হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ)

রাসূল (ছাঃ)-এর নবগঠিত মাদানী রাষ্ট্রে যাকাত আদায়কারী নিয়োগ

পূর্বের অংশ: তাবুক যুদ্ধের পর মক্কায় রাসূল (ছাঃ)-এর দাওয়াতী জীবনের নতুন অধ্যায়

নবগঠিত মাদানী রাষ্ট্রের আর্থিক ভিত মযবুত করার জন্য এবং ফরয যাকাত ও অন্যান্য ছাদাক্বা সমূহ সুশৃংখলভাবে আদায় ও বণ্টনের জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এতদুদ্দেশ্যে তিনি রাষ্ট্রের অধীন ১৬টি গোত্র ও অঞ্চলের জন্য ১৬ জন কর্মকর্তা নিয়োগ করেন। ৯ম হিজরী সনে এই সকল নিয়োগ কার্যকর হয়। উল্লেখ্য যে, ২য় হিজরীতে রামাযানে ছিয়াম ফরয হয় এবং একই বছর শাওয়াল মাসে যাকাত ফরয হয়। নিম্নে যাকাত আদায়ের কর্মকর্তা ও অঞ্চল সমূহের বিবরণ প্রদত্ত হ’ল-

কর্মকর্তা

অঞ্চল/গোত্র

উয়ায়না বিন হিছন বনু তামীম
ইয়াযীদ ইবনুল হুছাইন আসলাম ও গেফার
আববাদ বিন বিশ্র আশহালী সুলায়েম ও মুযায়না
রাফে‘ বিন মাকীছ (رافع بن مكيث) জুহায়না
আমর ইবনুল ‘আছ বনু ফাযারাহ
যাহ্হাক বিন সুফিয়ান বনু কেলাব
বাশীর বিন সুফিয়ান বনু কা‘ব
ইবনুল লুৎবিয়াহ আল-আযদী বনু যুবিয়ান
মুহাজির বিন আবু উমাইয়া

(তাদের উপস্থিতিতেই এখানে ভন্ডনবী আসওয়াদ আনাসীর আবির্ভাব ঘটে)

ছান‘আ শহর
১০ যিয়াদ বিন লাবীদ হাযারামাউত
১১ আদী বিন হাতেম বনু ত্বাই ও বনু আসাদ
১২ মালেক বিন নুওয়াইরাহ বনু হানযালা
১৩ যবরক্বান বিন বদর বনু সা‘দের একটি অংশে
১৪ ক্বায়েম বিন আছেম বনু সা‘দের আরেকটি অংশে
১৫ ‘আলা ইবনুল হাযরামী বাহরায়েন
১৬ আলী ইবনু আবী ত্বালেব নাজরান

(ছাদাক্বা ও জিযিয়া উভয়টি আদায়ের জন্য)

এই সময় কোন কোন গোত্র জিযিয়া ও ছাদাক্বা দিতে অস্বীকার করে এমনকি অন্যকে দিতে বাধা প্রদান করে। এমনি একটি গোত্র ছিল বনু তামীম। ৯ম হিজরীর মুহাররম মাসে উক্ত গোত্রের জন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উয়ায়না বিন হিছন মুহাজির ও আনছারের বাইরের ৫০ জনের একটি অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে এদের উপরে আকস্মিক হামলা চালালে সবাই পালিয়ে যায়। তাদের ১১ জন পুরুষ, ২১ জন মহিলা ও ৩০ জন শিশু বন্দী হয়ে মদীনায় নীত হয় এবং রামলা বিনতুল হারেছ-এর গৃহে রাখা হয়। পরদিন বনু তামীমের দশজন নেতা বন্দী মুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য মদীনায় আসে। যোহরের ছালাতের প্রাক্কালে তারা মদীনায় উপস্থিত হয় এবং রাসূলের হুজরার সামনে গিয়ে يَا مُحَمَّدُ أُخْرُجْ إلَيْنَا ‘হে মুহাম্মাদ! বেরিয়ে এসো’ বলে হাকডাক শুরু করে দেয়। বর্বর বেদুঈনদের এই অসভ্যাচরণে ব্যথিত হ’লেও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কিছু বললেন না। কিন্তু আল্লাহ এ উপলক্ষে সূরা হুজুরাতের ৪ ও ৫ আয়াত নাযিল করে সবাইকে এরূপ আচরণের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে নিষেধ করে দিলেন।[1]

যোহরের ছালাত আদায়ের পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বনু তামীম নেতাদের সাথে বসলেন। কিন্তু তারা তাদের বংশীয় অহমিকা বর্ণনা করে বক্তৃতা ও কবিতা আওড়ানো শুরু করেছিল। প্রথমে তাদের একজন ভাল বক্তা উতারেদ বিন হাজেব (عُطَارِدُ بْنُ حَاجِبٍ) বংশ গৌরবের উপরে উঁচু মানের বক্তব্য পেশ করলেন। তার জওয়াবে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘খাতীবুল ইসলাম’ (خطيب الإسلام) নামে খ্যাত ছাবেত বিন ক্বায়েস বিন শাম্মাসকে পেশ করলেন। অতঃপর তারা তাদের কবি যবরক্বান বিন বদরকে পেশ করল। তিনিও নিজেদের গৌরবগাথা বর্ণনা করে স্বতঃস্ফূর্ত কবিতা সমূহ পাঠ করলেন। তার জওয়াবে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘শা‘এরুল ইসলাম’ (شاعر الإسلام) হযরত হাসসান বিন ছাবেত (ছাঃ)-কে পেশ করলেন।

উভয় দলের বক্তা ও কবিদের মুকাবিলা শেষ হ’লে বনু তামীমের পক্ষ হ’তে আক্বরা বিন হাবেস বললেন, তাদের বক্তা আমাদের বক্তার চাইতে বড়, তাদের কবি আমাদের কবির চাইতে বড়। তাদের আওয়ায আমাদের আওয়াযের চাইতে উঁচু এবং তাদের বক্তব্য সমূহ আমাদের বক্তব্য সমূহের চাইতে উন্নত’। অতঃপর তারা ইসলাম কবুল করলেন। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদের উত্তম উপঢৌকনাদি দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করলেন এবং তাদের বন্দীদের ফেরৎ দিলেন’।

এখানে আক্বরা বিন হাবেস সম্পর্কে মুবারকপুরী সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, তিনি ইতিপূর্বে মুসলমান ছিলেন না অথচ ৮ম হিজরীর শাওয়ালে সংঘটিত হোনায়েন যুদ্ধ শেষে গনীমত বণ্টনের পর হাওয়াযেন গোত্রের বন্দীদের ফেরৎ দানের সময় বনু তামীমের পক্ষে আক্বরা বিন হাবেস তাদের বন্দী ফেরৎ দিতে অস্বীকার করেন বলে চরিতকারগণ বলেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি আগেই মুসলমান হয়েছিলেন’।

এক্ষেত্রে আমাদের মতামত এই যে, আক্বরা সহ বনু তামীম আগেই মুসলমান হয়েছিল বলেই তারা রাসূলের পক্ষে হোনায়েন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আর সেকারণেই তাদের কাছ থেকে জিযিয়া ও যাকাত গ্রহণের দায়িত্ব উয়ায়না বিন হিছনকে ৯ম হিজরীতে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের কিছু লোক যারা তখনও মুসলমান হয়নি, তারা জিযিয়া দিতে অস্বীকার করায় এবং অন্যান্য গোত্রকে জিযিয়া প্রদানের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরিত হয়েছিল। এমনও হ’তে পারে যে, আক্বরা বিন হাবেস-এর প্রচেষ্টায় উক্ত প্রতিনিধি দল মদীনায় আসে এবং ইসলাম কবুল করে। অতএব আক্বরা বিন হাবেস-এর উপরোক্ত বক্তব্য একথা প্রমাণ করে যে, ইতিপূর্বে তিনি মুসলমান ছিলেন না।

পরবর্তী অংশ: মক্কা বিজয়ের পর প্রতিনিধি দল সমূহের আগমন

– ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব


[1] তিরমিযী, আহমাদ, মা‘আরেফ পৃঃ ১২৭৭

১টি মন্তব্য

  1. জিহাদ কুরআন ও হাদিসের একটি বিশেষ পরিভাষা। তাঁর অর্থ হল দ্বীন ইসলামের প্রতিরক্ষা ও সমুন্নত করার লক্ষ্যে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র দিয়ে লড়াই করা।
    জিহাদের সমস্ত ফজিলত দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সাথে প্রয়োগ করা في سبيل الله جهاد (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) কে তাবলীগের সাথে ‘খাস’ করা বা في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) কে ‘আম’ করে তাবলীগকেও এর উদ্দেশ্য বানানো সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন দাবি ছাড়া আর কিছুই নয়। এ কথাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বদা স্মরণ রাখা জরুরী।
    মোট কথা এই في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) পরিভাষাটি কুরআন ও হাদীসে ‘আম’ (ব্যাপক) না ‘খাস’ (বিশেষ) এ ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। তবে আলোচনা পর্যালোচনার পরে মাসরাফে যাকাতের (যাকাতের ব্যয়ের খাত) আলোচনায় এই কথাই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) একটি বিশেষ পরিভাষা অর্থাৎ ‘খাস’ এবং সকল মুহাদ্দিসীনের কর্ম পদ্ধতিও এটাই ছিল (অর্থাৎ সকল মুহাদ্দিসীন ফি সাবিলিল্লাহকে কে বিশেষ পরিভাষা হিসেবে ব্যবহার করেছেন)।
    তারা সকলেই في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) শব্দ সম্বলিত সকল হাদীসকে কিতাবুল জিহাদ অর্থাৎ জিহাদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। তার মানে তাদের নিকটও এটা বিশেষ পরিভাষা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত ফযিলতসমূহ একটি বিশেষ কাজের জন্য নির্ধারিত।
    কিন্তু তাবলীগ জামাতের ভাইয়েরা في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে ‘আম’ করে ফেলেছেন। বরং তারা নিজেদের কাজকেই ঐ সকল হাদীসের مصداق বা প্রয়োগ ক্ষেত্র সাব্যস্ত করেছেন।
    তারা মেশকাতুল মাসাবীহ হাদীসের কিতাব থেকে তাবলীগী কাজের জণ্য যে মুস্তাখাব নির্বাচিত সংকলন রচনা করেছেন, তাতে জিহাদের অধ্যায় পুরোটাই শামিল করেছেন।
    এর দ্বারা স্পষ্ট উদ্দেশ্য এটাই যে , তাদের কাজও একটি জিহাদ। এ বিষয়ে মাওলানা ওমর পালনপুরী রহঃ এর সাথে অধমের আলোচনা ও চিঠি আদান প্রদান হয়েছে।
    হযরতের মনোভাব এমন ছিল যে, আমাদের তাবলীগী কাজও জিহাদ।
    তিনি এক চিঠিতে দলিল হিসাবে এ কথা আমাকে লিখেছেন যে, তিরমিযি শরীফের একটি রেওয়ায়েতে তাবেঈ উবায়াহ্‌ রহঃ মসজিদে যাওয়াকে في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) এর প্রয়োগ ক্ষেত্রে সাব্যস্ত করেছেন। তাহলে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে কেন তা প্রয়োগ করা যাবে না? আমি উত্তরে লিখেছি যে —
    প্রথমতঃ
    উবায়াহ্‌ রহঃ কোন সাহাবী নন। হানফী আলেমদের নিকট সাহাবীদের কথা حخت বা দলিল। কিন্তু তাবেঈদের ব্যাপারে স্বয়ং ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কথা হল هم رخال ونحن رخل — তারাও মানুষ আমরাও মানুষ।
    অর্থাৎ তাঁদের কথা আমাদের হানফী আলেমদের নিকট حخت বা স্বতন্ত্র দলিল নয়। যদি কোন সাহাবী এই পরিভাষাটি “আম” (ব্যাপক) করতেন তাহলে একটা কথা ছিল।
    দ্বিতীয়তঃ
    একমাত্র দাওয়াত ও তাবলীগই কেন এর প্রয়োগ ক্ষেত্র হবে? যদিও কোন কোন ভাইকে বলতে শুনা যায় — তাবলীগই দ্বীনি কাজ। হযরত ইলিয়াস রহঃ এমন বলতেন না। যদিও তিনি বলতেন তাবলীগও দ্বীনি কাজ। কিন্তু তাবলীগ জামাতের ভায়েরা “ও” কে “ই” দ্বারা পাল্টে দিয়েছেন।
    মোটকথা, তারা নিজেদের কাজকেই জিহাদ বলেন। বরং তারা হয়তো হাকীকী জিহাদকেও জিহাদ মনে করেন না। তাঁদের মতে জিহাদের ফজিলতগুলোও দাওয়াত ও তাবলীগের মাঝে সীমাবদ্ধ।
    তৃতীয়তঃ
    অন্য সকল দ্বীনি কাজ সম্পাদনকারীরা যেমন দ্বীনি শিক্ষাদান ও লেখালেখীতে ব্যস্ত আলেমরা নিজেদের কাজের জন্য في سبيل الله (ফি সাবিলিল্লাহ) ও জিহাদের ফজিলত সাব্যস্ত করেন না। এরপরেও কেন তাবলীগের ভাইরা এসকল হাদীসগুলোকে তাদের কাজের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন?
    এই চিঠির পর মাওলানা ওমর পালনপুরী সাহেবের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আর কোন চিঠি আসেনি। কোন এক চিঠিতে শ্রদ্ধেয় মাওলানা সাহেব একটি যুক্তি পেশ করেছিলেন যে, জিহাদ হল حسن لغيره অর্থাৎ সত্ত্বাগতভাবে ভালো নয় অন্য কারনে ভালো।
    বাহ্যিক দৃষ্টিতে জিহাদ হল জমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা। আর দাওয়াত তাবলীগ স্বয়ং حسن لذاته حسن (সত্ত্বাগত ভালো) এটা হল আল্লাহ তা’আলা ও সৎকাজের প্রতি দাওয়াত। সুতরাং যে সব ফজিলত ও সওয়াব حسن لغيره এর জন্যে তা حسن لذاته حسن এর জন্যে কেন হবে না?
    আমি উত্তরে আরজ করলাম এভাবে ক্বিয়াস (যুক্তি) দ্বারা সওয়াব সাব্যস্ত করা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ক্বিয়াসটা শরঈ আহকামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, সওয়াব বা ফাজায়েল এবং এ জাতীয় অন্যান্য توقيفي বিষয়ে ক্বিয়াস চলে না।
    (তাওক্বীফী বলা হয় এমন বিষয়কে যার বাস্তবতা বান্দার বিবেক দ্বারা নিরূপণ করা যায় না। যেমন কোন সূরা পাঠে কি সওয়াব, কোন আমলে কি সওয়াব ও কোন আমলে কত গুনাহ এক্ষেত্রে আকল ব্যবহার করে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছার অধিকার শরীয়ত কাউকে দেয়নি। বরং কুরআন ও হাদীসে যতটুকু বলা হয়েছে তা সেভাবেই বহাল রাখতে হবে )
    অর্থাৎ এসকম স্পষ্ট বিষয়ে কুরআন হাদীসের প্রমান আবশ্যক। তাছাড়া সওয়াবের কম বেশী কষ্টের অনুপাতে হয়ে থাকে। (যেমন হাদীসে দূর থেকে মসজিদে আগমনকারীর সওয়াবের কথা বলা হয়েছে) আর আল্লাহই ভালো জানেন, কোন কাজে কি পরিমাণ কষ্ট ও এর সওয়াব কি হবে। দুনিয়ার মানুষ এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।
    স্পষ্ট কথা হল, কষ্টের বিবেচনায় পারিভাষিক في سبيل الله جهاد (জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ) এর ধারে কাছেও তাবলীগী কাজ পৌছাতে পারবে না।
    এরপরও কিভাবে জিহাদের সওয়াব ও ফজিলত ঐ কাজের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। আজ পর্যন্ত মুহাক্কিক আলেমদের কেউই এ সকল বর্ণনাকে অন্য কোন দ্বীনি কাজে ব্যবহার করেন নি।
    ফায়দাঃ
    উপরোক্ত আলোচনায় “ও” এবং “ই” এর কথা হয়েছে (“তাবলীগও দ্বীনি কাজ”/ “তাবলীগই দ্বীনি কাজ” )। এটা একটা উদাহরণ দ্বারা ভালোভাবে বোঝা যায়। হিন্দুস্তানের একটি বড় হীরক খন্ড, কোহিনুর। এটা অত্যন্ত মূল্যবান হীরা। যদি তা হাত থেকে পড়ে ছোট বড় পাঁচ টুকরা হয়ে যায় তাহলেও এ টুকরাগুলো মুল্যহীন হবে না। প্রতিটি টুকরার কিছু না কিছু মূল্য থাকবেই।
    কিন্তু কোন টুকরার এ অধিকার নেই যে সে বলবে, “আমিই ঐ কোহিনুর”। হ্যাঁ, প্রতিটি টুকরা এই কথা বলতে পারবে যে, “আমিও কোহিনুর” মানে কোহিনুরের একটি অংশ।
    উক্ত উদাহরণ দ্বারা একথা স্পষ্ট হয় যে, নবী সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাযিঃ এর সকল কাজ একটি পূর্ণ কোহিনুর ছিল। তাঁরা একই সাথে দাঈ, মুবাল্লিগ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, মুজাহিদ ছিলেন এবং তাঁরা রাজ্যও চালাতেন।
    কিন্তু পরবর্তীতে এই সব কাজ পৃথক পৃথক হয়ে গেছে। সুতরাং যে কোন দ্বীনি কাজকারীরা এ কথা বলতে পারেন যে, আমিও সাহাবী ওয়ালা কাজ করি। কিন্তু কারোরই একথ আবলার অধিকার নেই যে, সে বলবে, আমিই একমাত্র সাহাবী ওয়ালা কাজ করি।
    আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে এ বিষয়টি বোঝার তাউফীক দান করুন এবং যে সব ভুল-ত্রুটি হচ্ছে তার সংশোধন করুন। আমীন।
    মুফতী সাইদ আহমাদ পালনপুরী (হাফিযাহুল্লাহ)
    শাইখুল হাদীস ও মুফতী দারুল উলুম দেওবন্দ
    -সূত্রঃ তোহফাতুল আলমায়ী।

মন্তব্য করুন

Back to top button