রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়!
খেজুর রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে গুড়। আটার গোলায় চিনি, ফিটকিরি, ডালডার মিশ্রণে দেয়া হচ্ছে পুরাতন গুড় আর টাটকা গুড়ের রঙ বানাতে মেশানো হচ্ছে খড় পঁচানো পানি। ঘিওর উপজেলাসহ মানিকগঞ্জের প্রায় প্রত্যেকটি হাট বাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই গুড়।
চিনি ও কেমিক্যাল মিশিয়ে ভেজাল গুড় তৈরির মহোৎসব চললেও তা তৈরি ও বিক্রি ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। তাই দিনে দিনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওই অসাধু চক্রটি।
সূত্র জানায়, বাজারে চিনির চেয়ে গুড়ের দাম বেশি থাকায় এবং বেশি লাভের আশায় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল গুড় তৈরিতে ঝুঁকছেন। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়েই ঘিওর উপজেলার বাইলজুড়ী, বড়টিয়া, ঘিওর বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরির কারখানা। পরে এসব ভেজাল গুড় ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। খেজুরের রস সংগ্রহ শুরুর আগ পর্যন্ত এ প্রক্রিয়ায় ভেজাল গুড় তৈরি অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এরপরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী।
এদিকে সামান্য কিছু লাভের আশায় এসব অসাধু ব্যবসায়ীর কবলে পড়ে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘিওর উপজেলার বাইলজুরী গ্রামের মোঃ বাবুল প্রধান ও ঘিওর সদরের ছাগল হাট সংলগ্ন মানিক দীর্ঘ দিন যাবৎ এই ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। তারা জানান, বাজার থেকে পুরান গুড় কিনে বাড়িতে এনে ভালো করে জাল দিয়ে তার সাথে চিনি, হাইডোজ এবং রঙ দিয়ে থাকি। এতে অবিকল খেজুরের গুড় তৈরি হয়ে যায়।
তারা আরো বলেন, শুধু আমরাই না এরকম গুড় তৈরি করছে জেলার কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। বাংলাদেশের সব জিনিসেই ভেজাল আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
এ উপজেলায় একটি চক্র দীর্ঘ এক দশক ধরে খেজুরের রস ছাড়াই ভেজাল গুড় তৈরি করে আসছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে চিনি তৈরির উচ্ছিষ্ট (চিটাগুড়), আটা, চিনি, ফিটকিরি ও ডালডা। রঙ আনতে মেশানো হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত কেমিক্যাল আর খড় পঁচানো পানি। তৈরির পর এসব খেজুরের গুড় হিসেবে বাজারজাত করছে তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবা আইরীন বলেন, যে চিটাগুড় দিয়ে নতুন খেজুরের গুড় তৈরি হচ্ছে, সেই চিটাগুড় গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যা মানুষের খাবারের অনুপযোগী। এছাড়াও গুড় তৈরিতে মেশানো হচ্ছে চিনি, আটা ও বিষাক্ত কেমিক্যাল। পরে তা বাজারজাত করা হয় নতুন খেজুরের গুড় হিসেবে। অথচ সেখানে খেজুরের বিন্দুমাত্র রস থাকে না। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি অভিযান করেছি। আর জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ঘিওরের জাবরা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাঃ মোঃ আবুর হাসান জানান, একমাত্র চিনি ও আটা বাদে ভেজাল গুড় তৈরির অন্যান্য সব উপাদানই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এতে বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল মেশানো থাকায় তা আর খাওয়ার উপযোগী থাকে না। এ ধরনের ভেজাল গুড় খেলে কলেরা, ডায়রিয়া, হজম শক্তি হ্রাসসহ পেটের পীড়া এবং অ্যালকোহল থাকায় ঝিঁমুনি দেখা দেবে।
নয়া দিগন্ত