সংবাদ

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় IUBAT-তে ধর্মীয় পোশাকে নিষেধাজ্ঞা

পাঞ্জাবি, টুপি ও বোরকার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজিতে (আইইউবিএটি)। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবে না এই ধর্মীয় পোশাক। ভর্তি হতে হলে পাঞ্জাবি, টুপি কিংবা বোরকা বাদ দিয়েই আসতে হবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ভিসি প্রফেসর ড. এম আলিমুল্লাহ মিয়ান জানিয়েছেন, এসব পোশাকের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে বলেই তার প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেস কোড (পোশাকের নির্দেশনা) মেনে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চাইলে হবে, পছন্দ না হলে তাদের জন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে এগুলো অ্যালাউ (অনুমোদন) করা হয়। সেখানে তারা ভর্তি হবেগতকাল (বৃহস্পতিবার) আইইউবিএটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রফেসর ড. আলিমুল্লাহ মিয়ান। পাঞ্জাবি, টুপি ও বোরকার প্রতি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আইইউবিএটি ভিসি বলেন, আমরা যে ড্রেস কোড দিয়েছি তা মেনেই সকলে এখানে ভর্তি হন। কারো যদি এই কোড পছন্দ না হয় তাহলে আমরা তাদের এখানে ভর্তি হতে বলছি না। তারা অন্য কোথাও ভর্তি হবে। তবে আমার এখানে ভর্তি হতে হলে ড্রেস কোড অবশ্যই মানতে হবে। আর দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য পাঞ্জাবি, টুপি ও বোরকার মতো পোশাককে অন্তরায় হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সেখানে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি-বিধান ও ড্রেস কোড মেনে চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ড্রেস কোডে দেখা যায়, ছাত্রদের জন্য ট্রাউজার এবং হাফ বা ফুল শার্ট, কলারসহ টি-শার্ট, স্যুট-ব্লেজার, শীতকালে শোয়েটার বা জ্যাকেট থাকবে এবং ক্লিন শেভ হতে হবে। অন্যদিকে ছাত্রীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে সালোয়ার-কামিজ এবং স্কার্ফ, শাড়ী, জিন্স-কুর্তা ও স্কার্ফ, শীতকালে শোয়েটার-জ্যাকেট পরতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনেই আলিমুল্লাহ মিয়ান বলেন, ছেলেদের তিনি জিন্স প্যান্ট পড়ার পক্ষে না কারণ এটা লেবারদের (শ্রমিক) পোশাক। তবে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেস কোডেই মেয়েদের জন্য জিন্স প্যান্ট পড়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। যদিও গত বছরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি নির্দেশনা জারি করে বলা হয়, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধা দেয়া যাবে না এবং বাধ্যও করা যাবে না। আইইউবিএটিতে একটি মৌলবাদী ও জঙ্গি চক্র সংগঠিত হচ্ছে এবং জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করে তিনি বলেন, আমি আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছি। কাউকেই একা একা চলতে এবং প্রতিদিন একই পথে যেতে নিষেধ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা রক্ষী বৃদ্ধি করেছি, ৩৫টি সিসি ক্যামেরা আছে আরও ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে, মেটাল ডিটেক্টরসহ নিরাপত্তার যাবতীয় সরঞ্জাম নেয়া হচ্ছে। কাদেরকে তিনি মৌলবাদী ও জঙ্গি চক্র বলছেন এবং কাদের কাছ থেকে হামলার আশঙ্কা করছেন জানতে চাইলে আলিমুল্লাহ মিয়ান তাবলীগ জামায়াতের কথা উল্লেখ করেন। তাবলীগ জামায়াতের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অভিযোগ করে বলেন, তাবলীগের পক্ষ থেকে আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে চাওয়া হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গাটি আমাদের দিয়ে দেন এখানে আমরা বিদেশি মেহমানখানা বানাবো। তাদের এই প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছে। হামলা চালিয়ে একজন গার্ডকে, যিনি মুক্তিযোদ্ধা তাকে আহত করা হয়েছে। একটি জঙ্গি ও মৌলবাদী শ্রেণি তৈরি করার জন্য (যারা আমার কাছে এই জমি চেয়েছে) এবং তাদের আদর্শ প্রচার করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে ফান্ডিং (অর্থায়ন) করছে। আর এই জায়গা দখলের জন্যই তারা কিছু শিক্ষার্থীকে দিয়ে (যারা ফেল করেছে এবং আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল) আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় পোশাক নিষিদ্ধের আন্দোলনে নামিয়েছে। জমি দখলের জন্যই তাবলীগ আইইউবিএটিকে অস্থিতিশীল করছে বলে তিনি স্পষ্টভাবে অভিযোগ করেন। এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মদ মূসা, অ্যাডমিশন ডিরেক্টর মোহাম্মদ মিরাজ হোসেন খান, আইটি অফিসার মাহবুব প্রমুখ।

এদিকে আইইউবিএটিতে ধর্মীয় পোশাক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে ইশা ছাত্র আন্দোলন। অন্যত্থায় আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করা হবে বলেও সতর্ক করে দেয়া হয়। গতকাল বিকাল ৩টায় আইইউবিএটি ক্যাম্পাসের সামনে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়। সংগঠনটির সভাপতি কে এম শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এইচ এম এনামুল হক এর পরিচালনায় মানববন্ধনে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পোশাক বিধির নামে পোষাক পরিধানের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা এবং ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ করার প্রতিবাদ জানানো হয়। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ধর্মীয় পোশাক পরার অধিকার সাংবিধানিক। এতে হস্তক্ষেপ করার কোন সুযোগ নেই। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পোশাকের বিধি-বিধান থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পোশাকের বিধির নজির পৃথিবীর কোথাও নেই।

ইনকিলাব

১টি মন্তব্য

  1. যেখানে ধর্ম চর্চায় বাঁধা সেখানে নাপড়লেই সব ল্যাটা চুকে যায়। এটা তো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় না? কাউকে তো সেখানে পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগকারীও দাবী করেনি। এত চিন্তার কোন কারন আছে বলে মনে হয় না।

মন্তব্য করুন

Back to top button