সমাজ/সংস্কৃতি/সভ্যতা

আপনি কি পবিত্র আছেন?

জ্যাকেটের খোঁজে একটি জনপ্রিয় পেইজ ঘাঁটছিলাম। সাধারণত কাপড়ের ব্র্যান্ডের পেইজগুলো বিভিন্ন সুদর্শন মডেল ব্যবহার করে তাদের পোশাকের বিজ্ঞপ্তি চালায়। সেই পেইজেও সবগুলো পোস্ট এমন ছবিতে ভরপুর। প্রোডাক্ট কোয়ালিটি বুঝতে একটি পোস্টের কমেন্টগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম তখন। হঠাৎ কিছু কমেন্টে আমার চোখ ছানাবড়া অবস্থা হলো। কিছুক্ষণ পরপরই মেয়েদের বেশ কিছু কমেন্ট পাচ্ছিলাম: ‘এই জ্যাকেট নয়, আমার এই ছেলেটাকে লাগবে।’

বিষয়টা এমন নয়, তারা সবাই ফেইক আইডি। আসলে এটাই আজকের সমাজের চিত্র। আমরা এমন একটি যুগে বাস করছি, যখন অশালীন হওয়াটাই আধুনিকতা। আম্মার মুখে শুনেছি, তাদের সময়ে গুলশান-বনানীর মতো জায়গায় ছেলে-মেয়ে-দুজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলবে, এটাই ছিল অসম্ভব। সেই জায়গাগুলোতে এখন গিয়ে দেখুন, পশ্চিমের কোনো শহর মনে হবে।

এরকম সময়ে কেউ যদি প্রশ্ন করে, ‘আপনি কি পবিত্র আছেন?’ প্রশ্নটা আসলেই বেশ বিব্রতকর শোনায়। কারণ, অশ্লীলতায় ছয়লাপ করা এই সমাজে চারিত্রিক নিষ্কলুষতা দীর্ঘদিন ধরে রাখা জ্বলন্ত আঙ্গার ধরে রাখার মতই কঠিন হয়ে গেছে। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলি বাল্যকালের পবিত্র জীবন। সরল চিন্তাগুলোকে হটিয়ে জায়গা নিচ্ছে হলিউড বলিউডের শেখানো রঙচঙ মাখানো এমন সব চিন্তা, যেখানে বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে মানুষ ভাবতে দেয় না। দিন যতই সামনের দিকে গড়াচ্ছে, পরিবর্তনের এই মাত্রাও তত অধঃপতনের দিকে নামছে। এরকম ক্রান্তিকালে আমাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। ছোট-বড়, যুবক-যুবতী, বিবাহিত-অবিবাহিত, সবাইকেই ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্টেপ নিতে হবে:

১) লজ্জার সাথে সাংঘর্ষিক সকল কথা ও কাজ হতে বিরত থাকুন। অশ্লীল, অমার্জিত কথাও এর অন্তর্ভুক্ত। এগুলো থেকে বিরত থাকা শয়তানকে রাগিয়ে দেয়। কারণ, ওর কাজই এটা; মানুষের সামনে এগুলো সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে এবং লুব্ধকর করে উপস্থাপন করবে। লজ্জার সাথে সাংঘর্ষিক তাবৎ কথা-কাজ হতে বিরত থাকলে শয়তান হতাশ হয়ে যায় এবং অপমানিত হয়ে বিদায় নেয়।

২) কুরআন-হাদীসে এবং পূর্বসূরিদের জীবনীতে লজ্জার অনেক ফযিলত এসেছে। ‘লজ্জা ঈমানের একটি শাখা’ বইতে প্রায় সবই এনেছেন লেখক। লজ্জার সেসব ফযিলত বারবার পড়ার অভ্যাস গড়ুন এবং অন্তরের ভেতর এই জ্ঞানের স্রোত বারবার বয়ে যেতে দিন। লজ্জার সর্বোচ্চ চূড়া অর্জনের নিয়ত করুন এবং চেষ্টার সর্বোচ্চটা ঢেলে দিন এর রঙে রঙিন হতে।

৩) ঈমান ও বিশ্বাসকে মজবুত করুন। কারণ, লজ্জা হচ্ছে ঈমান ও মারিফতেরই সুমিষ্ট ফল। যে বান্দার ঈমান ও বিশ্বাস যত দৃঢ়, তার হায়া ততই প্রবল। অর্থসহ কুরআন তিলাওয়াত, জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা, আল্লাহর নাম-গুণাবলির বিবরণ ও ব্যাখ্যা, পূর্বসূরিদের জীবনাচার বিষয়ক বইপত্র ঈমান বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক।

৪) ইবাদতে আসমাউল হুসনাহ বা আল্লাহর সুন্দর নামগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। এগুলোর অর্থ-মর্মের দিকে গভীর দৃষ্টিপাত করুন। বিশেষত যে নামগুলো বান্দার প্রতি আল্লাহর সচেতনতা এবং দয়া-বিষয়ক। আল্লাহর নামগুলো শিখুন, এর অর্থ-মর্ম হৃদয়ের দেয়ালে বসিয়ে দিন। বারবার সেগুলোর দিকে ফিরে তাকান। বিশেষ করে যখন একা হচ্ছেন, লোভনীয় সুযোগ পাচ্ছেন কিংবা অভাবের মুখে পড়ছেন।

৫) ফরজ ও সুন্নাহ সকল আমলের প্রতি মনোযোগী হোন এবং এতে অবিচল থাকুন; যেমন : সালাত।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button