আরোগ্যের আলো
জনৈক আরব মুসলিম রোগমুক্তির পর লিখেছেন, আমি আপনার মতই সুস্থ ছিলাম। হঠাত রোগ আমাকে আক্রমণ করলো এবং আমাকে ব্যথিত করলো। আমি তখন দুঃশ্চিন্তায় কেঁপে উঠলাম এবং ভাবলাম, পৃথিবী আমার চোখের সামনে অন্ধকার হয়ে গেছে। হাসপাতালের পথগুলো হয়ে গেছে একটি দীর্ঘ সফর এবং এক অদ্ভুত নির্বাসন। আমার প্রতি বন্ধুদের আশঙ্কাপূর্ণ দৃষ্টি আমার ব্যথাকে আরো বাড়িয়ে দিলো। তারা আমাকে এই বলে সান্তনা দিলো, তুমি আইয়ুব আলাইহিস সালামের পথেই আগাচ্ছো।
বন্ধুদের কথায় আমার মনে আশার আলো প্রজ্জ্বলিত হলো। কারণ, আমি আল্লাহর নবী আইয়ুব আলাইহিস সালামের মহা মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাবো এবং তার মত কণ্ঠে আল্লাহর সাথে কথা বলতে পারবো, “হে আমার প্রভু! আমার কষ্ট হচ্ছে আর আপনি সর্বোত্তম দয়ালু”। আমি এভাবেই ছিলাম। এরই মধ্যে অনেক সময় পার হলো। আমি অসুখ নিয়েই বসবাস করতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম এবং সবকিছু মানিয়ে নিলাম ও নিজেকে সাধারণ জীবন-যাপন এবং কম স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য করলাম। আমি ডাক্তারদের হতবুদ্ধিতা, নৈরাশ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী চিকিতসার বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করতে থাকলাম। হ্যাঁ এটি ছিল ধীর গতিসম্পন্ন চিকিতসা। মারাত্মক অসুস্থতা এটাকে ভারী করে তুলছিল এবং সুদৃঢ় মনোবল এটাকে হালকা করছিল।
আইয়ুব আলাইহিস সালামের বিদ্যালয় ভর্তি হয়ে আমি যে আনন্দ পেয়েছি, তা অতুলনীয় এবং তা আমার আগের অবস্থার চেয়ে বহুগুণ ভালো। সেই সঙ্গে আমি বুঝতে পেরেছি যে, আল্লাহ তাআলা কারো উপর তার ক্ষমতার অতিরিক্ত কিছু চাপিয়ে দেন না। আমি তার বিদ্যালয় থেকে প্রথম যে শিক্ষাটি পেয়েছি, তা হলো, যতক্ষণ আপনার হৃদয় উজ্জ্বল থাকবে এবং আপনার আত্মার স্বাস্থ্য ঠিক থাকবে ততক্ষণ আপনি শারীরিকভাবে সর্বনিম্ন অবস্থায় থেকেও বাঁচতে পারবেন। এভাবেই আমি ছিলাম। বুঝতে পারলাম, আমার সুস্থতার আগের অবস্থাটাই আমার জন্য নেয়ামতে পরিণত হয়েছে এবং একটি মূল্যবান অলঙ্কার হয়ে উঠেছে। চিন্তা-ভাবনা করে আমি উপলব্ধি করলাম, যার সুস্থতার নেয়ামত লুণ্ঠন হয়ে যায়, সেই কেবল সুস্থতার মর্যাদা বুঝতে পারে এবং নেয়ামত দাতার দরজায় গিয়ে করাঘাত করে। সে তাঁর কাছে গিয়ে এমন কাকুতি-মিনতি করে, যা তার রূহকে পরিশুদ্ধ করে, তার পাপ মোচন করে এবং তাকে এমন একটি মানুষে পরিণত করে, যে তার প্রভুর অধিক নিকটবর্তী হয় এবং উপলব্ধি করে, সে তার প্রভুকে ছাড়া কতটা দুর্বল।
আলহামদুলিল্লহ, আজ আমি এমন সুখে আছি, যা আমাকে আমার প্রভুর দরজায় ফিরে আসতে বাধ্য করে। আইয়ুব আলাইহিস সালাম এর বিদ্যালয় থেকে আমি দ্বিতীয় যে শিক্ষাটি পেয়েছি, তা হচ্ছে, আল্লাহ আমাদেরকে রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত করেন আমাদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য; শাস্তি দেয়ার জন্য নয়। যেই রোগ-ব্যাধি আমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনে, তা মূলত রোগ নয়; বরং সেটইা আরোগ্য, সেটাই সুস্থতা। এই তো আজ, আমি সুস্থতার সুখের মধ্যে ডুবে আছি। অথচ আমি ভেবেছিলাম আমার সুস্থতা অসম্ভব।
ওহে রোগাক্রান্ত ভাই! আমি আরোগ্য দানকারী মহান আল্লাহর কাছে আশাবাদী হয়ে, তাঁরই ইচ্ছায় এবং তাঁরই নামে আপনার জন্য দুআ করছি, তিনি যেন আপনাকে সমস্ত ব্যথা ও কষ্ট থেকে আরোগ্য দেন। “লা বা‘স আলাইকা, তুহুরুন ইনশা-আল্লাহ। অতএব, আপনার আত্মার সুস্থতায় খুশী থাকুন, আপনার রূহ নিয়ে ভাবুন এবং তাকে উন্নত করুন। এটা সুস্থ থাকলে, পরিশুদ্ধ হলে এবং উন্নত হলে আপনি আপনার প্রভুর নেয়ামত ও কল্যাণ উপলব্ধি করতে পারবেন এবং তাঁর সুনিপুণ ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করবেন। হে আল্লাহ! তুমি রক্ষা করো। আমীন!
– Abdullah Shahed Al-Madani