পর্ণোগ্রাফি আসক্তি: ইসলামী দৃষ্টিকোণ
প্রাচীনকাল থেকে আমাদের সমাজে অশ্লিলতা বিভিন্নরূপে বিভিন্ন স্টাইলে বহুমাত্রিকভাবে প্রবেশ করেছে। তার মধ্যে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে মুসলিম যুবমানসে স্থান করে নিয়েছে পর্ণোগ্রাফির মতো একটি ধ্বংসফাঁদ। এ পর্ণোগ্রাফির নেশা সবচেয়ে ভয়ানক ও জঘন্য; যা মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবহ। বিগত কয়েক দশকে পর্ণোগ্রাফি তৈরি তথা ভোগ্যপণ্য হিসেবে ভোগ কে কেন্দ্র করে একটি বিশাল শিল্প গড়ে উঠেছে। অতীতকাল থেকেই নারী-পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের প্রদর্শন বিভিন্ন সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য বা মূর্তিতে বিভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে। আধুনিক যুগে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল, স্মার্টফোন, প্যাড, আইপড, কম্পিউটার, ল্যাপ্টপ ও ইন্টরনেটের ব্যাপক-বহুমাত্রিক ব্যবহার (ক্ষেত্র বিশেষে অস্বাভাবিক ব্যবহার) বেড়েছে সীমাহীনভাবে। এ সব প্রযুক্তির মাধ্যমে যৌন বিষয়ক বস্তুর প্রদর্শন এ শিল্পকে(?!) বিকাশ দিয়েছে লাগামহীনভাবে। সমাজের মানুষের অধিকতর উদার মনোভাব ও ইসলামী নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুতি এ অশ্লিলতার বিকাশে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। মানুষের বোধ, লজ্জা মুসলিম চেতনার এতো তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে যে, বর্তমান সমাজে পর্ণোগ্রাফির অভিনেতাদের পর্ণস্টার (?!) নামেও অভিহিত করা হয়। এ সবের দ্বারা সংঘটিত পাপাচার তথা অশ্লিলতা যেন ক্রমেই মহামারি আকারে সমস্ত পৃথিবীকে গ্রাস করে চলেছে। মানুষের চরিত্র ও নৈতিকতা ধ্বংসের ক্ষেত্রে এই বøুফিল্ম বা পর্ণোগ্রাফির মতো বড় হাতিয়ার দ্বিতীয়টি নেই। আসক্ত লোকজন পাপকে আর পাপ মনে করছে না। পাপ করা অপরাধ; কিন্তু পাপকে পাপ মনে না করা আরো কঠিতম অপরাধ। শিশু থেকে শুরু করে সর্বশ্রেণির মানুষ এ পর্ণোগ্রাফির দর্শক ও এতে দারুনভাবে আসক্ত। এর ফলে অনিয়ন্ত্রিত যৌন আচরণের শিকার হন শিশু থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত। চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, ‘একজন মানুষ যখন পর্ণোগ্রাফি দেখে, তখন তার মস্তিষ্ক থেকে এক প্রকার হরমোন নিঃসরিত হয়। এ থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যৌনাচাওে উৎসাহিত হয়। এ ধরণের মানুষ তখন যৌন আচরণ করার জন্য কুকুরের মতো হয়ে উঠে। রাতভর পর্ণোগ্রাফি দেখে দিনভর ঐ চেতনায় খুঁজে থাকে।’ আর এ সবের ফলে মানুষ আজ চরমসীমা পেরিয়ে জড়িয়ে পড়ছে ব্যভিচারে। সমাজে বেড়ে চলছে পরকীয়া, ধর্ষণ, হত্যা, লুটতরাজ ইত্যাদি। ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের বাণিজ্য, বিভিন্ন অশ্লিল প্রতিযোগিতা, চাল-চলনের আগ্রাসী কৌশলের স্বীকার হয়ে আমরা আজ অধঃপতিত। আল্লাহ বলেন, ‘(আর তোমরা) শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলো না, বস্তুত সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তোমাদেরকে শুধু অসৎ এবং অশ্লিল কাজের নির্দেশ দেয়, আর তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় আল্লাহর সম্বন্ধে এমন কথা বলার যা তোমরা জান না (১৬৮:১৬৯)।’ মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তানের পক্ষ থেকে সুবিস্তার লাভ করে যা বর্তমানে মানবজাতির সর্বনাশের জন্য অন্যতম মারাত্মক অস্ত্র হচ্ছে যৌনসন্ত্রাস। সমাজের সামগ্রিক ক্ষেত্রে এর ফলাফল মারাত্মক নেতিবাচক। জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, চরিত্রে যুব সমাজ তারুণ্যদীপ্ত মানসিকতায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে ভবিষ্যতের জন্যে নিজেদের তৈরি করবে – এটাই সমাজ, রাষ্ট্র ও অভিভাবকদের দাবী।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ ও পবিত্র জীবন বিধান। প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম অত্যন্ত সুন্দরভাবে সুষ্পষ্ট উপায়ে তার নীতিমালা পেশ করেছে। মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গের সুষ্ঠু ব্যবহার বিধিও তিনি বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এটাই তাদের পবিত্র থাকার সর্বোত্তম মাধ্যম।… এবং তাদের মুমিনা নারীদেরকেও বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হিফাজত করে (৩০:৩১)।’ প্রিয় নবী সা. বলেন, ‘কোনো পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে যেন না তাকায়। কোনো নারী অন্য নারীর গুপ্তস্থানের দিকে যেনো না তাকায় … (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৫৫)।’
জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তির ন্যায় এ তরুণ যুবসমাজ যদি পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ে তার ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন শুধু হুমকির সম্মুখিন হবে না বরং সম্ভাবনাময়ী ইসলামী চেতনার অপমৃত্যূ ঘটবে। অশ্লিলতা ও বেহায়াপনা পরিহার করার জন্য আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বহু স্থানে বিভিন্নভাবে অসংখ্য আয়াতের মাধ্যমে অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। সূরা মুমিনুনের পাঁচ থেকে সাত নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘(অবশ্যই সফলকাম হয়েছেন মুমিনগণ) যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এত তারা নিন্দনীয় হবে না। এবং কেউ এদরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী’ (২৩:৫-৭)। এখানে বলা হয়েছে যারা নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে, তারা সফলকাম হয়েছে। আমরা বর্তমান সময়ে বাস করছি চুড়ান্ত নির্লজ্জ এক পৃথিবীতে। এমন এক পৃথিবী যেখানে নিজের হাতের মুঠো ফোন দিয়েই যে কোনো ওয়েব সাইট থেকে যে কোনো ভিডিও চালাতে পারি অনায়াসেই। পর্ণোগ্রাফী ইন্ডাষ্ট্রী বর্তমান একটি মাল্টি ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাষ্ট্রী। যার উদ্দেশ্য ও কাজই হলো কোনো না কোনো ভাবে যেন প্রত্যেকেই এ নোংরামীর ভোক্তা হয় এবং প্রতিটি নারী-পুরুষ ও শিশুর সামনে এগুলো যেন উম্মোচিত হয় তারা তা আশা করে। আপনি দেখবেন, আসক্ত হবেন এবং পরিণত হবেন একজন ভোক্তায়। এটাই হলো আমাদের সমাজকে দেওয়া পর্ণোগ্রাফীর উপহার। এটা তৈরি করেছে কিছু অমানুষ; যারা মানুষকে পরিণত করছে পশুতে ও যৌন বিকারগ্রস্থ মানুষে। আর আমাদের তরুণ-যুবকদের মধ্যে দুর্ভাক্রমে কারো কারো এ আসক্তি রয়েছে। কারণ অনেকেই অনলাইনে এসব দেখে থাকে। শুধু দেখেই শেষ নয়; বরং পরবর্তীতে আবার দেখার জন্য বিভিন্ন মোবাইলে, এ্যাপ্সে, সেভ করে রাখে। এ নিয়ে নিজেদের মাঝে কোনো খারাপও লাগে না। কেননা নিজেরা নিজেদের মনে মনে এ গুলোকে গ্রহণযোগ্য ধরে নেয়। হয়ত মাঝে মাঝে এ নিয়ে একটু অনুশোচনা হয়; আবার পরে নিজে নিজেই আবার ফিরে যায় সেই দিকে। আপনি ভাবছেন, অন্ততঃ আমিতো কারো ক্ষতি করছিনা; কাউকে তো দেখাচ্ছি না। কিন্তু জানেন? ভিতরে ভিতরে আপনার আত্মা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। আপনার সালাত হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে অন্তসারশূন্য; যার কারণে সালাত আদায়ের সময় আাপনি একটু চোখের পানিও ফেলতে পারেন না। কারণ, আপনার মনে আল্লাহর ভয় এতটাই কমে গেছে যে ঐ সমস্ত নোংরামী দেখার কারণে;আর এটা তারই ফলাফল। এ গুলো আপনাকে পরিণত করেছে একটা মানুষরূপী পশুতে। যার ফলে স্বাভাবিক ভাবে তাকাতেও পারেন না। পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত এ সকল মানুষরা যখন পাশ দিয়ে কোনো নারীকে হেটে যেতে দেখে; তখন তাদের ভাবনায় মানুষ মনে হয় না, তারা যেন দেখেন একটা মাংসপিন্ড হেঁটে যাচ্ছে। তাদের দু’চোখ সর্বদা নীরিক্ষণ করে বেড়ায় প্রত্যেককে। সারাটি ক্ষণ তারা চেয়ে থাকে; চোখ নামিয়ে নিতে রীতিমত কষ্ট হয়। যখন ক্যাম্পাসে, কর্মক্ষেত্রে, বাসে, ট্রেনে, অথবা রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে; আসক্ত লোকজন পারছে না নিজেকে সংযত রাখতে। হয়তো একটা বিলবোর্ডের দিকে তাকালো, একবার তাকালো, দ্বিতীয় বার তাকালো, এভাবে তৃতীয় বার তাকালো। বিল বোর্ডের সেই নারীর ছবিটার দিকে তাকাতে কতো কিছু মনে ভেসে উঠছে। এভাবে এমন একটা সুযোগও তারা বাদ রাখে না; যা দিয়ে তাদের অন্তরটা কলুষিত হয়। তারা পরিপূর্ণরূপে একজন আসক্ত ব্যক্তি। তারপর তাদের অনেকে মনে মনে ভাবে, নামাজে মনযোগ আসছে না কেনো? নামাজে মনযোগ আনবো কিভাবে? আসলে তারা কোন দুনিয়ায় বাস করছে? কোন জগতে আছে? অনেক আগেইতো রূহকে তারা মেরে ফেলেছে। এ সমস্যা শুধু কেবল পুরুষের নয় কিছু নারীরও এ সমস্যা রয়েছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা। এটা একটা যুদ্ধ; এ যুদ্ধ যে কোনো সামরিক যুদ্ধের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এটি সেই যুদ্ধ যা কি-না ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের অন্তরকে, অনিশ্চিত পথে অগ্রসর হচ্ছে আমাদের যুব সমাজ। এই জিনিস আমাদের ঘর-বাড়ী পর্যন্ত প্রবেশের পথ করে নিয়েছে। রাস্তা বানিয়ে নিয়েছে। আমরা চাই আমাদের সন্তানদের এ সমস্ত কাজ থেকে যতদূর সম্ভব বাঁচাতে। কিন্তু যখন আমাদের সন্তান স্কুলে যায়, সেটা ইসলামিক স্কুল বা মাদ্রাসা বা যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই হোক না কেন? খুবই উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে যে, তারই কোনো বন্ধু আইপড,বা মোবাইল ডিভাইস নিয়ে এসে বলবে, দেখো সবাই। এটা খুবই বাস্তব একটা চিত্র; মোটেই কাল্পনিক কিছু নয়। এ জন্য আমাদের নিজেদের সন্তানদের প্রস্তুত করতে হবে। যার মুখোমুখি হবে তারা কুৎসিত, কদাকার জগত সম্পর্কে কোনো একদিন। এর থেকে পালানোর পথ নেই আর তাদের। ইউটিউবে দেখা যায় বিভিন্ন এ্যাড, উপরে লেখা থাকবে বিভিন্ন স্থানে ফলোআপ লেখা। এগুলো এমনি এমনি দেওয়া নয়; সবকিছুর ডিজাইন কিন্তু পরিকল্পিত, সাজানো গুছানো ভাবে পরিবেশিত ও বিন্যস্ত করা। ফেইজ বুকেও দেখা যায় বিভিন্ন অশ্লিল ও বাজে ভিডিও এসে আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। আপনি এইটা ঐটা করে বিভিন্ন কাজের ফাঁকে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় শেষ পর্যন্ত একটা বাজে জিনিস দেখে ফেললেন। লাইক বা জয়েন্ট কওে নিলেন; ব্যাস। নিয়মিত ধেয়ে আসতে থাকবে ঐ লিঙ্ক থেকে ¯স্রোতের মতো বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত যতোসব বাজে জিনিস। তাহলে কি সমাধান? বিয়ে করা ফেলা উচিৎ? না, এর সমাধান বিয়ে নয়। যদি একজন ব্যক্তি যৌন বিকারগ্রস্থ হয়ে থাকে, বিয়ের পরও সে বিকারগ্রস্থই থাকবে। বিয়ের আগে এখনি লজ্জা না থাকলে বিয়ের পরও লজ্জা থাকবে না। সত্যিই আপনি ভাবছেন বিয়ের মাধ্যমে আপনার সমস্যার শেষ হবে? না। আপনার সমস্যা বিয়ে নয়। আপনার সাহায্য দরকার। আপনার নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে। আপনার নিজেকে এভাবে কষ্ট দেওয়া থামাতে হবে। নয়তো আপনার ভিতরে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। অনেক টিনএইজ ছেলে-মেয়ে নিরবে ভিতরে ভিতরে পর্ণোগ্রাফীতে আসক্ত। বাবা-মা কিছুই জানে না। তার জীবনী শক্তি, আধ্যাত্মিক প্রাণশক্তি শুণ্যের কোঠায় গিয়ে ঠেকেছে। অসহিঞ্চু হয়ে মনস্তাত্তি¡কভাবে সে ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। বাবা-মা তার কিছুই জানে না।
এ পর্ণোগ্রাফী প্রতিরোধের জন্য মুসলমানদের ট্রিলিয়ন ডলারের বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা নেই। আর এটা বলাও বাস্তবসম্মত হবে না যে, ফেইজবুক, টুইটার,ইউটিউব- এসব সোস্যাল মিডিয়া হারাম; সকলের তা বর্জন করতে হবে। এটাই এখন বাস্তবতা; এগুলো এখন অক্সিজেনের মতো। আপনি আমি তরুণদের সাথে পরিপক্ষ খোলামেলা কথা বলতে পারি। তাদের শেখাতে হবে কিভাবে এসব মোকাবেলা করতে হয়। এগুলোর ফাঁদে না পড়ে। ইন্ডিয়ান সিরিয়াল ও মুভি দেখা বন্ধ করতে হবে। আপনি এসব দেখলে নিজেদের সংযম ধরে রাখতে পারবেন না। সালাত নিয়ে কথা বললেও লাভ হবে না। মা, মেয়ে সবাই মিলে যা তা দেখলে হবে না। মহান আল্লাহর বাণী ‘নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভূক্ত দাসীগণ ব্যতীত, এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। এবং কেউ এদরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী’ (২৩:৬-৭)। এখানে লজ্জাস্থানের হেফাজত বলতে শুধুমাত্র জেনা-ব্যভিচার না করা; তা কিন্তু নয়। এর মানে সে সব জিনিস থেকে বিরত থাকা, যার মাধ্যমে এসব খারাপ কাজের প্রলোভনে পড়ে, লজ্জাবোধ হুমকির মুখে পড়ে। এ আয়াতের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে যে, এ বিষয়ের প্রতি তীব্র আকাঙ্খা আল্লাহ তায়ালাই আমাদের মাঝে দিয়েছেন। আর সকলের মাঝে এ চাহিদা আছে। এটা বলতে দলিলের প্রয়োজন নেই। পুরুষ-নারী সকল মানুষ আজকের আধুনিক যুগে এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করছে প্রতিনিয়ত।
আসলে নিজেদের ভিতরে এ প্ররোচনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। কেউ না কেউ আছেন এ সব বন্ধ করার চেষ্টা করছে। বার বার ফেঁসে যাচ্ছে এ চক্রান্তে। অনেকেই যুদ্ধ করছে হাল ছেড়ে দিবেন না, চেষ্টা করুন, অব্যাহত রাখুর প্রচেষ্টা। নিজে কখনো একা থাকবেন না। ভালো বন্ধুর সাথে থাকুন। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরীতে পড়াশুনা করুন। এমন কোথাও চলে যান যেখানে আপনার আশে পাশে আরো লোক থাকবে। কারণ আপনি যখনি একা থাকবেন শয়তান আপনাকে একা পেয়ে বসে। আর মহান আল্লাহর ভয় আপনার মনে যদি যথেষ্ট না থাকে, অন্ততঃ মানুষের ভয় থাকে, তাহলে ‘নাই মামার চেয়ে অন্ততঃ কানা মামা ভালো।’ বাসায় ডেক্সট্রপ রাখুন; মনিটর যেনো বড় হয়। ড্রইং রুম বা টিভি দেখার কক্ষে রাখুন; সবাই যেনো দেখতে পায়। সবার মুখের সামনে থাকবে; এ ভাবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বারো বছরের ছেলে-মেয়েদের স্মার্ট ফোন দিয়ে পর্ণোগ্রাফীর সুযোগ তৈরি করে দেওয়া উচিৎ নয়।
আল্লাহ তায়ালার ঘোষণার মাধ্যমে আমাদের তীব্র আকর্ষণের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। আমরা এগুলোর সমাধান করতে পারবো বৈধ স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে। এর বাইরে নয়। যারা এ সমস্ত জগতে পড়ে থাকে তাদের দাম্পত্য জীবন হয় দূর্বিসহ। ভোগ ও সুখ নিয়ে তাদের মাঝে অলিক ধারণা সৃষ্টি হয়। ঐ সময় তারা নিজেদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সে সুখ খুজে পায় না। ঘরে ঘরে, পরিবারে-পরিবারে এ সব নিয়ে খারাপ সম্পর্ক তৈরি হয়। মুসলিম পরিবার ধ্বংস হওয়ার মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের শক্তি ক্ষয় ও নষ্ট হয়। দূর্বল হয়ে পড়ে মুসলিম জাতিসত্তা। এসব বর্তমান সমাজে হচ্ছে। এ সব কাজ এক ধরনের আগ্রাসন। মহান আল্লাহর বাণী ‘এবং কেউ এদরকে ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করলে তারা হবে সীমালংঘনকারী’ (২৩:৬-৭)। যারা কামনা বাসনা চরিতার্থ করে হালাল কাজের বাহিরে, তারাই শক্ত আগ্রাসনে লিপ্ত। কার বিরুদ্ধে আগ্রাসন মহান আল্লাহ বলেননি সেটা। এর মানে নিজেরা নিজেদের শত্রু, নিজের পরিবারের শত্রু। আর নির্লজ্জতা আমাদের অন্তরটাকে ধ্বংস করে দেয়। সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হলো ঈমান; এটাকে সংরক্ষণ করতে হবে। পর্ণোগ্রাফীর মতো নোংরা জিনিস আমাদের অন্তরটাকে ধ্বংস করে দেয়। দুমড়ে মুছড়ে ছিড়ে ফেলে। এমনটা ঘটতে দেবেন না নিজেরা নিজেদের সাথে। নিজেকেই নিজেই কন্ট্রোল করতে হবে; বন্ধ করতে হবে এ সব দেখা। আপনার নিজেকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমার কাছে কি আমার ঈমান অধিক মূল্যবান? আমার সালাত কি যথেষ্ট মূল্যবান আমার কাছে? না আমি এভাবে চলতে থাকবো, আর ভান করবো, আমিতো মুসলিম? সমস্যা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে না নিয়ে বা সংবেদনশীল না হয়ে মোকাবিলা করতে হবে বহুমাত্রিকভাবে। মহান আল্লাহর মদদ কামনা করতে হবে শেষ রাতে তাহুজ্জুদের নামাজের সময়। অবশ্যই নিজেকে নিজেই এ গর্হিত অপরাধ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। নিজের সিরিয়সনেস নিজেকে এ অশ্লিল, কদর্য-ঘৃণিত অবস্থা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এ ঘৃণিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন, আমিন।
– মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
পিএইচডি গবেষক (ইউজিসি ফেলো)
ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।