সংবাদ

সিরিয়ালের কিরণমালা-পাখিরা এখন শিশুদের খাতায়

শিশুদের স্কুলের খাতায় ফুল, পাখি, উপদেশ কিংবা বাণী নেই। আছে ভারতীয় সিরিয়াল ‘বোঝে না সে বোঝে না’ কিংবা ‘কিরণমালা’র অভিনেতা-অভিনেত্রীর ছবি।

পাবনার বিভিন্ন স্থানে স্কুলশিক্ষার্থীদের খাতায় দেখা যাচ্ছে এমন দৃশ্য। অথচ এ ধরনের খাতা বিক্রি বন্ধে দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ভারতীয় সিরিয়ালের নাম ও নায়ক-নায়িকাদের ছবি সংবলিত শিক্ষা উপকরণে ছড়াছড়ি পাবনা, ঝিনাইদহ সহ বিভিন্ন জেলায়। প্রকাশ্যে বিভিন্ন দোকানগুলোতে নায়ক-নায়িকাদের রঙিন ছবিসহ এ সব শিক্ষা উপকরণ বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অভিভাবকদের সচেতন করেও এই সব খাতা ব্যবহার থেকে বিরত রাখতে পারছেন না শিক্ষার্থীদের।

কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা কোমলমতি শিশুদের এসব খাতা কিনে দিতে বাধ্য হচ্ছে। শহরের চেয়ে গ্রামগুলোতে এর প্রভাব বেশি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের উদাসীনতাকেও দায়ী করেছেন তাঁরা।

শিক্ষা উপকরণ বিক্রির বিভিন্ন দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, ভারতের টেলিভিশনগুলোতে প্রচারিত ‘কিরণমালা’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’ সিরিয়ালের পাখি, ‘বধূবরণ’, ‘জল নূপুর’, ‘তোমায় আমায় মিলে’, ‘দিরা গমন’, ‘গৌরিদান’, ‘ব্যোমকেশ’সহ বিভিন্ন সিরিয়ালের নাম এবং নায়িকাদের ছবি সংবলিত খাতা দেদার বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনা সদর উপজেলার কলুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আলাউদ্দিন পরাগ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আঁখি নামের পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রীর কাছে এ ধরনের পাঁচটি খাতা পেয়ে আমরা জব্দ করেছি। এ ধরনের খাতা যেন কেউ ব্যবহার না করে সে ব্যাপারে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিষেধ করেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এ ধরনের খাতা বাড়িতে ব্যবহার করছে। আমাদের নিষেধের কারণে তারা স্কুলে আনছে না বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ জন্য আমরা উঠান বৈঠকের মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে আমার স্কুলের আশপাশের দোকানগুলোতে এ ধরনের খাতা বিক্রি থেকে বিরত থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিষেধ করেছি।’

সদর উপজেলার কুঠিপাড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছাত্রীরা এ ধরনের খাতা ব্যবহার করছে। আমরা অভিভাবকদের বলে এবং স্কুল কমিটিকে বলেও এই খাতা ব্যবহার থেকে ছাত্রীদের বিরত রাখতে পারছি না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে এসব বন্ধের জন্য মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করেছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’

সালাহ উদ্দিন মনে করেন, এ ধরনের খাতা শুধু শিক্ষকদের পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এ জন্য দরকার অভিভাবকের সচেতনতা ও প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর গ্রামের আক্কাস আলী বলেন, ‘আমার সন্তান একদিন স্কুল থেকে এসে পাখি খাতা কিনে দেওয়ার জন্য বায়না ধরে। আমি তাকে নিয়ে একটি স্টেশনারির দোকানে গিয়ে দেখতে পাই, ওই দোকানে জল নূপুর, কিরণমালাসহ বিভিন্ন ভারতীয় সিরিয়ালের নাম ও নায়ক-নায়িকাদের রঙিন ছবি সংবলিত খাতা। এ ধরনের অশ্লীলতা দেখে আমি সন্তানকে খাতা কিনে দিতে না চাইলে সে স্কুলে যাবে না বলে জিদ করে। সন্তানের ক্ষতি হবে বুঝেও আমি বাধ্য হয়ে কিনে দেই।’

এ ব্যাপারে আফরিনা আক্তার, কানিজ ফাতেমা ফাল্গুনী, সাঈদা পারভীনসহ কয়েকজন গৃহবধূর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, খাতা কিনে দেওয়া নিয়ে শিশুদের আবদারে তাঁরা অতিষ্ঠ। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই।

খাতা বন্ধে জেলা প্রশাসনের দ্রুত এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।

পাবনা শহরের কয়েকটি দোকানদার জানান, তাঁরাও বোঝে, শিশুদের হাতে এ ধরনের খাতা তুলে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। এমনকি উপজেলা পর্যায় থেকেও তাদের পাইকারি ক্রেতারা এসব খাতার অর্ডার দিচ্ছে। তাই ব্যবসায়িক স্বার্থেই বিক্রি করতে হচ্ছে এসব খাতা।

ওই দোকানদাররা অভিযোগ করে বলেন, এগুলো ঢাকা ও বগুড়ার কিছু বেনামী প্রেস থেকে ছাপা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো নাম-ঠিকানা খাতার পেছনে নেই।

এ ব্যাপারে পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সালমা খাতুন বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোঁজ নিব। সত্যতা পাওয়া গেলে আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

 

এনটিভি অনলাইন

১টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

Back to top button