সংস্কৃতান্ধতা
বছর ঘুরে আবার এলো বাঙালির জানের উৎসব, প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এক বছর আগে টিএসসি-তে এই উৎসবে কিছু মায়েদের ইজ্জত হরণ করে একদল পশু…ইত্যাদি…
ফাঁকটা কোথায়? “তনু হত্যার বিচার চাই” এর অর্থ তো এই না যে তনুর আগে পরে কেউ ধর্ষিত বা খুন হয়নাই। কারোই অবিচার আমরা চাই না। তবে কিছু ঘটনা মিডিয়ায় পৌঁছে, কিছু পৌঁছে না। টিএসসির ঘটনাটা পহেলা বৈশাখের হাজার বছরের ইতিহাসের প্রথম বা শেষ ঘটনা না। নির্জন রাস্তায় একটা মেয়ের গায়ে একটা চাপ দিয়ে সামনে হেঁটে যান। ভাব করুন যেন কিছুই হয় নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েটাও নিজের রাগকে মনে চেপে রাখবে। চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করে হাজার মানুষের বিনোদনের পাত্রী হতে চাইবে না।
আমার কর্মস্থলে প্রতিবছরই মঙ্গল শোভাযাত্রা টাইপের কিছু একটা হয়। ডিটেইলস বলতে চাই অনেক কিছুই, সিকিওরিটি থ্রেট থাকায় বলতে পারি না। প্রতিটা অংশগ্রহণকারী সাক্ষী…প্রতি বছর এই শোভাযাত্রায় টিএসসির ঘটনাই বিভিন্ন মাত্রায় ঘটে। কোন ব্যাচের আপু, কোন টিচারের মেয়ে কিচ্ছু বিবেচনা করা হয় না, খালি শোভাযাত্রার সামনে পড়লে বা পাশে দিয়ে গেলেই হলো। আর নারী-পুরুষ মিলেমিশে শত শত শোভাযাত্রা সারা দেশে হয়, হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। এবার হিসাব করেন।
হোলি একটা ধর্মীয় উৎসব। সব ধর্মেই এমন কিছু থাকে যার যৌক্তিকতা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। হয়তো হোলির ব্যাপারেও হিন্দুদের এমন কিছু আছে যা আমি জানি না। তবে এটা একটা ধর্মীয় উৎসব। কত গরুখোর যবনের বাচ্চা যে এই উৎসবের সময় একটু চাপ দেয়ার লোভে অসাম্প্রদায়িক হয়ে যায়! আর কত নামধারী হিন্দু যে স্ট্যাটাস দেয় ‘হে দেবী মা! GFটা যেন এ বছরই জুটে যায়।’ ধর্মীয় উৎসব, বোন, এটা ধর্মীয় উৎসব! এখানেই তারা এমন করে। সেখানে পয়লা বৈশাখ বা লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মত সাংস্কৃতিক-জাতীয় উৎসবে তারা কীভাবে আপনার সম্মান রাখবে?
পর্দার গুরুত্ব বোঝাতে হুজুররা তেঁতুলের উদাহরণ দিয়েছিল। কত কাহিনি হয়ে গেল এটা নিয়ে! আর গায়করা সেই ১৫ বছর আগে থেকে হুমকি দিয়ে আসছে যে বখাটে ছেলের ভিড়ে বাসন্তী ললনাদের রেহাই দেয়া হবে না। প্রতি বছর হুমকি দিচ্ছে, কনসার্ট করে হুমকি দিচ্ছে। কেউ কিছু বলে না। গান হলো একটা জাতির সম্মিলিত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ। ভণ্ডামি তো জীবনে কম করলাম না, কম দেখলামও না। এমন তো না যে ছেলেরাই খালি গান গায়, আর মেয়েরা লজ্জায় লাল হয়ে এক কোনায় বসে থাকে। বরং “ভাইয়ের মত ফ্রেন্ড”, “ভৈনের মত ফ্রেন্ড”রা মিলে এমন সব ফান করে যে স্বামী-স্ত্রীও প্রকাশ্যে এমন আচরণ করে না। কেউ কারো চেয়ে কম যায় না! দেখে মনে হবে যেন কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলে কিছু মনেই করবে না। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ বিশেষ বিশেষ ঘটনায় এরাই ক্ষেপে উঠে “আঁইইইই! নির্যাতন করছে!” কোনটা যে তাদের কাছে ‘জাস্ট ফান’ আর কোনটা যে ‘নির্যাতন’, সেই সীমানাটাই খুঁজে পাওয়া যায় না।
এখন দুইটা সমাধান আছে। একটা সহজ, একটা কঠিন। সহজটা হচ্ছে- সবার মন পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরে থাকা। পরিষ্কার মন নিয়ে সবাই তারপর হোলি খেলুক আর শোভাযাত্রা করুক সমস্যা নাই। বিকাল পাঁচটার পরেও অনুষ্ঠান হোক, ভুভুজেলাও বাজুক, মুখোশও পরুক, কেউ কারো গায়ে হাত পা দিবে না। দিলেও মনটা পরিষ্কার করে তারপর দিবে।
কঠিনটা হলো হুজুররা যে হারাম হারাম বলে চ্যাঁচাচ্ছে তা মেনে নেয়া। আওয়ামী ওলামা লীগ থেকে আলকায়দা পর্যন্ত কারো কোনো মতভেদ নেই যে এইসব সংস্কৃতান্ধতা ইসলামে হারাম। এত হুজুর যখন এক সাথে একই কথা বলছে, হয়তো এটা সত্যিই হবে। হয়তো তারা ক্বুর’আন হাদীসের অপব্যাখ্যা করে এসব আবিষ্কার করছে না। আপনারা তো আবার ধর্মের বিরুদ্ধে না, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। আপনারা তো ধর্মান্ধ নন, ধর্মভীরু। তো এক্ষেত্রে কিছুটা ভীরুতা দেখান।
Ibn Mofassel