আকাইদ

তাওহীদুল ইবাদত (আল্লাহর ইবাদতে এককত্ব)

 

প্রথম দুই শ্রেণীর তাওহীদের ব্যাপক গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা থাকলেও শুধুমাত্র সেগুলির উপর দৃঢ় বিশ্বাসই তাওহীদের ইসলামী প্রয়োজনীয়তা পরিপূরণে যথেষ্ট নয়। ইসলামী মতে তাওহীদকে পরিপূর্ণতা দেয়ার জন্য তাওহীদে রুবুবিয়াহ এবং আছমা ওয়াছ-ছিফাত অবশ্যই এদের পরিপূরক তাওহীদে ইবাদাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। এই বিষয়টি যে ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত তা হল আল্লাহ নিজেই পরিষ্কার ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে রাসূলের সময়কার মুশরিকগণ (পৌত্তলিকগণ) তাওহীদের প্রথম দুই শ্রেণীর বহু বিষয় সত্য বলে স্বীকার করেছিল। কুরআনে আল্লাহ রাসূল (ছাঃ)-কে পৌত্তলিকদের বলতে বলেছেন,

ﻗُﻞْ ﻣَﻦْ ﻳَﺮْﺯُﻗُﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﻣَّﻦْ ﻳَﻤْﻠِﻚُ ﺍﻟﺴَّﻤْﻊَ ﻭَﺍﻟْﺄَﺑْﺼَﺎﺭَ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺨْﺮِﺝُ ﺍﻟْﺤَﻲَّ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖِ ﻭَﻳُﺨْﺮِﺝُ ﺍﻟْﻤَﻴِّﺖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﺤَﻲِّ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﺪَﺑِّﺮُ ﺍﻟْﺄَﻣْﺮَ ﻓَﺴَﻴَﻘُﻮﻟُﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﻘُﻞْ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ ‘বল কে তোমাদেরকে আকাশ ও পৃথিবী হতে জীবনোপকরণ সরবরাহ করে অথবা শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কার কর্তৃত্বাধীন, কে জীবিতকে মৃত হতে নির্গত করে এবং কে মৃতকে জীবিত হতে নির্গত করে এবং কে সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে? তখন তারা বলবে, আল্লাহ’ (ইউনুস ৩১) ।

আল্লাহ আরো বলেন, ﻭَﻟَﺌِﻦْ ﺳَﺄَﻟْﺘَﻬُﻢْ ﻣَﻦْ ﺧَﻠَﻘَﻬُﻢْ ﻟَﻴَﻘُﻮﻟُﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄَﻧَّﻰ ﻳُﺆْﻓَﻜُﻮﻥَ ‘যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’ (যুখরুফ ৮৭) ।

আল্লাহ আরো বলেন, ﻭَﻟَﺌِﻦْ ﺳَﺄَﻟْﺘَﻬُﻢْ ﻣَﻦْ ﻧَﺰَّﻝَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀِ ﻣَﺎﺀً ﻓَﺄَﺣْﻴَﺎ ﺑِﻪِ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِ ﻣَﻮْﺗِﻬَﺎ ﻟَﻴَﻘُﻮﻟُﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻗُﻞِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺑَﻞْ ﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻘِﻠُﻮﻥ َ ‘যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, ভুমি মৃত হবার পর আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে কে তাকে সঞ্জীবিত করে? তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’ (আনকাবুত ৬৩) ।

মক্কার পৌত্তলিকরা সবাই জানতো যে আল্লাহ হল তাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, তাদের প্রভু এবং মালিক তবুও আল্লাহর কাছে ঐ জ্ঞান তাদের মুসলিম বানাতে পারেনি। আল্লাহ বলেছেন, ﻭَﻣَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﻫُﻢْ ﻣُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ ‘তাদের অধিকাংশই আল্লাহকে বিশ্বাস করে কিন্তু তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করে’ (ইউসুফ ১০৬) ।

এই আয়াতের ব্যাপারে তাবেঈ ইমাম মুজাহিদের ভাষ্য হল, আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমাদের প্রতিপালন করেন এবং আমাদের জীবন নেন এই বক্তব্যের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ঘোষণা তাদেরকে আল্লাহর পাশাপাশি অন্যান্য দেব-দেবতার উপাসনা হতে বিরত করেনি (তাফসীরে তাবারী) । পূর্বে উল্লে­­খত আয়াতে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, কাফেররা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, রাজত্ব ও ক্ষমতা সম্বন্ধে জ্ঞাত ছিল। প্রকৃতপক্ষে ভীষণ প্রয়োজন এবং দুর্যোগের সময় তারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে হজ্জ, দান, পশু জবেহ, মানত এমনকি উপাসনাও করত। এমনকি তারা ইবরাহীমের ধর্ম অনুসরণ করছে বলেও দাবি করত। ঐ ধরনের দাবীর কারণে আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করলেন, ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﻳَﻬُﻮﺩِﻳًّﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻧَﺼْﺮَﺍﻧِﻴًّﺎ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺣَﻨِﻴﻔًﺎ ﻣُﺴْﻠِﻤًﺎ ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ

অর্থাৎ ‘ইবরাহীম ইয়াহুদীও ছিল না, খৃস্টানও ছিল না, সে ছিল একনিষ্ঠ আত্মসমর্পণকারী এবং সে মুশরিকদের অস্তর্ভুক্ত ছিল না’ (আলে ইমরান ৬৭) ।

কিছু পৌত্তলিক মক্কাবাসী এমনকি পুনরুত্থান, শেষ বিচার এবং পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্য (ক্বদর) বিশ্বাস করত। প্রাক-ইসলামী কবিতায় তাদের এই বিশ্বাসের প্রচুর সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন কবি যুহাইর বলেছিলেন, ‘হয় এটা স্থগিত করা হয়েছিল, একটি পুস্তকে রক্ষিত হয়েছিল এবং শেষ বিচার দিনের জন্য রক্ষা করা হয়েছিল নতুবা ত্বরান্বিত করা হয়েছিল এবং প্রতিশোধ নেয়া হয়েছিল।’

কবি আনতারা বলেছেন বলেছেন, ‘‘ওহে এবিল! মৃত্যু হতে তুমি কোথায় পালাবে, যদি আসমানস্থিত আমার স্রষ্টা তোমার ভাগ্যে তা লিখে থাকেন?’।

মক্কাবাসীর তাওহীদ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি এবং আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা সত্বেও একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি তারা অন্যান্য দেবদেবীর উপাসনা করার কারণে আল্লাহ তাদেরকে নাস্তিক (কাফের) এবং পৌত্তলিক (মুশরিক) হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন।

ফলে তাওহীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল তাওহীদ আল-ইবাদাহ অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদতে এককত্ব বজায় রাখা। যেহেতু একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত প্রাপ্য এবং মানুষের ইবাদতের ফল হিসাবে একমাত্র তিনিই মঙ্গল মঞ্জুরী করতে পারেন, সেজন্য সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহকে উদ্দেশ্য করেই করতে হবে। অধিকস্তু, মানুষ এবং স্রষ্টার মধ্যে যে কোন ধরনের মধ্যস্থতাকারী অথবা যোগাযোগকারীর প্রয়োজন নেই। আল্লাহ বান্দার ইবাদতকে একমাত্র তাঁর উদ্দেশ্যই করার জন্য গুরুত্বারোপ করেছেন এবং এটাই সকল নবী-রাসূল কর্তৃক প্রচারিত বার্তার সারমর্ম। আল্লাহ বলেছেন-

ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺖُ ﺍﻟْﺠِﻦَّ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧْﺲَ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭﻥِ ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এই জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে’ (যারিয়াত ৫৬) ।

আল্লাহ আরো বলেন, ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻌَﺜْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﺃَﻥِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ ‘আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে (মিথ্যা দেবদেবীকে) বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি’ (নাহল ৩৬) ।

সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করা মানুষের সহজাত ক্ষমতার উর্ধ্বে। মানুষ একটি সসীম সৃষ্টিকর্ম এবং তার নিকট হতে অসীম স্রষ্টার ক্রিয়াকান্ড সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গতভাবে উপলব্ধি আশা করা যায় না। এই কারণে স্রষ্টা তাঁকে ইবাদত করা মানুষের স্বভাবের একটি অংশ হিসাবে তৈরি করেছেন। সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্বন্ধে পরিস্কার করে বুঝানোর জন্য তিনি নবী-রাসূলদের এবং মানবীয় বোধগম্য কিতাবসমূহ প্রেরণ করেছিলেন। স্রষ্টার ইবাদত করা উদ্দেশ্য এবং নবী-রাসূলদের প্রধান দাওয়াত ছিল একমাত্র সৃষ্টাকে ইবাদত করা, তথা তাওহীদুল ইবাদাতের ঘোষণা করা। এ কারণে আল্লাহ ছাড়া অথবা আল্লাহসহ অন্যকে ইবাদত করা কঠিন গুনাহ ও শিরক। যে সূরা আল ফাতিহা মুসলিম নরনারীদের ছালাতে প্রতিদিন অন্ততপক্ষে সতেরবার পড়তে হয় সেই সূরার ৪র্থ আয়াত উল্লেখ করে ‘আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমার কাছেই আমবা সাহায্য চাই’। এই বিবৃতি থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়, সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে করতে হবে যিনি সাড়া দিতে পারেন। রাসূল (ছাঃ) তাওহীদের দর্শন দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে বলেছেন,

ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟْﺖَ ﻓَﺎﺳْﺄَﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘَﻌَﻨْﺖَ ﻓَﺎﺳْﺘَﻌِﻦْ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ অর্থাৎ ‘তুমি যদি কিছু চাও তাহলে শুধু আল্লাহর নিকট চাও এবং তুমি যদি সাহায্য চাও তাহলে শুধু আল্লাহর নিকট চাও’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৩০২) । এরূপ আরো বলা হয়েছে কুরআনের বহু আয়াতে। উদাহরন স্বরূপ-

যেমন আল্লাহ বলেন, ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟَﻚَ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ ﻋَﻨِّﻲ ﻓَﺈِﻧِّﻲ ﻗَﺮِﻳﺐٌ ﺃُﺟِﻴﺐُ ﺩَﻋْﻮَﺓَ ﺍﻟﺪَّﺍﻉِ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻥِ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﺠِﻴﺒُﻮﺍ ﻟِﻲ ﻭَﻟْﻴُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ ﺑِﻲ ﻟَﻌَﻠَّﻬُﻢْ ﻳَﺮْﺷُﺪُﻭﻥَঅর্থাৎ ‘আমার বান্দারা যখন আমার সম্বন্ধে আপনাকে প্রশ্ন করে, আমি তো নিকটেই। প্রার্থনাকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তার আহবানে সাড়া দেই। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে’ (বাকারা ১৮৬) ।

আল্লাহ আরো বলেন, ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺍﻟْﺈِﻧْﺴَﺎﻥَ ﻭَﻧَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﺗُﻮَﺳْﻮِﺱُ ﺑِﻪِ ﻧَﻔْﺴُﻪُ ﻭَﻧَﺤْﻦُ ﺃَﻗْﺮَﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﺣَﺒْﻞِ ﺍﻟْﻮَﺭِﻳﺪِ অর্থাৎ ‘আমিই মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার প্রবৃত্তি তাকে যে কুমন্ত্রণা দেয় তা আমি জানি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী অপেক্ষাও নিকটতম’ (কবাফ ১৬ ) ।

‘তাওহীদে ইবাদাতে’র স্বীকৃতি বিপরীতভাবে সকল প্রকার মধ্যস্থতাকারী অথবা আল্লাহর সঙ্গে কোন অংশীদারের সম্পৃক্ততার অস্বীকৃতি অপরিহার্য করে তোলে। যদি কেউ জীবিত ব্যক্তিদের জীবনের উপর অথবা যারা মারা গিয়েছে তাদের আত্মার উপর প্রভাব বিস্তারের জন্য মৃত্যের কাছে প্রার্থনা করে, তারা আল্লাহর সঙ্গে একজন অংশীদার যুক্ত করে। এই ধরনের প্রার্থনা আল্লাহর পাশাপাশি অন্যের উপাসনা করার মত। রাসূল (সঃ) সুস্পষ্টভাবে বলেছেন- ﺇِﻥَّ ﺍَﻟﺪُّﻋَﺎﺀَ ﻫُﻮَ ﺍَﻟْﻌِﺒَﺎﺩَﺓُ ‘প্রার্থনাই ইবাদত’

(আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাহ হা/২২৩০) । আল্লাহ আরো বলেছেন- ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻓَﺘَﻌْﺒُﺪُﻭﻥَ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﺎ ﻟَﺎ ﻳَﻨْﻔَﻌُﻜُﻢْ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀُﺮُّﻛُﻢْ ‘আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর না যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না’ (আম্বিয়া ৬৬) ।

আল্লাহ আরো বলেন, ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺗَﺪْﻋُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋِﺒَﺎﺩٌ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟُﻜُﻢْ ﻓَﺎﺩْﻋُﻮﻫُﻢْ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﺠِﻴﺒُﻮﺍ ﻟَﻜُﻢْ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺻَﺎﺩِﻗِﻴﻦَ ‘আল্লাহ ব্যতীত তোমরা যাদেরকে আহবান কর তারা তো তোমাদেরই মত বান্দা’ (আরাফ ১৯৪) ।

যদি কেউ রাসূল (ছাঃ) অথবা তথাকথিত আউলিয়া, জিন অথবা ফেরেশতাগণের নিকট সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করে অথবা প্রার্থনাকারীর পক্ষ হয়ে এদেরকে সাহায্য করতে অনুরোধ করে তাহলে তারাও শিরক করে। মূর্খ লোকেরা যখন আব্দুল কাদের জিলানীকে[1] ‘গাওছুল আযম’ উপাধিতে ভূষিত করে তখন তাওহীদুল ইবাদতের মধ্যে শিরক করে। উপাধিটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘মুক্তি প্রাপ্তির প্রধান উৎস’। অর্থাৎ ‘এমন একজন যিনি বিপদ হতে রক্ষা করার চেয়ে সবচেয়ে উপযুক্ত’। অথচ এটা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য। দুর্ঘটনা ঘটলে কেউ কেউ আব্দুল কাদিরকে এই উপাধিতে ডেকে তাঁর সাহায্য এবং আত্মরক্ষা কামনা করে। যদিও আল্লাহ আগেই বলেছেন, ﻭَﺇِﻥْ ﻳَﻤْﺴَﺴْﻚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻀُﺮٍّ ﻓَﻠَﺎ ﻛَﺎﺷِﻒَ ﻟَﻪُ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ﻭَﺇِﻥْ ﻳَﻤْﺴَﺴْﻚَ ﺑِﺨَﻴْﺮٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ ‘আল্লাহ তোমাকে ক্লেশ দান করলে তিনি ব্যতীত তা মোচনকারী আর কেউ নাই’ (আন্আম ১৭) ।

কুরআনে আরো ব©র্র্ণত হয়েছে, যখন মক্কাবাসীদের তাদের মূর্তিপূজার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তারা উত্তর দিল, ﻣَﺎ ﻧَﻌْﺒُﺪُﻫُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴُﻘَﺮِّﺑُﻮﻧَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺯُﻟْﻔَﻰ ‘আমরা তাদের ইবাদত করি যাতে তারা আমাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছায়’ ( যুমার ৩) ।

মূর্তিগুলিকে শুধুমাত্র মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ব্যবহার করলেও আল্লাহ তাদের আচার-অনুষ্ঠানের কারণে তাদের পৌত্তলিক বলেছেন। মুসলিমদের মধ্যে যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ইবাদত করার প্রতি জোর দেয় তারা ভাল ভাবে এ বিষয়ে চিন্তা করে দেখতে পারেন।

তার্সাস নগরীর সলের (পরবর্তীকালে যাকে পল বলা হত) শিক্ষায় প্রভাবাম্বিত হয়ে খৃস্টানগণ নবী যিশুখৃস্টের উপর দেবত্ব আরোপ করেছিল এবং তারা যিশুখৃষ্ট ও তাঁর মাতাকে উপাসনা করত। খৃস্টানদের মধ্যে ক্যাথলিকদের (Catholics) প্রতিটি উপলক্ষ্যের জন্য কিছু সাধু (Saint) আছে। ক্যাথলিকরা সাধুদের কাছে সেই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই প্রার্থনা করে যে, এই সব সাধুরা জাগতিক ঘটনাবলিতে সরাসরিভাবে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। ক্যাথলিকরা তাদের পুরোহিতদের আল্লাহ এবং তাদের নিজেদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসাবেও ব্যবহার করে। তারা বিশ্বাস করে যে, এইসব পুরোহিতদের কৌমার্য ও ধর্মানুরাগের কারণে আল্লাহ কর্তৃক তাদের কথা শোনার সম্ভবনা বেশী। মধ্যস্থতাকারী সম্বন্ধে বিকৃত বিশ্বাসের কারণে শী‘আ সম্প্রাদায়ের বেশীর ভাগ লোক সপ্তাহের কয়েকটি দিন এবং দিনের কয়েক ঘন্টা আলী, ফাতেমা, হাসান এবং হোসেন-এর প্রতি প্রার্থনার জন্য নির্ধারিত রেখেছে।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ইবাদতে শুধু ছিয়াম পালন করা, যাকাত প্রদান, হজ্জ এবং পশু কুরবানী করা ছাড়াও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে ভালবাসা, বিশ্বাস এবং ভয়ের মত আবেগও অন্তর্ভুক্ত, যেগুলির বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে এবং যা শুধুমাত্র স্রষ্টার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হতে হবে। আল্লাহ এই সব আবেগের বাড়াবাড়ি সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়ে উল্লেখ করেছেন-

ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻣَﻦْ ﻳَﺘَّﺨِﺬُ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﻥِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻧْﺪَﺍﺩًﺍ ﻳُﺤِﺒُّﻮﻧَﻬُﻢْ ﻛَﺤُﺐِّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺃَﺷَﺪُّ ﺣُﺒًّﺎ ﻟِﻠَّﻪِ ﻭَﻟَﻮْ ﻳَﺮَﻯ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻇَﻠَﻤُﻮﺍ ﺇِﺫْ ﻳَﺮَﻭْﻥَ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏَ ﺃَﻥَّ ﺍﻟْﻘُﻮَّﺓَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﻭَﺃَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺷَﺪِﻳﺪُ ﺍﻟْﻌَﺬَﺍﺏِ ‘তথাপি কেউ কেউ আল্লাহ ছাড়া অপরকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে ভালবাসার ন্যায় তাদেরকে ভালবাসে; কিস্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসা দৃঢ়তম’ (বাকারা ১৬৫) ।

আল্লাহ আরো বলেন, ﺃَﻟَﺎ ﺗُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻥَ ﻗَﻮْﻣًﺎ ﻧَﻜَﺜُﻮﺍ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧَﻬُﻢْ ﻭَﻫَﻤُّﻮﺍ ﺑِﺈِﺧْﺮَﺍﺝِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﻭَﻫُﻢْ ﺑَﺪَﺀُﻭﻛُﻢْ ﺃَﻭَّﻝَ ﻣَﺮَّﺓٍ ﺃَﺗَﺨْﺸَﻮْﻧَﻬُﻢْ ﻓَﺎﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﻖُّ ﺃَﻥْ ﺗَﺨْﺸَﻮْﻩُ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻣُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ‘তোমরা কি সেই সম্প্রদায়ের সাথে যুদ্ধ করবে না, যারা নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে ও রাসূলকে বহিষ্কার করার জন্য সংকল্প করেছে? তারাই প্রথম তোমাদের বিরুদ্ধাচারণ করেছে। তোমরা কি তাদেরকে ভয় কর? মুমিন হলে আল্লাহকে ভয় করাই তোমাদের পক্ষে সমীচীন’ (তাওবা ১৩) ।

আল্লাহ আরো বলেন, ﻭَﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺘَﻮَﻛَّﻠُﻮﺍ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻣُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ

‘আর তোমরা মুমিন হলে আব্লাহর উপরেই নির্ভর কর’ (মায়েদা ২৩) ।

ইবাদত শব্দের অর্থ সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ এবং আল্লাহকে চূড়ান্ত আইন প্রণেতা হিসাবে গণ্য করা। কাজেই এলাহী আইনের বা শরঈ আইনের উপর ভিত্তি না করে ধর্মনিরপেক্ষ আইন বিধান বাস্তবায়ন এলাহী আইনের প্রতি অবিশ্বাস এবং তার শ্রেষ্ঠত্ব অস্বীকার করার পর্যায়ে পড়ে। এই ধরনের বিশ্বাস আল্লাহ ব্যতীত অন্যদের উপাসনা করার নামান্তর তথা শিরক। আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন, ﻭَﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢْ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ‘আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদানুসারে যারা বিধান দেয় না, তারাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারী (কাফিরুন)’ (মায়েদা ৪৪) ।

ছাহাবী আদি ইবনে হাতেম (রাঃ) যিনি খৃস্টান ধর্ম হতে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন, রাসূল (ছাঃ)-কে কুরআনের এই আয়াতটি পড়তে শুনলেন, ﻭَﻣَﺎ ﺃُﻣِﺮُﻭﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭﺍ ﺇِﻟَﻬًﺎ ﻭَﺍﺣِﺪًﺍ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﻫُﻮَ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻪُ ﻋَﻤَّﺎ ﻳُﺸْﺮِﻛُﻮﻥَ ‘তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পন্ডিতগণকে ও সন্নাসীদেরকে তাদের প্রভু রূপে গ্রহণ করেছে’

(তাওবা ৩১) । তখন তিনি রাসূল (ছাঃ) কে লক্ষ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আমরা তাদের উপাসনা করি না’। রাসূল (সঃ) তার দিকে তাকিয়ে বললেন ‘আল্লাহ যা কিছু হালাল করেছেন তারা কি তা হারাম ঘোষণা করে নি এবং তোমরা সকলে তা হারাম করোনি এবং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা কি তারা হালাল করেনি এবং তোমরা সকলে তা হালাল করোনি?’ তিনি উত্তরে বললেন, হ্যা নিশ্চয়ই আমরা তা করেছি। রাসূল (ছাঃ) তখন উত্তর দিলেন, ‘ঐ ভাবেই তোমরা তাদের উপাসনা করেছিলে’ (তিরমিযী হা/৩০৯৫) ।

অতএব তাওহীদুল ইবাদত-এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হল শরী‘আত বাস্তবায়ন, বিশেষ করে যে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা মুসলিম। বহু তথাকথিত মুসলমান দেশ, যেখানে সরকার আমদানিকৃত ধনতান্ত্রিক অথবা সমাজতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত এবং যেখানে এলাহী আইন সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত অথবা অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ক্ষেত্রে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে ইসলামী আইন চালু করতে হবে। অনুরূপভাবে মুসলিম দেশ সমূহ যেখানে ইসলামী আইনকানুন চালু রয়েছে সেখানেও শরঈ আইনকানুন প্রবর্তন করতে হবে। কারণ জীবনের সকল ক্ষেত্রে এই আইনকানুন সম্পর্কযুক্ত। মুসলিম দেশে শরী‘আহ আইনের পরিবর্তে অনৈসলামিক আইনকানুনের স্বীকৃতি প্রদান করা শিরক এবং এটা একটি কুফরী কাজ। যাদের ক্ষমতা আছে তাদের অবশ্যই এই অনৈসলামিক আইন-কানুন পরিবর্তন করা উচিত। যাদের সে ক্ষমতা নেই তাদের অবশ্যই কুফর-এর বিরুদ্ধে এবং শরীয়াহ আইন বাস্তবায়নের পক্ষে সোচ্চার হওয়া উচিত। যদি এটাও সম্ভব না হয়, তাহলে আল্লাহর সস্তুষ্টি ও তাওহীদ সমুন্নত রাখার জন্য অনৈসলামিক সরকারকে আন্তরিকভাবে ঘৃণা ও অবজ্ঞা করতে হবে।

ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক:

এই শ্রেণীর শির্ক-এ ইবাদতের অনুষ্ঠানাদি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য করা হয় এবং ইবাদতের পুরস্কার স্রষ্টার নিকট না চেয়ে সৃষ্টির কাছে চাওয়া হয়। পূর্বে বর্ণিত শ্রেণীগুলির মত ইবাদাতে শিরকের প্রধান দুটি রূপ রয়েছে।

(ক) শিরকে আকবর (বড় শিরক)

আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা হলে এই ধরনের শিরক সংঘটিত হয়। এটা আসলে মূর্তিপূজা (বা ব্যক্তি পূজা) যার থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য আল্লাহ বিশেষ করে সকল নবীকে পাঠিয়েছিলেন। কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর বক্তব্য থেকে এই মতবাদ সমর্থিত হয়েছে, ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺑَﻌَﺜْﻨَﺎ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍ ﺭَﺳُﻮﻟًﺎ ﺃَﻥِ ﺍﻋْﺒُﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﺟْﺘَﻨِﺒُﻮﺍ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕَ‘আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি’ (নাহল ৩৬) ।

তাগুতের প্রকৃত অর্থ হল আল্লাহর পাশাপাশি অথবা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছুর ইবাদত করা। যথা ভালোবাসা এক ধরনের ইবাদত যার উৎকর্ষতা শুধুমাত্র আললাহর দিকে পরিচালিত করা উচিত। ইসলামে আল্লাহকে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ হবে তখনই যখন আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত হওয়া যাবে। এটা এই ধরনের ভালবাসা নয় যা মানুষ স্বাভাবিকভাবে পিতামাতা, সন্তানসন্ততি, খাদ্যদ্রব্য ইত্যাদির প্রতি অনুভব করে। স্রষ্টার প্রতি ঐ ধরনের ভালবাসা পরিচালনা করা মানে তাঁকে তার স্রষ্টিকর্মের পর্যায়ে নামিয়ে আনা যা ‘আসমা ওয়াছ ছিফাত’-এর শিরক। যে ভালবাসা ইবাদত তা হল, স্রষ্টার প্রতি একজনের ইচ্ছাশক্তির সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। ফলে আল্লাহ রাসূল (ছাঃ)-কে বিশ্বাসীদের বলতে বলেছেন, ﻗُﻞْ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﺤِﺒُّﻮﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻓَﺎﺗَّﺒِﻌُﻮﻧِﻲ ﻳُﺤْﺒِﺒْﻜُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ‘বল তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসো তবে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন’ (আলে ইমরান ৩১) ।

রাসূল (ছাঃ) তার ছাহাবীদেরকে আরও বলেছিলেন, ﻻَ ﻳُﺆْﻣِﻦُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﺃَﻛُﻮﻥَ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻣِﻦْ ﻭَﺍﻟِﺪِﻩِ ﻭَﻭَﻟَﺪِﻩِ ﻭَﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺃَﺟْﻤَﻌِﻴﻦَ ‘তোমরা কেউই সত্যিকারের ঈমানদার হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের সন্তান-সন্ততি, পিতা ও সমগ্র মানবজাতির থেকে আমাকে বেশী ভাল না বাসবে’ (মুত্তাফাক আলাইহ, মিশকাত হা/৭) । রাসূল (ছাঃ)-কে ভালবাসার ভিত্তি তার মানবিক গুণাবলী নয় বরং তাঁর দাওয়াতের আসমানী উৎপত্তি। এইভাবে আল্লাহকে ভালবাসাও প্রকাশিত হয় তার হুকুমের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শনের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেছেন, ﻣَﻦْ ﻳُﻄِﻊِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ‘কেউ রাসূলের অনুগত্য করলে সে তো আল্লাহরই আনুগত্য করল’ (নিসা ৮০) ।

আল্লাহ আরো বলেন, ﻗُﻞْ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ‘বল আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি অনুগত হও’ (আল ইমরান ৩২) ।

যদি কেউ কোন কিছুর অথবা অন্য কোন মানুষের প্রতি ভালবাসা তার এবং আল্লাহর মধ্যে আসতে দেয় তাহলে সে ঐ বস্তু অথবা ব্যক্তিরই উপাসনা করল। এইভাবে ধনদৌলত অথবা এমনকি একজনের কামনা বাসনাও তার দেবতা হয়ে যেতে পারে। রাসূল (সঃ) বলেছেন, ﻗُﻞْ ﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ

‘ দিরহামের পূজারীরা সব সময়ই দুর্দশাগ্রস্থ থাকবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/৫১৬১) । আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﻣَﻦِ ﺍﺗَّﺨَﺬَ ﺇِﻟَﻬَﻪُ ﻫَﻮَﺍﻩُ ﺃَﻓَﺄَﻧْﺖَ ﺗَﻜُﻮﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻛِﻴﻠًﺎ ‘তুমি কি দেখ না তাকে যে তার কামনা বাসনাকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে?’ (ফুরকান ৪৩) ।

ইবাদতে শিরকের পাপ সম্বন্ধে অনেক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে ইসলামী শরী‘আতে। কারণ এটা সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যের বিরোধিতা করে যেমন আল্লাহর বর্ণনায় প্রকাশ পায়, ﻭَﻣَﺎ ﺧَﻠَﻘْﺖُ ﺍﻟْﺠِﻦَّ ﻭَﺍﻟْﺈِﻧْﺲَ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻴَﻌْﺒُﺪُﻭﻥِ ‘আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এই জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে’

(যারিয়াত ৫৬) ।

শিরক বিশ্বের প্রতিপালকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় বিদ্রোহের কাজ এবং সেই জন্যই শিরককে চূড়ান্ত পাপের কাজ বলে গণ্য করা হয়। এটা এত বড় গুনাহ যে প্রকৃতপক্ষে একজন যতই ভাল কাজ করুক না কেন তা আল্লাহর কাছে বাতিল হয়ে যায় এবং অপরাধকারীর জাহান্নামে চিরস্থায়ী নরক দন্ড নিশ্চিত হয়ে যায়। ফলস্বরূপ মিথ্যা ধর্ম প্রধানত এই ধরনের শির্ক এর উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। মানুষ কর্তৃক সৃষ্ট সকল ধর্ম বা প্রথা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের অনুসারীদের সৃষ্টির পূজা করার আহবান জানায়। খৃস্টানদেরকে যিশু নামে একজন মানুষকে উপাসনা করার আহবান জানানো হয় যিনি আসলে স্রষ্টারই এক নবী; অথচ তাকে স্রষ্টার দেহধারী বলে দাবী করা হয়। খ্রিষ্টানদের মধ্যে ক্যাথলিকরা (Catholics) মেরীকে (বিবি মরিয়মকে) স্রষ্টার মা উপাধি দিয়ে তার কাছে প্রাথর্না করে। তদুপরি তারা মাইকেল বা হযরত মিখাইল (আঃ) নামে ফেরেশতার উপাধি দিয়েছে সেইন্ট মাইকেলকে (St. Michael)। সেইন্ট মাইকেলকে বিশেষভাবে সম্মানিত করার জন্য তারা মে মাসের ৮ তারিখে এবং সেপ্টেম্বর মাসের ২৯ তারিখ মাইকেলমাস (Michaelmas Day) দিবস হিসাবে ঘোষণা করেছে। এছাড়াও ক্যাথলিকরা প্রায়ই বাস্তব অথবা কল্পিত সাধুদের কাছেও প্রার্থনা করে।

যে সব মুসলিম রাসূলের (ছাঃ)-এর কাছে প্রার্থনা করে অথবা ছূফীদের বিভিন্ন আউলিয়া এবং সাধকদের কাছে প্রার্থনা করে এই বিশ্বাসে যে এরা তাদের প্রার্থনায় সাড়া দিতে পারেন, সেই সব মুসলিম এই ধরনের ‘শিরকে আকবার’ করে। আল্লাহ কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন যে, ﻗُﻞْ ﺃَﺭَﺃَﻳْﺘَﻜُﻢْ ﺇِﻥْ ﺃَﺗَﺎﻛُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻭْ ﺃَﺗَﺘْﻜُﻢُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔُ ﺃَﻏَﻴْﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﺪْﻋُﻮﻥَ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺻَﺎﺩِﻗِﻴﻦَ ‘বল, ‘তোমরা ভেবে দেখ যে, আল্লাহর শাস্তি তোমাদের উপর আরোপিত হলে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামত উপস্থিত হলে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ডাকবে? (জবাব দাও) যদি তোমরা সত্যবাদী হও?’ (আন‘আম ৪০) ।

(খ) শিরকুল আছগার (ছোট শিরক) :

মাহমুদ বিন লাবীদ বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﺇَّﻥِ ﺃَﺧْﻮَﻑَ ﻣَﺎ ﺃَﺧَﺎﻑُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙُ ﺍﻟْﺄَﺻْﻐَﺮُ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻭَﻣَﺎ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙُ ﺍﻟْﺄَﺻْﻐَﺮُ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺮِّﻳَﺎﺀُ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺇِﺫَﺍ ﺟُﺰِﻱَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺑِﺄَﻋْﻤَﺎﻟِﻬِﻢْ ﺍﺫْﻫَﺒُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﺗُﺮَﺍﺀُﻭﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓَﺎﻧْﻈُﺮُﻭﺍ ﻫَﻞْ ﺗَﺠِﺪُﻭﻥَ ﻋِﻨْﺪَﻫُﻢْ ﺟَﺰَﺍﺀً ‘আমি তোমাদের জন্য যা সবচেয়ে বেশী ভয় করি তা হল শিরকে আছগর (ছোট শিরক)।’ ছাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন ‘হে আল্লাহর রাসূল ছোট শিরক কি?’ তিনি উত্তর দিলেন ‘রিয়া’ লোক দেখানো বা জাহির করা। কারণ নিশ্চয় শেষ বিচারের দিনে মানুষ তার পুরস্কার গ্রহণের সময় আল্লাহ বলবেন, ‘বস্তুজগতে যাদের কাছে তুমি নিজেকে জাহির করেছিলে তাদের কাছে যাও এবং দেখ তাদের নিকট হতে কোন পুরস্কার পাও কি না’ (আহমাদ, বায়হাকী, মিশকাত হা/৫৩৩৪) ।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেন রাসূল (ছাঃ) বের হয়ে এলেন এবং ঘোষণা দিলেন ‘আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জালের চেয়ে ভয়ংকর একটি বিষয় সম্পর্কে বলব না? আমরা বললাম, জ্বি বলুন। তিনি উত্তর দিলেন, সেটা হল গুপ্ত শিরক। (অর্থাৎ) যখন কেউ ছালাত পড়তে উঠে ছালাত সুন্দর করার জন্য চেষ্টা করে এই ভেবে যে লোক তার প্রতি চেয়ে আছে, সেটাই গুপ্ত শিরক’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৫৩৩৩)।

রিয়া

বিভিন্ন ধরনের ইবাদতের মধ্যে অন্যকে দেখানোর এবং প্রশংসিত হবার জন্য যে ধরনের ইবাদতের অনুশীলন করা হয সে ধরনের ইবাদত হল রিয়া। এই গুনাহ সকল ন্যায়নিষ্ঠ কাজের সুফল ধ্বংস করে ফেলে এবং যে এই গুনাহ সংঘটিত করে তার উপর ভয়ানক শাস্তি নেমে আসে। এটা বিশেষ করে ভয়ংকর। কারণ মানুষ স্বাভাবিক ভাবে তার সঙ্গীদের কাছ থেকে প্রশংসা আশা করে এবং উপভোগ করে। সুতরাং লোকদের মনে দাগ কাটার জন্য অথবা তাদের প্রশংসা পাবার জন্য ধর্মকর্ম করা একটা খারাপ কাজ যা থেকে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে। যে সব মুমিনদের লক্ষ্য তাদের জীবনের সকল দ্বীনী কর্মকান্ড স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত করা তাদের জন্য এই বিপদ সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে যারা সত্যিকার মুমিন তাদের দ্বারা শিরকে আকবার (বৃহৎশির্ক) সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ এর অপকারিতা স্পষ্ট প্রতীয়মান। কিন্তু অন্য সবার মত প্রকৃত মুমিনগণ কর্তৃক রিয়া করার সম্ভাবনা বেশি কারণ এটা খুব প্রচ্ছন্ন। এটা শুধু একজনের নিয়ত পরিবর্তনের মতই সহজ কাজ। এর পিছনে প্রেরণা শক্তিও খুব প্রবল। কারণ এটা মানুষের অন্তরের স্বভাব প্রসূত। ইবনে আববাস (রাঃ) এই বাস্তবতা সম্বন্ধে উল্লেখ করে বলেছিলেন ‘চন্দ্রবিহীন রাত্রে একটা কালো পাথর বেয়ে উঠা একটা কালো পিপড়ার চেয়েও গোপন হল শিরক’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৩০) ।

সুতরাং একজনের নিয়ত সর্বদা খাঁটি রাখা এবং এমনকি কোন ন্যায় কাজ করার সময়ও খাঁটি রাখার নিশ্চয়তার জন্য অতি যত্নবান হতে হবে। এটার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ইসলামে সকল গুরুত্বপূর্ণ কাজের পূর্বে আল্লাহর নাম উল্লেখ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) খাওয়া, পান করা, ঘুমানো, যৌন কর্ম, এমনকি শৌচাগারে যাবার পূর্বে ও পরে অনেকগুলো ধারাবাহিক দু‘আ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যাতে এই ধরনের প্রাত্যহিক অভ্যাসগুলো ইবাদতের কাজে পরিণত হয় এবং মুসলিমদের মধ্যে আল্লাহ সম্বন্ধে গভীর সচেতনতা প্রকাশ পায়। এই সচেতনতা হচ্ছে তাক্বওয়া যা নিয়তের বিশুদ্ধতা বজায় রাখে। রাসূল (সঃ) অবশ্যম্ভাবী শিরক হতে নিরাপত্তা বিধানের কতিপয় নির্দিষ্ট দু’আ শিক্ষা দিয়েছেন। যেসব দু’আ যে কোন সময় পড়া যেতে পারে। আবু মুসা বর্ণনা করেন, একদিন রাসূল (সঃ) খুত্বা দেবার সময় বললেন, ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺸِّﺮْﻙَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺃَﺧْﻔَﻰ ﻣِﻦْ ﺩَﺑِﻴﺐِ ﺍﻟﻨَّﻤْﻞِ ‘ওহে মানব সকল শিরককে ভয় কর, কারণ এটা একটা পিপড়ার চুপিসারে চলার চেয়েও গুপ্ত’। আল্লাহর ইচ্ছায় কয়েকজন প্রশ্ন করল হে আল্লাহর রাসূল! যখন চুপিসারে চলা পিপড়া থেকে গোপন তখন কিভাবে আমরা তা এড়িয়ে চলব? তিনি বললেন,

ﻗُﻮﻟُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺇِﻧَّﺎ ﻧَﻌُﻮﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺃَﻥْ ﻧُﺸْﺮِﻙَ ﺑِﻚَ ﺷَﻴْﺌﺎً ﻧَﻌْﻠَﻤُﻪُ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻙَ ﻟِﻤَﺎ ﻻَ ﻧَﻌْﻠَﻢُ‘ বল ‘‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাউযুবিকা আন নুশরিকা শায়আন না’লামাহু, ওয়া নাস্তাগফিরুকা লিমা লা না’লামু’ (হে আল্লাহ, আমরা জেনে শুনে তোমার সঙ্গে শির্ক করা হতে আশ্রয় চাইছি এবং যা সম্বন্ধে আমরা অবগত নই তা হতে আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি) (আহমাদ, তাবারানী, ছহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব হা/৩৬) ।

 

 

-ড. আবু আমীনা বিলাল ফিলিপস

অনুবাদ : আবু হেনা

______________________

1. আবদুল কাদির (১০৭৭-১১৬৬) বাগদাদের হানাফী ফিকহের অনুগামী একটি দরসগাহের ফকীহ ছিলেন। যদিও তিনি কোরআনের কিছু আয়াতে আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন তবুও তাঁর ধর্মোপদেশ কঠোরভাবে সনাতনী ছিল (আল-ফাতহ আর-রববানী, কায়রো, ১৩০২ পুস্তকে সংগৃহীত) । ইব্নে আরাবী (জন্ম ১১৬৫) তাঁকে যামানার কুতুব হিসাবে ঘোষণা দেন এবং তাঁকে আল্লাহ ব্যতীত সকল বস্তুর উর্ধ্বে স্থান দেন। আলী ইব্নে ইউসুফ আশ-শাওনাফী (মৃত ১৩১৪ খৃ) বাহযাত আল আশরার (কায়রো, ১৩০৪) নামে লিখিত একটি পুস্তকে আব্দুল কাদির-এর উপর বহু কারামত আরোপিত করেন। তাঁর নামানুসারে কাদেরীয়া ছূফী প্রথার নামকরণ করা হয় এবং এর আধ্যাত্মিক অনুশীলন ও বিধিবিধানের আদি উৎস তার উপর আরোপ করা হয় (Shorter Encyclopedia of Islam, pp 5-7 and 202-205)

মন্তব্য করুন

আরও দেখুন
Close
Back to top button