ইমান/আখলাক

মুনাফিক -এর বৈশিষ্ট্য

পূর্বের অংশ পড়ুন: ‘মুনাফিকী’ -এর পরিচয়

কুরআন ও সুন্নাহতে বর্ণিত মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্র :

কুরআন ও সুন্নাহর নানা স্থানে মুনাফিকদের প্রসঙ্গ এসেছে। সেখানে মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্র বা দোষ-ত্রুটি তুলে ধরা হয়েছে এবং মুমিনদের সে সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এমনকি মুনাফিকদের নিয়ে আল্লাহ তা‘আলা স্বতন্ত্র একটি সূরাই (সূরা মুনাফিকূন) নাযিল করেছেন। নিম্নে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হ’ল।

১. ব্যাধিগ্রস্ত মন : আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-فِيْ قُلُوْبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللهُ مَرَضاً وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ بِمَا كَانُوْا يَكْذِبُوْنَ ‘এদের (মুনাফিকদের) মনের মধ্যে রয়েছে মারাত্মক ব্যাধি। অতঃপর (প্রতারণার কারণে) আল্লাহ তা‘আলা এদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মিথ্যাবাদিতার কারণে তাদের জন্য রয়েছে পীড়াদায়ক শাস্তি’ (বাক্বারাহ ২/১০)

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, ‘দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর খেয়াল-খুশির ব্যাধিগুলো তাদের মনে জেঁকে বসায় তা নষ্ট হয়ে গেছে। আর ভাল ইচ্ছেগুলোর উপর মন্দ ইচ্ছেগুলো জয়যুক্ত হওয়ায় তাদের মন-মানসিকতা কলুষিত হয়ে গেছে। আর তাদের এহেন নষ্ট অবস্থা তাদেরকে ধ্বংসের কিনারে নিক্ষেপ করেছে। ফলে অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও এখন তাদের অন্তরের ব্যাধির চিকিৎসা করতে সক্ষম হচ্ছেন না। সেজন্যই আল্লাহ বলেছেন, তাদের মন ব্যাধিগ্রস্ত। ফলে আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন’।[1]

২. খেয়াল-খুশির প্রলোভন :

আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهِ مَرَضٌ  ‘আল্লাহকে ভয় করলে তোমরা অন্য পুরুষের সাথে কথা বলার সময় নম্র আওয়াযে কথা বলো না। এমন করলে যাদের মনে ব্যাধি আছে তারা তোমাদের প্রতি প্রলুব্ধ হবে’ (আহযাব ৩৩/৩২)। যাদের ঈমান দুর্বল তারা নারীদের (কোমল কথা শ্রবণ করে) প্রতি প্রলুব্ধ ও আকৃষ্ট হয়। তাদের ঈমানী দুর্বলতা ইসলামের প্রতি সন্দেহবশতঃ হ’লে তো তারা মুনাফিক। আর এজন্যই মুনাফিকরা আল্লাহর বিধি-বিধানকে লঘু মনে করে। আবার অশ্লীল কাজের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখানোর জন্যও তাদের ঈমান দুর্বল হ’তে পারে।[2]

৩. অহংকার প্রদর্শন :

মুনাফিকরা অহংকারী হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন,وَإِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا يَسْتَغْفِرْ لَكُمْ رَسُوْلُ اللهِ لَوَّوْا رُؤُوْسَهُمْ وَرَأَيْتَهُمْ يَصُدُّوْنَ وَهُم مُّسْتَكْبِرُوْنَ ‘এদের (মুনাফিকদের) যখন বলা হয় তোমরা (আল্লাহর রাসূলের কাছে) এসো তাহ’লে আল্লাহর রাসূল তোমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন এরা অবজ্ঞাভরে মাথা ঘুরিয়ে নেয় এবং তুমি (এও) দেখতে পাবে, তারা অহংকারের সাথে তোমাকে এড়িয়ে চলে’ (মুনাফিকূন ৬৩/৫)

মুনাফিকদের উপর আল্লাহর অভিশাপ হোক। তাদেরকে যখন ডেকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর রাসূলের নিকট এসো। তিনি তোমাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবেন, তখন অহংকারবশতঃ তারা সে কথা মোটেও গ্রাহ্য করে না বরং সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করে মাথা দুলিয়ে চলে যায়। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বলেছেন, অহংকার বশে ওদের তুমি মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখবে। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতিফল কী দাঁড়াবে তা উল্লেখ করে বলেছেন,سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَسْتَغْفَرْتَ لَهُمْ أَمْ لَمْ تَسْتَغْفِرْ لَهُمْ لَن يَغْفِرَ اللهُ لَهُمْ إِنَّ اللهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِيْنَ ‘(আসলে) তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর কিংবা না কর উভয়ই তাদের জন্য সমান। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কখনই তাদের ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ তা‘আলা কোন ফাসিক জাতিকে হেদায়াত দান করেন না’ (মুনাফিকূন ৬৩/০৬)[3]

৪. আল্লাহর আয়াত সমূহের সাথে ঠাট্টা-তামাশা :

মুনাফিকরা আল্লাহর আয়াত তথা কথা ও বিধিবিধান নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে। তাদের এ আচরণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَحْذَرُ الْمُنَافِقُوْنَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُوْرَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِيْ قُلُوْبِهِمْ قُلِ اسْتَهْزِئُوْا إِنَّ اللهَ مُخْرِجٌ مَّا تَحْذَرُوْنَ ‘মুনাফিকরা (সদাই) এ আশংকায় থাকে যে, তাদের বিপক্ষে এমন কোন সূরা অবতীর্ণ হয় কি-না যাতে তাদের মনের কথা ফাঁস হয়ে পড়ে। তুমি বল, তোমরা ঠাট্টা-মশকরা করতে থাক। তোমরা যার ভয় করছ, আল্লাহ তা ঠিকই প্রকাশ করে দিবেন’ (তওবা ৯/৬৪)

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগের মুনাফিকদের মনে সব সময় এই আশঙ্কা বিরাজ করত যে, কুরআনের কোন সূরা নাযিল হয়ে মুমিনদের নিকট তাদের মনের সকল দূরভিসন্ধি ও জারিজুরি ফাঁস করে দেয় কি-না? কেউ কেউ বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর এ আয়াত নাযিলের কারণ হ’ল, মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দোষারোপ করত এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মুসলমানদের কাজের সমালোচনা করত। যখন তারা এসব করত তখন বলত, দেখ, আল্লাহ আবার আমাদের গোপন কথা তাঁর নবীর নিকট ফাঁস করে দেন কি-না? ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বললেন, ওদের তুমি ধমকের সুরে ও শাস্তির ভয় দেখিয়ে বল, ঠিক আছে তোমরা ঠাট্টা-মশকরা চালিয়ে যাও। তোমরা যার ভয় করছ, আল্লাহ তা ঠিকই প্রকাশ করে দিবেন।[4]

৫. মুমিনদের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা :

আল্লাহ বলেন, وَإِذَا لَقُواْ الَّذِيْنَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَى شَيَاطِيْنِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُوْنَ، اللهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ- ‘তারা (মুনাফিকরা) যখন ঈমানদারদের সাথে সাক্ষাৎ করে তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি, আবার যখন তাদের দুষ্ট নেতাদের সঙ্গে একান্তে মিলিত হয় তখন বলে, আমরা তো অবশ্যই তোমাদের সাথে আছি। (ঈমানের কথা বলে তাদের সাথে) আমরা কেবলই ঠাট্টা করি। (মূলতঃ) আল্লাহ তাদের সাথে ঠাট্টা করেন এবং সীমালংঘনজনিত কাজে যাতে তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় সেজন্য তাদের অবকাশ দিয়ে রাখেন’ (বাক্বারাহ ২/১৪-১৫)

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, মুনাফিকরা প্রত্যেকেই দ্বিমুখী আচরণকারী। এক মুখে তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়। অন্য মুখে ভোল পাল্টিয়ে তারা তাদের কাফির ভাইদের সাথে মিলিত হয়। তাদের জিহবাও দু’টো। এক জিহবা দিয়ে তারা মুসলমানদের সাথে উপর উপর কথা বলে, আর অন্য জিহবা তাদের গোপন অবস্থার ভাষ্যকার।

কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারীদের সঙ্গে ঠাট্টা-তামশা করা এবং তাদের তুচ্ছ ভাবা ওদের স্বভাব। এ কারণে তারা কুরআন-সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের যে বিদ্যা-বুদ্ধি আছে, তা কেবলই তাদের ঔদ্ধত্য ও অহংকার বাড়িয়ে তোলে। বিনয়-নম্রতা কী তা তারা বোঝে না? ফলে অহংকার হেতু তারা অহি-র বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করে। ফলে প্রিয় পাঠক! আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, তারা অহি-র খোলামেলা সহজবোধ্য বিষয়ের সাথেও ঠাট্টা-তামাশা করতেই থাকে। তাইতো আল্লাহ তাদের সাথে ঠাট্টা করেন এবং সীমালংঘনজনিত কাজে যাতে তারা উদভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় সেজন্য তাদের অবকাশ দেন।[5]

৬. মানুষকে আল্লাহর পথের পথিকদের জন্য ব্যয়ে বাধা দান:

তাদের এরূপ অভ্যাস সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন,

هُمُ الَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ لاَ تُنْفِقُوْا عَلَى مَنْ عِندَ رَسُوْلِ اللهِ حَتَّى يَنْفَضُّوْا وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَفْقَهُوْنَ-

‘এই মুনাফিকরা তো সেসব লোক, যারা (আনছারদের) বলে, আল্লাহর রাসূলের (মুহাজির) সাথীদের জন্য তোমরা কোন রকম অর্থ ব্যয় করো না। (তাহ’লে আর্থিক সংকটের কারণে) তারা রাসূলের কাছ থেকে সরে পড়বে। অথচ আসমান ও যমীনের ধনভান্ডার সমূহ তো আল্লাহর। আসলে মুনাফিকরা কিছুই বুঝতে চায় না’ (মুনাফিকূন ৬৩/৭)

যায়েদ বিন আরকাম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি এক যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। সে যুদ্ধে আমি আব্দুল্লাহ বিন উবাই (মুনাফিকদের নেতা)-কে বলতে শুনলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটস্থ মক্কার মুহাজিরদের জন্য তোমরা মদীনাবাসীরা কিছুই খরচ করো না। দেখবে, অর্থকষ্টে পড়ে তারা তাঁর নিকট থেকে সরে পড়বে। মদীনায় ফিরে যেতে পারলে অবশ্যই আমরা সম্মানী লোকেরা সেখানে অবস্থিত ছোট লোকদের (অর্থাৎ মুহাজিরদের) বের করে দেব। আমি এ কথা আমার চাচা অথবা ওমর (রাঃ)-কে বললাম। তিনি কথাটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জানালেন। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালে আমি তাঁকে সব বললাম। তিনি আব্দুল্লাহ বিন উবাই ও তার সাথীদের ডাকিয়ে আনলেন। তারা শপথ করে বলল, এমন কথা তারা বলেইনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন আমাকে মিথ্যুক এবং আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে সত্যবাদী ভাবলেন। ফলে আমি যার পর নেই ব্যথিত হ’লাম। মনোকষ্টে আমি ঘরে বসে থাকলাম। এ অবস্থা দেখে আমার চাচা আমাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোমাকে মিথ্যুক মনে করেছেন এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলে কি তুমি মনে করলে? তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন, إِذَا جَاءكَ الْمُنَافِقُونَ  ‘যখন মুনাফিকরা তোমার নিকট আসে…। এ সূরা নাযিলের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমার নিকট লোক পাঠান। তিনি সূরা পড়ে শুনান এবং বলেন, إِنَّ اللهَ قَدْ صَدَّقَكَ يَا زَيْدُ ‘হে যায়েদ! আল্লাহ তোমাকে সত্যবাদী আখ্যা দিয়েছেন’।[6]

৭. মুমিনদের মূর্খ আখ্যা দেওয়া :

আল্লাহ বলেন, وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَـكِنْ لاَّ يَعْلَمُوْنَ ‘যখন তাদের (মুনাফিকদের) বলা হয়, লোকেরা যেমন ঈমান এনেছে তোমরাও তেমন ঈমান আনো, তখন তারা বলে, ঐ নির্বোধরা যেমন ঈমান এনেছে আমাদেরও কি তেমন ঈমান আনতে হবে? সাবধান! ওরাই আসলে নির্বোধ। কিন্তু ওরা তা অনুধাবন করতে পারে না’ (বাক্বারাহ ২/১৩)

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘মুনাফিকরা কুরআন ও সুন্নাহর ধারক-বাহকদের প্রান্তিক ও ব্রাত্যজন হিসাবে মনে করে। তাদের ধারণায় এদের বোধ-বুদ্ধি খুবই অল্প। তাদের মতে কুরআন-হাদীছের বাণী বাহকরা সেই গাধাতুল্য যে তার পিঠে বইয়ের বোঝা বহন করে। গাধার চিন্তা থাকে কেবল বোঝা বহন করা। তাই বইয়ের বোঝা বইলেও তো আর গাধাটাকে শিক্ষিত বলা যায় না। অহি-র বেসাতিকারীর পণ্য (অর্থাৎ ইসলামী বিধানের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় জীবনপাতকারীর চেষ্টা) মুনাফিকদের দৃষ্টিতে মন্দা ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের কাছে এ পণ্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তারা মনে করে ইসলামের অনুসারীরা নির্বোধ। ফলে তারা নিজেরা যখন একান্তে মিলিত হয় তখন মুসলমানদের নষ্ট ও অপয়া হিসাবে তুলে ধরতে তৎপরতা দেখায়’।[7]

৮. কাফেরদের সাথে সম্প্রীতি রাখা :

মুনাফিকদের সখ্যতা ও সম্প্রীতি মুমিনদের সাথে নয় বরং কাফেরদের সাথে লক্ষ্য করা যায়। কাফেরদের সাথে তাদের এই দহরম মহরমের জন্য আল্লাহ বলেছেন,بَشِّرِ الْمُنَافِقِيْنَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَاباً أَلِيْماً، الَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكَافِرِيْنَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ أَيَبْتَغُوْنَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ العِزَّةَ لِلّهِ جَمِيْعاً- ‘হে নবী! তুমি মুনাফিকদের এই সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক ভয়াবহ আযাব রয়েছে, যারা (দুনিয়ার ফায়েদার জন্য) ঈমানদারদের বদলে কাফেরদের বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। তারা কি এর দ্বারা এদের কাছ থেকে কোন সম্মান লাভের প্রত্যাশা করে? অথচ যাবতয়ি সম্মান আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট’ (নিসা ৪/১৩৮-৩৯)

এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে লক্ষ্য করে বলেছেন, হে রাসূল! যারা আমার সাথে কুফরী করে এবং আমার দ্বীনের মধ্যে বিরোধিতার পথ বের করে তাদের সাথে যারা বন্ধুত্ব করে মুমিনদের বাদ দিয়ে তারা মুনাফিক। এই মুনাফিকদের তুমি কঠিন শাস্তি লাভের সুসংবাদ দাও। তারা কি আমার প্রতি যারা ঈমান রাখে তাদের বাদ দিয়ে কাফেরদের বন্ধু ও সহযোগিতাকারী রূপে গ্রহণ করার মাধ্যমে তাদের কাছে শক্তি ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করে? কিন্তু সম্মান, শক্তি, সহযোগিতা সবই তো আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত। অতএব তারা কেন মুমিনদের বন্ধু ও সহযোগিতাকারী রূপে গ্রহণ করে না? তা করলে তারা আল্লাহর কাছে সম্মান, প্রতিরোধ ও সহযোগিতার আবেদন করতে পারত। যার কাছেই মূলতঃ সব শক্তি ও দাপট জমা রয়েছে। তিনি যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন। এভাবে ঐ মুনাফিকরাও তখন সম্মান ও শক্তির মালিক হ’ত।[8]

৯. মুমিনদের ব্যাপারে প্রতীক্ষা :

[মুনাফিকরা মুসলমানদের ভাল-মন্দের প্রতীক্ষা করে। ভাল কিছু হ’লে বলে, আমরা তো তোমাদেরই লোক। এ কাজে আমাদেরও অংশ আছে। আর খারাপ কিছু হ’লে কাফেরদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের সুবিধা আদায় করে।-অনুবাদক]

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, اَلَّذِيْنَ يَتَرَبَّصُوْنَ بِكُمْ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِّنَ اللهِ قَالُواْ أَلَمْ نَكُنْ مَّعَكُمْ وَإِنْ كَانَ لِلْكَافِرِيْنَ نَصِيْبٌ قَالُواْ أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِّنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فَاللهُ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَنْ يَجْعَلَ اللهُ لِلْكَافِرِيْنَ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ سَبِيْلاً ‘যারা (মুনাফিকরা) তোমাদের অকল্যাণের প্রতীক্ষায় থাকে। যদি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তোমাদের বিজয় আসে তখন এরা বলে, আমরা কি (এ যুদ্ধে) তোমাদের সাথে ছিলাম না? আর যদি কাফেরদের ভাগে বিজয়ের অংশ লেখা হয় তখন এরা বলে, আমরা কি তোমাদেরকে (গোপনে) সহায়তা করিনি এবং তোমাদেরকে মুসলমানদের কাছ থেকে রক্ষা করিনি? এমতাবস্থায় কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তোমাদের মধ্যে ফায়ছালা শুনিয়ে দেবেন এবং সেদিন আল্লাহ মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফেরদের কোন অজুহাত পেশ করার কোন পথই খোলা রাখবেন না’ (নিসা ৪/১৪১)। বস্ত্তত মুনাফিকরা মুমিনদের বেলায় অপেক্ষায় থাকে। যদি কোন যুদ্ধে মুসলমানদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের শত্রুপক্ষের উপর বিজয় দান করেন এবং তাতে গণীমতের সম্পদ অর্জিত হয় তখন তারা মুমিনদের নিকট এসে বলে, আমরা কি তোমাদের সাথে থেকে তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করিনি? তোমাদের সঙ্গে থেকে লড়াই করিনি? যেহেতু আমরা তোমাদের সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়েছি সেহেতু তোমরা গণীমতের একটা অংশ আমাদের দাও। আর যদি মুসলমানদের শত্রুপক্ষ কাফের বাহিনী মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে সক্ষম হয়, তখন মুনাফিকরা কাফেরদের নিকট গিয়ে বলে, আমরা কি তোমাদের বিজয়ের পথ করে দেইনি? সেজন্যই তো তোমরা মুমিনদের পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছ। আমরা তোমাদের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম। ফলে তারা অপদস্থ হয়ে যুদ্ধ বিরতি দিয়েছিল, আর সেই ফাঁকে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছ। এখন এরূপ করলেও কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ঠিকই মুমিন ও মুনাফিকদের মাঝে ঠিক ঠিক বিচার করবেন। চূড়ান্ত বিচারে তিনি মুমিনদের জান্নাতে দাখিল করবেন আর মুনাফিকদেরকে তাদের বন্ধু কাফেরদের সাথে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।[9]

১০. আল্লাহর সঙ্গে ধোঁকাবাজি এবং ইবাদতে অলসতা :

আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের এ আচরণ সম্পর্কে বলেন, إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوْا إِلَى الصَّلاَةِ قَامُوْا كُسَالَى يُرَآؤُوْنَ النَّاسَ وَلاَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ إِلاَّ قَلِيْلاً- ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। বস্ত্ততঃ এর মাধ্যমে তিনিই (আল্লাহই) তাদের ধোঁকায় ফেলে দেন। আর যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন অলস হয়ে দাঁড়ায়। তারা লোকদের দেখায়, বস্ত্ততঃ তারা আল্লাহকে খুবই কম স্মরণ করে’ (নিসা ৪/১৪২)

মুনাফিকরা মুখে ইসলাম গ্রহণ করার মাধ্যমে মুসলমানদের হাত থেকে নিজেদের জান-মাল হেফাযত করতে পারে; সরাসরি  কাফির হ’লে যা তারা পারত না। আর এভাবে তারা আল্লাহকে ধোঁকা দিচ্ছে। কিন্তু এমনটি করতে গিয়ে তারা বরং আল্লাহর ধোঁকায় পড়ে যাচ্ছে। কেননা আল্লাহ তাদের মনের খবর ও তাদের কুফরী আক্বীদা সম্পর্কে সম্যক অবগত আছেন। তারপরও তিনি তাদের মুখে ঈমান যাহির করার জন্য তাদের জান-মালের উপর হস্তক্ষেপ বন্ধ রেখেছেন দুনিয়াতে ছাড় দেওয়ার মানসে। অবশেষে আখিরাতে যখন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন কুফর গোপন রাখার কারণে তিনি তাদের ঠিকই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

আর ছালাতে যে তারা অলসতাভরে দাঁড়ায় তার অর্থ হ’ল, আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদের উপর যেসব আমল ফরয করেছেন, মুনাফিকরা তার কোনটাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়তে করে না। কারণ তারা পরকাল, পাপ-পুণ্য, শাস্তি ও পুরস্কার কোনটাতেই বিশ্বাস করে না। তারা কেবল জান বাঁচানোর তাকীদে কিছু বাহ্যিক আমল করে। মুমিনরা যাতে তাদের হত্যা না করে, তাদের অর্থ-সম্পদ ছিনিয়ে না নেয় সেই ভয়ে তারা এসব আমল করে। তাই ছালাতের মত একটি দৃশ্যমান ফরযে যখন তারা দাঁড়ায়, তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। যাতে মুমিনরা ছালাত আদায়কারী হিসাবে তাদের দেখতে পেয়ে তাদেরকে নিজেদের লোক বলে মনে করে। অথচ তারা তাদের লোক নয়। কেননা তারা ছালাতকে তাদের উপর ফরয বা আবশ্যিক বিষয় ভাবে না। তাই তারা আলস্যভরে ছালাতে দাঁড়ায়।

আল্লাহর বাণী- ‘তারা আল্লাহকে খুব অল্পই স্মরণ করে’ বাক্যটির উপর কেউ  হয়ত  প্রশ্ন করতে পারে  যে,  আল্লাহর যিকিরের ক্ষেত্রে ‘অল্প কিছু’ বলে কোন কথা আছে কি? তার উত্তরে বলা চলে, আয়াতের অর্থ আসলে তা নয়। এ কথার আসল অর্থ হচ্ছে- তারা আল্লাহকে লোক দেখানোর জন্য স্মরণ করে। এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য নিহত হওয়া, বন্দী হওয়া এবং ধন-সম্পদ খোয়ানোর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া। তাদের যিকির কোন বিশ্বাসীর যিকির নয়, যে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করে, একনিষ্ঠ মনে তার রুবূবিয়াতকে মেনে চলে। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা একে ‘অল্প’ বলেছেন। কেননা এই যিকিরের লক্ষ্য আল্লাহ তা‘আলা নন, আল্লাহর নৈকট্য লাভের ইচ্ছাও তাতে নেই, আল্লাহর নিকট প্রতিদান লাভের প্রত্যাশাও এখানে নেই। তাই আমলকারী যতই কষ্ট করুক এবং যত বেশী যিকির করুক তা মরুভূমির মরীচিকা সদৃশ গণ্য হবে। যা দেখতে পানির মত, কিন্তু আসলে পানি নয়।[10]

১১. দোটানা ও দোদুল্যমান মনোভাব :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,مُذَبْذَبِيْنَ بَيْنَ ذَلِكَ لاَ إِلَى هَـؤُلاء وَلاَ إِلَى هَـؤُلاَءِ- ‘এরা (কুফর ও ঈমানের) দোটানায় দোদুল্যমান, এরা না এদিকে না ওদিকে’ (নিসা ৪/১৪৩)

এ আয়াতের মর্মার্থ হ’ল, মুনাফিকরা তাদের দ্বীন সম্পর্কে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তারা কোন বিশ্বাসেই স্থির হ’তে পারে না। না তারা মুমিনদের সাথে জাগ্রত জ্ঞানের উপর আছে, না কাফেরদের সাথে অজ্ঞতার উপর আছে। তারা বরং দুইয়ের মাঝে অস্থিরমতি হয়ে বিরাজ করছে। ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ الشَّاةِ الْعَائِرَةِ بَيْنَ الْغَنَمَيْنِ تَعِيرُ إِلَى هَذِهِ مَرَّةً وَإِلَى هَذِهِ مَرَّةً.  ‘মুনাফিকের উদাহরণ দু’টো পাঁঠার মাঝে অবস্থিত একটি গরম হওয়া বকরির মত, একবার সে এটার কাছে যায়, আরেকবার সে অন্যটার কাছে যায়’।[11] ইমাম নববী বলেছেন, اَلْعَائِرَةُ অর্থ হয়রান, দোদুল্যমান, যে বুঝে উঠতে পারছে না, দু’জনের কার কাছে সে যাবে। আর تَعِيْرُ শব্দের অর্থ, সে কার কাছে যাবে না যাবে তা নিয়ে দোটানায় পড়েছে।[12]

১২. মুমিনদের সাথে ধোঁকাবাজি :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,يُخَادِعُوْنَ اللهَ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا وَمَا يَخْدَعُوْنَ إِلاَّ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُوْنَ- ‘তারা (মুখে ঈমানের দাবীদার মুনাফিকরা) আল্লাহ ও ঈমানদারদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করতে চায়। বস্ত্ততঃ তারা নিজেদেরকেই ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা এটা বুঝতে পারছে না’ (বাক্বারাহ ২/৯)

মুনাফিকদের তাদের রব ও মুমিনদের সাথে ধোঁকাবাজি এই যে, তারা মুখে কালিমা উচ্চারণ এবং আল্লাহকে বিশ্বাসের কথা বলে। কিন্তু অন্তরে তারা আল্লাহর প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস লুকিয়ে রাখে। সরাসরি আললাহকে অস্বীকার করলে তার বিধান মৃত্যুদন্ড অথবা বন্দীত্ব। এই উভয় শাস্তি থেকে দুনিয়াতে নিজেদের বাঁচানোর জন্য তারা মুখে ঈমান যাহির করে এবং অন্তরে কুফর লুকিয়ে রেখে আল্লাহ ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসীদের ধোঁকা দিতে চেষ্টা করে।[13]

১৩. আল্লাহদ্রোহী শাসকদের নিকট মামলা-মোকদ্দমা পেশ করা :

এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِيْنَ يَزْعُمُوْنَ أَنَّهُمْ آمَنُوْا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيْدُوْنَ أَنْ يَّتَحَاكَمُوْا إِلَى الطَّاغُوْتِ وَقَدْ أُمِرُوْا أَنْ يَّكْفُرُوْا بِهِ وَيُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُّضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيْداً- وَإِذَا قِيْلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللهُ وَإِلَى الرَّسُوْلِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِيْنَ يَصُدُّوْنَ عَنْكَ صُدُوْداً-

‘তুমি কি তাদের দেখনি, যারা দাবী করে যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা তোমার আগে অবতীর্ণ হয়েছে, তারা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছে। কিন্তু তারা আল্লাহদ্রোহী শক্তির কাছ থেকে ফায়ছালা পেতে চায়। অথচ এদের আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা এসব আল্লাহদ্রোহীর হুকুম অমান্য করবে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়। আর যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা কিছু নাযিল করেছেন তোমরা তার দিকে এবং রাসূলের দিকে (ফিরে) এসো, তখন তুমি মুনাফিকদের দেখবে, তারা তোমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে’ (নিসা ৪/৬০-৬১)

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, ‘যদি আপনি অহি-র সুস্পষ্ট বিধান মোতাবেক মুনাফিকদের মাঝে বিচার-ফায়ছালা করেন, তখন দেখবেন মুনাফিকরা তা থেকে পলায়ন করছে। আর আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী বিচারকার্যের দিকে ডাকলে তাদেরকে তা থেকে বিমুখ দেখতে পাবেন। আপনি যদি তাদের প্রকৃতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তাহ’লে দেখতে পাবেন, হেদায়াত থেকে তারা বহু দূরে অবস্থান করছে এবং অহি-র প্রতি তাদের মনে এতই বিদ্বেষ যে, তার দিকে ফিরে তাকাতেও তারা রাযী নয়।[14]

১৪. মুমিনদের মাঝে বিপর্যয় সৃষ্টি :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,لَوْ خَرَجُوْا فِيْكُم مَّا زَادُوْكُمْ إِلاَّ خَبَالاً وَلأَوْضَعُوْا خِلاَلَكُمْ يَبْغُوْنَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيْكُمْ سَمَّاعُوْنَ لَهُمْ وَاللهُ عَلِيْمٌ بِالظَّالِمِيْنَ ‘তারা তোমাদের সাথে বের হ’লে তোমাদের মধ্যে বিভ্রান্তিই শুধু বাড়িয়ে দিত এবং তোমাদের মাঝে ফিৎনা সৃষ্টির জন্য ছুটাছুটি করত। তাছাড়া তোমাদের মাঝেও তাদের কথা আগ্রহের সাথে শোনার মত লোক আছে। আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত’ (তওবা ৯/৪৭)

মুনাফিকরা মূলতঃ কাপুরুষ। তাই তোমাদের মাঝে যাতে বিদ্বেষ ও ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য তারা পরনিন্দার মাধ্যমে যারপর নাই চেষ্টা করে। তাছাড়া তোমাদের মাঝেতো তাদের অনুগত কিছু লোক আছে। তাদের কথাবার্তা, আলাপ-আলোচনা ওদের ভাল লাগে। ওরা তাদের কল্যাণ কামনা করে; অথচ তাদের অবস্থা ওরা ভাল করে জানে না। এতে করে মুমিনদের মাঝে একটা খারাপ অবস্থা এবং মহা বিপর্যয় দেখা দেয়।[15]

১৫. মিথ্যা শপথ, ভয়-ভীতি, কাপুরুষতা ও অস্থিরতা :

আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের উক্ত আচরণাদি সম্পর্কে বলেন,

وَيَحْلِفُوْنَ بِاللهِ إِنَّهُمْ لَمِنْكُمْ وَمَا هُم مِّنْكُمْ وَلَـكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُوْنَ- لَوْ يَجِدُوْنَ مَلْجَأً أَوْ مَغَارَاتٍ أَوْ مُدَّخَلاً لَّوَلَّوْا إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُوْنَ-

‘এরা আল্লাহর  নামে  শপ থ  করে  যে,  এরা  তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। অথচ এরা কখনই তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বস্ত্ততঃ এরা এমন লোক, যারা ভয় করে থাকে। এরা কোন আশ্রয়স্থল, কোন গুহা অথবা মাটির ভিতর ঢুকে পালাবার মত কোন সুড়ঙ্গ পেলে অবশ্যই তোমাদের ছেড়ে এসব জায়গার দিকে দ্রুত পালিয়ে যাবে’ (তওবা ৯/৫৬-৫৭)

আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে মুনাফিকদের অস্থিরতা, ভয়-ভীতি, অসহিষ্ণুতা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দিতে গিয়ে বলেন, ওরা জোরাল শপথ করে বলে যে, ওরা তোমাদের লোক, অথচ প্রকৃতপক্ষে ওরা তোমাদের লোক নয়। এই মিথ্যাকে সত্য প্রমাণ করতেই ওরা কসমের আশ্রয় নিয়েছে। ওরা তোমাদের প্রতি এতটাই বিদ্বেষপরায়ণ যে, যদি তোমাদের সংস্পর্শ থেকে বাঁচার জন্য কোন দুর্গ পেত, তবে তাকে আশ্রয়স্থল বানাত অথবা কোন গিরিগুহা পেলে তাতে ঢুকে পড়ত কিংবা মাটিতে কোন সুড়ঙ্গ পেলে তথায় পালিয়ে যেত। তোমাদের থেকে সরে পড়ার কাজটা তখন তারা খুব দ্রুতই করত। কারণ তারা তো মুমিনদের সাথে মিশে মনের ঘৃণা ও অসন্তোষ নিয়ে, ভালবাসার টানে নয়। তারা মন থেকে চায় যে, মুমিনদের সাথে যেন তাদের মিশতে না হয়। কিন্তু বাধ্য হয়ে মিশতে হচ্ছে বলে তারা সব সময় পেরেশানী, দুঃখ-বেদনা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিনাতিপাত করে।

অপরদিকে মুসলমানরা আল্লাহর রহমতে সব সময় উন্নতি, সম্মান ও বিজয়ের মধ্যে রয়েছে। ফলে যখনই কোন ক্ষেত্রে মুসলমানদের খুশির ঘটনা ঘটে তখনই তাদের মনোকষ্ট বেড়ে যায়। ফলে মুসলমানদের সংস্রবে যাতে থাকতে না হয় সেটাই তাদের কাম্য। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, তারা কোন আশ্রয়স্থল কিংবা কোন গিরিগুহা কিংবা কোন সুড়ঙ্গ পেলে দৌড়ে গিয়ে তাতে আশ্রয় নিত।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ وَإِن يَقُوْلُوْا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُّسَنَّدَةٌ يَحْسَبُوْنَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْ قَاتَلَهُمُ اللهُ أَنَّى يُؤْفَكُوْنَ-

‘তুমি যখন তাদের দেখবে তখন তাদের দেহকান্তি তোমাকে অভিভূত করবে এবং যদি তারা কথা বলে, তবে তুমি তাদের কথা সাগ্রহে শুনবেও। তারা দেয়ালে ঠেকানো কাঠের স্তম্ভ সদৃশ। তারা যেকোন শোরগোলকেই নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে। এরাই হচ্ছে দুশমন। সুতরাং এদের থেকে হুঁশিয়ার থেকো। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন। এরা বিভ্রান্ত হয়ে কোথায় ফিরে চলছে? (মুনাফিকূন ৬৩/৪)

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, এই মুনাফিকরা সবচেয়ে সুন্দর দেহের অধিকারী, সবচেয়ে আকষর্ণীয় ভাষার অধিকারী, কথাবার্তায় অত্যন্ত সুমিষ্ট; কিন্তু তাদের মন সবচেয়ে বেশী নোংরা এবং অন্তর অত্যন্ত দুর্বল। এজন্য তাদের উদাহরণ দেয়ালে ঠেকানো সেই কাঠের মত, যার কোন সারবত্তা নেই। যেগুলো শিকড় থেকে উপড়ে ফেলানো। তারপর সেগুলোকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে; যাতে মাটিতে পড়ে থাকায় পথচারীরা পা মাড়িয়ে না যায়।[16]

১৬. তারা যা করেনি তা করার নামে প্রশংসা পিয়াসী :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِيْنَ يَفْرَحُوْنَ بِمَا أَتَوْا وَّيُحِبُّوْنَ أَن يُحْمَدُوْا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوْا فَلاَ تَحْسَبَنَّهُمْ بِمَفَازَةٍ مِّنَ الْعَذَابِ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ

‘যারা নিজেরা যা করে তাতে আনন্দ প্রকাশ করে এবং নিজেরা যা করেনি তার জন্যও প্রশংসিত হ’তে ভালবাসে এমন লোকদের সম্পর্কে তুমি কখনো ভাববে না যে তারা আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। বরং তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১৮৮)

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে মুনাফিকদের কিছু লোক ছিল, যারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন কোন যুদ্ধে বের হ’তেন তখন তাঁর সাথে অংশ না নিয়ে পিছনে থেকে যেত। তারা এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে না যাওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করত। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মদীনায় ফিরে আসতেন তখন তারা তাঁর সামনে নানা অজুহাত পেশ করত। তারা এসব অজুহাতের জন্য আল্লাহর নামে কসমও করত। সেই সঙ্গে তারা যে কাজ করেনি, সেই কাজ করেছে মর্মে তাদের প্রশংসা করা হ’লে তারা খুব খুশি হয় এবং এরূপ কাজ না করেও প্রশংসা পেতে তারা খুব আকাঙ্ক্ষী হয়। এতদপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা উক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন।[17]

১৭. তারা সৎকর্মকে দূষণীয় গণ্য করে :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمِنْهُم مَّن يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ فَإِنْ أُعْطُواْ مِنْهَا رَضُواْ وَإِن لَّمْ يُعْطَوْاْ مِنهَا إِذَا هُمْ يَسْخَطُونَ ‘এদের (মুনাফিকদের) মাঝে এমন লোকও আছে, যারা দানের ব্যাপারে তোমার উপর দোষারোপ করে। কিন্তু সেই দান সামগ্রী থেকে তাদের কিছু দেওয়া হ’লে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। আর যদি তা থেকে তাদের দেওয়া না হয়, তখন তারা খুবই ক্ষুব্ধ হয়’ (তওবা ৯/৫৮)

একদল মুনাফিক নবী করীম (ছাঃ)-এর যুগে দান-ছাদাক্বা বণ্টন নিয়ে তাঁকে দোষারোপ করত। তারা সরাসরি দ্বীন ইসলাম অস্বীকার করত না। কেবল অস্বীকার করত তাদের দানের অংশ না পাওয়ার জন্য। এজন্যই যাকাতের অংশ পেলে তারা খুশি থাকত, না পেলে মনে মনে খুব অসন্তুষ্ট হ’ত। তারা যাকাত ও অন্যান্য দান বণ্টনকালে নবী করীম (ছাঃ)-কে এভাবে অন্যায় দোষারোপ করতো বলে আলোচ্য আয়াতে তাদের অভিযুক্ত ও ভৎর্সনা করা হয়েছে।[18]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

الَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لاَ يَجِدُوْنَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ

‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাদাক্বা করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে, আল্লাহ তাদেরকে বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (তওবা ৯/৭৯)

আবু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদেরকে যখন দান করার আদেশ দেওয়া হ’ল তখন আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও আমরা তা পালনে তৎপর হ’লাম। আবু আকীল অর্ধ ছা‘ (খেজুর কিংবা অন্য কিছু) নিয়ে এল। আরেকজন তার থেকে অনেক বেশী নিয়ে এল। তখন মুনাফিকরা বলতে লাগল, আল্লাহ তা‘আলা এই লোকের সামান্য দান গ্রহণের মুখাপেক্ষী নন। আর অন্যজন যে অনেক দান করল, সেও লোক দেখানোর জন্য। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন,

الَّذِيْنَ يَلْمِزُوْنَ الْمُطَّوِّعِيْنَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ فِي الصَّدَقَاتِ وَالَّذِيْنَ لاَ يَجِدُوْنَ إِلاَّ جُهْدَهُمْ فَيَسْخَرُوْنَ مِنْهُمْ سَخِرَ اللهُ مِنْهُمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ

‘মুমিনদের মধ্যে যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাদাক্বা করে এবং যারা নিজ শ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদের যারা দোষারোপ করে ও বিদ্রূপ করে, আল্লাহ তাদেরকে বিদ্রূপ করেন। তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি’ (তওবা ৯/৭৯)[19]

কোন অবস্থাতেই এই মুনাফিকদের দোষারোপ ও নিন্দাবাদের হাত থেকে কেউ নিষ্কৃতি পাবে না। এমনকি তাদের নিন্দা থেকে দানকারীরাও মুক্ত নয়। যদি তারা কেউ অনেক মাল দান করে তাহ’লে ওরা বলে, এ লোক দেখাচ্ছে। আর যদি কেউ সামান্য সম্পদ দান করার জন্য হাযির করে, তাহ’লেও বলে, আল্লাহ তা‘আলার এতটুকু দান গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই।[20]

১৮. নিম্নতম অবস্থানে  খুশী :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِذَا أُنْزِلَتْ سُوْرَةٌ أَنْ آمِنُوْا بِاللهِ وَجَاهِدُوْا مَعَ رَسُوْلِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُوْلُوْا الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوْا ذَرْنَا نَكُن مَّعَ الْقَاعِدِيْنَ ‘আর যখন এমন সূরা অবতীর্ণ হয়, যাতে বলা হয়, তোমরা আল্লাহর উপরে ঈমান আন এবং তাঁর রাসূলের সাথে জিহাদ কর, তখন তাদের মধ্যে যাদের শক্তিসামর্থ্য আছে তারা তোমার নিকট অব্যাহতি চায় এবং বলে, আমাদেরকে ছাড় দিন। যারা বসে থাকে, আমরা তাদের সাথে থাকব’ (তওবা ৯/৮৬)

যাদের জিহাদ করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থ-বিত্ত আছে, তারপরও তারা জিহাদে অংশ না নিয়ে বাড়ি বসে থাকার অনুমতি চায়, আল্লাহ এই আয়াতে তাদের নিন্দা করেছেন। এরা নিজেদের জন্য লজ্জা-অপমানে সন্তুষ্ট। এরা মহিলাদের  ন্যায় বাড়ি বসে থাকে সেনাবাহিনীর যুদ্ধে বেরিয়ে যাওয়ার পর। যুদ্ধ সংঘটিত হ’লে দেখা যায়, এদের মত কাপুরুষ আর দ্বিতীয় কেউ মানব সমাজে নেই। আর যখন শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করে, তখন লম্বা লম্বা কথা বলায় মানবসমাজে তাদের জুড়ি মেলে না। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেছেন,

أَشِحَّةً عَلَيْكُمْ فَإِذَا جَاءَ الْخَوْفُ رَأَيْتَهُمْ يَنْظُرُوْنَ إِلَيْكَ تَدُوْرُ أَعْيُنُهُمْ كَالَّذِي يُغْشَى عَلَيْهِ مِنَ الْمَوْتِ فَإِذَا ذَهَبَ الْخَوْفُ سَلَقُوْكُم بِأَلْسِنَةٍ حِدَادٍ

‘তারা তোমাদের প্রতি কুণ্ঠাবোধ করে। অতঃপর যখন তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন তুমি তাদের দেখবে তারা মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির মত চক্ষু উল্টিয়ে তোমার দিকে তাকায়। তারপর ভয় যখন দূরীভূত হয়ে যায়, তখন এরাই (গনীমতের) সম্পদের লালসায় তোমাদের সাথে বাকচাতুরী শুরু করে দেয়’ (আহযাব ৩৩/১৯)। অর্থাৎ নিরাপদকালে তারা তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার ভাষায় লম্বা লম্বা কথা বলে। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে তারা হয়ে যায় সবচেয়ে বড় কাপুরুষ।[21]

১৯. অন্যায়ের আদেশ ও ন্যায়ের নিষেধ :

মুমিনরা যেখানে ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ করে থাকে, সেখানে মুনাফিকরা তার বিপরীতে মানুষকে অন্যায় কথা ও কাজের আদেশ দেয় এবং ন্যায় কথা ও কাজ করতে নিষেধ করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ আচরণ অবৈধ আখ্যায়িত করে বলেছেন,

الْمُنَافِقُوْنَ وَالْمُنَافِقَاتُ بَعْضُهُم مِّن بَعْضٍ يَأْمُرُوْنَ بِالْمُنكَرِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمَعْرُوْفِ وَيَقْبِضُوْنَ أَيْدِيَهُمْ نَسُوْا اللهَ فَنَسِيَهُمْ إِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ

‘মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী একে অপরের অনুরূপ। এরা অন্যায়ের আদেশ দেয় এবং ন্যায়ের নিষেধ করে। আর তারা আল্লাহর পথে খরচ করা থেকে নিজেদের হাত গুটিয়ে রাখে। এরা (দুনিয়ায়) আল্লাহ তা‘আলাকে ভুলে গেছে তিনিও আখিরাতে তাদের ভুলে যাবেন। নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা পাপিষ্ঠ’ (তওবা ৯/৬৭)

তাদের হাত গুটিয়ে রাখার অর্থ আল্লাহর পথে জিহাদ ও জনকল্যাণমূলক কাজে তারা অর্থ ব্যয় করে না। তারা আল্লাহকে ভুলে যাওয়ার অর্থ তারা আল্লাহর যিকির করতে ভুলে গেছে। ফলে আল্লাহও তাদের ভুলে গেছেন অর্থ- তাদেরকে ভুলে যাওয়া লোক যেমন আচরণ তাদের সাথে করে, তিনিও তাদের সাথে সেরূপ আচরণ করবেন। যেমন তিনি অন্যত্র বলেছেন, وَقِيْلَ الْيَوْمَ نَنْسَاكُمْ كَمَا نَسِيْتُمْ لِقَاء يَوْمِكُمْ هَذَا ‘আর বলা হবে, তোমরা যেমন এই দিনের সাক্ষাৎ লাভের কথা ভুলে গিয়েছিলে, আজ আমিও তেমনি তোমাদের ভুলে গিয়েছি’ (জাছিয়া ৪৫/৩৪)। মুনাফিকরা পাপাচারী অর্থ তারা সত্যপথ থেকে বিচ্যুত; বাতিল পথের অন্তর্ভুক্ত।[22]

২০. জিহাদে বিরাগ ও তা থেকে পিছুটান :

মুনাফিকরা ইসলামের খাতিরে জিহাদে অংশগ্রহণে মোটেও আগ্রহ বোধ করে না; বরং জিহাদে অংশগ্রহণ না করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ আচরণ প্রসঙ্গে বলেন,

فَرِحَ الْمُخَلَّفُوْنَ بِمَقْعَدِهِمْ خِلاَفَ رَسُوْلِ اللهِ وَكَرِهُواْ أَن يُجَاهِدُوْا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَقَالُوْا لاَ تَنفِرُوْا فِي الْحَرِّ قُلْ نَارُ جَهَنَّمَ أَشَدُّ حَرّاً لَّوْ كَانُوْا يَفْقَهُوْنَ

‘যুদ্ধ থেকে পশ্চাদপসরণকারীরা আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে নিজেদের ঘরে বসে থাকতে পেরে খুব খুশি হয়েছে এবং নিজেদের জান-মাল দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা অপসন্দ করে; আর তারা বলেছে, এই গরমে তোমরা বের হয়ো না। বল, জাহান্নামের আগুন এর চাইতেও অধিক উত্তপ্ত। যদি তারা এ কথা বুঝতে পারত’ (তওবা ৯/৮১)

তাবুক যুদ্ধে কিছু মুনাফিক নানা বাহানা তুলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের সঙ্গে যুদ্ধে যায়নি। ছাহাবীগণের যুদ্ধে বেরিয়ে পড়ার পর তারা যে বাড়ী বসে থাকল সেজন্য তারা বরং খুব আনন্দিত। তারা নিজেদের জান-মাল ব্যয় করে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে একেবারেই অনাগ্রহী, অনিচ্ছুক। তাইতো তারা একে অপরকে বলে, এই গরমে যুদ্ধের জন্য বাইরে বের হয়ো না। তাবুক যুদ্ধ যে সময় হ’তে যাচ্ছিল, তখন ছিল প্রচন্ড গরম। তাইতো তারা বলেছিল, এই গরমে বাইরে বের হওয়ার দরকার নেই। তদুত্তরে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে বললেন, তুমি ওদের বলে দাও, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতার জন্য যে জাহান্নামের আগুনের দিকে তোমরা ধাবিত হচ্ছ, তা তোমাদের পালিয়ে বাঁচা গরম থেকে বহু বহু গুণ বেশী গরম।[23]

২১. যুদ্ধ না করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং ভীতিকর গুজব ছড়ানো :

[ঈমানদাররা যাতে যুদ্ধের ময়দানে না যায়, আর গিয়ে থাকলে যাতে ময়দান ছেড়ে চলে আসে মুনাফিকরা সেজন্য তাদের অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের মাঝে এমন কথা ছড়ায় যাতে ভয়ে তাদের মন অস্থির হয়ে পড়ে।] আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَإِذْ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِم مَّرَضٌ مَّا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُوْلُهُ إِلَّا غُرُوْراً- وَإِذْ قَالَت طَّائِفَةٌ مِّنْهُمْ يَا أَهْلَ يَثْرِبَ لَا مُقَامَ لَكُمْ فَارْجِعُوْا وَيَسْتَأْذِنُ فَرِيْقٌ مِّنْهُمُ النَّبِيَّ يَقُوْلُوْنَ إِنَّ بُيُوْتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍ إِنْ يُرِيْدُوْنَ إِلَّا فِرَاراً-

‘আর স্মরণ কর, যখন মুনাফিক এবং যাদের অন্তরে ব্যাধি ছিল তারা বলতে লাগল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের সঙ্গে যে ওয়াদা করেছেন তা প্রতারণা বৈ কিছুই নয়। আর তাদের একটি দল বলেছিল, হে ইয়াছরিবের অধিবাসীরা! আজ (শত্রুবাহিনীর সামনে) তোমাদের দাঁড়াবার মত কোন জায়গা নেই। অতএব তোমরা ফিরে যাও। তাদের একাংশ তোমার কাছে এই বলে অনুমতিও চাইছিল যে, আমাদের বাড়ী-ঘরগুলো অরক্ষিত (তাই আমাদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিন)। অথচ তা অরক্ষিত ছিল না। এরা আসলে ময়দান থেকে পালাতে চেয়েছিল’ (আহযাব ৩৩/১২-১৩)

২২. মুমিনদের সাথে থাকায় গড়িমসি :

যারা মুনাফিক তারা মুমিনদের সাথে জিহাদ কিংবা অনুরূপ কোন কাজে শরীক হ’তে গড়িমসি করে। মূলতঃ মুমিনদের উপর আপতিত বালা-মুছীবত থেকে বাঁচাই তাদের লক্ষ্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنَّ مِنْكُمْ لَمَن لَّيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُم مُّصِيْبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُن مَّعَهُمْ شَهِيْداً ‘তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন লোক আছে, যে (যুদ্ধের ব্যাপারে) গড়িমসি করবে। তোমাদের উপর কোন বিপদ-মুছীবত চেপে বসলে সে বলবে, আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন। কেননা আমি সে সময় তাদের সাথে ছিলাম না’ (নিসা ৪/৭২)

আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের স্বভাব-চরিত্র বলতে গিয়ে মুমিনদের লক্ষ্য করে বলেছেন যে, হে মুমিনগণ! তোমাদের দল ও জাতিভুক্ত কিছু লোক, যারা তোমাদের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে এবং যাহির করে যে, তারা তোমাদের দাওয়াত ও মিল্লাতের লোক, আসলে তারা মুনাফিক। তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জিহাদে অংশ নিতে তারা গড়িমসি করে। তোমরা তাদেরকে তোমাদের সাথে যেতে বললে নানা অজুহাত ও টালবাহানা করে। তারপর যুদ্ধে যখন তোমাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়- যেমন পরাজয় কিংবা নিহত ও আহত হওয়ার মত ঘটনা ঘটে তখন তারা বলে, বেশ হয়েছে, আল্লাহ আমাদের উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন। এজন্যেই তো তাদের সাথে যুদ্ধে আমরা ছিলাম না। থাকলে আমাদেরও আঘাত, যন্ত্রণা, খুন-খারাবী একটা কিছু ঘটে যেত। বিদ্বেষবশতঃ তোমাদের প্রতি তোমাদের সাথে যুদ্ধে অংশ না নেওয়ায় সে খুশি। কেননা আল্লাহর পথে যুদ্ধে মুমিনদের যে পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে শিথিলতা দেখালে যে শাস্তির কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন, তার কোনটাই এই মুনাফিকরা বিশ্বাস করে না। ফলে তারা না পুণ্যের প্রত্যাশী, না শাস্তির ভয়ে ভীত।[24]

২৩. জিহাদে অংশ না নিতে অনুমতি প্রার্থনা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمِنْهُم مَّنْ يَقُوْلُ ائْذَن لِّيْ وَلاَ تَفْتِنِّيْ أَلاَ فِي الْفِتْنَةِ سَقَطُواْ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيْطَةٌ بِالْكَافِرِيْنَ ‘আর তাদের ভেতর এমন মানুষও আছে যারা বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে মুছীবতে ফেলবেন না। সাবধান! এরা তো মুছীবতে পড়েই আছে। আর জাহান্নাম তো কাফেরদের চারিদিকে ঘিরে রয়েছে’ (তওবা ৯/৪৯)

আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াতে তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে কিছু মুনাফিকের স্বভাব তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, হে রাসূল! কিছু মুনাফিক তোমাকে বলে, আমাকে বাড়ি বসে থাকার অনুমতি দিন। তোমার সাথে যুদ্ধে গিয়ে রোমের সুন্দরী কিশোরীদের ফিৎনায় পড়ে যাই কি-না তাতেই এ অনুমতি চাচ্ছি। আল্লাহ বলেন, এ ধরনের কথা বলে তো ওরা ফিৎনায় পড়েই রয়েছে।[25]

২৪. জিহাদ থেকে পিছনে থাকার জন্য অজুহাত পেশ :

মুনাফিকরা কোন কারণ ছাড়াই যুদ্ধে অংশ নেয় না। এজন্য কৈফিয়তের সম্মুখীন হ’লে তাদের মিথ্যা অজুহাত পেশের অন্ত থাকে না। আল্লাহ তা‘আলা সে কথা তুলে ধরেছেন,

يَعْتَذِرُوْنَ إِلَيْكُمْ إِذَا رَجَعْتُمْ إِلَيْهِمْ قُل لاَّ تَعْتَذِرُوْا لَن نُّؤْمِنَ لَكُمْ قَدْ نَبَّأَنَا اللهُ مِنْ أَخْبَارِكُمْ وَسَيَرَى اللهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُوْلُهُ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُوْنَ

‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তোমাদের কাছে ওযর পেশ করবে। বল, কোন ওযর-আপত্তি পেশ করো না। আমরা আর কখনো তোমাদের বিশ্বাস করব না। আল্লাহ তা‘আলা ইতিমধ্যেই তোমাদের সব কথা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অবশ্যই তোমাদের ক্রিয়াকলাপ দেখবেন। অতঃপর যিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা তাঁর কাছে তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে এবং তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন দুনিয়ায় তোমরা কী কী কাজ করেছিলে’ (তওবা ৯/৯৪)

মুনাফিকদের বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলছেন যে, মুসলমানরা যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে মদীনায় ফিরে আসবে তখন এই মুনাফিকরা কেন যুদ্ধে যেতে পারেনি সে সম্পর্কে নানা কৈফিয়ত পেশ করবে। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে আল্লাহ তা‘আলা পূর্বেই বলে দিচ্ছেন, তুমি তাদের বলবে, তোমাদের আর এসব কৈফিয়ত, অজুহাত পেশ করার দরকার নেই। আমরা তোমাদের বিশ্বাস করি না। তোমাদের খবরাদি আল্লাহ তা‘আলা আগেই আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমাদের ক্রিয়াকলাপ অচিরেই মানুষের সামনে তুলে ধরবেন। তারপর কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে দৃশ্য-অদৃশ্যের পরিজ্ঞাত মহান আল্লাহর নিকট ফিরে যেতে হবে। সেখানে তিনি তোমাদের ভাল-মন্দ সকল কাজের খবর দিবেন এবং তদনুযায়ী প্রতিদান দেবেন।[26]

২৫. মানুষের দৃষ্টির আড়াল হওয়ার চেষ্টা :

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَسْتَخْفُوْنَ مِنَ النَّاسِ وَلاَ يَسْتَخْفُوْنَ مِنَ اللهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُوْنَ مَا لاَ يَرْضَى مِنَ الْقَوْلِ وَكَانَ اللهُ بِمَا يَعْمَلُوْنَ مُحِيْطاً

‘এরা মানুষের কাছ থেকে নিজেদের কর্ম গোপন রাখতে চায়। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে তারা কিছুই গোপন করতে পারবে না। তারা যখন রাতের অন্ধকারে এমন সব বিষয়ে সলাপরামর্শ করে যা তিনি পসন্দ করেন না, তখনও তিনি তাদের সাথেই থাকেন। এরা যা কিছু করে তা সম্পূর্ণই আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানের আওতাধীন’ (নিসা ৪/১০৮)

এ আয়াতে মুনাফিকদের উক্ত আচরণের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তাদের মন্দ কাজগুলো যাতে মানুষের দৃষ্টিতে ধরা না পড়ে, সেজন্য তারা তা লুকিয়ে করে। যার ফলে মানুষ তাদের প্রতিবাদ করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কাছে তো তারা তা খোলামেলাই করছে। কেননা তিনি তাদের সব গোপন কথা জানেন এবং তাদের মনের অবস্থাও তাঁর সুবিদিত। এজন্যই তিনি তাদের ধমক ও ভীতি প্রদর্শন স্বরূপ বলেছেন, রাতের অাঁধারে যখন তারা গোপনে সলাপরামর্শ করে যা আল্লাহর নিকট পসন্দনীয় নয় সে সময়েও আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন। তাদের সব কাজই আল্লাহর আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে।[27]

পরবর্তী অংশ পড়ুন: মুনাফিকী থেকে বাঁচার পথ

মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক


 

[1]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৪৯।

[2]. ইবনু জারীর ত্বাবারী, জামিউল বায়ান ২০/২৫৮।

[3]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/৪৭৩।

[4]. জামিউল বায়ান ১৪/৩৩১।

[5]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫০।

[6]. বুখারী হা/৪৯০০; মুসলিম হা/২৭৭২।

[7]. ইবনুল কাইয়িম, মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫০।

[8]. জামিউল বায়ান ৯/৩১৯।

[9]. প্রাগুক্ত ৯/৩২৪।

[10]. ইবনু জারীর ত্বাবারী, জামিউল বায়ান ৫/৩২৯।

[11]. মুসলিম হা/২৭৮৪।

[12]. নববী, মুসলিম শারহু ১৭/১২৮।

[13]. জামিউল বায়ান ১/২৭২।

[14]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫৩।

[15]. ইবনু কাছীর, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/১৬০।

[16]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫৪।

[17]. বুখারী হা/৪৫৬৭; মুসলিম হা/২৭৭৭।

[18]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ২/১৮২।

[19]. বুখারী হা/৪৬৬৮; মুসলিম হা/১০১৮।

[20]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/১৭৪।

[21]. ঐ ৪/১৯৬।

[22]. ঐ ৪/১৭৩।

[23]. ঐ ৪/১৮৯।

[24]. জামিউল বায়ান ৮/৫৩৮।

[25]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ৪/১৬১।

[26]. ঐ, ৪/২০১।

[27]. ঐ, ২/৪০৭।

[28]. তাফসীরুল কুরআনিল আযীম ২/১০৬।

[29]. ঐ, ৪/৮৩।

[30]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৪৯।

[31]. বুখারী হা/৩৪; মুসলিম হা/৫৮।

[32]. শরহুনববী মুসলিম ২/৪৬-৪৭।

[33]. মুসলিম হা/৬২২।

[34]. মাদারিজুস সালিকীন ১/৩৫৪।

[35]. মুসলিম হা/৬৫৪।

[36]. আওনুল মা‘বূদ ২/১৭৯।

[37]. তিরমিযী হা/২০২৭, হাকেম এটিকে ছহীহ বলেছেন।

[38]. তরীকুল হিজরাতাইন, পৃঃ ৬০৩।

[39]. শু‘আবুল ঈমান ১০/২২৩।

[40]. ইগাছাতুল লাহফান ১/২৫০।

মন্তব্য করুন

Back to top button