সমাজ/সংস্কৃতি/সভ্যতা

উৎসব হিসেবে পূজা দেখতে যাওয়া

উৎসব হিসেবে দূর্গাপূজা দেখতে যাওয়া, চাঁদা দেওয়া এবং কমিটিতে থাকা এ ব্যাপারে যুক্তি কি? ইসলাম কি বলে? খুবই চমৎকার একটি আলোচনা ।

জনৈক ছাত্রের প্রশ্নোত্তরে ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার বলেন, আমাদের দেশে রাজনৈতিক ভিন্নমত আছে। যেমন আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি। আমরা গণতান্ত্রিক দেশে উদার এজন্য প্রত্যেকেই তার মত প্রকাশ করব।

এখন মনে কর, আওয়ামীলীগ জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আনন্দ উৎসবের আয়োজন করেছে কারন তার মৃত্যুতে জাতি উপকৃত হয়েছে তাই কনসার্ট বা গানবাজনার আয়োজন। উদারতার জন্য বিএনপির এমপি সাহেব এবং নেতারা কমিটিতে আছেন, টাকা পয়সা দিয়েছেন এবং উপস্থিতও হয়েছেন। কারন আনন্দতো সবার, অনুষ্ঠান যার যার দলের। এটাতো উদারতা।

তুমি কি মনে কর বিএনপিতে তাদের সদস্যপদ থাকবে?

আবার মনে কর, আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে, জামায়াতে ইসলাম শোক র‌্যালির আয়োজন করেছে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আছে, গণতান্ত্রিক অবস্থায় আওয়ামীলীগের উচিত তাদের শোক র‌্যালি করতে দেওয়া এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।

যদি দুনিয়ার মানুষের বানানো ছোট ছোট আদর্শে আমাদের বিশ্বাস এত বেশী হয়, তাহলে ইসলামে সবচেয়ে ভয়ংকর পাপ শিরক, যেখানে তোমার সৃষ্টিকর্তাকে অপমান করা হচ্ছে, যে সিজদা একমাত্র আল্লাহ পাবেন, সেই সিজদা মানুষকে করা হচ্ছে, যেই ভক্তি একমাত্র আল্লাহ পাবেন, সেই ভক্তি মূর্তিকে করা হচ্ছে, এটা মানবতার অপমান, এটা সৃষ্টিকর্তার অপমান।

এখন শোক র‌্যালিতে আওয়ামীলীগের নেতারা আছেন এবং টাকা-পয়সা দিয়েছেন। তাহলে কি তাদের সদস্যপদ আওয়ামীলীগে থাকবে?

তোমার বাবা- মাকে গালি দেয়া হচ্ছে, আর তুমি আনন্দ পাচ্ছ, তাহলে বুঝা গেল বাবা-মার প্রতি তোমার ভক্তি বেশি আছে নাকি নাই?

ঠিক একইভাবে এক্ষেত্রেও তুমি আনন্দ উৎসবের জন্য মন্দিরে-মন্ডপে যাচ্ছ সুতরাং যে ঈমানের দাবী তুমি করছো তা তোমার ভিতরে নেই। যে লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ বলেছ, সেটা তুমি বিশ্বাস কর না, এটা শুধু মুখে বলছ।

ইসলাম দিয়েছে প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতা, তার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্থানের স্বাধীনতা, তার ইবাদতের স্বাধীনতা যা রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে।
কিন্তু তাদের চয়েসটা ভয়ংকর ভুল। এটা যে কোনো পাপের চেয়ে বড় পাপ।

মনে কর বিএনপির এমপিকে পিটানো হচ্ছে তুমি দেখছো, আনন্দ পাচ্ছ। বিএনপি তোমাকে নেতা বানাবে?

বঙ্গবন্ধুর নামে গালাগালি করা হচ্ছে বা আওয়ামিলীগের নেতাকে পিটানো হচ্ছে আওয়ামিলীগের লোকেরা সেখানে মজা দেখতে যাবে?

তাহলে যেখানে আল্লাহ তা’আলাকে অপমান করা হচ্ছে, তুমি সেখানে গিয়েছ, সেটা দেখে আনন্দ পাচ্ছো, তোমার হৃদয় ফেটে যাচ্ছে না, তাহলে বুঝা গেলো যে তোমার ভিতরে ঈমানের কিছুই নেই।

তবে পুলিশ যেতে পারবে, নিরাপত্তার জন্য। ডিসি, এসপি, মন্ত্রি, এমপি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

আওয়ামীগের সমর্থক কোন ব্যক্তির আপন ভাই ১৫ই আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিনে আনন্দ করতে বিএনপির অনুষ্ঠানে গেছে তাহলে সে কি তা মানতে পারবে নাকি দলীয় ঈমানের কারনে তার ভাইকে উক্ত অনুষ্ঠানে যেতে বাধাঁ দিবে?

তাহলে যুক্তিহীন বিবেক বহির্ভূত সবচেয়ে ভয়ংকর পাপ শিরক ও মূর্তিপূজা যেখানে হচ্ছে তুমি তা দেখে আনন্দ পাচ্ছ, তোমার কষ্ট লাগলো না, তোমার ঈমান তোমাকে যেতে বাঁধা দিলনা তাহলে বুঝাগেল তুমি যে ঈমানের দাবি করছো তা কিছুই না। তোমার ভিতরে আসলে কোন ঈমানই নেই।

রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা গল্প পড়েছিলাম, “কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই”। ঠিক একইভাবে এই পূজায় গিয়ে তুমি প্রমাণ করলে, তুমি মুসলমান ছিলেনা কখনো। এটা তোমার কল্পনা যে তুমি মুসলমান। কোন পাপ দেখে আনন্দ পাওয়ার মত বড় পাপ আর কিছুই নেই।

আল্লাহ তা’আলা কুরআনে বলেছেন:


ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺨُﻮﺿُﻮﻥَ ﻓِﻲ ﺁﻳَﺎﺗِﻨَﺎ ﻓَﺄَﻋْﺮِﺽْ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨُﻮﺿُﻮﺍْ ﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺚٍ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﻭَﺇِﻣَّﺎ ﻳُﻨﺴِﻴَﻨَّﻚَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻓَﻼَﺗَﻘْﻌُﺪْ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮَﻯ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﺍﻟﻈَّﺎﻟِﻤِﻴﻦَ

অর্থ: তুমি যখন দেখ তারা আমার আয়াতসমূহ সম্পর্কে উপহাসমূলক আলোচনায় লিপ্ত হয় তখন তুমি তাদের থেকে সরে পড়বে, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে যায়। এবং শয়তান যদি তোমাকে ভুলিয়ে রাখে তবে স্মরণ হওয়ার পরে জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বসবে না। [সূরা আনআম: ৬৮]

হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,


ﻻَ ﺗَﻘﻔَﻦَّ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺟُﻞٍ ﻳُﻘْﺘَﻞُ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻌْﻨَﺔَ ﺗَﻨْﺰِﻝُ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﺣَﻀَﺮَﻩُ ﺣَﻴْﻦَ ﻟَﻢْ ﻳَﺪْﻓَﻌُﻮْﺍ ﻋَﻨْﻪُ ﻭَﻻَ ﺗَﻘِﻔَﻦَّ ﻋِﻨْﺪَ ﺭَﺟُﻞٍ ﻳُﻀْﺮَﺏُ ﻣَﻈْﻠُﻮْﻣﺎً ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻌْﻨَﺔَ ﺗَﻨْﺰِﻝُ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﺣَﻀَﺮَﻩُ

অর্থঃ “যেখানে কোনো মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে সেখানে কখনোই দাঁড়াবে না; কারণ সেখানে উপস্থিত লোকেরা যদি তার হত্যা প্রতিরোধ না করে তাহলে সকলের উপরে লানত ও অভিশাপ বর্ষিত হয়। যেখানে কোনো মানুষকে অত্যাচার করে মারধর করা হচ্ছে সেখানে দাঁড়াবে না। কারণ উপস্থিত সকলের উপরেই লানত-অভিশাপ বর্ষিত হয়।” (আহমদ, তাবারানী, বাইহাকী)

যেখানে একজনকে অন্যায়ভাবে মারলে লানত পড়ে, একজনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে লানত পড়ে, তুমি দৌঁড়ে পালাও সেখান থেকে নাহলে তোমার উপরে গজব পড়বে। তাহলে যেখানে শিরক সেখানে তুমি কিভাবে যাচ্ছো!?

সূরা নিসায় ১৪০নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-


ﻭَﻗَﺪْ ﻧَﺰَّﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ﺃَﻥْ ﺇِﺫَﺍ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻢْ ﺁﻳَﺎﺕِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳُﻜَﻔَﺮُﺑِﻬَﺎ ﻭَﻳُﺴْﺘَﻬْﺰَﺃُ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻼَ ﺗَﻘْﻌُﺪُﻭﺍْ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺨُﻮﺿُﻮﺍْ ﻓِﻲ ﺣَﺪِﻳﺚٍ ﻏَﻴْﺮِﻩِ ﺇِﻧَّﻜُﻢْ ﺇِﺫًﺍ ﻣِّﺜْﻠُﻬُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺟَﺎﻣِﻊُ ﺍﻟْﻤُﻨَﺎﻓِﻘِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻓِﻲ ﺟَﻬَﻨَّﻢَ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ

অর্থ: কিতাবে তোমাদের প্রতি তিনি অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রুপ করা হচ্ছে, তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হবে তোমরা তাদের সঙ্গে বসো না; অন্যথায় তোমরাও তাদের মত হবে। মুনাফিক এবং কাফির সকলকেই আল্লাহ জাহান্নামে একত্র করবেন।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ বলছেন, যে ব্যক্তি এই কূফুরী পাপী জায়গায় বসে থাকবে তারাও তাদের মত কাফের। আর কাফের দুই প্রকার।

১. ঘোষিত কাফের ২. মোনাফেক কাফের।

আল্লাহ আয়াতের শেষে বলছেন কাফের ও মোনাফেকদের জাহান্নামে এক জায়গায় একত্রিত করবেন। কাজেই তুমি যখন কূফুরী দেখে মজা পাচ্ছ সুতরাং তুমি কাফের অথবা মোনাফেক।

বুঝতে হবে, তাদের পূজনীয় কোনো ব্যক্তি, দ্রব্য, বস্তুকে অপমান করে কথা বলা হারাম। তবে ঈমানের নুন্যতম দাবী হল, তুমি তাদের আনন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারবে না।

তাদের ধর্ম পালনের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কেউ যেন তাদের ধর্ম পালনে বাধা না দেয় রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করবে। মুসলমান শাসকগণ এ বিষয়ে অনেক কঠোর ছিলেন।

উমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রহঃ) যখন খলিফা (৯৯ হি.) ছিলেন, তখন দারুল খেলাফতের রাজধানী ছিল দামেস্ক। দামেস্কের বড় মসজিদ যাকে মসজিদে মুয়াবিয়া বলা হয়। মুয়াবিয়া রা. মসজিদটি বানিয়েছিলেন। মসজিদের পাশেই ছিল খৃষ্টানদের চার্চ। তখন শহরটা ছোট ছিল। মসজিদ বড় হতে হতে চার্চের দিকে চলে গেলে মুসলমানরা খৃষ্টানদেরকে বলল তোমরা চার্চের জায়গা বিক্রি করে দাও। তারা জায়গা বিক্রি না করলেও চার্চের জায়গায় মসজিদ চলে গেলো। এটা উমাইয়া যুগের ঘটনা।

যখন উমর ইবনে আব্দুল আজীজের ইনসাফ সবাই দেখলো তখন খৃষ্টানরা তার কাছে গিয়ে বলল, আমিরুল মুমিনীন! জায়গাটা তো আমাদের। খলিফা বললেন তাহলে তোমাদের দলিল দেখাও।

তারা দলিল আনলো। খলিফা দামেস্কের গর্ভনরকে বললেন মসজিদের দলিল আনেন। গর্ভনর দলিল দেখাতে পারলেন না। তখন খলিফা বললেন, মসজিদ ভাঙ্গা হবে। মুসলমানরা তো অস্থির হয়ে গেল। দামেস্কের প্রধান বিচারপতি খৃষ্টানদেরকে বললেন, তোমরা কতটা চার্চ চাও একটার বদলে একশটা বানিয়ে দিব তবুও তোমরা এই জায়গাটা বিক্রি করে দাও। তারপর খৃষ্টান এলাকায় একটা চার্চ বানিয়ে দেয়া হল। তখন তারা উক্ত জায়গা বিক্রি করে দলিল ফেরত দিল।

খলিফাকে দেখানো হলো যে, তারা জমি বিক্রি করেছে। তখন খলিফা খৃষ্টানদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমরা কি সত্যিই জমি বিক্রি করেছ? তারা বলল হ্যাঁ, আমরা খুশি মনে জমি বিক্রি করেছি।

কাজেই এটা খুব ভাল করে বুঝা উচিত তাদের ধর্মীয় স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা মুসলিম সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু দেখতে যাওয়া মানে, এটা প্রমাণ করা যে, তোমার নুন্যতম ঈমান নেই, এটা কুফুর, শিরক।

মূল: ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

শ্রুতিলিখন: মাহমুদুল হাসান যশোরী

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button