ইংরেজী অভিধানের কথা
আব্দুল হাসিব
ইংরেজী ভাষায় সর্বপ্রথম ‘ডিকশনারী’ নামক যে লিখিত পান্ডুলিপির সন্ধান পাওয়া যায় তা রচিত হয় ১২২৫ খৃষ্টাব্দে। সেটা ছিল কতিপয় ছাত্রের তৈরী ইংরেজী থেকে ল্যাটিন ভাষার কিছু শব্দসমষ্টি, যা শব্দক্রম অনুযায়ী সাজানো ছিল না। কেবল বিষয়ভিত্তিক কিছু শব্দের ব্যাখ্যাযুক্ত বিবরণ ছিল। ডিকশনারীতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইংরেজী শব্দের উপস্থিতি শুরু হয় ১৫ শতকে। তবে তাও ছিল ল্যাটিন ভাষা বোঝার সুবিধার্থে। এ সময়ের প্রসিদ্ধ ডিকশনারীটির নাম ছিল (Promptorium Parvulorum) অর্থাৎ ‘ছোটদের স্টোর হাউজ’ যা ১৪৪০ সালে গালফ্রিডাস জিওফ্রে নামক এক ডোমিনিকান ব্যাকরণবিদ রচনা করেন। এই ডিকশনারীতে ১২,০০০ ইংরেজী শব্দ ও ল্যাটিন শব্দার্থ ছিল। ১৪৯৯ সালে এটি মুদ্রিত হয়। ১৫৫২ সালে ইংরেজী ভাষার প্রথম স্বার্থক ডিকশনারী (Abecedarium Anglo-Latinum) রচনা করেন রিচার্ড হিউলয়েট। তাঁর এই ইংরেজী টু ল্যাটিন ডিকশনারীটিতে শব্দসংখ্যা ছিল ২৬ হাজারের মত। পূর্বকালের এসকল ডিকশনারীতে যাবতীয় ইংরেজী বা ল্যাটিন শব্দ একত্রিত করার কোন প্রচেষ্টা ছিল না। সেখানে কেবল সেসব শব্দ অন্তর্ভুক্ত করা হত যেগুলো ছাত্রদের জন্য আয়ত্ব করা কঠিন ছিল। অতঃপর ১৬০৪ সালে রবার্ট কাউড্রে শব্দক্রম অনুযায়ী সাজিয়ে প্রথমবারের মত সার্বজনীন একটি ডিকশনারী রচনা করেন। তাঁর অনুসরণে ১৬২৩ সালে হেনরী কোকেরাম The English Dictionarie নামক আরেকটি ডিকশনারী রচনা করেন যা এই ইংরেজী শব্দকোষ শাস্ত্রের আধুনিকরূপ দানে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ১৭০২ সালে জন কারসে ও জে. কে. ফিলোবিব্ল যৌথভাবে New English Dictionaryনামক একটি দৈনন্দিন ব্যবহৃত ইংরেজী শব্দের ডিকশনারী রচনা করেন। ১৭২১ সালে নাথানিয়েল বেইলী নামক একজন স্কুল টিচার ইংরেজী শব্দতত্ত্ব বিশ্লেষণমূলক ডিকশনারী রচনা করেন। এতে পূর্ববর্তী আর সব ইংরেজী ডিকশনারীর তুলনায় অনেক বেশী শব্দ ছিল। তিনিই সর্বপ্রথম ডিকশনারীতে শব্দার্থের সাথে শব্দের উচ্চারণ অন্তর্ভুক্ত করেন। শব্দকোষ রচনায় অষ্টাদশ শতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন আমেরিকার কানেকটিকাটের এক স্কুল শিক্ষক স্যামুয়েল জনসন। ১৭৫৫ সালে তিনি একক হাতে A Dictionary of the English Language নামক এই শব্দকোষটি রচনা করেন। তাঁর জীবনীকার জেমস বসওয়েল বলেন, ‘পৃথিবীর এক বিস্ময় যে, এমন একটি বিরাটাকার কাজ কিভাবে একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব হল, যখন অন্যান্য দেশসমূহ এ ধরনের কাজে হাত দিতে পুরো একটি একাডেমীর প্রয়োজন বোধ করত।’ পূর্বতন শব্দকোষবিদগণ মূলত শব্দের ব্যবহার ও বানানের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। কিন্তু জনসন আধুনিকযুগের মত অধিক লক্ষ্য রেখেছেন শব্দের সমসাময়িক ব্যবহারের দিকে। শব্দের অর্থ বর্ণনার চেয়ে ব্যবহাররীতি দেখানোকেই তিনি বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কোন জীবিত ভাষার ডিকশনারী পুরোপুরি যথার্থ হতে পারে না। কেননা যখন সেটি মুদ্রণের তাড়া আসে তখন কোন শব্দ হয় বাদ পড়ে যায় অথবা অন্তর্ভুক্ত হলেও তা হয়ত আর ব্যবহার হয় না’। জনসনই প্রথম ব্যক্তি যিনি শব্দের বিভিন্ন ব্যবহার দেখাতে চিত্র ও উদাহরণ উল্লেখ করেছেন। ১৮০৬ সালে এই কানেকটিকাটেরই অধিবাসী নোয়াহ ওয়েবস্টার ৪০০০০ শব্দ সমৃদ্ধ একটি ডিকশনারী রচনা করেন। তবে তিনি আমেরিকার শব্দকোষবিদ্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক স্থাপন করেন ১৮২৮ সালে, যখন তিনি An American Dictionary of the English Language নামক ৭০০০০ শব্দসম্বলিত ডিকশনারীটি রচনা করেন। ওয়েবস্টারের এই মাস্টারপিসটি সর্বপ্রথম ডিকশনারী হিসাবে আমেরিকা-ইউরোপে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা পায়। জনসন ও ওয়েবস্টারের পর অনেক ডিকশনারী এসেছে এবং গত হয়েছে কিন্তু আটলান্টিকের এপার-ওপারে Oxford English Dictionary-এর মত আর কোন ডিকশনারী বিখ্যাত হতে পারেনি। লন্ডন থেকে প্রকাশিত এই ডিকশনারীর জন্ম অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে হলেও ১৯২৮ সালের পূর্বে তা পূর্ণাঙ্গতা লাভ করেনি। ডিকশনারীটি ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সহস্রাধিক বিশেষজ্ঞের সহায়তায় এবং জন সিম্পসন ও এডমান্ড ওয়েইনারের সম্পাদনায় রচিত হয়। এতে সতের শতক থেকে শুরু করে আধুনিককাল পর্যন্ত সংরক্ষিত সকল ইংরেজী শব্দ ও তার ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফলে কেবল একটি শব্দ Place-এর নানাবিধ ব্যবহার উল্লেখ করতে মুদ্রিত পৃষ্ঠায় ২০/২৫ পৃষ্ঠা লেগে গেছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ডিকশনারী ১২ খন্ডে সমাপ্ত হয়েছে যাতে ২২ হাজার পৃষ্ঠা রয়েছে এবং প্রায় সাড়ে চার লক্ষ শব্দ ও আড়াই মিলিয়ন ব্যাখ্যামূলক উদ্ধৃতি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশের পর ২০১০ সালের এর তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক ভার্সন সর্বপ্রথম বের হয় ১৯৮৮ সালে। ২০০৯ সালে এর ৪র্থ সংস্করণ বের হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে অনলাইনেও এটি উন্মুক্ত করা হয়। এছাড়া বর্তমানে নন-ন্যাটিভদের জন্য সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ডিকশনারী হল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত ‘Oxford Advanced Learner’s Dictionary of Current English’ যা আলবার্ট সিডনী হর্নবাই নামক এক বৃটিশ স্কুল শিক্ষক রচনা করেন। ১৯৪২ সালে জাপানে সর্বপ্রথম এটি প্রকাশিত হয়েছিল। বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের অন্যতম এই জনপ্রিয় ডিকশনারীটির অষ্টাদশ সংস্করণ ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, ইংরেজী ডিকশনারীতে সর্বাধিক এন্ট্রি রয়েছে T শব্দটির। কেননা ইংরেজী ভাষায় প্রারম্ভিক শব্দ হিসাবে এ শব্দটির ব্যবহার সর্বাধিক। আর সবচেয়ে ব্যবহৃত অক্ষর হল E। সর্বাধিক প্রচলিত শব্দ the, of, and এবং to। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল ভাষারই ইংরেজী শব্দার্থ ডিকশনারী রয়েছে।