হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)

দুঃখের বছর (১০ম নববী বর্ষ)

পূর্বের অংশ পড়ুন: হামযা ও ওমর (রাঃ) -এর ইসলাম গ্রহণ এবং তার পরবর্তী ঘটনা

দীর্ঘ তিন বছর বয়কট অবস্থায় থেকে গাছের ছাল-পাতা খেয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে বার্ধক্য জর্জরিত দেহ নিয়ে চাচা আবু ত্বালিব ও স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। একই অবস্থায় উপনীত হয়েছিলেন বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবের মুমিন-কাফির শত শত আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। কত নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা  সে বয়কটে না খেয়ে ও বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছিল, তার হিসাব কে বলবে? আধুনিক যুগের গণতন্ত্রী ও মানবাধিকারের মোড়ল রাষ্ট্র আমেরিকা ও বৃটেন প্রভাবিত জাতিসংঘের অবরোধ আরোপের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত ইরাকে অন্যূন ১৫ লাখ মুসলিম নর-নারী ও শিশু খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। এখনও তাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযানে হাযার হযার বনু আদম নিয়মিতভাবে সেখানে ও অন্যান্য দেশে নিহত ও পঙ্গু হচ্ছে। উদ্দেশ্য, স্রেফ সেখানকার তৈল ও অন্যান্য সম্পদ লুট করা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বুকের উপরে স্থায়ীভাবে আসন গেড়ে বসা। এতবড় পশুত্ব ও হিংস্রতাকেও তারা অবলীলাক্রমে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সন্ত্রাস দমনের মহান সংগ্রাম বলে চালিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের নিয়োজিত শত শত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সেই মিথ্যাগুলোকে হাযারো কণ্ঠে প্রচার করছে। তাদের খুঁদকুঁড়ো খাওয়া বুদ্ধিজীবীরা এবং বশংবদ রাষ্ট্রগুলো একই সুরে সুর মিলিয়ে যাচ্ছে। এই যুলুম ও অত্যাচারের পক্ষে শুধু সাফাই গাওয়া নয়; বরং তারা বাস্তবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
আধুনিক বিশ্বের এই প্রতারণাপূর্ণ বয়কটকে একদিকে রাখুন, আর চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে মক্কার এই বয়কটকে আরেকদিকে রাখুন। দু’টির মধ্যে আসমান ও যমীনের পার্থক্য দেখতে পাবেন।

(১) আধুনিক বিশ্বের এই বয়কটের উদ্দেশ্য স্রেফ লুটপাট ও পররাজ্য গ্রাস। যদিও সেখানে  তারা  খৃষ্টানীকরণের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে জাহেলী যুগের ঐ বয়কটের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নীতি ও আদর্শের সংঘর্ষ এবং শিরক ও তাওহীদের সংঘাত। সেখানে লুটপাট, খুনোখুনি বা নারী নির্যাতনের নামগন্ধ ছিল না।

(২) ইরাকের বিরুদ্ধে বয়কটের সময় মুসলিম ও আরব রাষ্ট্র সমূহের প্রায় সকলে প্রকাশ্যে বা গোপনে যালেম ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে সমর্থন দেয়। কথিত আরব জাতীয়তাবাদের বন্ধন বা ইসলামী জাতীয়তার বন্ধন কোনটাই সেখানে কার্যকর হয়নি। অথচ বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিব-এর প্রায় সবাই কাফের-মুশরিক হওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র বংশীয় কারণে নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সমর্থনে এগিয়ে আসে এবং বয়কটের সময় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট বরণ করে নেয়। আত্মীয়তার বন্ধনের প্রতি তাদের এই আনুগত্য ও নৈতিকতা বোধ আধুনিক বিশ্বের নীতিহীন শাসকদের জন্য চপেটাঘাত বৈ-কি! অতএব সেই যুগের চাইতে আজকের তথাকথিত সভ্য যুগকেই সত্যিকার অর্থে জাহেলী যুগ বলা উচিত।

আবু ত্বালিবের মৃত্যু (রজব ১০ম নববী বর্ষ) :

১০ম নববী বর্ষের মুহাররম মাসে ঠিক তিন বছরের মাথায় বয়কট শেষ হওয়ার ৬ মাস পরে রজব মাসে আবু ত্বালিবের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে আবু জাহল, আব্দুল্লাহ ইবনে আবী উমাইয়া প্রমুখ মুশরিক নেতৃবৃন্দ তাঁর শিয়রে বসে ছিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসে মৃত্যুপথযাত্রী পরম শ্রদ্ধেয় চাচাকে বললেন, أى عم، قل لآ إله إلا الله، كلمة أحاجُّ لك بها عند الله- ‘হে চাচা! আপনি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কলেমাটি পাঠ করুন, যাতে আমি সেটাকে আপনার জন্য প্রমাণ হিসাবে আল্লাহর নিকটে পেশ করতে পারি’। কিন্তু এ সময় দুরাচার আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ বিন আবু উমাইয়া বারবার তাঁকে উত্তেজিত করতে থাকে যেন তিনি পিতৃধর্ম ত্যাগ না করেন। ফলে শেষ বাক্য তাঁর মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায় على ملة عبد المطلب ‘আব্দুল মুত্ত্বালিবের দ্বীনের উপরে’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলে উঠলেন, لأستغفرن لك مالم أنه عنك ‘আমি আপনার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে যাব। যতক্ষণ না আমাকে নিষেধ করা হয়’। ফলে এ সময় আয়াত নাযিল হয়- مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا أُوْلِيْ قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيْمِ- ‘নবী ও ঈমানদারগণের জন্য সিদ্ধ নয় যে, তারা ক্ষমাপ্রার্থনা করবে মুশরিকদের জন্য। যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়, একথা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে তারা জাহান্নামের অধিবাসী’ (তওবাহ ৯/১১৩)

উল্লেখ্য যে, সূরা তওবাহ মাদানী সূরা হ’লেও তার মধ্যে ১১১-১১৩ আয়াত মক্কায় নাযিল হয়।  এরপরে নবীকে সান্ত্বনা দিয়ে আয়াত নাযিল হয়, إِنَّكَ لاَ تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ- ‘নিশ্চয়ই তুমি হেদায়াত করতে পার না যাকে তুমি পসন্দ কর। বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়াত করে থাকেন এবং তিনি হেদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৬)

এভাবে আমৃত্যু হেদায়াতের আলোকবর্তিকা স্বীয় ভাতিজাকে সবকিছুর বিনিময়ে আগলে রেখেও শেষ মুহূর্তে এসে পরকালীন সৌভাগ্যের পরশমণি হাতছাড়া হয়ে গেল। স্নেহসিক্ত ভাতিজার প্রাণভরা আকুতি ব্যর্থ হ’ল এবং শয়তানের প্রতিমূর্তি গোত্র নেতাদের প্ররোচনা জয়লাভ করল। পিতৃধর্মের বহুত্ববাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেই তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় হ’লেন। এ দৃশ্য যে রাসূলের জন্য কত বেদনাদায়ক ছিল, তা আখেরাতে বিশ্বাসী প্রকৃত মুমিনগণ উপলব্ধি করতে পারেন। কেননা যে চাচা তাকে দুনিয়াবী কারাগারের অবর্ণনীয় কষ্ট-দুঃখের আযাব থেকে সর্বদা ঢালের মত রক্ষা করেছেন ও নিজে অমানুষিক কষ্ট ও দুঃখ বরণ করেছেন, সেই প্রাণপ্রিয় চাচা দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণের পরে পুনরায় জাহান্নামের আযাবে নিক্ষিপ্ত হবেন, এটা তিনি কিভাবে ভাবতে পারেন? বলা বাহুল্য এভাবেই তাক্বদীর বিজয়ী হয়।

আবু ত্বালিবের এই করুণ বিদায়ে ব্যথিত ভ্রাতা আববাস (রাঃ) একদিন ভাতিজা রাসূলের কাছে তার প্রাণপ্রিয় চাচার আখেরাতের অবস্থা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা আযাব প্রাপ্ত হবে আবু তালিব। তিনি আগুনের দু’টি জুতা পরিহিত হবেন, যাতে তার মাথার মগয গলে টগবগ করবে’।[1] আবু তালিবের এই হালকা আযাব তার আমলের কারণে নয়, বরং তা হবে রাসূলের বিশেষ সুফারিশের কারণে। আর সেটা হবে রাসূলের বিশেষত্বের অন্তর্ভুক্ত ও তার উচ্চ মর্যাদার কারণে, যা আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন। কেননা আবু তালিব শিরকের উপর মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আর আল্লাহ বলেন, ক্বিয়ামতের দিন মুশরিকদের জন্য সুফারিশকারীদের সুফারিশ কোন কাজে আসবে না’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৪৮)। ইবনু আববাস (রাঃ) একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন যে, আবু তালেব আপনাকে যেভাবে হেফাযত ও সহযোগিতা করেছেন, তার বিনিময়ে আপনি কি তাঁকে কোন উপকার করতে পারবেন? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হাঁ। আমি তাকে জাহান্নামের গভীরে দেখতে পেলাম। অতঃপর তাকে (আল্লাহর হুকুমে) সেখান থেকে বের করে টাখনু পর্যন্ত উঠিয়ে আনলাম’। অন্য বর্ণনায় এসেছে أهونُ أهلِ النار عذابًا أبو طالب، وهو منتعل بنعلين يغلى منهما دماغُه، رواه البخاريُّ- ‘জাহান্নামবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে হালকা আযাব প্রাপ্ত হবেন আবু তালিব। তিনি আগুনের দু’টি জুতা পরিহিত হবেন, যাতে তার মাথার মগয গলে টগবগ করবে’।[2] আবু সাঈদ খুদরীর বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, সম্ভবতঃ ক্বিয়ামতের দিন আমার সুফারিশ তার উপকারে আসবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামের অগভীর স্থানে নেওয়া হবে, যা তার টাখনু পর্যন্ত পৌছবে এবং তাতেই তার মস্তিষ্ক আগুনে ফুটে টগবগ করবে, যেমন উত্তপ্ত কড়াইয়ে পানি টগবগ করে ফুটে’।[3]

শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ (১৪) :

১. হক-এর স্বীকৃতি এবং হকপন্থীর প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতাই কেবল পরকালীন মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ না আক্বীদার পরিবর্তন ঘটে এবং মৌখিক স্বীকৃতি না দেওয়া হয়।

২. আদর্শগত ভালোবাসাই পরকালে বিচার্য বিষয়, অন্য কোন ভালোবাসা নয়। মুহাম্মাদ-এর প্রতি আবু ত্বালিবের ভালোবাসা ছিল বংশগত কারণে। আদর্শগত কারণে নয়। সেকারণ তা পরকালে কাজে আসেনি।

৩. তাওহীদী আক্বীদার সাথে শিরক মিশ্রিত হ’লে তার কোন নেক আমলই আল্লাহর নিকটে গৃহীত হয় না। যেমন আল্লাহর উপরে বিশ্বাস ও তাকে স্বীকৃতি দান করা সত্ত্বেও অসীলা পূজার শিরক থাকার কারণে আবু ত্বালিবের কোন নেক আমল আল্লাহ কবুল করেননি। বর্তমান যুগেও যেসব মুসলিম নর-নারী বিভিন্ন কবর, প্রতিকৃতি ও স্থানপূজায় লিপ্ত আছেন ও তাদের অসীলায় পরকালে মুক্তি কামনা করেন, তাদের এই কামনা জাহেলী আরবদের লালিত শিরকের সাথে তুলনীয় নয় কি?

৪. পিতৃধর্মে ত্রুটি থাকলে তা অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হবে এবং সর্বাবস্থায় নির্ভেজাল তাওহীদকে অাঁকড়ে থাকতে হবে। সকল আবেদন-নিবেদন সরাসরি আল্লাহর নিকটেই করতে হবে এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে কেবল তার বিধানই মেনে চলতে হবে।
কিন্তু অসীলা পূজারী মুশরিকরা আল্লাহর নৈকট্য হাছিলের ধারণায় তাদের কল্পিত অসীলাকেই মুখ্য মনে করে। তার কাছেই সব আবেদন-নিবেদন পেশ করে এবং নিজেদের মনগড়া শিরকী বিধান সমূহ মেনে চলে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই রেওয়াজের প্রতি আকর্ষণ আবু ত্বালেব ছাড়তে পারেননি।

৫. কেবল আবদুল্লাহ, আবু ত্বালেব ইত্যাদি ইসলামী নাম পরকালীন মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে না, যতক্ষণ না সমস্ত কল্পিত মা‘বূদ ছেড়ে একমাত্র হক মা‘বূদ আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি একনিষ্ঠ হবে। মৃত্যুর সময় আবু তালেবকে শিরকের দিকে প্ররোচনা দানকারী অন্যতম নেতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ। অতএব ইসলামী নাম রাখার সাথে সাথে ইসলামী বিধান সমূহ মেনে চলা এবং আল্লাহ ও তাঁর গুণাবলীর সাথে অন্যকে শরীক না করে নির্ভেজাল তাওহীদ বিশ্বাসের উপরে দৃঢ় থাকার উপরেই পরকালীন মুক্তি নির্ভর করে।

খাদীজা (রাঃ)-এর মৃত্যু (রামাযান ১০ম নববী বর্ষ)

স্নেহশীল চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর মাত্র দু’মাস বা তিন মাস পরে দশম নববী বর্ষের রামাযান মাসে প্রাণাধিক প্রিয়া স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা ‘তাহেরা’-র মৃত্যু হয়। তবে মানছূরপুরী বলেন, আবু তালেবের মৃত্যুর তিন দিন পরে খাদীজার মৃত্যু হয়। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর এবং রাসূলের বয়স ছিল ৫০ বছর। তাঁদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল ২৫ বছর।

দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ বয়কটকালীন নিদারুণ কষ্ট অবসানের মাত্র ৬ মাসের মাথায় চাচা ও ৮ মাসের মাথায় স্ত্রীকে হারিয়ে শত্রু পরিবেষ্টিত ও আশ্রয়হারা নবীর অবস্থা কেমন হয়েছিল, তা চিন্তাশীল মাত্রই বুঝতে পারেন। চাচা আবু তালেব ছিলেন সামাজিক জীবনে রাসূলের জন্য ঢাল স্বরূপ। অন্যদিকে পারিবারিক ও অর্থনৈতিক জীবনে খাদীজা ছিলেন রাসূলের বিশ্বস্ততম নির্ভরকেন্দ্র। দাম্পত্য জীবনের পঁচিশ বছর সেবা ও সাহচর্য দিয়ে, বিপদে শক্তি ও সাহস যুগিয়ে, অভাব-অনটনে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে, হেরা গুহায় নিঃসঙ্গ ধ্যান ও সাধনাকালে অকুণ্ঠ সহমর্মিতা দিয়ে, নতুনের শিহরণে ভীত-চকিত রাসূলকে অনন্য সাধারণ প্রেরণা, উৎসাহ ও পরামর্শ দিয়ে, অতুলনীয় প্রেম, ভালবাসা ও সহানুভূতি দিয়ে রাসূলের জীবনে তিনি ছিলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মূর্তিময়ী নে‘মত স্বরূপ। তিনি ছিলেন  শেষ  সন্তান  ইবরাহীম  ব্যতীত  রাসূলের  সকল সন্তানের মা। তিনি ছিলেন বিশ্বসেরা চারজন মহিলার অন্যতম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, اكمل نساء العالمين أربعة : آسية امرأة فرعون ومريم ابنة عمران وخديجة بنت خويلد وابنتها فاطمة الزهراء- ‘বিশ্বে পূর্ণতাপ্রাপ্ত মহিলা হ’লেন চারজন। ফেরাঊনের স্ত্রী আসিয়া, ইমরানের কন্যা মারিয়াম, খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ ও তার কন্যা ফাতিমাতুয যাহরা (রাঃ)।[4]

তিনি ছিলেন সেই মহীয়সী মহিলা যাকে আল্লাহ পাক জিব্রীল মারফত সালাম পাঠান এবং জান্নাতে তার জন্য বিশেষভাবে নির্মিত মতিমহলের সুসংবাদ দেন।[5]

তিনিই একমাত্র স্ত্রী যার জীবদ্দশায় রাসূল (ছাঃ) অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি এবং তার মৃত্যুর পরেও আজীবন রাসূল (ছাঃ) তাকে বারবার স্মরণ করেছেন। অন্য স্ত্রীদের সামনে অকুণ্ঠচিত্তে তার প্রশংসা করেছেন। এমনকি তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে খাদীজার বান্ধবীদের কাছেও উপঢৌকন পাঠাতেন। অল্প সময়ের ব্যবধানে  চাচা ও খাদীজার মৃত্যু হওয়ার কারণে আল্লাহর রাসূল এই বছরকে عام الحزن বা দুঃখের বছর বলে অভিহিত করেন।[6]

পরম স্নেহশীল চাচা ও প্রাণাধিক প্রিয়া স্ত্রী খাদীজার মৃত্যুর পরে একদিকে রাসূল (ছাঃ) যেমন দুঃখে কাতর হয়ে পড়েন, অন্যদিকে তেমনি হৃদয়হীন কুরায়েশ নেতারা  দ্বিগুণ উৎসাহে অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একদিন জনৈক দুরাচার রাসূলের মাথায় ধুলি নিক্ষেপ করে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঐ অবস্থায় বাড়ী এলে তাঁর এক কন্যা কাঁদতে কাঁদতে সেই মাটি ধুয়ে দেন। এ সময় রাসূল (ছাঃ) বলেন, বেটি কেঁদো না; আল্লাহ তোমার পিতার হেফাযতকারী। অতঃপর তিনি দুঃখ করে বলেন, যতদিন চাচা আবু তালেব বেঁচে ছিলেন, কুরায়েশরা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করেনি, যা আমার সহ্যের বাইরে ছিল’। এই অবস্থায় সাহায্যের সন্ধানে আল্লাহর রাসূল বংশীয় আত্মীয়তার সূত্র ধরে ত্বায়েফ গমনের মনস্থ করেন।
সওদার সাথে বিবাহ :

খাদীজা (রাঃ)-এর মৃত্যুর পর বিপর্যস্ত সংসারের হাল ধরার জন্য এবং মাতৃহারা কন্যাদের দেখাশুনার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সাওদাহ বিনতে যাম‘আহ নাম্নী জনৈকা বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেন ১০ম নববী বর্ষের শাওয়াল মাসে। উল্লেখ্য যে, রাসূলের ৪ কন্যার মধ্যে ৩য় ও ৪র্থ উম্মে কুলছূম ও ফাতেমা তখন অবিবাহিতা ছিলেন। সাওদা ও তার পূর্ব স্বামী সুকরান বিন আমর উভয়ে ইসলাম কবুল করার পর হাবশায় হিজরত করেন। অতঃপর সেখানেই অথবা সেখান থেকে মক্কায় ফিরে এসে তার স্বামী ইনতেকাল করেন। এ সময় স্বামীর পাঁচটি সন্তানের গুরুভার এসে পড়েছিল সওদার উপরে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য তার সন্তানদের লালন-পালনের দায়িত্বসহ সওদাকে বিয়ে করেন। সওদা অত্যন্ত মযবুত ও বলিষ্ঠ চরিত্রের মহিলা ছিলেন। তিনিই প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তার প্রভাবে তার স্বামী সুকরান ইসলাম কবুল করেন। ইসলামের জন্য তাদেরকে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়।

ত্বায়েফ গমন (শাওয়াল ১০ম নববী বর্ষ) :

খাদীজার মৃত্যুর পরবর্তী মাসে অর্থাৎ দশম নববী বর্ষের শাওয়াল মাস মোতাবেক ৬১৯ খৃষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথমে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে সাথে নিয়ে প্রধানতঃ নতুন সাহায্যকারীর সন্ধানে পদব্রজে ত্বায়েফ রওয়ানা হন। যা ছিল মক্কা হ’তে প্রায় ষাট মাইল দূরে। এই দীর্ঘ পথ প্রচন্ড  গরমের  মধ্যে  পায়ে  হেঁটে  অতিক্রম  করার সময় রাস্তায় যত গোত্র পেয়েছেন, সবার কাছে গিয়ে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। কিন্তু কোন ফলোদয় হয়নি।

অতঃপর ত্বায়েফ পৌঁছে তিনি সেখানকার বনু ছাক্বীফ গোত্রের তিন নেতা তিন সহোদর ভাই ইবনু আব্দে ইয়ালীল, মাসঊদ ও হাবীব-এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন। সাথে সাথে ইসলামকে সাহায্য করার জন্য তিনি তাদের প্রতি আহবান জানান। উক্ত তিনভাইয়ের একজনের কাছে কুরায়েশ গোত্র বনু জুমাহ (بنو جمح) -এর একজন মহিলা বিবাহিতা ছিলেন (ইবনু হিশাম)। সেই আত্মীয়তার সূত্র ধরেই রাসূল (ছাঃ) সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনজনই তাঁকে নিরাশ করল। একজন বলল, هو يَمْرُطُ ثيابَ الكعبة (أى يُمَزِّقُهَا) إن كان الله أرسلكَ সে কা‘বার গোলাফ ছিঁড়ে ফেলবে, যদি আল্লাহ তোমাকে রাসূল করে পাঠিয়ে থাকেন’। অন্যজন বলল, أما وَجَدَ اللهُ غيرَكَ؟ ‘আল্লাহ কি তোমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে পাননি’?[7] ‘যার একটা সওয়ারী পর্যন্ত নেই! যদি কাউকে রাসূল বানানোর দরকার হ’ত, তাহ’লে তো আল্লাহ কোন শাসক বা নেতাকে রাসূল করে পাঠাতে পারতেন’।[8]

তৃতীয় জন বলল, والله لا أكلِّمُكَ أبدًا، إن كنتَ رسولاً لأنت أعظمُ خطرًا من أن أرُدَّ عليكَ الكلامَ، ولئن كنتَ تَكْذِبُ على الله ما ينبغى أن أُكلِّمَك- ‘আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলব না। কেননা যদি তুমি সত্যিকারের নবী হও, তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক। আর যদি তুমি আল্লাহর নামে মিথ্যা প্রচারে লিপ্ত হয়ে থাক, তবে তোমার সাথে কথা বলা সমীচীন নয়’।[9]

নেতাদের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে এবার তিনি অন্যদের কাছে দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু সবার একই কথা أخرج من بلادنا ‘তুমি আমাদের শহর থেকে বেরিয়ে যাও’। অবশেষে দশদিন পর তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য পা বাড়ান। এমন সময় নেতাদের উস্কানীতে একদল ছোকরা এসে তাঁকে ঘিরে ধরে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ ও হৈ চৈ শুরু করে দিল। এক পর্যায়ে তাঁকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে আরম্ভ করল। যাতে তাঁর পায়ের গোড়ালী ফেটে রক্তে জুতা ভরে গেল’। এ সময় যায়েদ বিন হারেছাহ ঢালের মত থেকে রাসূলকে প্রস্তরবৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এইভাবে রক্তাক্ত দেহে তিন মাইল হেঁটে তায়েফ শহরের বাইরে এক আঙ্গুর বাগিচায় ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় তিনি আশ্রয় নেন।[10] তখন ছোকরার দল ফিরে যায়। বাগানটির মালিক ছিল মক্কার দুই নেতা উৎবা ও শায়বা বিন রাবী‘আহ। যারা ইতিপূর্বে কা‘বা চত্বরে ছালাতরত অবস্থায় রাসূলের মাথার উপরে উষ্ট্রের ভুঁড়ি চাপিয়ে দিয়ে তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সেদিন তাদের নাম ধরে ধরে বদ দো‘আ করেছিলেন এবং আবু জাহল সহ চক্রান্তকারী ঐ সাত জনের সবাই বদরের যুদ্ধে নিহত হয়’।[11] অধিকন্তু এই উৎবার কন্যা ছিলেন আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উৎবা। যিনি মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন।

মযলূমের দো‘আ :

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বাগানে প্রবেশ করে আঙ্গুর গাছের ছায়ায় একটি দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসে পড়লেন। এই সময় ক্লান্ত-শ্রান্ত দেহ নিয়ে ব্যাকুল মনে আল্লাহর নিকটে যে দো‘আ তিনি করেছিলেন, তা (মযলূমের দো‘আ হিসাবে) ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। দো‘আটি ছিল নিম্নরূপ :

اللهم إليك أشكو ضعف قوتى وقلة حيلتى وهوانى على الناس يا ارحم الراحمين- أنت رب المستضعفين وأنت ربى، إلى من تَكِلُنى؟ إلى بعيد يتجهَّمُنى أو إلى عدو ملَّكتَه أمرى؟ إن لم يكن بك علىَّ غضبٌ فلا أبالى،  ولكن عافيتك هى أوسع لى، أعوذ بنور وجهك الذى أشرقت له الظلمات،  وصلح عليه أمر الدنيا والآخرة، من أن يُنزل بى غضبُك، أو يحلَّ علىّ سخطُك، لك العُتْبَى حتى ترضَى، ولا حول ولا قوة إلا بك-

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে আমার শক্তির দুর্বলতা, কৌশলের স্বল্পতা ও মানুষের নিকটে অপদস্থ হওয়ার অভিযোগ পেশ করছি- হে দয়ালুগণের সেরা! হে দুর্বলদের প্রতিপালক! তুমিই আমার একমাত্র পালনকর্তা। কাদের কাছে তুমি আমাকে সোপর্দ করেছ? তুমি কি আমাকে এমন দূর অনাত্মীয়ের কাছে পাঠিয়েছ যে আমাকে কষ্ট দেয়? অথবা এমন শত্রুর কাছে যাকে তুমি আমার কাজের মালিক-মুখতার বানিয়ে দিয়েছ? যদি আমার উপরে তোমার কোন ক্রোধ না থাকে, তাহ’লে আমি কোন কিছুরই পরোয়া করি না। কিন্তু তোমার ক্ষমা আমার জন্য অনেক প্রশস্ত। আমি তোমার চেহারার জ্যোতির আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার জন্য সব অন্ধকার আলোকিত হয়ে যায় এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কর্মসমূহ সুষ্ঠু হয়ে যায়- এই বিষয় হ’তে যে, আমার উপরে তোমার গযব নাযিল হৌক অথবা তোমার ক্রোধ আপতিত হৌক। কেবল তোমারই সন্তুষ্টি কামনা করব, যতক্ষণ না তুমি খুশী হও। নেই কোন শক্তি নেই কোন ক্ষমতা তুমি ব্যতীত’।[12]

আঙ্গুর বাগানের মালিক দু’ভাই ওৎবা ও শায়বা যখন দূর থেকে রাসূলের এ দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা দেখল, তখন তারা দয়াপরবশ হয়ে তাদের খৃষ্টান গোলাম ‘আদ্দাস’ (عَدَّاس) -এর মাধ্যমে এক গোছা আঙ্গুর পাঠিয়ে দিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘বিসমিল্লাহ’ বলে তা হাতে নিয়ে খেতে আরম্ভ করলেন। বিস্মিত হয়ে আদাস বলে উঠল, এ ধরনের কথা তো এ অঞ্চলের লোকদের মুখে কখনো শুনিনি’? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তুমি কোন দেশের লোক? তোমার ধর্ম কি? সে বলল, আমি একজন খৃষ্টান। আমি ‘নীনাওয়া’ (نينوى) -এর বাসিন্দা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, নেককার ব্যক্তি ইউনুস বিন মাত্তা (من قرية الرجل الصالح يونس بن متى؟) -এর জনপদের লোক? লোকটি আশ্চর্য হয়ে বলল, আপনি ইউনুস বিন মাত্তা-কে কিভাবে চিনলেন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ذاك أخى كان نبيا وأنا نبى ‘তিনি আমার ভাই। তিনি নবী ছিলেন এবং আমিও নবী’। একথা শুনে আদ্দাস রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপরে ঝুঁকে পড়ে তাঁর মাথা, হাত ও পায়ে চুমু খেল।

দূর থেকে এ দৃশ্য দেখে উৎবা ও শায়বা দু’ভাই একে অপরকে বলতে লাগল, দেখছি শেষ পর্যন্ত লোকটা আমাদের ক্রীতদাসকেও বিগড়ে দিল। ক্রীতদাসটি ফিরে এসে তার মনিবকে বলল, يا سيدى ما فى الأرص شيئ خير من هذا الرجل لقد أخبرنى بأمر لايعلمه إلا نبى- ‘হে মনিব! পৃথিবীতে এই ব্যক্তির চেয়ে উত্তম কোন বস্ত্ত আর নেই’। তিনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে খবর দিয়েছেন, যা নবী ব্যতীত কেউ জানে না’। তারা বলল, ويحك يا عداس لا يصرفنك عن دينك فإن دينك خير من دينه- ‘সাবধান আদ্দাস! লোকটি যেন তোমাকে তোমার ধর্ম থেকে ফিরিয়ে নিতে না পারে। কেননা তোমার দ্বীন তার দ্বীন হ’তে উত্তম’।

ত্বায়েফ হ’তে মক্কার পথে :

কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যথিত ও ভারাক্রান্ত মনে সেখান থেকে উঠে মক্কাভিমুখে রওয়ানা হ’লেন। পথিমধ্যে ‘ক্বারনুল মানাযিল’ নামক স্থানে পৌঁছলে জিব্রীল (আঃ) ‘মালাকুল জিবাল’ বা পাহাড় সমূহের নিয়ন্ত্রক ফেরেশতাকে সাথে নিয়ে অবতীর্ণ হলেন। জিব্রীল তাঁকে বললেন, إن الله قد سمع قول قومك لك وما ردوا عليك وقد بعث الله إليك ملك الجبال لتأمره بما شئت فيهم- ‘আপনার সম্প্রদায় আপনাকে কি কথা বলেছে এবং আপনার প্রতি কিরূপ আচরণ করেছে, সবই আল্লাহ দেখেছেন ও শুনেছেন। এক্ষণে তিনি আপনার নিকটে পাহাড় সমূহের নিয়ন্ত্রক ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন তাকে আপনি তাদের বিষয়ে যা ইচ্ছা হুকুম করুন’।

অতঃপর ‘মালাকুল জিবাল’ এসে রাসূলকে সালাম দিয়ে বলল, إن شئت أن أطبق عليهم الأخشبين لفعلتُ ‘যদি আপনি চান যে, আমি দুই পাহাড়কে একত্রিত করে এদেরকে পিষে মারি, তাহ’লে আমি তাই-ই করব’। ‘আখশাবাইন’ বলে কা‘বা গৃহের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের মুখামুখি দুই পাহাড় আবু কুবায়েস ও কু‘আয়ক্বা‘আন পাহাড়কে বুঝানো হয়েছে, যার মধ্যবর্তী উপত্যকায় মক্কার আবাসিক এলাকা অবস্থিত। ফেরেশতার জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, بل أرجو أن يخرج الله عز وجل من أصلابهم من يعبد الله عز وجل ولايشرك به شيئا- ‘না। বরং আমি আশা করি যে, আল্লাহ তাদের পৃষ্ঠদেশ হ’তে এমন বংশধর সৃষ্টি করবেন, যারা কেবলমাত্র মহান আল্লাহরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না’।[13]

এই ঘটনায় আল্লাহর নবী (ছাঃ) হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করলেন এবং সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গিয়ে পুনরায় পথ চলতে শুরু করলেন। অতঃপর ‘নাখ্লা’ উপত্যকায় পৌঁছে সেখানকার জনপদে কয়েকদিন অবস্থান করলেন। এখানেই জিনদের ইসলাম গ্রহণের ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। যা সূরা আহক্বাফ ২৯, ৩০ ও ৩১ আয়াতে এবং সূরা জিন ১-১৫ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। এতে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মনের মধ্যে আরও শক্তি অনুভব করেন। তিনি নিশ্চিত হ’লেন যে, কোন শক্তিই তার দাওয়াতকে বন্ধ করতে পারবে না। কেননা আহক্বাফ ৩২ আয়াত নাযিল করে এ সময়েই আল্লাহ তাকে নিশ্চিত করেছিলেন যে, وَمَن لاَّ يُجِبْ دَاعِيَ اللهِ فَلَيْسَ بِمُعْجِزٍ فِي الْأَرْضِ وَلَيْسَ لَهُ مِنْ دُوْنِهِ أَوْلِيَاءَ أُوْلَئِكَ فِيْ ضَلاَلٍ مُّبِيْنٍ- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহবানকারীর ডাকে সাড়া না দেয়, সে ব্যক্তি এ পৃথিবীতে আল্লাহকে পরাজিত করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত সে কাউকে সাহায্যকারীও পাবে না। বস্ত্ততঃ এলোকগুলিই হ’ল স্পষ্ট ভ্রষ্টতার মধ্যে নিপতিত’ (আহক্বাফ ৪৬/৩২)

নাখলা উপত্যকায় ফজরের ছালাতে রাসূলের কুরআন পাঠ শুনে নাছীবাইন এলাকার নেতৃস্থানীয় জিনদের ৭ বা ৯ জনের অনুসন্ধানী দলটি।[14] তাদের সম্প্রদায়ের নিকটে গিয়ে যে রিপোর্ট দেয় সেখানে বক্তব্যের শুরুতে তারা কুরআনের অলৌকিকত্বের কথা বলে। যেমন إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآناً عَجَباً- يَهْدِيْ إِلَى الرُّشْدِ فَآمَنَّا بِهِ وَلَن نُّشْرِكَ بِرَبِّنَا أَحَداً- ‘আমরা বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি’। ‘যা সঠিক পথ প্রদর্শন করে। অতঃপর আমরা তার উপরে ঈমান এনেছি এবং আমরা আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে কখনোই শরীক করব না’ (জিন ৭২/১-২)। অতঃপর তারা বলে, وَأَنَّا ظَنَنَّا أَنْ لَّنْ نُّعْجِزَ اللهَ فِي الْأَرْضِ وَلَن نُّعْجِزَهُ هَرَبًا- ‘আমরা নিশ্চিত যে, পৃথিবীতে আমরা আল্লাহকে পরাজিত করতে পারব না এবং তাঁর থেকে পালিয়েও বাঁচতে পারব না’ (জিন ৭২/১২)। সুহায়লী বলেন, এই জিনগুলি ইহুদী ছিল। অতঃপর মুসলমান হয়’। এদের বক্তব্য এসেছে সূরা আহক্বাফ ২৯, ৩০ ও ৩১ আয়াতে।

উল্লেখ্য যে, জিনদের ইসলাম কবুলের বিষয়ে সব হাদীছ একত্রিত করলে বুঝা যায় যে, এরূপ ঘটনা মোট ছয়বার ঘটেছে। প্রথম ঘটনার কথা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সঙ্গে সঙ্গে জানতে পারেননি। বরং সূরা জিন নাযিলের পরে তিনি এ ঘটনা জানতে পারেন।

উপরোক্ত ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, শেষনবী (ছাঃ) জিন ও ইনসানের নবী ছিলেন। বরং তিনি সকল সৃষ্ট জীবের নবী ছিলেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, و أرسلتُ إلى الخلق كافة و خُتِمَ بِىَ النبيُّون- ‘আমি সকল সৃষ্ট জীবের প্রতি প্রেরিত হয়েছি এবং আমাকে দিয়ে নবীদের সিলসিলা সমাপ্ত করা হয়েছে’।[15] অন্য হাদীছে সূরা সাবা ২৮ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, فأرسله إلى الجن و الإنس ‘অতঃপর আল্লাহ তাকে জিন ও ইনসানের প্রতি প্রেরণ করেছেন’।[16]

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমার ও নবীদের তুলনা একটি ভবনের ন্যায়। যা সুন্দরভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। কেবল একটি ইটের জায়গা খালি রাখা হয়েছে। فكنتُ أنا سَدَدتُ موضعَ اللبِنَة، خُتِمَ بِيَ البنيانُ و خُتِمَ بِيَ الرسلُ وفي رواية : فأنا اللبٍنَةُ و أنا خاتَمُ النبيين- ‘অতঃপর আমি ইটের জায়গাটি বন্ধ করেছি। আমাকে দিয়ে ভবন সমাপ্ত হয়েছে এবং রাসূলগণের আগমন ধারা শেষ হয়েছে’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আমি সেই ইট এবং আমিই শেষনবী’।[17]

ক্বারনুল মানাযিল ও ওয়াদিয়ে নাখলায় পরপর সংঘটিত দু’টি ঘটনায় রাসূলের মন থেকে ত্বায়েফের সকল দুঃখ-বেদনা মুছে যায়। তিনি পুনরায় মক্কায় ফিরে গিয়ে পূর্ণোদ্যমে দাওয়াতের কাজ শুরু করার সংকল্প করলেন। তখন যায়েদ বিন হারেছাহ (রাঃ) বললেন, كنت تدخل عليهم وقد أخرجوك؟ যে মক্কাবাসীরা আপনাকে বের করে দিয়েছে, সেখানে আপনি কিভাবে প্রবেশ করবেন? জওয়াবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, يا زيد إن الله جاعل لما ترى فرجا ومخرجا وإن الله ناصر دينه ومظهر نبيه- ‘হে যায়েদ! তুমি যে অবস্থা দেখছ, নিশ্চয়ই আল্লাহ এ থেকে পরিত্রাণের একটা পথ বের করে দেবেন এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তার দ্বীনকে সাহায্য করবেন ও তার নবীকে বিজয়ী করবেন’।[18]

মক্কায় প্রত্যাবর্তন :

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নাখলা উপত্যকা হ’তে মক্কাভিমুখে রওয়ানা করে হেরা গুহার পাদদেশে পৌঁছে মক্কায় প্রবেশের জন্য সম্ভাব্য কিছু হিতাকাংখীর নিকটে খবর পাঠালেন। কিন্তু কেউ ঝুঁকি নিতে চায়নি। অবশেষে মুত্ব‘ইম বিন ‘আদী রাযী হন এবং তার সম্মতিক্রমে যায়েদ বিন হারেছাহকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কায় এসে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন ও হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। অতঃপর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করেন। এ সময় মুত্ব‘ইম ও তার পুত্র সশস্ত্র অবস্থায় তাঁকে পাহারা দেয় এবং পরে তাঁকে বাড়ীতে পৌঁছে দেয়। আবু জাহল মুত্ব‘ইমকে প্রশ্ন করল أمجير أنت أم متابع مسلم؟ ‘তুমি কি তাকে আশ্রয় দিয়েছ না, অনুসারী মুসলিম হয়ে গেছ’? মুত্ব‘ইম জবাবে বলেন, بل مجير ‘আশ্রয় দিয়েছি মাত্র’। তখন আবু জাহল বলে উঠল, قد أجرنا من أجرت আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম, যাকে তুমি আশ্রয় দিয়েছ’। মূলতঃ এটি ছিল বংশীয় টান মাত্র। এভাবে মাসাধিককালের কষ্টকর সফর শেষে ১০ম নববী বর্ষের যুলক্বা‘দাহ মোতাবেক ৬১৯ খৃষ্টাব্দের জুলাই মাসের প্রথম দিকে তিনি মক্কায় ফিরে এলেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মুত্ব‘ইম বিন আদীর এই সৌজন্যের কথা কখনো ভুলেননি। এই ঘটনার প্রায় পাঁচ বছর পরে সংঘটিত বদরের যুদ্ধে বন্দী কাফেরদের মুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, لوكان المطعم بن عدى حيا ثم كلمنى فى هؤلاء النَّتْنَى لَتركْتُهُم ‘যদি মুত্ব‘ইম বিন আদী বেঁচে থাকত এবং এইসব দুর্গন্ধময় মানুষগুলোর জন্য সুফারিশ করত, তাহ’লে তার খাতিরে আমি এদের সবাইকে ছেড়ে দিতাম’।

ত্বায়েফ সফরের ফলাফল :

(১) ত্বায়েফের এই সফরের ফলে মক্কার বাইরে প্রথম ইসলামের দাওয়াত প্রসারিত হয়।

(২) ৬০ মাইলের এই দীর্ঘ পথে যাতায়াতকালে পথিমধ্যেকার সকল জনপদে দাওয়াত পৌঁছানো হয়। এতে নেতারা দাওয়াত কবুল না করলেও গরীব ও মযলূম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সাড়া জাগে। ত্বায়েফের আঙ্গুর বাগিচার মালিকের ক্রীতদাস ‘আদ্দাস-এর ব্যাকুল অভিব্যক্তি ভবিষ্যৎ সমাজ বিপ্লবের অন্তর্দাহ ছিল বৈ কি!

(৩) এই সফরে কোন বাহ্যিক ফলাফল দেখা না গেলেও মালাকুল জিবাল-এর আগমন এবং জিনদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনায় এবং সবশেষে মুত্ব‘ইম বিন ‘আদীর সহযোগিতায় নির্বিঘ্নে মক্কায় প্রবেশ ও সেখানে নিরাপদ অবস্থানের ঘটনায় রাসূলের মনের মধ্যেকার প্রতীতি দৃঢ়তর হয় যে, আল্লাহ তাঁর এই দাওয়াতকে অবশ্যই বিজয়ী করবেন। ফলে তিনি দ্বিগুণ উৎসাহ লাভ করেন।

অতএব রাসূলের ত্বায়েফ সফর ব্যর্থ হয়নি। বরং ভবিষ্যৎ বিজয়ের পথ সুগম করে।

সর্বাধিক দুঃখময় দিন :

একদা হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, هل أَتَى عليك يومٌ كان أشدَّ عليك من يومِ أُحدٍ؟ ‘আপনার জীবনে কি এমন কোন দিন এসেছে, যা ওহোদের দিনের চাইতে কঠিন’? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, لَقِيتُ من قومك ما لقيتُ وكان أشدَّ ما لقيتُ منهم يومَ العقبة إذ عرضتُ نفسى على ابن عبد يَالِيل بن كُلال فلم يجبنى إلى ما أردتُ فانطلقتُ وأنا مهمومٌ على وجهى- ‘তোমার কওমের কাছ থেকে যা পেয়েছি তাতো পেয়েছি। তবে তার মধ্যে সর্বাধিক কষ্টদায়ক ছিল যা আমি পেয়েছিলাম আক্বাবাহ্র দিন। যখন আমি (তায়েফের নেতা) ইবনু আবদে ইয়ালীলের কাছে নিজেকে পেশ করেছিলাম এবং আমি যা চেয়েছিলাম তাতে সে সাড়া দেয়নি। তখন আমি ফিরে আসি দুঃখ ভারাক্রান্ত চেহারা নিয়ে’।[19]

সর্বাধিক দুঃখময় দিন হবার কারণ সম্ভবতঃ এই ছিল যে, ওহোদের ঘটনায় দান্দান মুবারক শহীদ হ’লেও সেদিন তাঁর সাথী মুজাহিদ ছিলেন অনেক, যারা তাঁর মিশন চালিয়ে নিতে পারতেন। কিন্তু ওহোদের ঘটনার প্রায় ছয় বছর পূর্বে ঘটে যাওয়া ত্বায়েফের সেই মর্মান্তিক দিনে তাঁর সাথী কেউ ছিল না যায়েদ বিন হারেছাহ ব্যতীত। অতএব ত্বায়েফের ঘটনা ওহোদের ঘটনার চাইতে নিঃসন্দেহে অধিক কষ্টদায়ক ও অধিক হৃদয় বিদারক ছিল।

শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ (১৫) :

(১) যতবড়  বিপদ  আসুক  তাতে  ধৈর্য  ধারণ করা এবং বাস্তবতার মুকাবিলা করা সংস্কারকের প্রধান কর্তব্য। কাছাকাছি সময়ে আবু তালেব ও খাদীজাকে পরপর হারিয়ে হত-বিহবল রাসূলকে স্বীয় কর্তব্যে অবিচল থাকার মধ্যে আমরা সেই শিক্ষা পাই।

(২) ইসলামের প্রসার ও নিরাপত্তার জন্য তাওহীদকে অক্ষুণ্ণ রেখে সম্ভাব্য সকল দুনিয়াবী উৎসের সন্ধান করা ও তার সাহায্য নেওয়া সিদ্ধ। ত্বায়েফবাসীদের নিকটে সাহায্যের জন্য গমনের মধ্যে সে বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে।

(৩) কঠিন বিপদে অসহায় অবস্থায় কেবলমাত্র আল্লাহর নিকটেই সাহায্য চাইতে হবে- এ বিষয়ে শিক্ষা রয়েছে তায়েফ থেকে ফেরার পথে রাসূলের সেই প্রসিদ্ধ দো‘আর মধ্যে।

(৪) বিরোধী পক্ষকে সবংশে নির্মূল করে দেবার মত শক্তি হাতে পেলেও তাদের ভবিষ্যৎ বংশধরগণের হেদায়াতের আশায় সংস্কারক ব্যক্তি তা থেকে বিরত থাকেন। মালাকুল জিবালের আবেদনে সাড়া না দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেই উদারতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। যদিও ব্যক্তিগতভাবে কোন দুশমনকে ধ্বংসের অভিশাপ দেওয়া যাবে। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উৎবা-শায়বা-আবু জাহল প্রমুখকে দিয়েছিলেন এবং তা আল্লাহর পক্ষ হ’তে কার্যকর হয়েছিল।

(৫) আল্লাহর পথে সংস্কারকদের জন্য আল্লাহর গায়েবী মদদ হয়, তার বাস্তব প্রমাণ রাসূলের জীবনে দেখা গেছে তায়েফ থেকে ফেরার পথে ক্বারনুল মানাযিল নামক স্থানে ফেরেশতা অবতরণের মাধ্যমে এবং মক্কায় প্রবেশকালে মুত্ব‘ইম বিন ‘আদীর সহযোগিতার মাধ্যমে।

(৬) দুনিয়াবী জৌলুস যে মানুষকে অহংকারী করে ও হেদায়াত থেকে বঞ্চিত রাখে, তায়েফের নেতাদের উদ্ধত আচরণ এবং রাসূলের দীনহীন অবস্থার প্রতি কটাক্ষ করা, অতঃপর তাঁর পিছনে ছোকরাদের লেলিয়ে দেবার ঘটনার মধ্যে তার প্রমাণ মেলে।

পরবর্তী অংশ পড়ুন: নাজাশীর দরবারে কুরায়েশ প্রতিনিধি দল


 

[1] বুখারী, মিশকাত হা/৫৬৬৮ ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ

[2] বুখারী, মিশকাত হা/৫৬৬৮ ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ

[3] মুসলিম হা/৫১০-১৭, ‘ঈমান’ অধ্যায় ৯০ অনুচ্ছেদ ‘আবু তালেবের জন্য রাসূলের সুফারিশ ও সেকারণে তার শাস্তি লঘু করণ’

[4] বুখারী ও মুসলিম; মিশকাত হা/৬১৮৪ ‘মানাক্বিব’ অধ্যায়

[5] বুখারী ও মুসলিম; মিশখাত হা/৬১৯০

[6] আর-রাহীক্ব ১১৭ পৃঃ

[7] আর-রাহীক্ব ১/১২৫

[8] রাহমাতুল লিল আলামীন ১/৬৬

[9] আর-রাহীক্ব পৃঃ ৩২৫; ইবনু হিশাম ১/৪১৯

[10] আল-বিদায়াহ ৩/১৩৪; আর-রাহীক্ব পৃঃ ১২৫

[11] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৪৭

[12] আর-রাহীক্ব পৃঃ ১২৬; ইবনু হিশাম ১/৪২০; ত্বাবারাণী, যঈফুল জামে‘ হা/১১৮২; যঈফাহ হা/২৯৩৩

[13] মুত্তাফাক্ব আলাইহ; মিশকাত হা/৫৮৪৮ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায় ৪ অনুচ্ছেদ

[14] তাফসীর কুরতুবী; সূরা আহক্বাফ ২৯; হা/৫৫০৪-০৫; তাফসীর ইবনে কাছীর, ঐ

[15] মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭৪৮ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায় ১ অনুচ্ছেদ

[16] দারেমী, মিশকাত হা/৫৭৭৩ সনদ ছহীহ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায় ১ অনুচ্ছেদ

[17] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৭৪৫, ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায় ১ অনুচ্ছেদ

[18] আর-রাহীক্ব পৃঃ ১২৮

[19] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৪৮ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায় ৪ অনুচ্ছেদ

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button