পরিবার/দাম্পত্য

আমার বয়স উনিশ বছর, আর আমি বিয়ে করতে চাই, কিন্তু আমার মা এটা চায় না কারণ সে মনে করে এখন আমার বিয়ের বয়স না: কি করণীয়?

প্রশ্নঃ আমার বয়স উনিশ বছর, আর আমি বিয়ে করতে চাই, কিন্তু আমার মা এটা চায় না কারণ সে মনে করে এখন আমার বিয়ের বয়স না: কি করণীয়?

উত্তরঃ
সকল প্রশংসা আল্লাহর!

প্রথমতঃ

এটা ইসলামে অনুমোদিত, একজন পুরুষ তার পিতামাতার অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করতে পারবে, যদিও নারীদের ক্ষেত্রে বিবাহ বৈধ হবার জন্য তার ওয়ালীর বা অভিভাবকের অনুমতি নেয়াটা জরুরি। তবে বাবা-মার প্রতি সম্মান এবং সদয় আচরণ রক্ষার জন্য তাদের থেকে অনুমোদন নেয়া উচিত, কেননা এতে করে তাদের সাথে সৌহার্দ্যময় আর সুন্দর সম্পর্ক বজায় থাকবে।

দ্বিতীয়তঃ

আপনার উচিত আপনার মা কে বুঝিয়ে বলা কেন আপনার জন্য বিয়ে করাটা অতি জরুরি একটা বিষয়, আর তাকে মানানোর এবং তার অনুমতি নেয়ার সবরকম প্রচেষ্টা করুন। যদি তিনি এতে সায় দেন, তো আলহামদুলিল্লাহ! তবে যদি তিনি তার নিজের জিদে অটল থাকেন, তাহলে আপনি আপনার পছন্দের মেয়ে, যিনি সচ্চরিত্র এবং নিজের দ্বীনের প্রতি অটল, এমন একজনকে বিয়ে করে ফেললে আপনার উপর কোন গুনাহর ভার থাকবে না।

বর্তমানকালের একটা প্রচলিত ভুল বাবা-মা করে থাকেন তা হলো তারা সন্তানদের কে পড়ালেখার কারণে বা তাদের বয়স খুব কম, এসব ভেবে বিয়ে করতে বাঁধা দেন; কিন্তু তারা এটা বুঝেন না যে একজন কমবয়সী তরুণের জন্য এই ফিতনার যুগে কতো ধরণের সমস্যা হতে পারে। তাদের অস্বীকৃতির কারণে সন্তানেরা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং বিভিন্ন খারাপ কাজে পতিত হতে পারে। তাই মা-বাবার প্রতি আমাদের পরামর্শ এটাই যেন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা অনুযায়ী নিজেদের ছেলেমেয়েকে বিয়ে করতে সহায়তা করেন, তাদের জন্য বিয়েকে সহজ করে দেন এবং তাদেরকে বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহিত করেন।

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিশ্চয়ই বলেছেন “হে যুবক সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে বিয়ে করবার, সে যেন বিয়ে করে। কেননা এটা দৃষ্টিকে নত রাখা ও গোপন অঙ্গসমূহের হেফাযতের জন্য সবচাইতে কার্যকর। আর যে তা পারবে না, সে যেন সাওম পালন করে, কেননা এটা তার জন্য ঢাল স্বরুপ।” [সহীহ বুখারী ৫০৬৫, সহীহ মুসলিম ১৪০]

শায়খ ইবন ‘উছাইমিন (রাহিমাহুল্লাহ) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হল, যখন কেউ বিয়ে করতে চায় কিন্তু তার পিতামাতা অস্বীকৃতি জানায় তখন কী করা উচিত, জবাবে তিনি বলেনঃ

এই ব্যাপারে আমরা অবশ্যই দুইটি বিষয় পেশ করব। প্রথমত, আমরা আপনার বাবাকে পরামর্শ দিতে চাই যিনি আপনাকে সেই মেয়েকে বিবাহ করতে নিষেধ করছেন যাকে আপনি সৎ চরিত্র এবং দ্বীনের প্রতি যত্নশীল বলে বলছেন। তার অবশ্যই অবশ্যই যেটা করা উচিত তা হলো আপনাকে ঐ নারীকে বিয়ের অনুমতি প্রদান করা উচিত, যদি না শরীয়াহ গত ভাবে এমন কোন ব্যাপার থাকে যা তিনি জানেন এবং আপনার কাছে বর্ণনা করতে পারেন কেন তাকে বিয়ে করা উচিত না, আর তা আপনার মনকে শান্ত করে। তার ভেবে দেখা উচিত, যে এমন যদি হতো তিনি কাউকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন যার দ্বীন এবং চারিত্রিক সোন্দর্য্য তাকে মুগ্ধ করেছে, আর তারপরেও তার বাবা তাকে নিষেধ করছেন এই নারীকে বিয়ে করতে, তাহলে তিনি কি সেটাকে খুবই অপমানজনক, লজ্জার ব্যাপার বলে ভাববেন না? তিনি কি মনে করবেন না এটা তার স্বাধীনতাকে বাধা দিচ্ছে? যদি তিনি তার পিতার এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে না পারেন, তাহলে একজন বাবা হিসেবে তিনি কিভাবে একই কাজ তার ছেলের সাথে করতে পারেন?

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যক্তিই সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসী (ঈমানদার) হতে পারেনা, যতক্ষণ না সে তার ভাই এর জন্যেও তা-ই পছন্দ করবে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে ।”

আপনার বাবার জন্য এটা হালাল নয় যে তিনি আপনাকে এই মেয়ের সাথে বিয়ে করতে বাধা দিবে কোন শরীয়াহ সম্মত কারণ ছাড়া। যদি কোন শরীয়াহ সম্মত কারণ থেকে থাকে, তবে তাকে এটা আপনার কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে যেন আপনি বুঝতে পারেন।
আর আপনার জন্য আমাদের পরামর্শ এই যে, যদি আপনি এমন আরেকজন মেয়েকে খুঁজে পান, যা আপনার বাবাকে সন্তুষ্ট করবে, আর আপনার এবং পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় থাকবে তাহলে তাই-ই করুন।

তবে যদি আপনার পক্ষে তা করা সম্ভব না হয়, কেননা আপনার মন এই মেয়ের প্রতিই আসক্ত, আর আপনি এটা ভেবে ভয় পাচ্ছেন যে, অন্য কোন মেয়েকে বিয়ের কথা বললে, আপনার বাবা তাকেও বিয়ে করতে বাধা দিবে- কারণ কিছু মানুষ আছে যারা নিজেদের সন্তানদের নিয়েও হিংসা করে থাকে, আর তাদেরকে তারা যা চায় সেসব করতে বাধা দেয়- তাহলে আমি বলব, আপনার যদি এমন ভয় হয় যে আপনি এই মেয়েকে ছাড়া চলতে পারবেন না যার প্রতি আপনার মন আবদ্ধ হয়ে আছে, তাহলে আপনার উপর কোনোই গুনাহ নেই যদি আপনি তাকে বিয়ে করেন, এমনকি আপনার বাবা-মা নিষেধ করা সত্ত্বেও। হয়তো আপনার বিয়ের পরে তিনি যা হয়েছে সব মেনে নিবেন আর তার অন্তরে যা আছে (বিদ্বেষ) তা চলে যাবে। আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করি যেন আপনার জন্য সবচাইতে যা উত্তম তাই-ই যেন হয়।

ফতোয়া ইসলামিয়া (৪/১৯৩)

আর আল্লাহই সর্বোপরি ভালো জানেন।


Source: Islam Q&A

[অনুদিত]
Collected From The Page
প্রেম নয়, বিয়ে করুনঃ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করুন

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button