ইসলাম কেনা
মদীনার বাজার। পড়ন্ত বিকেলে এক খদ্দের এসে দাঁড়ালো একজন সাহাবার দোকানে। কাঙ্ক্ষিত পণ্যের দাম মনমত হওয়ায় কিনতে সম্মত হলো ক্রেতা। কিন্তু তাকে আশ্চর্য করে দিয়ে সাহাবা দূরের আরেকটি দোকান দেখিয়ে বললেন পণ্যটি সেখান থেকে কিনতে। দাম একই, জিনিসও একই।
হালের ব্যবসা প্রশাসনের ছাত্র লাফিয়ে উঠে বলবে এই জন্যই তো ইহুদিরা সারা দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করে; মুসলিমরা ব্যবসায়ের ‘ব’-ও বোঝে না। সনাতন ব্যবসানীতিতে খদ্দের মানে হলো হাতের লক্ষী। হাতের লক্ষী কেউ পায়ে ঠেলে? হার্ভাডের শিক্ষকদের মতে, দুই ক্ষেত্রে খদ্দেরকে প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে পাঠানো যায়: যদি ক্রেতা বেশি খুঁতেখুঁতে হয় আর যদি ক্রেতা ঠিক যা চাইছে সেটা আমার কাছে না থাকে। কিন্তু এছাড়া ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলা।
যাহোক, আমাদের ঘটনার ক্রেতাও হয়তো এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে গেলেন অন্য দোকানটায়। পণ্যটা কিনে আবার ফেরত আসলেন প্রথম দোকানে। সাহাবা তখন অন্য আরেকজন খদ্দেরের সাথে কথা বলছেন। এটাই আল্লাহর বিধান—যত টাকার বিক্রি হওয়ার কথা ছিল, তত টাকার বিক্রি হবেই। এটা আল্লাহর দেওয়া রিযক্। যা আসার কথা ছিলো তা আসবেই। মাঝখান থেকে আমাদের পরীক্ষা হবে—সেই রিযক্ টা পেতে গিয়ে আমরা কী হালালে সন্তুষ্ট থাকলাম নাকি হারামের ডুবে গেলাম।
সাহাবা জিজ্ঞেস করলেন ক্রেতাকে, ‘পাওনি তোমার জিনিস?’
– পেয়েছি, কিন্তু আমি অন্য একটা জিনিসের জন্য এসেছি।
– কী?
– তুমি যার কাছে আমাকে পাঠিয়েছিলে সে আমারই ধর্মের মানুষ—ইহুদি। আমরা তোমাদের পছন্দ করি না। কিন্তু তুমি একজন ব্যবসায়ী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে আমাকে পাঠালে,মুসলিম হয়ে একজন ইহুদিকে ব্যবসার সুযোগ করে দিলে? কেন?
– কারণ আল্লাহ আমাকে আজকের মত যথেষ্ট রিযক্ দিয়েছেন। আর ও বেচারা সকাল থেকে বসে আছে–আজ কোন বিক্রিই হয়নি ওর। তারও তো পরিবার আছে। একজন খদ্দের পেলেও তার ন্যুনতম চাহিদাটুকু হয়ত মিটবে।
ক্রেতাটি হতবাক হয়ে ভাবল—যে ধর্ম মানুষের কল্যাণের কথা এভাবে মানুষকে ভাবতে শেখায় সেটা সত্য বই মিথ্যা হতে পারে না। প ণ্যকিনতে এসে ইহুদি ব্যক্তিটি জান্নাত কিনে নিয়ে চলে গেল।
ইসলাম কিন্তু এভাবেই পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। তাত্ত্বিক আলোচনার মাধ্যমে না, জীবনে প্রতিফলনের মাধ্যমে।
সাহাবারা যেদিন ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ কালিমাটা আত্মস্থ করলেন সেদিন থেকে তারা বুঝতে পারলেন আল্লাহর ইবাদাত শুধু মাসজিদে সীমাবদ্ধ নয়, কীভাবে জীবনযাপন হবে, কীভাবে ব্যবসা করতে হবে সে ব্যাপারেও আল্লাহর কিছু বলার আছে।
– শরীফ আবু হয়াত অপু