্তি-প্রমাণ-অথরিটি কিছুই তারা বুঝতে চায়নি। আজও আছে কেউ কেউ। বুঝতে চায় না। আমি আশাবাদী মানুষ। বিজ্ঞান একদিন এদের মনের পর্দা খুলে ফেলবেই। স্পষ্ট করে সব দেখিয়ে দেবে।
আমার মতো অনেক বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি এরই মধ্যে নবিজির সা. অথরিটি মেনে নিয়েছে। আল্লাহ চায় তো, এরাও নেবে। ভাবালুতায় ডুবে থেকে আর কত?
– মাসুদ শরীফ
মেনে নিয়ে খুব ভালো করেছেন… আপনার জান্নাত নিশ্চিত।