আকাইদ

ইসলাম নিয়ে বিদ্রূপের ভয়ঙ্কর প্রবণতা

যে কর্মগুলো সম্পাদনের মাধ্যমে মানুষ ইসলামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যায় এবং জাহান্নাম হয়ে যায় তার স্থায়ী ঠিকানা, তার একটি হলো আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম), তাঁর কিতাব (কুরআন শরীফ) অথবা মুমিনদের বিদ্রূপ করা। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য প্রয়োজন সুপরিসর জায়গা এবং দীর্ঘ সময়। তাই আমরা নিচের কয়েকটি উপশিরোনামে ভাগ করে বিষয়টি সংক্ষেপে আলোচনার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।

১. বিদ্রূপের সংজ্ঞা এবং এর কিছু দৃষ্টান্ত।

২. বিদ্রূপের বিধান, বিদ্রূপকারীর কুফরের প্রমাণ এবং এ ব্যাপারে আলেমদের অভিমত।

৩. বিদ্রূপকারীর তাওবার বিধান, তা কবুল হবে কি হবে না?

৪. বর্তমান যুগের বিদ্রূপের কিছু চিত্র।

বিদ্রূপের সংজ্ঞা :

আরবী যে ইস্তিহযা‌’ শব্দের অর্থ করা হয়েছে বিদ্রূপ, তার উদ্ভব استهزأ يستهزئ শব্দ থেকে। আরবী এ শব্দের ধাতুমূল হলো (ه- ز-ء), শব্দটি বরাবরই ব্যবহৃত হয় ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও খেল-তামাশা অর্থে। [ইবন ফারেস, মাকায়ীস : ৬/৫২; রাগেব ইসফাহানী, মুফরাদাত : ৫৪০]

কতিপয় আলেমের মতে বিদ্রূপ দুই প্রকার। যথা :

১. প্রত্যক্ষ বিদ্রূপ :

যেমন ওই ব্যঙ্গোক্তি যে সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়েছিল। আর তা হলো, মুনাফিকদের বাক্য : ‘আমাদের এই পাঠকদের মতো আর দেখি নি, এরা সবচে বড় পেটুক। কিংবা এই ধরনের যে কোনো কথা যা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ  হিসেবেই বলা হয়ে থাকে। যেমন কেউ বলল, তোমাদের এ ধর্ম হলো পঞ্চম ধর্ম। অথবা কেউ বলল, তোমাদের ধর্ম কদাকার। কিংবা সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধকারীকে দেখে কেউ বলল, দেখ তোমাদের সামনে এক জব্বর পরহেযগার এসেছে। এককথায় উপহাস ও বিদ্রূপের হেন বাক্য নেই যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়। [মাজমু‘আতুত তাওহীদ, পৃষ্ঠা : ৪০৯]

শায়েখ ফাওযান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এসব কথার মতোই অভিন্ন হুকুম সেই কথাগুলোর বর্তমানে যা অনেকে উচ্চারণ করে থাকেন। যেমন : ‘আরে এই একবিংশ শতাব্দীতে ইসলাম অচল’, ‘ইসলাম এক মধ্যযুগীয় ব্যবস্থা’, ‘ইসলাম মানে পশ্চাৎপদতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা’, ‘ইসলামের দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি বিধিতে রয়েছে বর্বরতা ও অমানবিকতা’, ‘তালাক বৈধ করে এবং একাধিক বিয়ের অনুমতি দিয়ে ইসলাম নারীর ওপর জুলুম করেছে’ ইত্যাকার উক্তি। এসবের সঙ্গে আরও যোগ করা যায় নিচের উক্তিগুলোকে :

‘শরীয়া ব্যবস্থার চেয়ে মানব রচিত ব্যবস্থায়ই আমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর’। কেউ শিরক ও কবরপূজা পরিহার করে তাওহীদের প্রতি সমর্পিত হবার আহ্বান জানালে তাকে এমন বলা, ‘সে একজন চরমপন্থী’, ‘সে মুসলিম জামাতে বিভক্তি সৃষ্ট করতে চাইছে’, ‘সে ওহাবী’, ‘সে দেখছি পঞ্চম মাজহাব প্রবর্তন করতে চাইছে’। এককথায় ইসলাম, মুসলিম ও বিশুদ্ধ আকীদার প্রতি বিদ্রুপাত্মক সব কথাই এর অন্তর্ভুক্ত। [কিতাবুত তাওহীদ, পৃষ্ঠা : ৪৭]

২. পরোক্ষ বিদ্রূপ :  

পরোক্ষ বিদ্রূপ বা কটাক্ষের কোনো নির্ধারিত সীমা বা বাক্য নেই। যেমন : পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের সময় কিংবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস চর্চা বা সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতে দেখে চোখ টিপে দেয়া, জিভ বের করা, ঠোঁট প্রলম্বিত করা কিংবা হাতে ইশারা করে ভেংচি কাটা ইত্যাদি। [মাজমু‘আতুত তাওহীদ, পৃষ্ঠা : ৪০৯]

ইসলাম নিয়ে বিদ্রূপের পরিণাম :

ইসলামকে বিদ্রূপ করা, ব্যঙ্গ বা কটাক্ষ করা সরাসরি কুফরের নামান্তর। যে দশটি কাজের মাধ্যমে মানুষ ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায় তার অন্যতম এ বিদ্রূপ। তাছাড়া এটি মুনাফিকদের সবচে বড় বৈশিষ্ট্য। এ ব্যাপারে অনেক প্রমাণ বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন,

﴿وَلَئِن سَأَلۡتَهُمۡ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلۡعَبُۚ قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥﴾ [التوبة: 65]

‘আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’ ? {সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ৬৫}

আল্লাহ তা‌‘আলা আরও বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ أَجۡرَمُواْ كَانُواْ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يَضۡحَكُونَ ٢٩ وَإِذَا مَرُّواْ بِهِمۡ يَتَغَامَزُونَ ٣٠ وَإِذَا ٱنقَلَبُوٓاْ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِمُ ٱنقَلَبُواْ فَكِهِينَ ٣١ وَإِذَا رَأَوۡهُمۡ قَالُوٓاْ إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ لَضَآلُّونَ ٣٢ ﴾ [المطففين: ٢٩،  ٣٢]

‘নিশ্চয় যারা অপরাধ করেছে তারা মুমিনদেরকে নিয়ে হাসত। আর যখন তারা মুমিনদের পাশ দিয়ে যেত তখন তারা তাদেরকে নিয়ে চোখ টিপে বিদ্রূপ করত। আর যখন তারা পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসত তখন তারা উৎফুল্ল হয়ে ফিরে আসত। আর যখন তারা মুমিনদের দেখত তখন বলত, ‘নিশ্চয় এরা পথভ্রষ্ট’। {সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত : ২৯-৩২}

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অন্যত্র ইরশাদ করেন,

﴿ يَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ مَا قَالُواْ وَلَقَدۡ قَالُواْ كَلِمَةَ ٱلۡكُفۡرِ وَكَفَرُواْ بَعۡدَ إِسۡلَٰمِهِمۡ وَهَمُّواْ
بِمَا لَمۡ يَنَالُواْۚ ﴾ [التوبة: 74]

‘তারা আল্লাহর কসম করে যে, তারা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের জড়িয়ে ব্যঙ্গাত্মক কিছু) বলেনি, অথচ তারা কুফরী বাক্য বলেছে এবং ইসলাম গ্রহণের পর কুফরী করেছে। আর মনস্থ করেছে এমন কিছুর যা তারা পায়নি।’ {সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ৭৪}

এসব আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট :

ইবন উমর, মুহাম্মদ ইবন কা‘ব, যায়েদ ইবন আসলাম ও কাতাদা প্রমূখ  রাদিআল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

قال رجل في غزوة تبوك ما رأينا مثل قرائنا هؤلاء أرغب بطونا ولا أكذب ألسنا ولا أجبن عند اللقاء يعني رسول الله صلى الله عليه و سلم وأصحابه القراء فقال له عوف بن مالك كذبت ولكنك منافق لأخبرن رسول الله صلى الله عليه و سلم فذهب عوف الى رسول الله صلى الله عليه و سلم ليخبره فوجد القرآن قد سبقه فجاء ذلك الرجل إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم وقد ارتحل وركب ناقته فقال يا رسول الله إنما كنا نخوض ونلعب ونتحدث حديث الركب نقطع به عنا الطريق قال ابن عمر كأني أنظر إليه متعلقا بنسعة ناقة رسول الله صلى الله عليه و سلم وإن الحجارة لتنكب رجليه وهو يقول إنما كنا نخوض ونلعب فيقول له رسول الله صلى الله عليه و سلم أبالله وآياته ورسوله كنتم تستهزؤن ما يلتفت اليه وما يزيد عليه

এক ব্যক্তি গাযওয়ায়ে তাবূকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিল। সে বলল, ‘আমাদের এই পাঠকদের চেয়ে বড় পেটুক, এদের চেয়ে অধিক মিথ্যাভাষী দেখিনি এবং যুদ্ধের সময় এদের চেয়ে ভীরু আর কাউকে দেখিনি’। সে তার কথার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পাঠক সাহাবীদের দিকে ইঙ্গিত করছিল। এ কথা শুনে আবদুর রহমান ইবন আউফ রাদিআল্লাহু আনহু গেলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। দেখলেন কুরআন তাঁর চেয়ে আগ্রবর্তী হয়েছে (তিনি বলার আগেই সে বিষয়ে কুরআনের ওহী নাযিল হয়েছে)। অতপর ওই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে এলো। ততক্ষণে তিনি পথ চলতে শুরু করেছেন এবং তাঁর উটনীর পিঠে উঠে বসেছেন। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। আর দশজন আরোহীর মতো আমরা গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাম। ইবন রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমি যেন তার সে দৃশ্য অবলোকন করছি, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উটনীর জিনের বেল্টের সঙ্গে লেপ্টে আছে আর তার দু পায়ের সাথে পাথরের ঘেঁষা লাগছে। সে বলছে, আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উদ্দেশে বললেন,

﴿ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥﴾ [التوبة: 65]

‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’ ? {সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ৬৫} তিনি আর কথা বাড়ালেন না। তার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করলেন না। [তাফসীর ইবন জারীর : ১৬৯৭০, পৃষ্ঠা নং ৪০৩৬/৫]

শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, আল্লাহ, তাঁর কুরআনের আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে কটাক্ষ করা কুফুরী। এর মাধ্যমে একজন মানুষ ঈমান আনার পরও কাফের হয়ে যায়। [মাজমু‘ ফাতাওয়া : ২৭৩/৭]

ইমাম নাববী রহ. বলেন, যদি কেউ মদের পাত্র আদান-প্রদানের সময় কিংবা ব্যভিচারে লিপ্ত হবার প্রাক্কালে আল্লাহকে তাচ্ছিল্য করে বিসমিল্লাহ বলে, তবে সে কাফের হয়ে যাবে। [রাওদাতুত তালিবীন : ৬৭/১০]

শায়খ মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব রহ. তদীয় গ্রন্থ ‘আত-তাওহীদ’ এ বলেন, ‘এ অধ্যায় তার আলোচনায় যে আল্লাহর যিকর বা কুরআন অথবা রাসূলকে তাচ্ছিল্য করে’ : প্রথম হলো আর সেটিই সবচে বেশি ভয়াবহ : যে এসবকে বিদ্রূপ করবে সে কাফের। [আত-তাওহীদ : ৫৮]

শায়খ সুলায়ইমান ইবন আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ ইবন আবদুল ওয়াহাব বলেন, যে এ ধরনের কিছু বলবে তার কাফের হওয়ার ব্যাপারে সকল আলেম একমত। অতএব যে আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল অথবা তাঁর দীনকে বিদ্রূপ করবে, প্রকৃতই ঠাট্টাচ্ছলে এমন বললে সবার ঐকমত্যে সে কাফের হয়ে যাবে। [তাইসীরুল আযীযিল হামীদ : ৬১৭]

শায়খ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম রহ. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যে দাড়িকে ঘৃণা করবে এবং বলবে এটি আবর্জনা, সে কি মুরতাদ হয়ে যাবে? উত্তরে তিনি বলেন, যদি সে জানে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক দাড়ি প্রমাণিত, তাহলে তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দীনকে অস্বীকার করার শামিল হবে। ফলে তাকে মুরতাদ আখ্যা দেয়াই হবে যুক্তিযুক্ত। [ফাতাওয়া শায়খ মুহাম্মদ ইবন ইবরাহীম : ১৯৫/১১]

সেই বাক্যগুলোর মাধ্যমেও মানুষ ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় যে কুফরী বাক্যগুলো মুসলিম সন্তানেরা বেখেয়ালে অহরহই উচ্চারণ করে থাকেন। ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহিমাহুমাল্লার একটি হাদীস এখানে তুলে ধরা যায়। আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

« إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ مَا فِيهَا يَهْوِى بِهَا فِى النَّارِ أَبْعَدَ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ ».

‘নিশ্চয় বান্দা অনেক সময় এমন বাক্য উচ্চারণ করে যার অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে ভেবে দেখা হয় না। অথচ তা তাকে জাহান্নামের এত নিচে নিক্ষেপ করে যার দূরত্ব পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝের দূরত্ব থেকেও বেশি।’ [বুখারী : ৬৪৭৭; মুসলিম : ৭৬৭৩]

বিদ্রূপকারীর তাওবা :

বিদ্রূপকারীর তাওবা সম্পর্কে শায়খ ইবন উসাইমীন রহ. তদীয় ‘আল-কাওলুল মুফীদ ফী শারহি কিতাবি আত-তাওহীদ’ গ্রন্থে বলেন,

ثم اعلم أن العلماء اختلفوا فيمن سب الله أو رسوله أو كتابه: هل تقبل توبته؟ على قولين:

القول الأول: أنها لا تقبل، وهو المشهور عند الحنابلة، بل يقتل كافرا، ولا يصلى عليه، ولا يدعى له بالرحمة، ويدفن في محل بعيد عن قبور المسلمين، ولو قال: إنه تاب أو إنه أخطأ; لأنهم يقولون: إن هذه الردة أمرها عظيم، وكبير، لا تنفع فيها التوبة.

وقال بعض أهل العلم: إنها تقبل؛ إذا علمنا صدق توبته إلى الله، وأقر على نفسه بالخطأ، ووصف الله تعالى بما يستحق من صفات التعظيم، وذلك لعموم الأدلة الدالة على قبول التوبة; كقوله تعالى: {قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً} [الزمر: من الآية53]،

‘অতপর জেনে রাখুন, আল্লাহ, রাসূল ও কুরআনকে কটাক্ষকারীর তাওবা গ্রহণযোগ্য কি-না এ সম্পর্কে আলেমগণের দুই রকম মত ব্যক্ত হয়েছে :

প্রথম. তার তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। হাম্বলীদের মাঝে এ মতটি অধিক প্রসিদ্ধ। তাকে কাফির হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হবে। তার জানাযা পড়া হবে না আর তার জন্য দু‘আও করা হবে না। মুসলিমদের কবরস্থান থেকে দূরে কোথাও তাকে কবর দেওয়া হবে। যদিও বলা হয় সে তওবা করেছে অথবা ভুল করেছে। কারণ, তাঁরা বলেন, এই ধর্মত্যাগ বা খোদাদ্রোহীতার ব্যাপারটি বড় ভয়াবহ। এর তাওবাও কার্যকর হয় না।

দ্বিতীয়. তবে অপর একদল আলেমের মতে, তার তাওবা কবুল করা হবে যখন আমরা জানব যে সে আন্তরিকভাবে তাওবা করেছে, হৃদয়  থেকে ভুল স্বীকার করেছে এবং আল্লাহকে তাঁর যথাযোগ্য বিশেষণে বিশেষিত করেছে। আর তাঁরা তা বলেছেন তাওবা কবুলের ঘোষণা সম্বলিত আয়াতটি ব্যাপক হবার যুক্তিতে। আল্লাহ যেমন বলেছেন,

﴿ ۞قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [الزمر: ٥٢]

‘বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। {সূরা আয-যুমার, আয়াত : ৫২} [‘আল-কাওলুল মুফীদ ফী শারহি কিতাবি আত-তাওহীদ : ২৬৮/২]

ইদানীং ইসলামকে বিদ্রূপ ও কটাক্ষের যেসব রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করি তার মধ্যে রয়েছে ওই সব কটুক্তি ও ব্যঙ্গচিত্র যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে মুদ্রিত হয়। তথাকথিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে এসব প্রকাশ করা হলেও এসবের পশ্চাতে থাকে দীন বিমুখতা ও ইসলাম থেকে বিদ্রোহের মানসিকতা।

একজন এঁকেছে একটি মোরগ আর তার অনুসরণ করছে চারটি মুরগী। এর মাধ্যমে সে একাধিক বিয়েকে ব্যঙ্গ করেছে। আরেকজন একটি প্রবন্ধ লিখেছে, যাতে হিজাব ও পর্দা বিধানের ওপর ন্যাক্কার হামলা চালানো হয়েছে। সে বলছে এটি হলো পশ্চাৎপদতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রকাশ। আরেক জনকে দেখা গেছে সে পবিত্র কুরআনকে কবিতা বানিয়ে গানের মতো বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সুর দিয়ে পড়ছে। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন।

আমাদের জেনে রাখা দরকার যারা এসব ব্যঙ্গচিত্র ও কটুক্তির সাথে জড়িত তীব্রভাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। এ কাজের ভয়াবহ অশুভ পরিণতি সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করতে হবে। ঘৃণায় তাদের সঙ্গে উঠাবসাও ত্যাগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَقَدۡ نَزَّلَ عَلَيۡكُمۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ أَنۡ إِذَا سَمِعۡتُمۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ يُكۡفَرُ بِهَا وَيُسۡتَهۡزَأُ بِهَا فَلَا تَقۡعُدُواْ مَعَهُمۡ حَتَّىٰ يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيۡرِهِۦٓ إِنَّكُمۡ إِذٗا مِّثۡلُهُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ جَامِعُ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ وَٱلۡكَٰفِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا ١٤٠ ﴾ [النساء : ١٤٠]

‘আর তিনি তো কিতাবে তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করা হচ্ছে এবং সেগুলো নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে, তাহলে তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা অন্য কথায় নিবিষ্ট হয়, তা না হলে তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদের সকলকে জাহান্নামে একত্রকারী।’ {সূরা আন-নিসা, আয়াত : ১৪০}

শায়খ আবদুল আযীয ইবন বায রহ. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যেসব খবরের কাগজ ও ম্যাগাজিন বা বই-পুস্তক নাস্তিক্যবাদী প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও ব্যঙ্গচিত্র ছাপে এবং কাফের, ফাসেক ও বিশৃঙ্খলাকারীদের ইন্ধন যোগায়, সেসব কেনা-বেচা এবং তার প্রচার করা কি জায়েয আছে?

তিনি উত্তর দেন : যেসব পত্রিকা এ কাজ করে ওয়াজিব হলো তাদের বয়কট করা এবং সেগুলো ক্রয় না করা। আর রাষ্ট্র যদি ইসলামী হয় তাহলে কর্তব্য হবে তা নিষিদ্ধ করা। কারণ এসব সমাজ ও মুসলিমদের জন্য এসব বড্ড ক্ষতিকর। তাই মুসলিমদের দায়িত্ব হবে এসবের কেনা ও বেচা এবং এসবের যে কোনো ধরনের প্রচার বর্জন করা আর মানুষকে এসব বর্জনের প্রতি আহ্বান জানানো। এদিকে দায়িত্বশীলদের কর্তব্য হবে এসবকে একেবারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। [আল-মাওসু‘ আল-বাযিয়া ফিল মাসাইলিন নিসাইয়্যা : ১২৭৪/২]

মূল: ড. আমীন ইব্‌ন আব্দুল্লাহ আশ-শাকাওয়ী

অনুবাদ : আলী হাসান তৈয়ব

সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

মন্তব্য করুন

Back to top button