জুম‘আর কতিপয় বিধান
ইসলামে বাৎসরিক ঈদ হচ্ছে দু’টি- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। আর সাপ্তাহিক ঈদ হচ্ছে জুম‘আর দিন। এছাড়া অন্য কোন ঈদ ইসলামে স্বীকৃত নয়। আলোচ্য নিবন্ধে জুম‘আর কতিপয় বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল-
আল্লাহ তা‘আলা জুম‘আর ছালাতের নির্দেশ দিয়ে বলেন,
يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلاَةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ، فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلاَةُ فَانْتَشِرُوْا فِي الْأَرْضِ…
‘হে ঈমানদারগণ! জুম‘আর দিনে যখন তোমাদেরকে ছালাতের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা (ছালাতের মাধ্যমে) আল্লাহর স্মরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা তা উপলব্ধি কর। অতঃপর যখন ছালাত শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা (কাজ-কর্মের জন্য) পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো…’ (জুম‘আহ ৬২/৯-১০)।
জুম‘আর ছালাত কাদের উপর ফরয?
চার শ্রেণীর লোক ব্যতীত প্রত্যেক মুসলিমের উপরে জুম‘আর ছালাত ফরয করা হয়েছে। এ চার শ্রেণীর ব্যক্তি হচ্ছে- কৃত দাস-দাসী, নাবালেগ সন্তান, রোগী, মহিলা ও মুসাফির। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
اَلْجُمُعَةُ حَقٌّ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ فِيْ جَمَاعَةٍ إِلاَّ عَلَى أَرْبَعَةٍ عَبْدٍ مَمْلُوْكٍ أَوْ اِمْرَأَةٍ أَوْ صَبِيٍ أَوْ مَرِيْضٍ.
‘চার ব্যক্তি ব্যতীত প্রত্যেক মুসলিমের উপরে জুম‘আর ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা ওয়াজিব; (তারা হচ্ছে) কৃত দাস-দাসী, মহিলা, নাবালেগ সন্তান ও রোগী’।[1]
জুম‘আর দিনে গোসল করার হুকুম :
জুম‘আর ছালাতের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জন করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। জুম‘আর দিনে গোসল করা এবং জুম‘আর ছালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিনে গোসল করবে (তার জন্য) গোসল করাই উত্তম’।[2]
অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করবে, সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করবে (নখ, গোঁফ, নিম্নাংশের চুল ইত্যাদি পরিষ্কার করবে) এবং তার নিজস্ব তেল ব্যবহার করবে অথবা তার গৃহে থাকা সুগন্ধি ব্যবহার করবে। অতঃপর বের হবে এবং বসে থাকা দু’মুছল্লীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাবে না। অতঃপর তার পক্ষে যত রাক‘আত সম্ভব ছালাত আদায় করবে। এরপর যখন ইমাম ছাহেব খুৎবা প্রদান করবে তখন চুপ থাকবে, তার জন্য তার এ জুম‘আ থেকে পরবর্তী জুম‘আর মাঝের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে’।[3]
এ হাদীছ থেকে বুঝা গেল যে, জুম‘আর দিনে গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত এবং এর ফলে পাপ সমূহ ক্ষমা হয়ে যাবে। তবে কবীরা গোনাহ নয়।
কবীরা বা বড় গুনাহ তওবা ব্যতীত ক্ষমা করা হবে না। আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেছেন, ‘তোমোদেরকে যেসব বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে, তোমরা যদি সেগুলো থেকে বেঁচে থাকো তাহ’লে আমি তোমাদের ছোট ছোট গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিব এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থান দান করব’ (নিসা ৪/৩১)।
আর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের মাঝের সময়ে সংঘটিত গুনাহের জন্য প্রতি ওয়াক্তের ছালাত, এক জুম‘আ হ’তে অন্য জুম‘আ এবং এক রামাযান হ’তে আরেক রামাযানের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত গুনাহের জন্য রামাযানের ছাওম কাফ্ফারাহ স্বরূপ; যদি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়’।[4]
দৈনন্দিন ব্যবহৃত পোষাক ব্যতীত জুম‘আর জন্য নতুন বা পৃথক পোষাক পরিধান করা মুস্তাহাব (সুন্নাত)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি জুম‘আর দিনে তার কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত দু’টি কাপড় ব্যতীত অন্য দু’টি কাপড় ব্যবহার করতে সক্ষম হয় তাহ’লে সে যেন তা ব্যবহার করে (এতে কোন সমস্যা নেই)’।[5]
জুম‘আর ছালাতের জন্য কতজন মুছল্লীর উপস্থিতি যরূরী?
ইমামের সাথে মাত্র একজন মুছল্লী থাকলে জুম‘আর ছালাত আদায় করা যাবে। জুম‘আর ছালাত অন্যান্য ফরয ছালাতের ন্যায় ফরয। অতএব সর্বনিম্ন যতজনে জামা‘আত কায়েম হয় ততজন উপস্থিত হ’লেই জামা‘আত করা যাবে। আর ইমামের সাথে সর্বনিম্ন একজন থাকলেই জামা‘আতের ছওয়াব অর্জিত হয়। এর চেয়ে বেশী শর্ত আরোপের এবং সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ছহীহ কোন দলীল নেই।
আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, সংখ্যা নির্ধারণে পনেরটি মত উল্লেখিত হয়েছে। কিন্তু কোন মতের পক্ষেই ছহীহ দলীল নেই। যদি দু’জন মুছল্লী উপস্থিত থাকে তাহ’লে একজন খুৎবা দিবে এবং আরেকজন হবে শ্রোতা এবং এ দু’জনে জামা‘আত কায়েম করবে। কা‘ব ইবনু মালেক (রহঃ) বলেছেন, সর্বপ্রথম যিনি আমাদের নিয়ে জুম‘আর ছালাত আদায় করেন তিনি হচ্ছেন আস‘আদ ইবনু যুরারাহ …। জিজ্ঞেস করা হ’ল সে সময় আপনারা কতজন ছিলেন তিনি উত্তরে বললেন, আমরা চল্লিশজন ছিলাম।[6] উক্ত আছারটিতে সেই জুম‘আর ছালাতে কতজন উপস্থিত ছিল তা বুঝানো হয়েছে। কিন্তু চল্লিশজনই হ’তে হবে তা বলা হয়নি।
উল্লেখ্য, জাবের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, ‘সুন্নাত হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক চল্লিশজন অথবা এর চেয়ে বেশী সংখ্যক মুছল্লী উপস্থিত হ’লে জুম‘আহ, ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর আদায় করতে হবে’। কিন্তু আছারটি নিতান্তই যঈফ।[7]
জুম‘আর ছালাতের জন্য আগেভাগে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার ফযীলত :
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিনে ফরয গোসল করে প্রথমে মসজিদে উপস্থিত হ’ল সে যেন একটি উট ছাদাক্বা করল। এরপর যে ব্যক্তি মসজিদে আসল সে যেন একটি গরু ছাদাক্বা করল। এরপর যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল ছাদাক্বা করল। এরপর যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি মুরগী ছাদাক্বা করল। অতঃপর যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম ছাদাক্বা করল। অতঃপর যখন ইমাম খুৎবার জন্য বেরিয়ে আসেন তখন ফেরেশতারা উপদেশ শ্রবণ করা শুরু করেন’।[8]
জুম‘আর দিন ও জুম‘আর রাতের ফযীলত :
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয় সেগুলোর মধ্যে জুম‘আর দিন হচ্ছে সর্বোত্তম। কারণ এ দিনেই আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছিল, এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল, এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছিল। আবার এ দিনেই ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে’।[9]
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে মুসলিম ব্যক্তি জুম‘আর দিনে অথবা জুম‘আর রাতে মারা যাবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কবরের ফেতনা থেকে রক্ষা করবেন’।[10] (কিন্তু সে ব্যক্তিকে সত্যিকারের মুসলিম হ’তে হবে)।
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুম‘আর দিন। এ দিনেই আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তাঁর রূহ কবয করা হয়েছে, এ দিনেই সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে এবং এ দিনেই সকলে বেহুঁশ হয়ে যাবে। এ দিনে তোমরা আমার প্রতি বেশী বেশী দুরূদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের পাঠকৃত দুরূদ আমার নিকট পেশ করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আপনি মাটি হয়ে যাবেন এমতাবস্থায় আপনার প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে পাঠকৃত দুরূদ কিভাবে পেশ করা হবে। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা যমীনের জন্য নবীগণের শরীরগুলো খেয়ে ফেলাকে হারাম করে দিয়েছেন’।[11]
জুম‘আর দিনে বা রাতে সূরা কাহফ পাঠের ফযীলত :
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিনে সূরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা দু’জুম‘আর মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দিবেন’।[12] অন্য হাদীছে জুম‘আর রাতেও সূরা কাহফ পাঠ করার ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।[13]
জুম‘আর দিনে দো‘আ কবূলের সময় :
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর দিনের কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘এ দিনে এমন একটি সময় আছে যে, কোন মুসলিম বান্দার ভাগ্যে যদি সময়টি মিলে যায় এমতাবস্থায় যে, সে ছালাত আদায় করছে আর আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করছে তাহ’লে আল্লাহ্ তাকে তাই প্রদান করবেন। তিনি তাঁর হাতের ইঙ্গিতে বুঝালেন যে, সময়টি খুবই সামান্য’।[14]
জুম‘আর খুৎবা চলা অবস্থায় চুপ থাকার ফযীলত:
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তুমি যদি জুম‘আর দিন ইমাম কর্তৃক খুৎবা দেয়ার সময় তোমার কোন সাথীকে বল চুপ করো, তাহ’লে তুমি ত্রুটি করলে’।[15]
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করে জুম‘আর ছালাত আদায় করার জন্য এসে মনোযোগের সাথে খুৎবা শ্রবণ করল এবং চুপ থাকল তার এ জুম‘আ থেকে পরের জুম‘আ পর্যন্ত সংঘটিত গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং এর সাথে অতিরিক্ত আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি খুৎবা চলা অবস্থায় পাথর বা কোন বস্ত্ত স্পর্শ করবে সে ত্রুটিকারী হিসাবে গণ্য হ’ল’।[16]
উক্ত হাদীছ দু’টি থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, জুম‘আর খুৎবা চলাকালীন সময় কথা বলা যাবে না, কোন কিছু নাড়াচাড়া করা যাবে না এবং কাউকে চুপ করতেও বলা যাবে না এবং কারো দিকে ইশারাও করা যাবে না।
খুৎবা চলা অবস্থায় দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার বিধান :
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর দিনে খুৎবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে এসে বসে পড়লে তিনি তাকে বললেন, তুমি কি ছালাত আদায় করেছ? সে ব্যক্তি বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি দাঁড়াও এবং দু’রাক‘আত ছালাত আদায় কর’।[17]
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে আরো বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন জুম‘আর দিনে খুৎবা দিচ্ছিলেন তখন সুলাইক আল-গাতফানী (রাঃ) এসে বসে পড়লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, ‘হে সুলাইক! দাঁড়াও, সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় কর। অতঃপর বললেন, জুম‘আর দিনে তোমাদের কেউ যখন ইমাম কর্তৃক খুৎবা দেয়ার সময় মসজিদে আসবে তখন সে যেন দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে এবং দু’রাক‘আত আদায়ে যেন সংক্ষিপ্ত করে’।[18]
এখানে একটি বিষয় ব্যাখ্যার দাবী রাখে যে, আমাদের সমাজে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, খুৎবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। অতএব খুৎবা চলাকালীন সময়ে কোন প্রকার ছালাত আদায় করা যাবে না। উপরোক্ত হাদীছের উপর আমল না করার বাহানা স্বরূপ এমন কথা বলা হয়। প্রশ্ন হ’ল, আমরা কার নিকট থেকে জেনেছি যে, খুৎবা শোনা ওয়াজিব? খুৎবা চলা অবস্থায় চুপ থাকা এবং তা শ্রবণ করার শিক্ষা পেয়েছি নবী করীম (ছাঃ) থেকেই। তাহ’লে বিষয়টিকে সহজভাবে নিয়ে যদি বলি যে, যিনি খুৎবা চলা অবস্থায় চুপ থাকতে বলেছেন এবং খুৎবা শ্রবণ করতে বলেছেন। তিনিই তো আবার খুৎবা চলা অবস্থায় শত শত ছাহাবীর সম্মুখে বসে পড়ার পরেও এক ছাহাবীকে বসা থেকে উঠিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব এখানে আর কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন পড়ে না।
একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, খুৎবা চলা অবস্থায় কার ক্ষেত্রে কথা বলা নিষেধ এবং চুপ থাকা ও খুৎবা শ্রবণ করা যরূরী? যিনি খুৎবা চলা অবস্থায় অথবা তার পূর্বেই মসজিদে উপস্থিত হয়েছেন তার জন্যই যরূরী। আর যিনি খুৎবা চলা অবস্থায় মসজিদে আসবেন তার জন্য দু’রাক‘আত সংক্ষিপ্ত ছালাতের সময় বাদ দিয়ে বাকী সময় খুৎবা শ্রবণ করা যরূরী। যিনি মসজিদে আসেননি তার জন্য এটি যরূরী নয়। খুৎবা শ্রবণ করা এমন ধরনের ওয়াজিব বা যরূরী বিষয় নয় যে, খুৎবা না শোনার জন্য গুনাহ্গার হবেন বা ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার কারণে তাকে কোন কাফ্ফারা দিতে হবে। তাছাড়া কোন ছহীহ হাদীছে বলা হয়নি যে, খুৎবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। তবে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ হাদীছের ভাষার দিকে লক্ষ্য করে ওয়াজিব আখ্যা দিয়েছেন। মোটকথা খুৎবা চলা অবস্থায় চুপ থেকে খুৎবা শ্রবণ করতে যিনি বলেছেন, তিনিই খুৎবা চলাকালীন সময়ে সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি বসে পড়ার পরেও তিনি উঠিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব খুৎবা চলাকালীন সময়ে এ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার গুরুত্ব অত্যধিক।
কেউ কেউ বলে থাকেন যে, যোহরের চার রাক‘আতের স্থলে জুম‘আর ছালাত দু’রাক‘আত আর খুৎবাকে অবশিষ্ট দু’রাক‘আতের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। এ কারণে খুৎবা ছালাতেরই অংশ। অতএব খুৎবা চলা অবস্থায় যেমন কোন কথা বলা যাবে না, তেমনিভাবে কোন ছালাতও আদায় করা যাবে না। যারা এ কথা বলেন, তারা আসলে জুম‘আর ছালাত সংক্রান্ত নবী করীম (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছ সম্পর্কে অজ্ঞ। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছহীহ হাদীছ প্রমাণ করছে যে, জুম‘আর ছালাতের মধ্যে কোন প্রকার অপূর্ণতা নেই; বরং দু’রাক‘আতই হচ্ছে জুম‘আর পূর্ণাঙ্গ ছালাত। যেমন-
عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ صَلاَةُ السَّفَرِ رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الْأَضْحَى رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الْفِطْرِ رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الْجُمُعَةِ رَكْعَتَانِ تَمَامٌ غَيْرُ قَصْرٍ عَلَى لِسَانِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ভাষায় ‘সফরের ছালাত দু’রাক‘আত, ঈদুল আযহার ছালাত দু’রাক‘আত, ঈদুল ফিতরের ছালাত দু’রাক‘আত এবং জুম‘আর ছালাত দু’রাক‘আত পূর্ণাঙ্গ অসম্পূর্ণ নয়’।[19]
এ হাদীছটি প্রমাণ করে যে, জুম‘আর ছালাতকে দু’রাক‘আত হিসাবেই পূর্ণাঙ্গ করে ফরয করা হয়েছে। আসলে একটি মতকে সাব্যস্ত করতে গিয়ে কয়েকটি হাদীছকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, যে হাদীছে খুৎবাকে দু’রাক‘আতের পরিবর্তে উল্লেখ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। আরো বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি খুৎবা পাবে না সে যেন চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে। কিন্তু এটি ভিত্তিহীন।[20] আয়েশা (রাঃ)-এর উদ্ধৃতিতে বলা হয়ে থাকে যে, খুৎবার কারণে জুম‘আর ছালাত দু’রাক‘আত করা হয়েছে। এটাও মিথ্যা বর্ণনা। এর কোন সনদই পাওয়া যায় না।[21]
জুম‘আর ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা :
জুম‘আর ফরয ছালাত দু’রাক‘আত। জুম‘আর ফরয ছালাতের পূর্বে নির্দিষ্ট কোন সুন্নাত নেই। কিন্তু আমাদের দেশে বাংলায় বয়ান রাখার পরে খত্বীব বা ইমাম ছাহেবরা বলেন, জুম‘আর পূর্বের চার রাক‘আত সুন্নাত আদায় করুন। আবার কোন কোন মসজিদের খত্বীব ছাহেব আরবী ভাষাতেই বলেন, ‘ক্বাবলাল জুম‘আহ’ চার রাক‘আত সুন্নাত আদায় করুন। তারা কিসের ভিত্তিতে মুছল্লীদের এ নির্দেশ প্রদান করেন?
যে হাদীছের আলোকে জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত সুন্নাত আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়ে থাকে, তা জাল। আর জাল হাদীছ দ্বারা সুন্নাত সাব্যস্ত হবে না। যেমন-
كان النبي صلى الله عليه وسلم يركع قبل الجمعة أربعا وبعدها أربعاً لا يفصل في شيء منهن.
নবী (ছাঃ) জুম‘আর পূর্বে চার রাক‘আত এবং জুম‘আর পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন, উক্ত চার রাক‘আতের মাঝে পৃথক করতেন না।
শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটি বাতিল।[22] ‘হিদায়া’ গ্রন্থের হাদীছ সমূহের তাখরীজকারী ইমাম যায়লা‘ঈ হানাফী এবং হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, হাদীছটি খুবই দুর্বল।[23]তবে জুম‘আর পূর্বে খুৎবা শুরু হয়ে গেলে শুধুমাত্র ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ হিসাবে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে, আর যদি খুৎবা শুরু হওয়ার আরো আগে এসে থাকে তাহ’লে প্রথমে দু’রাক‘আত ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’ আদায় করার পরে খুৎবা শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যত ইচ্ছা নফল ছালাত আদায় করবে।[24]
ইবনুল মুনযির বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে আমরা বর্ণনা করেছি যে, তিনি জুম‘আর ছালাতের পূর্বে বারো রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। আর ইবনু আববাস (রাঃ) আট রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে, তিনি চার রাক‘আত আদায় করতেন। জুম‘আর ছালাতের পূর্বে নফল ছালাতের রাক‘আতের ক্ষেত্রে এরূপ বিভিন্নতা প্রমাণ করে যে, জুম‘আর পূর্বে নির্দিষ্ট কোন সুন্নাত ছিল না। বরং তাহিয়্যাতুল মসজিদ ছাড়া অনির্দিষ্ট সংখ্যক ছালাত আদায় করার অনুমোদন ছিল।[25]
উল্লেখ্য, জুম‘আর ছালাতের পূর্বে বাড়ীতে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। এর সনদে ইসহাক্ব আল-আসওয়ারী বাছরী নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছে। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেন, সে মিথ্যুক ও হাদীছ জালকারী। শায়খ আলবানী বলেন, এ মিথ্যুক এককভাবে হাদীছটি বর্ণনা করেছে (আল-উজূবাতুন নাফি‘আহ)।
জুম‘আর ফরয ছালাত আদায় করার পরে দু’রাক‘আত অথবা চার রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করবে।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন জুম‘আর ছালাত আদায় করবে সে যেন জুম‘আর পরে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করে’।[26] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ أَنَّ رَسُوْلَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُصَلِّي قَبْلَ الظُّهْرِ رَكْعَتَيْنِ وَبَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ وَبَعْدَ الْمَغْرِبِ رَكْعَتَيْنِ فِيْ بَيْتِهِ وَبَعْدَ الْعِشَاءِ رَكْعَتَيْنِ وَكَانَ لاَ يُصَلِّي بَعْدَ الْجُمُعَةِ حَتَّى يَنْصَرِفَ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ.
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যোহরের পূর্বে দু’রাক‘আত, যোহরের পরে দু’রাক‘আত, মাগরিবের পরে তাঁর গৃহে দু’রাক‘আত এবং এশার পরে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। আর জুম‘আর পরে ঘরে না ফিরা পর্যন্ত কোন ছালাত আদায় করতেন না। অতঃপর (ঘরে ফিরে) দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন।[27]
আত্বা হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন মক্কায় জুম‘আর ছালাত আদায় করতেন তখন সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন, অতঃপর আবারো এগিয়ে গিয়ে চার রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। আর যখন মদীনায় থাকতেন তখন জুম‘আর ছালাত আদায় করার পর বাড়ীতে ফিরে এসে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। তিনি মসজিদে ছালাত আদায় করতেন না। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপই করতেন।[28] ইমাম তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে আত্বা বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে জুম‘আর পরে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতে দেখেছি। অতঃপর তিনি চার রাক‘আত ছালাত আদায় করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, জুম‘আর পরে দু’রাক‘আত[29] অতঃপর চার রাক‘আতও আদায় করা যায়।[30]
জুম‘আর ছালাতের ক্বিরাআত : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর ছালাতের প্রথম রাক‘আতে সূরা আ‘লা ও দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা গাশিয়া পাঠ করতেন।[31] কখনো কখনো সূরা জুম‘আ ও মুনাফিকূনও পড়তেন।[32]
জুম‘আর ছালাত ত্যাগ করা মহা অপরাধ :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অলসতা করে পরপর তিনটি জুম‘আহ ছেড়ে দিবে আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দিবেন’।[33]
অন্য হাদীছে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোন প্রকার ওযর ছাড়াই তিনটি জুম‘আহ ছেড়ে দিবে তার নাম মুনাফিকদের দফতরে লিখা হবে’।[34]
জুম‘আর ছালাত ছুটে গেলে করণীয় :
জুম‘আর ছালাত ছুটে গেলে যোহরের চার রাক‘আত ছালাত আদায় করবে। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘যার জুম‘আর দু’রাক‘আত ছুটে যাবে সে যেন চার রাক‘আত যোহরের ছালাত আদায় করে’।[35]
ঈদের দিনে জুম‘আর ছালাতের বিধান :
ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, জুম‘আর দিনের সাথে যদি ঈদের দিন মিলে যায় তাহ’লে জুম‘আর ছালাতে উপস্থিত হওয়া ইচ্ছাধীন। মু‘আবিয়া ইবনু আবী সুফিয়ান (রাঃ) যায়েদ ইবনু আরকাম (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন,
أَشَهِدْتَّ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِيْدَيْنِ اجْتَمَعَا فِيْ يَوْمٍ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَكَيْفَ صَنَعَ قَالَ صَلَّى الْعِيْدَ ثُمَّ رَخَّصَ فِي الْجُمُعَةِ فَقَالَ مَنْ شَاءَ أَنْ يُّصَلِّيَ فَلْيُصَلِّ.
‘আপনি কি রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে এমন কোন দু’ঈদে উপস্থিত ছিলেন যে দু’ঈদ একদিনে একত্রিত হয়ে গিয়েছিল? তিনি (যায়েদ (রাঃ)) বললেন, হ্যাঁ। মু‘আবিয়া (রাঃ) বললেন, তিনি সেদিন কী করেছেন? যায়েদ (রাঃ) বললেন, তিনি ঈদের ছালাত আদায় করেন, অতঃপর জুম‘আর ছালাতকে ঐচ্ছিক করে দিয়ে বলেন, যে (জুম‘আর) ছালাত আদায় করতে চায়, সে (জুম‘আর) ছালাত আদায় করতে পারে’।[36]
জুম‘আর দিন ফজরের ছালাতের সুন্নাতী ক্বিরাআত :
জুম‘আর দিনে ফজরের ছালাতে প্রথম রাক‘আতে সূরা সাজদাহ ও দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা দাহর পাঠ করা সুন্নাত। ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) জুম‘আর দিনে ফজরের ছালাতে সূরা ‘তানযীল আস-সাজদাহ’ এবং সূরা ‘হাল আতা আলাল ইনসানে হীনুম মিনাদ দাহরে’ পাঠ করতেন।[37]
জুম‘আর সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ‘আত সমূহ :
১। তিন স্তর বিশিষ্ট মিম্বরের চেয়ে বেশী স্তর বিশিষ্ট মিম্বর তৈরি করা।
২। জুম‘আর খুৎবা চলাকালীন সময়ে দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় না করা।
৩। জুম‘আর ছালাতের পূর্বে ক্বাবলাল জুম‘আহ নামে চার রাক‘আত সুন্নাত আদায় করা।
৪। জুম‘আর ছালাত আদায় করার পরে যোহরের ছালাত আদায় করা।
৫। জুম‘আর দিন হওয়ার কারণে সে দিনে ভ্রমণ ত্যাগ করা। অর্থাৎ সফর করা থেকে বিরত থাকা।
৬। জুম‘আর দিন উপলক্ষে শরী‘আত বিরোধী কোন পোষাক পরিধান করা। যেমন পুরুষদের স্বর্ণ ব্যবহার করা এবং রেশমী পোষাক পরিধান করা।
৭। জুম‘আর দিন উপলক্ষে ইমাম বা খত্বীব ছাহেব কর্তৃক খুৎবার পূর্বে বা জুম‘আর ছালাতের পূর্বে কালো বা যে কোন রঙের পাগড়ী ব্যবহার করা। পাগড়ী পরে জুম‘আর উল্লেখ্য যে, খুৎবা প্রদান বা ছালাত আদায় করার ফযীলত সম্পর্কে যত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সবই বানোয়াট। যেমন ‘পাগড়ী পরে এক জুম‘আ ছালাত আদায় করা বিনা পাগড়ীতে সত্তর জুম‘আ আদায় করার সমতুল্য’।[38]
৯। জুম‘আর খুৎবা চলাকালীন সময়ে কেউ যাতে ছালাত আদায় না করে এ উদ্দেশ্যে লাল বাতি জ্বালিয়ে রাখা।
১০। জুম‘আর দিনকে নির্দিষ্ট করে পিতা-মাতা বা অন্য কারো কবর যিয়ারত করা।
১১। নির্দিষ্ট করে শুধুমাত্র জুম‘আর দিনে ছাওম রাখা।
১২। জুম‘আর মূল খুৎবার পূর্বে বয়ান করা। এরূপ পদ্ধতির কোন নযীর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবা সহ পরের যুগের সালফে ছালেহীনের মাঝে ছিল না। এ পদ্ধতি নবাবিস্কৃত, যা ভারত উপমহাদেশেই প্রচলিত রয়েছে। বরং খুৎবার ভূমিকা আরবী ভাষায় শুরু করে পরক্ষণেই উপস্থিত মুছল্লীদের ভাষায় সমসাময়িক বিষয় সহ যে কোন গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক ইসলামী বিষয়ে বক্তব্য দেয়াই হচ্ছে প্রকৃত ইসলামী রীতি। অতঃপর দ্বিতীয় খুৎবার ভূমিকা আরবীতে দেয়ার পরেও কিছু বক্তব্য রাখা যায়। এরপর খুৎবা সমাপ্ত করবে।
১৩। দ্বিতীয় আযান খত্বীব ছাহেবের সম্মুখে দাঁড়িয়ে দেয়া।
পরিশেষে বলব, যে কোন ইবাদত কবুল ও মঞ্জুর হওয়ার জন্য তা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সুন্নাত মোতাবেক হওয়া আবশ্যক। তেমনি জুম‘আর ছালাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটাও হাদীছ মোতাবেক হ’তে হবে। অন্যথা তা বাতিল হবে। আল্লাহ আমাদেরকে হাদীছ মোতাবেক আমল করার তাওফীক্ব দিন- আমীন!