আকাইদ

কুরআনের অবমাননা কি শুধু অমুসলিমরাই করে থাকে?

রাস্তায় দেখছিলাম কোন এক ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকীতে মঞ্চ বানিয়ে মাইকে একজন হাফিজ উচ্চস্বরে কুরআন তেলাওয়াত করছেন।

আমরা সবাই জানি তিনি কাজটি করছেন এজন্য যে তাকে কিছু পারিশ্রমিক দেয়া হবে। তেলাওয়াতে বিশুদ্ধতা বাদই দিলাম, এর ঝড়োগতির কারণে কিছু শব্দ এবং বাক্য গায়েব হয়ে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই!

মাইকের শব্দে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। কুরআনের শব্দে অসুবিধা হচ্ছে? হচ্ছে বৈকি। হওয়ারই কথা। রক্তচাপ ও অসুস্থতাও বাড়তে পারে।

এ কি কুরআনের অবমাননা নয়?

মহান স্রষ্টা কি এই উদ্দেশ্যেই তাঁর বাণী কুরআনকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন?

আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইহুদীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন:

আর তোমরা আমার আয়াতগুলোর বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করো না…”

সূরা আল বাকারা, আয়াত ৪১

আহ, আপসোস! আজকে ইহুদী নয়, মুসলিমরাই সেটা করছে।

মৃতের ওপর কুরআন পাঠের এই অদ্ভুত মঞ্চ অতিক্রম করার কিছুক্ষণ পরেই পড়ল ক্যাসেটসিডির দোকান। গানের দোকানে সারাদিন উচ্চস্বরে ক্যাসেট বাজানোর প্রস্তুতি হিসেবে এখন বাজছে মক্কার এক ইমামের সুললিত কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত! বোধহয় গানবাজনা বিক্রির নিষিদ্ধ কাজটিতে ‘বরকত’ নিয়ে আসার আশায় মালিক কুরআন বাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনের নির্দেশনা অমান্য করতেই কুরআনের সহায়তা নেয়া আরকি। বিসমিল্লাহ বলে মদপান করার মত ব্যাপার!

আমরা প্রায়ই আক্ষেপ করি মুসলমানদের এই দুর্দশা কেন?

কিন্তু কুরআনের সাথে আমাদের যা আচরণ, তাতে মুসলিমদের দুর্দশা কমার সম্ভাবনা আছে কি?

ধরা যাক কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান কিছু নির্দেশ সম্বলিত একটি চিঠি দিলেন কোন এক মন্ত্রী বা সচিবকে। এই ব্যক্তি চিঠি না পড়েই একে দলা পাকিয়ে সূতা দিয়ে তার ছেলে বা মেয়ের গলায় ঝুলিয়ে দিল! রাষ্ট্রপ্রধান জানলে তাকে নিয়ে কি করবে মনে হয়?

আমরা কিন্তু কোন রাষ্ট্রপ্রধান নয়, স্বয়ং মহাবিশ্বের স্রষ্টার বাণী কুরআনকে নিয়ে এ ধরনের কাজ করছি! কুরআন বোঝার কোন চেষ্টা না করে সেটাকে কাগজে লিখে কৌটায় ভরে আমাদের ছেলেমেয়েদের গায়ে তাবিজ বানিয়ে ঝুলিয়ে দিচ্ছি! এটা তারা কখনও মুখে ভরছে, কখনও তা নিয়ে টয়লেটে যাচ্ছে, কখনও বা তা নিয়ে ময়লায় গড়াগড়ি দিচ্ছে! এটা কি কুরআনকে পদদলিত করা নয়? আমার আশা এই তাবিজ আমার সন্তান থেকে অনিষ্টকে দূরে রাখবে, অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

আরও দেখুন:  ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ইসলাম

ঝাড়ফুঁক, তাবিজ এবং তিওয়ালা শিরক

[তিওয়ালা এক প্রকার যাদু, যা স্বামীস্ত্রীর মনের মিল ঘটায় বলে দাবী করা হয়। হাদীসটি আহমদ(৩৬১৫), আবু দাউদ(৩৮৮৩) প্রমুখ বর্ণনা করেছেন]

আরেকটি ঘটনা বলেই শেষ করছি। একবার আমার এক বন্ধুর খালা আমার সাথে দেখা করতে চাইলেন। আমার সাথে হঠাৎ দেখা করতে চাওয়ার কারণটা ধর্মীয় কিছু সেটা বুঝতে পারলাম। দেখা হলে তিনি অত্যন্ত শংকিতভাবে জানালেন যে তাঁর সন্তান হাত থেকে কুরআনুল করীম ফেলে দিয়েছে। তিনি শুনেছেন যে হাত থেকে কুরআন পড়ে গেলে সমপরিমাণ ওজনের চাল দান করতে হয় – সেটাই তিনি আমার সাথে আলাপ করে নিশ্চিত হতে চাইছেন। তিনি ছিলেন একজন গতানুগতিক নারী যার বেশভূষায় কুরআনে নারীদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশের কোন প্রতিফলন নেই:

আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফল হতে পার।”

সূরা আন নূর, আয়াত ৩১

এই মহিলা স্বয়ং স্রষ্টার বাণী কুরআনের নির্দেশ অমান্য করে ২৪ ঘন্টা নিজ সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করেও কোন ক্ষতির আশংকা করছেন না, কিন্তু অবুঝ শিশুর হাত থেকে কুরআনের একটা কপি পড়ে যাওয়ায় পাছে কোন ক্ষতি না হয়ে যায় এই কুসংস্কারপ্রসূত ভয়ে অদ্ভুদ সব ফতোয়ার অনুসন্ধান করে যাচ্ছেন।

আরও দেখুন:  নিফাকের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ

এ ঘটনাগুলো ইংগিত দেয় যে কুরআনকে আমরা কিভাবে বিসর্জন দিয়েছি। আর সেই সাথে “কেন মুসলিমদের আজ এই দুর্দশা?” – এই প্রশ্নেরও একটা জবাব আমাদের সামনে দৃশ্যমান করে তোলে।

রাসূল যখন কেয়ামতের দিন অভিযোগ করবেন:

হে আমার রব, নিশ্চয়ই আমার জাতি এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে।”

সূরা আল ফুরকান, আয়াত ৩০

তখন আমরাও কি এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ব না?

– মুহাম্মাদ নাসীল শাহরুখ

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

মন্তব্য করুন

Back to top button