ওযূ, ছালাত, জানাযা ও হজ্জ -এর প্রয়োজনীয় ধারাবাহিক দো‘আসমূহ
ওযূ, ছালাত, জানাযা, হজ্জ
৩০ টি মূল দো‘আসহ আনুসঙ্গিক দো‘আসমূহ।
১। ওযূর দো‘আ:
‘বিসমিল্লাহ’ বলে ওযূর শুরু করবে।[1] ওযূ শেষে পড়বে-
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লাইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লাশারীকালাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহূ।
অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল’।[2]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, যেটা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে’।[3]
এরপর পড়বে-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাজ‘আলনী মিনাত তাউওয়াবীনা ওয়াজ‘আলনী মিনাল মুতাত্বাহহিরীন।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর এবং পবিত্রতা অবলম্বনকারীদের মধ্যে শামিল করে নাও’।[4]
উল্লেখ্য, ওযূর শুরুর দো‘আ ও শেষের দো‘আ ছাড়া মাঝখানে কোন দো‘আ নেই। ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় যেসব দো‘আর কথা বাজারে প্রচলিত বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, এর কোন ছহীহ ভিত্তি নেই।
২। মসজিদে প্রবেশের দো‘আ:
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাফতাহলী আবওয়া-বা রাহমাতিকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার জন্য তুমি তোমার রহমতের দরজা খুলে দাও’।[5]
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনে আছ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন মসজিদে প্রবেশ করতেন তখন বলতেন-
উচ্চারণ: আ‘ঊযুবিল্লা-হিল ‘আযীমি ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীমি ওয়া সুলত্বা-নিহিল ক্বাদীমি মিনাশ্ শাইত্বা-নির রাজীম।
অর্থ: ‘মহান আল্লাহ্র, তাঁর সম্মানিত চেহারার ও তাঁর অনাদি ক্ষমতার অসীলায় বিতাড়িত শয়তান হ’তে আমি আশ্রয় চাচ্ছি’।[6]
ফযীলত : নবী করীম (ছাঃ) বলেন, যখন কেউ উক্ত দো‘আ পড়ে তখন শয়তান বলে, আমা হ’তে সে সারা দিনের জন্য রক্ষা পেল।[7]
মসজিদে প্রবেশের সময় প্রথমে ডান পা এবং বের হওয়ার সময় প্রথমে বাম পা রাখবে।[8]
৩। কা‘বা গৃহ দর্শনের দো‘আ :
কা‘বা গৃহ দেখা মাত্রই দু’হাত উচ্চ করে নিচের দো‘আ পড়া যায়, যা ওমর (রাঃ) পড়েছিলেন-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, ফাহাইয়েনা রববানা বিসসালাম।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। অতএব হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে শান্তির সাথে বাঁচিয়ে রাখুন’।
৪। কা‘বা গৃহে প্রবেশের দো‘আ :
কা‘বা গৃহে প্রবেশের সময় ডান পা রেখে নিম্নের দো‘আ পাঠ করবে।
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিও ওয়া সাল্লিম, আল্লাহুম্মাফ তাহলী, আবওয়াবা রাহমাতিকা।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ! আমার জন্য রহমতের দরজা সমূহ খুলে দিন’ (আবূদাঊদ হা/৪৬৫; ‘হজ্জ ও ওমরা’ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব)।
কা‘বা গৃহে প্রবেশের ২য় দো‘আ :
উচ্চারণ : আউযু বিল্লা-হিল আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম ওয়া বিসুলতা-নিহিল ক্বাদীমি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম।
অর্থ : ‘আমি মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ এবং তাঁর মহান চেহারা ও চিরন্তন কর্তৃত্বের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তানের ক্ষতি হ’তে’।
আমল : উক্ত দো‘আ পাঠ করলে শয়তান বলে লোকটি সারা দিন আমার ক্ষতি থেকে নিরাপদ হয়ে গেল (আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৪৬৬; ‘হজ্জ ও ওমরা’ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব)।
৫। মসজিদুল হারাম থেকে বের হওয়ার দো‘আ :
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ছাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া সাল্লাম, আল্লাহুম্মা‘ ছিমনি মিনাশ শায়ত্বা-নির রজীম।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর শান্তি ও অনুগ্রহ বর্ষণ কর। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বিতাড়িত শয়তান থেকে নিরাপদ রাখো’ (ইবনু মাজাহ হা/৭৭৩; ‘হজ্জ ও ওমরাহ’ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃঃ ৫৫)।
৬। মসজিদ হ’তে বের হওয়ার দো‘আ :
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন ফাযলিকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি অনুগ্রহ চাই’।[9]
৭। আযানের জওয়াব ও দো‘আ :
আযানের বাক্যগুলোর জওয়াব মুয়াযযিন যেমন বলবে তেমনভাবেই বলতে হবে, তবে মুয়াযযিনের ‘হাইয়্যা ‘আলাছ ছালাহ’ ও ‘হাইয়্যা ‘আলাল ফালাহ’ বলার সময় ‘লা-হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবে।[10] আযান শেষ হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদে ইবরাহীম পড়বে।[11] অতঃপর নিম্নের দো‘আ পড়বে-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রাববা হা-যিহিদ্ দা‘ওয়াতিত্ তা-ম্মাতি ওয়াছ্ ছালা-তিল ক্বাইমাতি, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাতা, ওয়াব্‘আছহু মাক্বা-মাম্ মাহমূদানিল্লাযী ওয়া ‘আদতাহ।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহবান ও আসন্ন ছালাতের তুমি মালিক। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে দান কর অসীলা ও ফযীলত এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত কর, যার ওয়াদা তুমি করেছ’।[12]
ফযীলত : জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে উক্ত দো‘আ পাঠ করবে ক্বিয়ামতের দিন সে আমার শাফা‘আত লাভের অধিকারী হবে’।[13]
উল্লেখ্য, আযানের উক্ত দো‘আ ছাড়া বাড়তি যে সমস্ত বাক্য যোগ করা হয় সেগুলোর কোন ছহীহ ভিত্তি নেই। তা পরিত্যাগ করা আবশ্যক। রেডিও এবং টেলিভিশনে প্রচারিত ‘ওয়ারযুকনা শাফা‘আতাহু ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ’ অংশটির কোন ভিত্তি নেই।[14] দো‘আ পড়ার সময় দু’হাত উঠিয়ে পড়ারও কোন ভিত্তি নেই।
সা‘দ ইবনু আবু ওয়াক্কাছ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে নিম্নের দো‘আ পড়বে তার গোনাহ সমূহ মাফ করা হবে’।
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকালাহূ ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহূ, রাযীতু বিল্লা-হি রাববাওঁ ওয়া বিমুহাম্মাদির রাসূলাওঁ ওয়া বিল ইসলা-মি দীনা।
অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি আল্লাহকে প্রভু হিসাবে, মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে রাসূল হিসাবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়ে খুশী হয়েছি’।[15]
ফযীলত : আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আযান ও ইক্বামতের মধ্যকার সময়ের দো‘আ আল্লাহ্র দরবার হ’তে ফেরত দেওয়া হয় না।[16] অর্থাৎ এ সময় দো‘আ কবুল হয়।
৮। তাকবীরে তাহরীমার পর যা পড়তে হয় (ছানা) :
তাকবীরে তাহরীমার পর চুপে চুপে নিম্নোক্ত দো‘আগুলোর মধ্যে যেকোন একটি পড়তে হবে। তবে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে আরবী অথবা বাংলায় মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পড়ার কোন বিধান নেই।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খাত্বা-ইয়া-ইয়া কামা বা‘আদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিবি, আল্লা-হুম্মা নাক্বক্বিনী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা ইউনাক্বক্বাছ ছাওবুল আবইয়াযু মিনাদ দানাস, আল্লা-হুম্মা-গসিল খাত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-ই ওয়াছছালজি ওয়াল বারাদি।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি পূর্ব ও পশ্চিম গগনের মধ্যে যেরূপ দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন, আমার ও আমার পাপরাশির মধ্যে তদ্রূপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন। হে আল্লাহ! শুভ্র বস্ত্তকে যেরূপ নির্মল করা হয় আমাকেও সেরূপ পাক সাফ করুন। হে আল্লাহ! আমার অপরাধ সমূহ পানি, বরফ ও হিমশীলা দ্বারা বিধৌত করে দিন’।[17]
(২) আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাত শুরু করতেন তখন বলতেন,
উচ্চারণ: সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবা-রাকাসমুকা ওয়া তা‘আ-লা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলা-হা গাইরুকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তোমার নাম চির বরকতময়, সকলের ঊর্ধ্বে, সকলের শীর্ষে তোমার মর্যাদা, তুমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই’।[18]
(৩) আলী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন ছালাত শুরু করতেন তাকবীরে তাহরীমার পর নিম্নোক্ত দো‘আ পড়তেন-
উচ্চারণ: ওয়াজজাহতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওঁ ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না ছালা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাবিবল ‘আ লামীন। লা শারীকা লাহূ ওয়া বিযা-লিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমীন, আল্লা-হুম্মা আনতাল মালিকু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা রাববী ওয়া আনা ‘আবদুকা যালামতু নাফসী ওয়া‘তারাফতু বিযামবী ফাগফিরলী যুনূবী জামী‘আন ইন্নাহূ লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা। ওয়াহদিনী লি আহসানিল আখলাকি লা-ইয়াহদী লি আহসানিহা ইল্লা আনতা, ওয়াছরিফ ‘আন্নী সাইয়্যিআহা লা-ইয়াছরিফু ‘আন্নী সাইয়্যিআহা ইল্লা আনতা। লাববাইকা ওয়া সা‘দাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহূ ফী ইয়াদাইকা ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা আনা বিকা ওয়া ইলাইকা তাবা-রাকতা ওয়া তা‘আ-লাইতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইক।
অর্থ: ‘আমি সেই মহান সত্তার দিকে আমার মুখ ফিরাচ্ছি যিনি আসমান সমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার ছালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ আল্লাহ রাববুল আলামীনের জন্য। তাঁর কোন শরীক নেই, আর এই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্গত। আল্লাহ তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার দাস। আমি আমার নিজের উপর অত্যাচার করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা কর। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতীত অন্য কেউ অপরাধ সমূহ ক্ষমা করতে পারে না। তুমি আমাকে উত্তম চরিত্রের দিকে চালিত কর, তুমি ব্যতীত আর কেউ উত্তম চরিত্রের দিকে চালিত করতে পারে না। আমা হ’তে মন্দ আচরণকে তুমি দূরে রাখ, তুমি ব্যতীত অন্য কেউ তা দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ! উপস্থিত আছি তোমার নিকটে এবং প্রস্ত্তত আছি তোমার আদেশ পালনে। কল্যাণ সমস্ত তোমার হাতে এবং কোন অকল্যাণ তোমার প্রতি বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই প্রতি প্রত্যাবর্তন করব। তুমি কল্যাণময়, তুমি সুউচ্চ। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে ফিরছি।[19]
(৪) আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) রাতে তাহাজ্জুদের উদ্দেশ্যে যখন দাঁড়াতেন তখন নিম্নের দো‘আ পড়তেন-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা ক্বাইয়িমুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়া মান ফীহিন্না, ওয়া লাকাল হামদু আনতা নূরুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়া মান ফী হিন্না, ওয়া লাকাল হামদু আনতা মালিকুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ওয়া মান ফী হিন্না, ওয়া লাকাল হামদু আনতাল হাক্কু, ওয়া ওয়া‘দুকাল হাক্কু, ওয়া লিক্বাউকা হাক্কুন, ওয়া ক্বাওলুকা হাক্কুন ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন ওয়ান্না-রু হাক্কুন ওয়ান নাবিইয়ূনা হাক্কুন ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কুন ওয়াস সা-‘আতু হাক্কুন। আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়া ‘আলাইকা তাওয়াককালতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু ওয়া বিকা খা-ছামতু ওয়া ইলাইকা হা-কামতু, ফাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ‘লানতু ওয়া মা আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়া লা ইলা-হা গাইরুকা।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমিই আসমান সমূহ ও যমীন এবং এদের মাঝে যা কিছু আছে তার রক্ষাকারী। তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমিই আসমান সমূহ ও যমীন এবং এদের মাঝে যা কিছু আছে তাদের জ্যোতি। তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমিই আসমান সমূহ ও যমীন এবং এদের মাঝে যা আছে তাদের বাদশাহ। তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমিই সত্য, তোমার ওয়াদা সত্য, তোমার সাক্ষাৎ সত্য, তোমার বাণী সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ (ছাঃ) সত্য এবং ক্বিয়ামত সত্য।
‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই নিকট আত্মসমর্পণ করলাম, তোমারই উপর ভরসা করলাম, তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করলাম, তোমার সন্তুষ্টির জন্যই শত্রুতায় লিপ্ত হ’লাম, তোমাকেই বিচারক মেনে নিলাম। তাই তুমি আমার পূর্বাপর ও প্রকাশ্য-গোপন সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমিই অগ্র-পশ্চাতের মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই’।[20]
(৫) আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) রাতে উঠে যখন ছালাত শুরু করতেন তখন নিম্নের দো‘আ পড়তেন-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা রাববা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইসরা-ফীলা ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরযি ‘আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ্ শাহা-দাতি, আনতা তাহকুমু বাইনা ‘ইবা-দিকা ফী মা-কা-নু ফীহি ইয়াখতালিফূনা, ইহদিনী লিমাখতুলিফা ফীহি মিনাল হাকক্বি বিইযনিকা ইন্নাকা তাহদী মান তাশা-উ ইলা ছিরা-তিম মুসতাক্বীম।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! জিবরাঈল, মীকাইল ও ইসরাফীলের প্রভু! আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, দৃশ্য-অদৃশ্য সমস্তের জ্ঞাতা, তোমার বান্দারা যেসব ব্যাপারে পারস্পরিক মতভেদে লিপ্ত তুমিই তার মীমাংসা করে দাও। দেখাও আমায় তোমার নিজ অনুগ্রহে সে সত্য, যে সত্য সম্পর্কে তারা মতভেদ করছে। নিশ্চয়ই তুমি যাকে ইচ্ছা সত্য পথ প্রদর্শন করে থাক’।[21]
৯। রুকূর দো‘আ সমূহ :
উচ্চারণ: সুবহা-না রাব্বি ইয়াল ‘আযীম।
অর্থ: ‘আমার প্রভু পবিত্র ও মহামহিম’।[22]
উচ্চারণ: সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফিরলী।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! আপনার প্রশংসা সহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) এই দো‘আটি বেশী বেশী পড়তেন।[23]
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লাকা রাকা‘তু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়া লাকা আসলামতু খাশা‘আ লাকা সামঈ ওয়া বাছারী ওয়া মুখখী ওয়া ‘আযমী ওয়া ‘আছাবী।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রুকূ করলাম, তোমাকেই বিশ্বাস করলাম এবং তোমারই নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। তোমার নিকট অবনত আমার শ্রবণশক্তি, আমার দৃষ্টিশক্তি, আমার মজ্জা, আমার অস্থি ও আমার শিরা-উপশিরা’।[24]
১০। রুকূ থেকে উঠার সময় দো‘আ :
রুকূর তাসবীহ পাঠ করে নবী করীম (ছাঃ) ‘‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ্’’ বলে রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘‘আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়া লাকাল হামদ্’’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের প্রতিপালক! তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা’।[25]
অথবা বলবে-
উচ্চারণ: রাববানা ওয়ালাকাল হামদু হামদান কাছীরান ত্বাইয়্যিবাম মুবা-রাকান ফীহ্।
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! তোমার সমস্ত প্রশংসা, অধিক অধিক প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়’।[26]
কখনো কখনো নবী করীম (ছাঃ) নিম্নোক্ত দো‘আও পড়তেন-
উচ্চারণ: রাববানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়া-তি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা-শি’তা মিন শাইয়িম বা‘দু।
অর্থ: ‘হে প্রভু! আসমান ভর্তি, যমীন ভর্তি এবং তদুপরি তুমি আরো যা চাও তাও ভর্তি তোমার প্রশংসা’।[27]
উৎস ও ফযীলত : হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন ইমাম বলবে তখন তোমরা ‘আল্লাহুম্মা লাকাল হামদ’ বলবে, যার ঐ উক্তি ফেরেশতার উক্তির সঙ্গে একই সময়ে উচ্চারিত হবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
কোন এক ছালাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে ‘রাববানা লাকাল হামদ’ বললেন তখন একব্যক্তি পিছন থেকে উক্ত দো‘আ পাঠ করলেন। ছালাত শেষে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন’ কে এরূপ বলছিল? সে ছাহাবী বললেন, আমি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, আমি দেখলাম ত্রিশ জনেরও বেশী ফেরেশতা এর ছোয়াব কে আগে লিখবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন’ (বুখারী হা/৭৬০, ৭৬৩)।
১১। সিজদার দো‘আ সমূহ :
উচ্চারণ: সুবহা-না রাব্বিয়াল আ‘লা।
অর্থ: ‘আমার প্রভু পবিত্র সুউচ্চ মহামহিম’।[28]
উচ্চারণ: সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা রাববানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হে আমার প্রভু! তোমার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি আমাকে ক্ষমা কর’। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) এই দো‘আটি বেশী বেশী পড়তেন।[29]
উচ্চারণ: সুববূহুন ক্বুদ্দূসুন রাববুল মালা-ইকাতি ওয়ার রূহ্।
অর্থ: ‘আল্লাহ পবিত্র মোবারক, সকল ফেরেশতা ও জিবরীলের প্রতিপালক’।[30]
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফিরলী যামবী কুল্লাহূ ওয়া দিকক্বাহূ ওয়া জুল্লাহূ ওয়া আউওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ ওয়া ‘আলা-নিইয়্যাতাহূ ওয়া সিররাহূ।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার সকল সূক্ষ্ম, বড়, প্রথম, শেষ, প্রকাশ্য ও গোপন গোনাহ মাফ কর’।[31]
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া বিকা আ-মানতু ওয়া লাকা আসলামতু সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহূ ওয়া ছাওওয়ারাহূ ওয়া শাকক্বা সাম‘আহূ ওয়া বাছারাহূ তাবা-রাকা-ল্লাহু আহসানুল খা-লিক্বীন।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমারই উদ্দেশ্যে সিজদা করলাম, তোমারই উপর বিশ্বাস রাখলাম এবং তোমারই প্রতি আত্মসমর্পণ করলাম। আমার চেহারা সেই যাতকে সিজদা করল, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তিনি তাতে চক্ষু-কর্ণ সৃষ্টি করেছেন। বস্ত্তত: আল্লাহ বরকতময় সর্বোত্তম স্রষ্টা’।[32]
নিম্নের দো‘আটি সিজদায়, তাহাজ্জুদ ছালাতের পর, ফজরের সুন্নাতের পর ডান কাতে শয়ন করে পড়া যায়-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফী ক্বালবী নূরান, ওয়া ফী লিসানী নূরান, ওয়াজ‘আল ফী সামঈ নূরান, ওয়াজ‘আল ফী বাছারী নূরান, ওয়াজ‘আল মিন তাহতী নূরান, ওয়াজ‘আল মিন ফাওক্বী নূরান, ওয়া ‘আই ইয়ামীনী নূরান, ওয়া ‘আই ইয়াসা-রী নূরান, ওয়াজ‘আল আমা-মী নূরান, ওয়াজ‘আল খালফী নূরান, ওয়াজ‘আল ফী নাফসী নূরান, ওয়া আ‘যিমলী নূরান।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমার অন্তরে, জিহবায়, কানে, চোখে, নীচে-উপরে, ডানে-বামে, সামনে-পিছনে ও দেহে নূর দান কর এবং আমার নূরকে বিশাল করে দাও’।[33]
জ্ঞাতব্য: সিজদাতেই বান্দা আপন প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। সুতরাং তখন খুব বেশী বেশী করে দো‘আ করতে হবে।[34]
১২। দুই সিজদার মধ্যে পঠিত দো‘আ :
(১) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফিনী ওয়ার ঝুক্বনী।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে মাফ কর, আমার উপর রহম কর, আমাকে হেদায়াত দান কর, আমাকে রোগ মুক্ত কর এবং আমাকে রিযিক দান কর’।[35]
(২) হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (ছাঃ) দুই সিজদার মাঝখানে বলতেন,
উচ্চারণ: রাবিবগ্ ফিরলী। অর্থ: ‘হে প্রভু! তুমি আমাকে ক্ষমা কর’।[36]
১৩। সিজদায়ে তিলাওয়াতের দো‘আ :
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কুরআনের সিজদার আয়াতে এই দো‘আ পড়তেন,
উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী খালাক্বাহূ ওয়া শাকক্বা সাম‘আহূ ওয়া বাছারাহূ বিহাওলিহী ওয়া ক্বুউওয়াতিহী।
অর্থ: আমার চেহারা সিজদা করল তাঁরই জন্য, যিনি একে সৃষ্টি করেছেন এবং এতে শ্রবণ শক্তি ও দৃষ্টি শক্তি দান করেছেন তাঁরই প্রদত্ত সামর্থ্য বলে।[37]
নিয়ম: সিজদার আয়াত নিজে তিলাওয়াত করলে অথবা অপরের তিলাওয়াত শ্রবণ করলে তাকবীর দিয়ে সিজদায় যেয়ে উপরোক্ত দো‘আ পাঠ করবে। দো‘আ পাঠ শেষে তাকবীর দিয়ে মাথা উঠাবে। সিজদা মাত্র একটি, এতে তাশাহহুদ ও সালাম নেই।
১৪। তাশাহ্হুদ:
(১) আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ ছালাতের মধ্যে বসে তখন সে যেন বলে,
উচ্চারণ: আত্তাহিইয়্যাতু লিল্লা-হি ওয়াছ ছালাওয়া-তু ওয়াত ত্বাইয়্যিবা-তু, আসসালা-মু আলাইকা আইয়্যুহান নাবিইয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহূ, আসসালা-মু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ‘ইবা-দিল্লা-হিছ ছা-লিহীন, আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু।
অর্থ: ‘সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ্র জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহ্র রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহ্র নেক বান্দাদের প্রতি। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহ্র বান্দা ও রাসূল।[38]
১৫। দরূদ :
তাশাহহুদের পর নিম্নোক্ত দরূদ পড়বে।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ছাল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া ‘আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা রাকতা ‘আলা ইবরা-হীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরা-হীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ কর, যেভাবে ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান কর, যেভাবে ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবার বর্গের উপর বরকত নাযিল করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত’।[39]
১৬। সালাম ফিরানোর পূর্বে পঠিত দো‘আ :
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাছীরাওঁ ওয়া লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ‘ইনদিকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অধিক অত্যাচার করেছি, আপনি ছাড়া সে পাপ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ থেকে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’।[40]
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসীহিদ্দাজ্জা-লি ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়া ফিতনাতিল মামা-তি, আল্লা-হুম্মা ই্ন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল মা’ছামি ওয়া মাগরাম।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি কবরের আযাব থেকে, দাজ্জালের ফিতনা থেকে এবং জীবন-মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! গোনাহ ও ঋণগ্রস্ততা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই’।[41]
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখখারতু, অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু, অমা আসরাফতু, অমা আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী; আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা’।
অনুবাদ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর গোপন ও প্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ কর (এবং মাফ কর ঐসব গোনাহ) যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি এবং ঐসব গোনাহ যে বিষয়ে তুমি আমার চাইতে বেশী জানো। তুমি অগ্র-পশ্চাতের মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’।[42]
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্না লাকাল হামদু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা ওয়াহদাকা লা শারীকা লাকা, আল-মান্না-নু, ইয়া বাদী‘উস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম, ইয়া হাইয়্যু ইয়া ক্বাইয়্যূমু ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনান্না-র।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি এবং জানি যে, তোমারই জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই, তুমি একক, তোমার কোন শরীক নেই, তুমি অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী। হে আসমান সমূহ ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা, হে মর্যাদা ও সম্মান দানের অধিকারী। হে চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী, আমি তোমার নিকট জান্নাত চাই এবং জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ চাই’।
ফযীলত : নবী করীম (ছাঃ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই এ ব্যক্তি আল্লাহ্র নিকট তাঁর সুমহান নামের অসীলায় দো‘আ করেছে, যার অসীলায় দো‘আ করা হ’লে কবুল করেন এবং কিছু চাওয়া হ’লে প্রদান করে থাকেন’।[43]
জ্ঞাতব্য: ছালাতে শেষ বৈঠকে তাশাহহুদের পর সালাম ফিরানোর পূর্বে কুরআনী দো‘আ সহ সকল প্রকারের দো‘আ করা যায়।
১৭। সালাম ফিরানো :
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রথমে ডান দিকে সালাম ফিরাতেন এবং বলতেন, ‘আসসালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’। অনুরূপ ভাবে বাম দিকে সালাম ফিরাতেন এবং বলতেন, ‘আসসালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’।[44]
১৮। সালাম ফিরানোর পর পঠিত দো‘আ সমূহ :
সালাম ফিরানোর পর উচ্চৈ:স্বরে একবার ‘আল্লাহু আকবার’[45] ও তিনবার ‘আসতাগফিরুল্লা-হ’ পাঠ করতে হবে।[46] এরপর নিম্নের দো‘আগুলো সাধ্যমত পাঠ করতে হবে-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু তাবা-রাকতা ইয়া-যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমিই শান্তির প্রতীক। তুমিই শান্তিময় এবং শান্তির ধারা তোমা হ’তেই প্রবাহিত। তুমি বরকতময় হে প্রতাপ ও সম্মানের অধিকারী’।[47]
(২) মুগীরা ইবনু শু‘বা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর বলতেন,
উচ্চারণ: লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, আল্লা-হুম্মা লা মা-নি‘আ লিমা আ‘ত্বাইতা ওয়া লা মু‘ত্বিইয়া লিমা-মানা‘তা ওয়া লা ইয়ানফা‘ঊ যাল-জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য। তিনি সবকিছুর উপরে ক্ষমতাশীল। হে আল্লাহ! আপনি যা প্রদান করতে চান তা রোধ করার কেউ নেই। আর আপনি যা রোধ করেন তা প্রদান করার কেউ নেই। আপনার কাছে সৎ কাজ ভিন্ন কোন সম্পদশালীর সম্পদ উপকারে আসে না’।[48]
উচ্চারণ: আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইউল্ ক্বাইয়ূমু, লা-তা’খুযুহূ সিনাতুওঁ ওয়ালা নাউম লাহু মা-ফিস সামাওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরযি, মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূ ইল্লা বিইযনিহী, ইয়া‘লামু মা বাইনা আইদীহিম ওয়ামা খালফাহুম ওয়ালা ইউহীত্বূনা বিশাইয়িম্ মিন ‘ইলমিহী ইল্লা বিমা-শা-আ, ওয়াসি‘আ কুরসিইউহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা, ওয়ালা-ইয়াঊদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুয়াল ‘আলিইউল্ ‘আযীম।
অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবকিছুই তাঁর। কে আছে এমন যে, তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? দৃষ্টির সামনে ও পিছনে যা কিছু রয়েছে সবই তিনি জানেন। মানুষ ও সমস্ত সৃষ্টির জ্ঞান আল্লাহ্র জ্ঞানের কোন একটি অংশবিশেষকেও পরিবেষ্টন করতে পারে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে যতটুকু ইচ্ছা দান করেন তিনি ততটুকু পান। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলো ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান’ (বাক্বারাহ ২৫৫)।
ফযীলত : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য মৃত্যু ব্যতীত আর কোন বাধা থাকে না’।[49]
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবা-দাতিকা।
অর্থ: ‘হে প্রভু! তুমি আমাকে সাহায্য কর, যেন আমি তোমার শুকরিয়া আদায় করতে পারি এবং ভালভাবে তোমার ইবাদত করতে পারি’।[50]
উল্লেখ্য: প্রত্যেক ছালাতের পর উক্ত দো‘আটি পাঠ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মু‘আয (রা:)-কে অছিয়ত করেন।[51]
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখলি ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরি ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিতনাতিদ্দুনইয়া ওয়া ‘আযা-বিল ক্বাবর।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই কাপুরুষতা হ’তে, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই কৃপণতা হ’তে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফেতনা ও কবরের শাস্তি হ’তে’।[52]
(৬) ‘উকবা ইবনু ‘আমের (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে প্রত্যেক ছালাতের পর সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।[53]
(৭) কা‘ব ইবনু ‘উজরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক ফরয ছালাতের পরে বলার কতিপয় বাক্য আছে, সেগুলি যারা বলবে তারা কখনও নিরাশ হবে না। তা হল- ৩৩ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’, ৩৩ বার ‘আল-হামদুলিল্লা-হ’, ৩৪ বার ‘আল্লা-হু আকবার’ বলা।[54]
(৮) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ছালাতের পর ৩৩ বার ‘সুবহা-নাল্লা-হ’, ৩৩ বার ‘আল-হামদুলিল্লা-হ’, ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ এবং একবার
উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা-শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা-কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই প্রশংসা এবং তিনি হ’লেন সর্বশক্তিমান’।
ফযীলত : তাহ’লে তার সমস্ত গোনাহ মাফ করা হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার ন্যায় অধিকও হয়’।[55]
(৯) আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের সালাম ফিরায়ে সরবে বলতেন,
উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হি, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া লা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হু লাহুন নি‘মাতু ওয়া লাহুল ফাযলু ওয়া লাহুছ ছানা-উল হাসানু লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিছীনা লাহুদ্দীনা ওয়া লাও কারিহাল কা-ফিরূন।
অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই রাজত্ব এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা। তিনি সর্বশক্তিমান। কারও কোন উপায় নেই আল্লাহ্র সাহায্য ব্যতীত। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। আমরা তাঁকে ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করি না। তাঁরই নে‘মত, তাঁরই অনুগ্রহ এবং তাঁরই উত্তম প্রশংসা। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। দ্বীন (ধর্ম)-কে আমরা একমাত্র তাঁর জন্যই খালেছ মনে করি- যদিও কাফেররা তা অপসন্দ করে’।[56]
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহ।
অর্থ: ‘আমি সেই মহান আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কেউ নেই। যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী। আর আমি তাঁরই কাছে তওবা করছি’।[57]
উচ্চারণ: লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।
অর্থ: ‘নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি আল্লাহ ছাড়া’।[58]
উচ্চারণ: সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী সুবহা-নাল্লা-হিল ‘আযীম।
অর্থ: ‘আল্লাহ পবিত্র এবং তাঁরই সমস্ত প্রশংসা, আল্লাহ পবিত্র তিনি মহামহিম’।
ফযীলত : এই দো‘আ পাঠের ফলে তার সকল পাপ ঝরে যাবে যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়।
এই দো‘আ সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) বলেন, দু’টি বাক্য এমন যে, তা মুখে উচ্চারণ অতি সহজ, পাল্লায় অনেক ভারী, আর আল্লাহ্র কাছে অতি প্রিয়।[59]
(১৮) বিতর ছালাতের পর দো‘আ-
উচ্চারণ: সুবহা-নাল মালিকিল ক্বুদ্দূস।
অর্থ: ‘আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন পবিত্র। তিনি বিশ্ব জগতের মালিক এবং তিনি অতি পবিত্র’।
উবাই ইবনে কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিতর ছালাতে সালাম ফিরানোর পর উক্ত দো‘আ তিনবার পড়তেন।[60]
জ্ঞাতব্য: সালাম ফিরানোর পর উপরোক্ত দো‘আগুলি হাত না তুলেই পড়তে হয়। সালাম ফিরানোর পর ইমাম-মুক্তাদী একত্রে হাত তুলে মোনাজাত করা, ইমাম দো‘আ করবে আর মুক্তাদীরা আমীন আমীন বলবে এ পদ্ধতি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়।
১৯। বিতর-এর কুনূত :
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা, ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফায়তা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বা-রিকলী ফীমা আ‘ত্বায়তা, ওয়া ক্বিনী শাররামা-ক্বাযায়তা, ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়ালা ইয়ুক্বযা ‘আলায়কা, ইন্নাহূ লা ইয়াযিল্লু মাওঁ ওয়া-লায়তা, ওয়া লা ইয়া‘ইঝঝু মান ‘আ-দাইতা, তাবা-রাকতা রাববানা ওয়া তা‘আ-লাইতা, ওয়া ছাল্লাল্লা-হু ‘আলান নাবী।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হেদায়াত দিয়েছ আমাকে হেদায়াত দিয়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। আমাকে সুস্থতা ও শান্তি দিয়ে ঐ সকল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত কর, যাদেরকে তুমি সুস্থতা দান করেছ। তুমি যাদের অলী হয়েছ আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য কর। তুমি যা দান করেছ তাতে আমাকে বরকত দাও। ভাগ্যের মন্দ লিখন থেকে তুমি আমাকে মুক্তি দাও। তুমি ফায়ছালাকারী, তোমার উপর কোন ফায়ছালাকারী নেই। তুমি যাকে বন্ধু বানিয়েছ সে কখনও লাঞ্ছিত হয় না। তুমি যার সাথে শত্রুতা কর সে সম্মান লাভ করতে পারে না। হে আমাদের রব! তুমি বরকতময় সুমহান। আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন নবীর উপর’।[61]
উল্লেখ্য, জামা‘আতে ইমাম ছাহেব গিয়া পদের শেষে একবচন … ‘নী’-এর স্থলে বহু বচন… ‘না’ বলতে পারেন।[62]
২০। কুনূতে নাযেলা :
কুনূতে নাযেলা: মুসলমানদের জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় সার্বিক বিপদ কালে ফরয ছালাতের শেষ রাক‘আতের রুকূর পর দাঁড়িয়ে ইমাম স্বরবে বিশেষ দো‘আ পড়বেন মুক্তাদীগণও আমীন আমীন বলবেন।
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফিরলানা ওয়া লিল মুমিনীনা ওয়াল মুমিনা-তি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমা-তি, ওয়া আল্লিফ বাইনা ক্বুলূবিহিম ওয়া আছলিহ্ যা-তা বাইনিহিম ওয়া আনছুরহুম ‘আলা-‘আদুউবিকা ওয়া ‘আদুউবিহিম। আল্লা-হুম্মাল ‘আনিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদ্দূনা ‘আন সাবীলিকা ওয়া ইয়ুকাযযিবূনা রুসুলাকা ওয়া ইয়ুক্বা-তিলূনা আউলিয়া-আকা। আল্লা-হুম্মা খা-লিফ বাইনা কালিমাতিহিম ওয়া ঝালঝিল আক্বদা-মাহুম ওয়া আনঝিল বিহিম বা’সাকাল্লাযী লা তারুদ্দুহূ ‘আনিল ক্বাউমিল মুজরিমীন।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এবং সকল মুমিন-মুসলিম নর-নারীকে মাফ করুন। আপনি তাদের অন্তর সমূহে মুহাববত সৃষ্টি করে দিন ও তাদের মধ্যেকার বিবাদ মীমাংসা করে দিন। আপনি তাদেরকে আপনার ও তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন। হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদের উপরে লা‘নত করুন। যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলদের অবিশ্বাস করে ও আপনার বন্ধুদের সাথে লড়াই করে। হে আল্লাহ! আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন ও তাদের পদ সমূহ টলিয়ে দিন এবং আপনি তাদের মধ্যে আপনার প্রতিশোধকে নামিয়ে দিন, যা পাপাচারী সম্প্রদায় থেকে আপনি ফিরিয়ে নেন না।[63]
অতঃপর বলবে-
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম আল্লা-হুম্মা ইন্না নাসতা‘ঈনুকা ওয়া নু’মিনুবিকা ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা ওয়া নুছনী ‘আলাইকাল খায়রা ওয়া লা-নাকফুরুকা। আল্লা-হুম্মা ইয়্যা-কা না‘বুদু ওয়া লাকা নুছাল্লী ওয়া নাসজুদু ওয়া ইলাইকা নাস‘আ ওয়া নাহফিদু, নারজূ রাহমাতাকা ওয়া নাখশা ‘আযা-বাকা ইন্না ‘আযা-বাকাল জিদ্দা বিল কুফফারি মুলহিক্ব, আল্লা-হুম্মা ‘আযযিব কাফারাতা আহলিল কিতা-বিল্লাযীনা ইয়াছুদ্দূনা ‘আন সাবীলিকা।
অর্থ: ‘পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে আরম্ভ করছি। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমরা আপনার নিকট সাহায্য চাই। আপনার উপর বিশ্বাস রাখি, আপনার উপরই ভরসা করি। আপনার কল্যাণের প্রশংসা করি এবং আমরা আপনার কুফুরী করি না। পরম করুণাময় আল্লাহ্র নামে আরম্ভ করছি। হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, আপনার জন্যই ছালাত আদায় করি, আপনার জন্য সিজদা করি এবং আপনার নিকট ফিরে যাওয়ার সর্বচেষ্টা করি। আপনার রহমতের কামনা করি এবং আপনার শাস্তির ভয় করি। কাফিরদের উপর আপনার কঠিন শাস্তি অর্পিত হোক। হে আল্লাহ! আহলে কিতাবদেরকে শাস্তি দান করুন, যারা অস্বীকার করে এবং আপনার পথে বাধা সৃষ্টি করে’।[64]
২১। জানাযার ছালাতের নিয়ম ও মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ :
প্রথমে মনে মনে নিয়ত করতে হবে। তারপর চার তাকবীর দিয়ে ছালাত আদায় করতে হবে।[65] ১ম তাকবীর দিয়ে কাঁধ পর্যন্ত দু’হাত উঠিয়ে পরে বুকে হাত বেঁধে আ‘ঊযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়তে হবে।[66] অতঃপর ২য় তাকবীর দিয়ে দরূদে ইবরাহীম পড়তে হবে, ৩য় তাকবীর দিয়ে নিম্নোক্ত দো‘আ সমূহ পড়তে হবে এবং ৪র্থ তাকবীর দিয়ে সালাম ফিরাতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমরা কোন মৃত ব্যক্তির জানাযার ছালাত পড়বে তখন তার জন্য খালেছ অন্তরে দো‘আ করবে।[67] আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন জানাযার ছালাত পড়তেন তখন বলতেন-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফির লিহাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শা-হিদিনা ওয়া গা-য়িবিনা ওয়া ছাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছা-না, আল্লা-হুম্মা মান আহইয়াইতাহূ মিন্না ফাআহয়িহী ‘আলাল ইসলা-মি ওয়ামান তাওয়াফফাইতাহূ মিন্না ফাতাওয়াফফাহূ ‘আলাল ঈমান, আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহূ ওয়া লা তাফতিন্না বা‘দাহূ।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত, মৃত, আমাদের মধ্যে উপস্থিত ও অনুপস্থিত, আমাদের ছোট ও বড়, পুরুষ ও নারী সকলের গোনাহ মাফ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে যাদেরকে জীবিত রেখেছ তাদেরকে ইসলামের উপর জীবিত রাখ এবং তুমি যাদেরকে মৃত্যু দাও তাদেরকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দাও। হে আল্লাহ! আমাদেরকে বঞ্চিত কর না তার ছওয়াব হ’তে এবং তার মৃত্যুর পর আমাদেরকে বিপদে ফেল না’।[68]
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফির লাহূ ওয়ারহামহু ওয়া‘আ-ফিহী ওয়া‘ফু ‘আনহু ওয়া আকরিম নুঝুলাহূ ওয়া ওয়াসসি‘ মাদখালাহূ, ওয়াগসিলহু বিল মা-ই ওয়াছ ছালজি ওয়াল বারাদি, ওয়া নাকক্বিহী মিনাল খাত্বা-ইয়া কামা নাকক্বাইতাছ ছাওবাল আবইয়াযা মিনাদ দানাসি, ওয়া আবদিলহু দা-রান খায়রাম মিন দা-রিহী ওয়া আহলান খায়রাম মিন আহলিহী ওয়া ঝাওজান খায়রাম মিন ঝাওজিহী, ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা ওয়া আ‘ইযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি ওয়া মিন ‘আযা-বিন না-র।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর, তার প্রতি দয়া কর, তাকে শান্তিতে রাখ, তাকে মাফ কর, তাকে সম্মানিত আতিথ্য দান কর, তার স্থানকে প্রসারিত কর। তুমি তাকে ধৌত কর পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা। তুমি তাকে পাপ হ’তে এমনভাবে পরিষ্কার কর যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। তুমি তার ঘর অপেক্ষা উত্তম ঘর তাকে দান কর, তার পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার এবং তার স্ত্রী অপেক্ষা উত্তম স্ত্রী দান কর। তুমি তাকে জান্নাতে দাখিল কর, আর তাকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের ‘আযাব হ’তে রক্ষা কর।[69]
(৩) ওয়াছিলা ইবনু আসকা‘ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের নিয়ে মুসলমানদের এক ব্যক্তির জানাযার ছালাত পড়লেন। তখন তিনি বলেছেন,
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্না ফুলা-নাবনা ফুলা-নিন ফী যিম্মাতিকা ওয়া হাবলি জিওয়ারিকা, ফাক্বিহী মিন ফিতনাতিল ক্বাবরি ওয়া ‘আযা-বিন নারি। ওয়া আনতা আহলুল ওয়াফা-ই ওয়াল হাক্বক্বি, আল্লা-হুম্মাগফির লাহূ, ওয়ার হামহু, ইন্নাকা আনতাল গাফূরুর রাহীম।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! অমুকের পুত্র অমুক তোমার দায়িত্বে এবং তোমার আশ্রয়ে রইল। অতএব তুমি তাকে কবরের বিপদ এবং জাহান্নামের আযাব হ’তে রক্ষা কর। তুমিই তো অঙ্গীকার পূর্ণকারী এবং প্রকৃত সত্যের অধিকারী। হে আল্লাহ! তুমি তাকে ক্ষমা কর এবং তার প্রতি দয়া কর। নিশ্চয়ই তুমি অতি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু’।[70]
ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন যে, নাম জানা থাকলে ‘ফুলান’-এর স্থলে মাইয়েত ও তার পিতার নাম বলা যাবে (নায়ল)। সে হিসাবে মাইয়েত মেয়ে হলে ইবনু-এর স্থলে ‘বিনতে’ বলা যাবে। আর মেয়ের নাম জানা না থাকলে ‘ফুলা-নাতা বিনতে ফুলা-নিন’ বলা যাবে।[71]
(৪) মাইয়েত শিশু হ’লে ১ম দো‘আ শেষে এই দো‘আ পড়তে হয়-
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাজ‘আলহু লানা-সালাফাওঁ ওয়া ফারাত্বাওঁ ওয়া যুখরাওঁ ওয়া আজরান।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি এই শিশুকে আমাদের জন্য পূর্বগামী, অগ্রগামী এবং পরকালের পুঁজি ও পুরস্কার হিসাবে গণ্য কর’।[72]
২২। কবরে লাশ রাখার দো‘আ :
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হ।
অর্থ: ‘আল্লাহ্র নামে, তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর মিল্লাতের উপর রাখছি’।৯২ ‘মিল্লাতি’ এর স্থলে ‘সুন্নাতি’ বলা যায়।[73]
২৩। কবরে মাটি দেওয়ার নিয়ম :
কবর বন্ধ করার পরে উপস্থিত সকলে ‘বিসমিল্লা-হ’ বলে তিন মুঠি করে মাটি কবরের মাথার দিক থেকে পায়ের দিকে ছড়িয়ে দিবে।[74]
মাটি দেওয়ার সময় আমাদের দেশে প্রচলিত সূরা ত্ব-হার ৫৫ নং আয়াত ‘মিনহা খালাক না-কুম …’ যে দো‘আ হিসাবে পড়া হয়, ছহীহ হাদীছে এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। আয়াতটি দো‘আ হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও সাহাবীগণ কখনো পড়েননি।
২৪। মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর দো‘আ :
উচ্চারণ: আল্লা হুম্মাগফির লাহু, আল্লা-হুম্মা ছাবিবতহু।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি এই মৃতকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! (এ সময়) তাকে (ঈমানের উপর) দৃঢ় রাখ’।[75]
উল্লেখ্য যে, দাফনের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে দো‘আ করা সুন্নাতের খেলাফ। এটা পাক ভারত উপমহাদেশে নব্য সৃষ্টি, যা পরিত্যাগ করা অতীব যরূরী।
২৫। কবর যিয়ারতের দো‘আ :
উচ্চারণ: আসসালা-মু ‘আলা আহলিদ্ দিইয়া-রি মিনাল মুমিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইয়ারহামুল্লা-হুল মুস্তাক্বদিমীনা মিন্না ওয়াল মুস্তা’খিরীনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লা-হু বিকুম লালা-হিকূন।
অর্থ: ‘মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীদের উপর শান্তি বর্ষিত হৌক। আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে গেছে তাদের এবং যারা পরে আসবে তাদের উপর আল্লাহ দয়া করুন। আমরাও শ্রীর্ঘই তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি ইনশাআল্লাহ’।[76]
উচ্চারণ: আসসালা-মু ‘আলাইকু আহলাদদিইয়া-রি মিনাল মুমিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা, ওয়া ইন্না-ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিকূনা, নাসআলুল্লা-হা লানা ওয়া লাকুমুল ‘আ-ফিইয়াতা।
অর্থ: ‘মুমিন ও মুসলিম কবরবাসীগণ! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হৌক। নিশ্চয়ই আমরাও তোমাদের সাথে শ্রীঘ্রই মিলিত হচ্ছি ইনশাআল্লাহ। আমরা আমাদের জন্য এবং তোমাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি’।[77]
২৬। ইস্তিখারাহ্র দো‘আ :
‘ইসতিখারাহ’ অর্থ কল্যাণ চাওয়া, সঠিক দিক নির্দেশনা চাওয়া। অর্থাৎ কোন কাজ করার পূর্বে সঠিক দিক নির্দেশনা চেয়ে আল্লাহ্র নিকট বিশেষ প্রার্থনা করা।
জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের সব কাজে ইসতিখারাহ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করলে সে যেন ফরয নয় এমন দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার পর এ দো‘আ পড়ে-
উচ্চারণ: আল্লাহ-হুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা ওয়া আসতাক্বদিরুকা বিক্বুদরাতিকা ওয়া আসআলুকা মিন ফাযলিকাল ‘আযীম। ফা ইন্নাকা তাক্বদিরু ওয়া লা আক্বদিরু ওয়া তা‘লামু ওয়া লা আ‘লামু ওয়া আনতা ‘আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন্ কুন্তা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা খায়রুল লী ফী দীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী, ফাক্বদিরহু লী ওয়া ইয়াসসিরহু লী ছুম্মা বা-রিকলী ফীহি। ওয়া ইন্ কুনতা তা‘লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল্লী ফী দীনী ওয়া মা‘আ-শী ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী ফাছরিফহু ‘আন্নী ওয়াছরিফনী ‘আনহু ওয়াক্বদির লিইয়াল খায়রা হাইছু কা-না ছুম্মা আরযিনী বিহী।
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার ইল্মের অসীলায় আপনার কাছে আমার উদ্দীষ্ট বিষয়ের কল্যাণ চাই। আপনার কুদরতের অসীলায় আপনার কাছে শক্তি চাই। আপনার কাছে চাই আপনার মহান অনুগ্রহ। কেননা আপনি সব বিষয়ে ক্ষমতা রাখেন, আমি কোন ক্ষমতা রাখি না। আপনি সব বিষয়ে অবগত, আর আমি অবগত নই। আপনিই গায়েব সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। হে আল্লাহ! আমার দ্বীন, আমার জীবন-জীবিকা ও আমার কাজের পরিণাম বিচারে যদি একাজটি আমার জন্য কল্যাণকর বলে জানেন, তাহ’লে আমার জন্য তা ব্যবস্থা করে দিন। আর তা আমার জন্য সহজ করে দিন। তারপর আমার জন্য তাতে বরকত দান করুন। আর যদি এ কাজটি আমার দ্বীন, আমার জীবন-জীবিকা ও আমার কাজের পরিণাম বিচারে আমার জন্য ক্ষতি হয়, তাহ’লে আপনি তা আমার নিকট থেকে সরিয়ে দিন এবং আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আর আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারিত রাখুন তা যেখানেই হোক। এরপর সে বিষয়ে আমাকে রাযী থাকার তাওফীক্ব দিন’।
এখানে (হা-যাল আমরা) বা ‘এ কাজটি’ বলার সময় কাজের নাম উল্লেখ করা যায়।[78]
২৭। হজ্জ ও ওমরার দো‘আ :
উচ্চারণ: লাববাইকা আল্লা-হুম্মা লাবাবাইক্; লাববাইকা লা শারীকা লাকা লাববাইক্; ইন্নাল হামদা ওয়াননি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলকা লা শারীকা লাকা।
অর্থ: ‘আমি হাযির হে আল্লাহ! আমি হাযির, আমি হাযির তোমার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নে‘মত তোমারই, আর সকল সাম্রাজ্যই তোমার, তোমার কোন শরীক নেই’।[79]
২৮। হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মধ্যবর্তী স্থানে পঠিত দো‘আ :
উচ্চারণ: রাববানা আ-তিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়া ক্বিনা ‘আযা-বান না-র।
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান কর ও আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হ’তে বাঁচাও’।[80]
২৯। ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ে পঠিত দো‘আ :
উচ্চারণ: ইন্নাছছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আ-ইরিল্লা-হ।
অর্থ: ‘নিশ্চয়ই ছাফা ও মারওয়া আল্লাহ্র নিদর্শন সমূহের অন্তর্গত’ (বাক্বারাহ ১৫৮)।
অতঃপর ছাফা পাহাড়ে উঠে কা‘বার দিকে মুখ করে দু’হাত উঠিয়ে তিনবার ‘আল্লাহ আকবার’ বলে তিনবার নিম্নের দো‘আ পাঠ করতে হবে।
উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ, আনজাঝা ওয়া‘দাহূ ওয়া নাছারা আবদাহূ ওয়া হাঝামাল আহঝা-বা ওয়াহদাহূ।
অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি অদ্বিতীয়। তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সমস্ত সম্মিলিত শক্তিকে পরাভূত করেছেন’।[81]
রাসূলল্লাহ (ছাঃ) মারওয়া পাহাড়েও অনুরূপ দো‘আ করতেন যেভাবে ছাফা পাহাড়ে করেছেন।[82]
৩০। আরাফার দিবসের দো‘আ :
নবী করীম (ছাঃ) বলেন, সমস্ত দো‘আর শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল আরাফার দিবসের দো‘আ এবং সমস্ত যিকির যা আমি করেছি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন তার মধ্যে শ্রেষ্ঠটি হল-
উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই রাজত্ব, তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান’।[83]
উৎস: ছহীহ কিতাবুদ দো‘আ, মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
[1] তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৩৭০।
[2] মুসলিম, মিশকাত হা/২৬৯।
[3] মুসলিম, মিশকাত হা/২৬৯।
[4] তিরমিযী, মিশকাত হা/২৬৯।
[5] মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫১।
[6] আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৬৯৩।
[7] ঐ।
[8] বুখারী তা‘লীক।
[9] মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫১।
[10] মুসলিম, মিশকাত হা/৬০৭, ৬২৪।
[11] মুসলিম, মিশকাত হা/৬০৬।
[12] বুখারী, মিশকাত হা/৬০৮।
[13] ঐ।
[14] ইরওয়াউল গালীল, ১ম খন্ড, পৃঃ ২৬০।
[15] মুসলিম, মিশকাত হা/৬১০।
[16] আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬২০।
[17] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৬।
[18] তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৫৯।
[19] মুসলিম, মিশকাত হা/৭৫৭।
[20] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১১৪৩।
[21] মুসলিম, মিশকাত হা/১১৪৪।
[22] তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৮২১।
[23] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮১১।
[24] মুসলিম, মিশকাত হা/৭৫৭।
[25] বুখারী হা/৭৫৯।
[26] বুখারী, মিশকাত হা/৮১৭।
[27] মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৫।
[28] তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৮২১।
[29] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮১১।
[30] মুসলিম, মিশকাত হা/৮১২।
[31] মুসলিম, মিশকাত হা/৮৩২।
[32] মুসলিম, মিশকাত হা/৭৫৭।
[33] মুসলিম, ইবনু আবী শাইবা, মিশকাত হা/১১২৭।
[34] মুসলিম, মিশকাত হা/৮৩৪।
[35] আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৮৪০।
[36] নাসাঈ, মিশকাত হা/৮৪১।
[37] আবূদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৬৮।
[38] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮৪৮।
[39] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮৫৮।
[40] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮১।
[41] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮৭৮।
[42] মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩।
[43] তিরমিযী, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/২১৮২, ছিফাতু ছালাতিন নবী।
[44] আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮৮৯।
[45] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৮৯৭।
[46] মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৯।
[47] মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৯।
[48] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০০।
[49] আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৪৯।
[50] আহমাদ, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৮৮৮।
[51] আহমাদ, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৮৮৮।
[52] বুখারী, মিশকাত হা/৯০২।
[53] আহমাদ, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/৯০৭।
[54] মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৪।
[55] মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৫।
[56] মুসলিম, মিশকাত হা/৯০১।
[57] তিরমিযী, আবূদাঊদ, মিশকাত হা/২২৪৪।
[58] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২১৯৫।
[59] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২১৯০।
[60] আবূদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/১২০২।
[61] সুনানু আরবা‘আহ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৭৩; বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৪র্থ সংস্করণ-২০১১, পৃঃ ১৬৮।
[62] ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), ১৬৮ পৃঃ।
[63] বায়হাক্বী, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ১৭০-৭১।
[64] ইবনু আবী শায়বা হা/৭১০৪; আইনে রাসূল (ছাঃ) দো‘আ অধ্যায়, ৩য় প্রকাশ, পৃঃ ৯৮।
[65] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৫৬৩।
[66] বুখারী, মিশকাত হা/১৫৬৫।
[67] আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৫৮৪।
[68] আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৫৮৫।
[69] মুসলিম, মিশকাত হা/১৫৬৬।
[70] আবুদাঊদ, মিশকাত হা/১৫৮৬।
[71] ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)।
[72] বুখারী তা‘লীক্ব, মিশকাত হা/১৫৯৯; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)।
[73] আবুদাঊদ, মিশকাত ঐ।
[74] ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬২৮; ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ২৩১।
[75] আবুদাঊদ, হাকেম, হিছনুল মুসলিম, দো‘আ নং ১৬৪।
[76] এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৪র্থ সংস্করণ-২০১১, পৃ: ২১৩ হতে ২৫২ পর্যন্ত পাঠ করুন-লেখক।
[77] মুসলিম, মিশকাত হা/১৬৭২।
[78] বুখারী, মিশকাত হা/১২৪৭।
[79] মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৪২৬।
[80] আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৪৬৬।
[81] মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৪০।
[82] মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৪০।
[83] তিরমিযী, মিশকাত হা/২৪৮২।