যঈফ/জাল হাদীছ

পবিত্রতা অর্জন (ওযূ ও তায়াম্মুম) সম্পর্কিত যঈফ/জাল হাদীছসমূহ

১ম অংশ

ইসলাম পবিত্রতাকে ঈমানের অর্ধেক বলে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ‘পবিত্রতা ছালাতের চাবি’ বলেও ঘোষণা করেছে। তাই মুসলিম মাত্রই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকবে, যাতে ঈমান জাগ্রত থাকে। বিশেষ করে ছালাতের ওযূর ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিবে। কারণ ওযূ না হ’লে ছালাত হবে না। তাই ওযূ বিষয়ে যে সমস্ত ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলো আমাদেরকে বর্জন করতে হবে এবং সঠিকটা গ্রহণ করতে হবে।

(১) মিসওয়াক করার ফযীলত ৭০ গুণ:

শরী‘আতে মিসওয়াক করার গুরুত্ব অনেক। তবে মিসওয়াক করার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত উক্ত প্রসিদ্ধ কথাটি জাল। যেমন:

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ছালাত মিসওয়াক করে আদায় করা হয় সেই ছালাত মিসওয়াক করা বিহীন ছালাতের চেয়ে ৭০ গুণ বেশী নেকী হয়।

তাহক্বীক্ব: ইমাম বায়হাক্বী উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, মু‘আবিয়া ইবনু ইয়াহইয়া যুহরী থেকে বর্ণনা করেছে। সে নির্ভরযোগ্য নয়। অন্য সূত্রে উরওয়া আয়েশা থেকে বর্ণনা করেছে। কিন্তু তারা উভয়েই যঈফ। অন্য সূত্রে উরওয়া আক্বেদী থেকে বর্ণনা করেছে কিন্তু সে মিথ্যুক।

মিসওয়াক করে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা মিসওয়াক বিহীন সত্তর রাক‘আত ছালাত পড়ার সমান।

উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ কান্দালভী প্রণীত ‘মুন্তাখাবে হাদীস’ গ্রন্থে ফযীলত সংক্রান্ত অনেক জাল বা মিথ্যা হাদীছ উল্লেখ করেছেন। উক্ত বর্ণনাটি তার অন্যতম।

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। ইমাম বাযযার বলেন, মু‘আবিয়া নামে একজন রাবী রয়েছে সে ছাড়া আর কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়া মুহাম্মাদ ইবনু ওমর নামে আরেকজন রাবী রয়েছে সে মিথ্যুক।

যায়েদ ইবনু খালেদ আল-জুহানী (রাঃ) বলেন, মিসওয়াক না করে রাসূল (ছাঃ) ছালাত সমূহের জন্য বাড়ী থেকে বের হতেন না।

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ।১০

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, মিসওয়াকের ১০টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। (১) মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি (২) শয়তানের অসন্তুষ্টি (৩) ফেরেশতাদের জন্য আনন্দ (৪) আলজিভের সৌন্দর্য (৫) দাঁতের আবরণ দূরে করে (৬) চোখকে জ্যোতিময় করে (৭) মুখকে পবিত্র করে (৮) কফ কম করে (৯) এটি সুন্নাত (১০) নেকী বৃদ্ধি করে।১১

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি নিতান্তই যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, মু‘আল্লা ইবনু মাঈন দুর্বল ও পরিত্যক্ত রাবী।১২

ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী, প্রতিপালকের সন্তুষ্টির কারণ ও চোখের জন্য জ্যোতিময়।১৩

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ইমাম তাবারাণী বলেন, হারিছ বিন মুসলিম ছাড়া বাহরে সিক্বা থেকে অন্য কেউ এই হাদীছ বর্ণনা করেনি।১৪

আবু উমামা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমরা মিসওয়াক কর। নিশ্চয়ই মিসওয়াক মুখ পরিষ্কারকারী ও আল্লাহর সন্তুষ্টির কারণ। যখনই জিবরীল আমার নিকট আসেন তখনই আমাকে মিসওয়াক করার জন্য বলেন। এমনকি আমি ভয় করি যে, আমার ও আমার উম্মতের উপর তা ফরয করা হয় কি-না। আমার উম্মতের উপর কঠিন হয়ে যাওয়ার ভয় না করলে মিসওয়াক করা আমি উম্মতের উপর ফরয করে দিতাম। আমি মিসওয়াক করতেই থাকি এমনকি আশংকা করি যে, আমি হয়ত আমার মুখের সামনের দিক ক্ষয় করে ফেলব।১৫

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। উক্ত বর্ণনার সনদে অনেক ত্রুটি রয়েছে। ওছমান ইবনু আবীল আতেকা নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন, নাসাঈ তাকে যঈফ বলেছেন। এছাড়াও আলী ইবনু যায়েদ আবু আব্দিল মালেক নামের রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন। ইবনু হাতেম এই হাদীছকে যঈফ বলেছেন।১৬

আবু আইয়ুব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, চারটি বিষয় নবীদের সুন্নাত। (ক) লজ্জা করা। অন্য বর্ণনায় খাতনা করার কথা রয়েছে (খ) সুগন্ধি ব্যবহার করা (গ) মিসওয়াক করা ও (ঘ) বিবাহ করা।১৭

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত বর্ণনায় কয়েকটি ত্রুটি রয়েছে। আইয়ূব ও মাকহূলের মাঝে রাবী বাদ পড়েছে। হাজ্জাজ বিন আরত্বাহ নামক রাবীর দোষ রয়েছে। এছাড়াও এর সনদে আবু শিমাল রয়েছে। তাকে আবু যুর‘আহ ও ইবনু হাজার আসক্বালানী অপরিচিত বলেছেন।১৮

(২) যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করা ফযীলতপূর্ণ:

যায়তুন দ্বারা মিসওয়াক করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হয় এবং বিশেষ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ এর পক্ষে শারঈ কোন বিধান নেই। এ মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।

মু‘আয বিন জাবাল বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, উত্তম মিসওয়াক হ’ল বরকতপূর্ণ যায়তুন গাছ, যা মুখকে পবিত্র করে, দাঁতের আবরণ দূর করে। এটা আমার মিসওয়াক ও আমার পূর্বের নবীগণের মিসওয়াক।১৯

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। উক্ত বর্ণনার সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আল-উকাশী নামে একজন মিথ্যুক রাবী আছে। ইমাম যাহাবী, দারাকুৎনী, ইবনু হাজার আসক্বালানী সহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে মিথ্যুক বলে অভিহিত করেছেন।২০ ইমাম হায়ছামী বলেন, এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু মুহছিন উকাশীও আছে, সে চরম মিথ্যাবাদী।২১

আবু খায়রাহ ছববাহী (রাঃ) বলেন, আমি আব্দুল ক্বায়স প্রতিনিধি দলের সাথে ছিলাম যারা রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে গিয়েছিল। তিনি পাথেয় বাবদ মিসওয়াক করার জন্য তিনি আমাদেরকে আরাক গাছের ডাল দিলেন, যাতে আমরা তার দ্বারা মিসওয়াক করি। আমরা বললাম, আমাদের নিকট মিসওয়াক করার জন্য খেজুরের ডাল রয়েছে। তবে আমরা আপনার সম্মানজনক দান আমরা গ্রহণ করছি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আব্দুল ক্বায়েসের প্রতিনিধি দলকে ক্ষমা করুন। কারণ তারা আনুগত্য স্বীকার করে ইসলাম গ্রহণ করেছে অসন্তুষ্টিতে নয়। আর আমার সম্প্রদায় অপমানিত ও তীর-ধনুকের কবলে না পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেনি।২২

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে দাউদ ইবনু মাসাওয়ার নামক রাবী রয়েছে। সে অপরিচিত, কেউ তাকে নির্ভরযোগ্য বলেননি। তার শিক্ষক মুকাতিল বিন হুমামও অপরিচিত।২৩

(৩) আঙ্গুল দিয়ে মিসওয়াক করাই যথেষ্ট:

মিসওয়াক দ্বারাই মুখ পরিষ্কার করা সুন্নাত। মিসওয়াক না থাকলে আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করা যায়। কিন্তু শুধু আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট একথা ঠিক নয়। এর পক্ষে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা জাল।

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, আঙ্গুল দ্বারা মিসওয়াক করাই যথেষ্ট।২৪

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। এর সনদে আবু গাযিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে দুর্বল। বরং দারাকুৎনী তাকে হাদীছ জালকারী বলে অভিযুক্ত করেছেন। এছাড়াও কাছীর ইবনু আব্দুল্লাহ আল-মুযানী নামক রাবীকেও মুহাদ্দিছগণ মিথ্যুক বলেছেন। আরো অনেক ত্রুটি রয়েছে।২৫

(৪) ছিয়াম অবস্থায় কাঁচা ডাল দিয়ে মিসওয়াক না করা:

উক্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। বরং কাঁচা হোক শুকনা হোক যেকোন ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা যাবে।২৬

মিসওয়াক সম্পর্কে ছহীহ হাদীছ :

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মিসওয়াক হ’ল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ’।২৭

আলী (রাঃ) মিসওয়াক করার নির্দেশ দান করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় বান্দা যখন মিসওয়াক করে ছালাত আদায়ের জন্য দাঁড়ায় তখন ফেরেশতা তার পিছনে দাঁড়ায়। অতঃপর তার ক্বিরাআত শুনতে থাকে এবং তার কিংবা কথার নিকটবর্তী হয়। এমনকি  ফেরেশতার মুখ তার মুখের উপর রাখে। তার মুখ থেকে কুরআনের যা বের হয় তা ফেরেশতার পেটের মাঝে প্রবেশ করে। সুতরাং তোমরা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য মুখ পরিষ্কার রাখ’।২৮ উল্লেখ্য, মিসওয়াকের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদীছ রয়েছে।

(৫) মাথায় টুপি দিয়ে বা মাথা ঢেকে টয়লেটে যাওয়া:

পেশাব-পায়খানায় যাওয়ার সময় মাথায় টুপি দেওয়া বা মাথা ঢেকে যাওয়ার প্রথা সমাজে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এর শারঈ কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা জাল।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ النَّبِىُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ غَطَّى رَأْسَهُ وَإِذَا أَتَى أَهْلَهُ غَطَّى رَأْسَهُ.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন পায়খানায় প্রবেশ করতেন তখন তাঁর মাথা ঢেকে নিতেন এবং যখন স্ত্রী সহবাস করতেন তখনও মাথা ঢাকতেন।২৯

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি জাল। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ইউনুস আল-কাদীমী নামক রাবী রয়েছে সে এই হাদীছ জাল করেছে। এছাড়া তার শিক্ষক আলী ইবনু হাইয়ান আল-মাখযূমীকে ইবনু হাজার আসক্বালানী মাতরূক বলেছেন। এছাড়া অন্যান্য মুহাদ্দিছগণও এই হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।৩০

(৬) পানি থাকা সত্ত্বেও কুলুখ নেওয়া অথবা কুলুখ নেওয়ার পর পুনরায় পানি নিয়ে ইস্তিঞ্জা করা:

পানি থাকা অবস্থায় কুলুখ নেওয়া শরী‘আত সম্মত নয়। পানি না পাওয়া গেলে কুলুখ নেওয়া যাবে। তবে পুনরায় পানি ব্যবহার করতে হবে না। কুলুখ নেওয়ার পর পানি নেওয়া সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণনা করা হয় তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسِ قَالَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِى أَهْلِ قُبَاءَ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا وَاللهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ فَسَأَلَهُمْ رَسُوْلُ اللهِ ؟ فَقَالُوْا نَتَّبِعُ الْحِجَارَةَ الْمَاءَ.

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নিম্নোক্ত আয়াত কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ‘এতে এমন লোক সকল রয়েছে যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে ভালবাসেন। আর আল্লাহ উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালবাসেন’ (তওবা ১০৮)। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদের এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেছিল, (আমরা ইস্তিঞ্জা করার সময়) পাথর নেওয়ার পর পানি নেই।

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা। হাদীছের গ্রন্থ সমূহে এই বর্ণনার কোন ভিত্তি পাওয়া যায় না।৩১ ইমাম বাযযার এটি বর্ণনা করে বলেন, ‘যুহরী থেকে মুহাম্মাদ বিন আব্দুর আযীয ছাড়া অন্য কেউ একে বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। আর সে তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছে।৩২
ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন,

عمر بن عبد العزيز ضعفه أبو حاتم فقال ليس له ولا لأخويه عمران وعبد الله حديث مستقيم وعبد الله بن شبيب ضعيف أيضا.

ওমরকে আবু হাতেম দুর্বল বলেছেন। তিনি আরো বলেন, তার ও তার দুই ভাই ইমরান ও আব্দুল্লাহ কারো একটি হাদীছও সঠিক নয়। তাছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনু শাবীবও দুর্বল।৩৩

উক্ত বর্ণনার বিরোধী ছহীহ হাদীছ:

উক্ত হাদীছ যে জাল তার বাস্তব প্রমাণ হ’ল নিম্নের ছহীহ হাদীছ। যেখানে পাথরের কথাই নেই।

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ فِى أَهْلِ قُبَاءَ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا قَالَ كَانُوْا يَسْتَنْجُوْنَ بِالْمَاءِ فَنَزَلَتْ فِيهِمْ هَذِهِ الآيَةُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এই আয়াতটি কুবাবাসীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। ‘এতে এমন লোক সকল রয়েছে যারা উত্তমরূপে পবিত্র হওয়াকে ভালবাসেন’ (তওবা ১০৮)। তিনি বলেন, তারা পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করত।৩৪

অন্য হাদীছে এসেছে,

عَنْ أَبىْ أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ وَأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّ هَذِهِ الْآيَةَ نَزَلَتْ فِيْهِ رِجَالٌ يُحِبُّوْنَ أَنْ يَتَطَهَّرُوْا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِيْنَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَثْنَى عَلَيْكُمْ فِي الطُّهُوْرِ فَمَا طُهُورُكُمْ قَالُوا نَتَوَضَّأُ لِلصَّلَاةِ وَنَغْتَسِلُ مِنْ الْجَنَابَةِ وَنَسْتَنْجِي بِالْمَاءِ قَالَ فَهُوَ ذَاكَ فَعَلَيْكُمُوْهُ.

আবু আইয়ুব আনছারী, জাবের ইবনু আব্দিল্লাহ ও আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, নিশ্চয়ই এই আয়াত যখন অবতীর্ণ হয়- ‘তথায় (কুবায়) এমন লোক সকল রয়েছে যারা পবিত্রতা লাভ করাকে ভালবাসে এবং আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন’ তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, হে আনছারগণ! এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের পবিত্রতার ব্যাপারে তোমাদের প্রশংসা করলেন। তোমরা কিভাবে পবিত্রতা অর্জন কর? তারা বলল, আমরা ছালাতের জন্য ওযূ করে থাকি, অপবিত্রতা হতে গোসল করে থাকি এবং পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, এটাই তার কারণ। সুতরাং তোমরা সর্বদা এটা করতে থাকবে।৩৫

মূল কথা হ’ল অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীরা শুধু পাথর দ্বারা ইস্তিঞ্জা করত কিন্তু কোবাবাসী অন্যদের তুলনায় শুধু পানি দিয়ে ইস্তিঞ্জা করতেন। সে জন্যই আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন।

আরেকটি জাল হাদীছ:

عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا مُرْنَ أَزْوَاجَكُنَّ أَنْ يَتَّبِعُوْا الْحِجَارَةَ بِالْمَاءِ مِنْ أَثَرِ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ فَإِنِّيْ أَسْتَحْيِيْهِمْ وَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كاَنَ يَفْعَلُهُ.

আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের স্বামীদের বলে দাও তারা যেন পেশাব-পায়খানার সময় পাথর নেওয়ার পর পানি ব্যবহার করে। আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। আর রাসূল (ছাঃ)ও এটা করেন।৩৬

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। এ শব্দে কোন বর্ণনা নেই। শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, এর কোন ভিত্তি নেই।৩৭

উক্ত বর্ণনার বিরোধী সরাসরি ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেখানে কুলুখ নেওয়ার কথা নেই; বরং শুধু পানি নেওয়ার কথা রয়েছে। যেমন-

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ مُرْنَ أَزْوَاجَكُنَّ أَنْ يَسْتَطِيْبُوا بِالْمَاءِ فَإِنِّي أَسْتَحْيِيهِمْ فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُهُ.

আয়েশা (রাঃ) বলেন, তোমরা তোমাদের স্বামীদের বলে দাও তারা যেন পানি দ্বারা পবিত্রতা হাছিল করে। কারণ আমি তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করছি। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা করে থাকেন।৩৮

অতএব সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত উক্ত মিথ্যা প্রথাকে অবশ্যই উচ্ছেদ করতে হবে। পানি থাকা সত্ত্বেও যেন কোন স্থানে কুলুখের স্তূপ সৃষ্টি না হয়। কারণ প্রকৃত ফযীলত পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করার মধ্যেই রয়েছে।

২য় অংশ

(৭) কুলুখ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করা:

কুলুখ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করা, কাশি দেওয়া, নাচানাচি করা, দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা, টয়লেটে কুলুখের আবর্জনার স্তূপ তৈরি করা সবই নব্য মূর্খতা। ইসলামে এরূপ বেহায়াপনার কোন স্থান নেই। মিথ্যা ফযীলতের ধোঁকা মানুষকে এত নীচে নামিয়েছে। এই অভ্যাস ইসলামের বিশ্বজনীন মর্যাদাকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। ইসলাম সৌন্দর্যমন্ডিত জীবন বিধান। যাবতীয় নোংরামী এতে নিষিদ্ধ। শরী‘আতে পেশাব থেকে সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে তাই বলে এর নামে নতুন আরেকটি বিদ‘আত তৈরি করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পেশাবের ছিটা কাপড়ে লেগে যাওয়ার আশংকায় ইসলাম তার জন্য সুন্দর বিধান দিয়েছে। আর তা হ’ল, ওযূ করার পর হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান বরাবর ছিটিয়ে দেওয়া। যেমন-

كَانَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا بَالَ يَتَوَضَّأُ وَيَنْتَضِحُ.

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন পেশাব করতেন তখন ওযূ করতেন এবং পানি ছিটিয়ে দিতেন’। অন্য হাদীছে এসেছে, কাপড়ে তরল মযী লাগলেও তিনি পানি ছিটিয়ে দিতে বলতেন। অতএব প্রচলিত বেহায়াপনার আশ্রয় নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

(৮) ওযূর অবশিষ্ট পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করা যাবে না এবং ইস্তিঞ্জা করার পর অবশিষ্ট পানি দ্বারা ওযূ করা যাবে না বলে ধারণা করা:

উক্ত বিশ্বাস সঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে এ ধরনে কোন নির্দেশনা পাওয়া যায় না। অথচ তাঁরা পাত্রে ওযূ করতেন এবং পাত্রের পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা সম্পন্ন করতেন। উল্লেখ্য যে, আবূদাঊদ ও নাসাঈতে হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে, একদা রাসূল (ছাঃ) যে পাত্রের পানিতে ইস্তিঞ্জা করেন তার বিপরীত পাত্রে ওযূ করেন। মূলতঃ পাত্রের পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল বলেই অন্য পাত্র তাঁকে দেওয়া হয়েছিল। মুহাদ্দিছগণ এমনটিই বলেছেন।

(৯) পেশাব-পায়খানা থেকে বের হওয়ার পর ‘আল-হামদুলিল্লা-হিল্লাযি আযহাবা আন্নিল আযা ওয়া ‘আফানী’ দু‘আ পাঠ করা:

টয়লেট সারার পর বলবে, ‘গুফরা-নাকা’। যা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। ‘আল-হামদুলিল্লা-হিল্লাযি.. মর্মে বর্ণিত হাদীছ যঈফ।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا خَرَجَ مِنْ الْخَلَاءِ قَالَ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَذْهَبَ عَنِّي الْأَذَى وَعَافَانِي.

আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন পায়খানা থেকে বের হ’তেন তখন তিনি বলতেন, ঐ আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমার কষ্ট দূর করেছেন ও আমাকে সুস্থ করেছেন।

তাহক্বীক্ব: উক্ত বর্ণনার সনদে ইসমাঈল ইবনু মুসলিম নামে একজন রাবী আছে সে মুহাদ্দিছগণের ঐকমত্যে যঈফ।

(১০) ওযূর শুরুতে মুখে নিয়ত বলা:

মুখে নিয়ত বলার শারঈ কোন বিধান নেই। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম থেকে এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। এটি মানুষের তৈরী বিধান। অতএব তা পরিত্যাগ করতে হবে। বরং মনে মনে নিয়ত করতে হবে। উল্লেখ্য যে, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ)-এর নামে প্রকাশিত ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও জরুরী মাসআলা মাসায়েল’ নামক বইয়ে বলা হয়েছে যে, ক্বিবলার দিকে মুখ করে উঁচু স্থানে বসে ওযূ করতে হবে। অথচ উক্ত কথার প্রমাণে কোন দলীল পেশ করা হয়নি।১০ উক্ত দাবী ভিত্তিহীন।

(১১) ওযূর শুরুতে ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রাহীম আল-ইসলামু হাক্কুন, ওয়াল কুফরু বাতিলুন, আল-ঈমানু নূরুন ওয়াল কুফরু যুলমাতুন’ দু‘আ পাঠ করা:

উক্ত দো‘আর প্রমাণে কোন ছহীহ দলীল নেই। যদিওবা মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) উক্ত দো‘আর সাথে আরো কিছু বাড়তি কথা যোগ করে তার বইয়ে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কোন প্রমাণ উল্লেখ করেননি।১১ এটা পড়লে সুন্নাতের বিরোধিতা করা হবে। উক্ত দো‘আটি দেশের বিভিন্ন মসজিদের ওযূখানায় লেখা দেখা যায়। উক্ত দো‘আ হ’তে বিরত থাকতে হবে। বরং ওযূর শুরুতে শুধু ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হবে।১২

(১২) প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দো‘আ পড়া:

ওযূর প্রত্যেক অঙ্গ ধৌত করার সময় পৃথক পৃথক দু‘আ পড়তে হবে মর্মে আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) উল্লেখ করেছেন। এর পক্ষেও তিনি কোন দলীল তিনি পেশ করেননি। তবে অন্য শব্দে একটি জাল হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন- 

يا أنس ادن مني أعلمك مقادير الوضوء فدنوت فلما أن غسل يديه قال بسم الله والحمد لله ولا حول ولا قوة إلا بالله فلما استنجى قال اللهم حصن فرجي ويسر لي أمري فلما توضأ واستنشق قال اللهم لقني حجتي ولا تحرمني رائحة الجنة فلما غسل وجهه قال اللهم بيض وجهي يوم تبيض وجوه فلما أن غسل ذراعيه قال اللهم أعطني كتابي بيميني فلما أن مسح يده على رأسه قال اللهم أغثنا برحمتك وجنبنا عذابك فلما أن غسل قدميه قال اللهم ثبت قدمي يوم تزل فيه الأقدام ثم قال والذي بعثني بالحق يا أنس ما من عبد قالها عند وضوئه لم تقطر من خلل أصابعه قطرة إلا خلق الله تعالى ملكا يسبح الله بسبعين لسانا يكون ثواب ذلك التسبيح إلى يوم القيامة.

(রাসূল (ছাঃ) বলেন) হে আনাস! তুমি আমার নিকটবর্তী হও তোমাকে ওযূর মিকদার শিক্ষা দিব। অতঃপর আমি তার নিকটবর্তী হ’লাম। তখন তিনি তাঁর দুই হাত ধৌত করার সময় বললেন, ‘বিসমিল্লা-হি ওয়াল হামদুল্লিা-হি ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হি’। যখন তিনি ইস্তিঞ্জা করলেন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা হাছি্ছন ফারজী ওয়া ইয়াসি্সরলী আমরী’। যখন তিনি ওযূ করেন ও নাক ঝাড়েন তখন বলেন, ‘আল্লা-হুম্মা লাক্কিনী হুজ্জাতী ওয়ালা তারহামনী রায়েহাতাল জান্নাতি’। যখন তার মুখমন্ডল ধৌত করেন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা বাইয়িয ওয়াজহী ইয়াওমা তাবইয়ায্যু উজূহুওঁ’। যখন তিনি দুই হাত ধৌত করলেন তখন বললেন, ‘আল্লাহুম্মা আ‘ত্বিনী কিতাবী ইয়ামানী’। যখন হাত দ্বারা মাসাহ করলেন তখন বললেন, ‘আল্লা-হুম্মা আগিছনা বিরহমাতিকা ওয়া জান্নিবনা আযাবাকা’। যখন তিনি দুই পা ধৌত করলেন তখন বললেন, ‘আল্ল-হুম্মা ছাবিবত ক্বাদামী ইয়াওমা তাযিল্লু ফীহি আক্বদাম’।
অতঃপর তিনি বলেন, হে আনাস! ঐ সত্তার কসম করে বলছি যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, যে বান্দা ওযূ করার সময় এই দু‘আ বলবে তার আঙ্গুল সমূহের ফাঁক থেকে যত ফোঁটা পানি পড়বে তার প্রত্যেক ফোঁটা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা একজন করে ফেরেশতা তৈরি করবেন। সেই ফেরেশতা সত্তরটি জিহবা দ্বারা আল্লাহর তাসবীহ বর্ণনা করবেন। এই ছওয়াব ক্বিয়ামত পর্যন্ত হ’তে থাকবে।১৩

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। এর সনদে উবাদা বিন ছুহাইব ও আহমাদ বিন হাশেমসহ কয়েকজন মিথ্যুক রাবী রয়েছে। ইমাম বুখারী, নাসাঈ, দারাকুৎনীসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাদেরকে পরিত্যক্ত বলেছেন। ইমাম নববী বলেন, এই বর্ণনাটি বাতিল, এর কোন ভিত্তি নেই।১৪
 

(১৩) ওযূর পানি পাত্রের মধ্যে পড়লে উক্ত পানি দ্বারা ওযূ হবে না বলে বিশ্বাস করা:

এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা মাত্র। আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) লিখেছেন, ‘উঁচু স্থানে বসবে যেন ওযূর পানির ছিটা শরীরে আসতে না পারে’।১৫ অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাত্রের মধ্যে হাত ডুবিয়ে দিতেন আবার বের করতেন এভাবে তিনি ওযূ করতেন।১৬

(১৪) ত্রুটিপূর্ণ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। ওযূর সময় কথা বললে ফেরেশতারা রুমাল নিয়ে চলে যায়:

ওযূকারীর মাথার উপর চারজন ফেরেশতা রুমাল নিয়ে ছায়া করে রাখে। পর পর চারটি কথা বললে রুমাল নিয়ে চলে যায় বলে যে কাহিনী সমাজে প্রচলিত আছে তা উদ্ভট, মিথ্যা ও কাল্পনিক। তাছাড়া খারাপ কথা বললে ওযূ নষ্ট হয়ে যায় এ আক্বীদাও ঠিক নয়। এ মর্মে যে হাদীছ রয়েছে তা জাল।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْحَدَثُ ১৭وَحَدَثُ الْفَرْجِ وَلَيْسَا سَوَاءً حَدَثُ اللِّسَانِ أَشَدٌَ مِنْ حَدَثِ الْفَرْجِ وَفِيْهَا الْوُضُوْءُ.

ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, অপবিত্রতা দুই প্রকার। জিহবার ও লজ্জাস্থানের অপবিত্রতা। দুইটি এক রকম নয়। লজ্জাস্থানের অপবিত্রতার চেয়ে জিহবার অপবিত্র বেশি। আর এর কারণে ওযূ করতে হবে।১৮

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ।১৯ এর সনদে বাক্বিয়াহ নামক রাবী রয়েছে, সে ত্রুটিপূর্ণ। সে দুর্বল রাবীদের নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনাকারী। রাসূল (ছাঃ) থেকে উক্ত মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়নি।২০

(১৫) কুলি করার জন্য আলাদা পানি নেওয়া:

সুন্নাত হল হাতে পানি নিয়ে একই সঙ্গে মুখে ও নাকে পানি দিবে। রাসূল (ছাঃ) এভাবেই ওযূ করতেন। যেমন-

مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ مِنْ كَفَّةٍ وَاحِدَةٍ.

‘তিনি এক অঞ্জলি দ্বারাই কুলি করেন ও নাক পরিষ্কার করেন’।২১ আলাদাভাবে পানি নেওয়ার যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

عَنْ طَلْحَةَ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ دَخَلْتُ يَعْنِى عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَتَوَضَّأُ وَالْمَاءُ يَسِيْلُ مِنْ وَجْهِهِ وَلِحْيَتِهِ عَلَى صَدْرِهِ فَرَأَيْتُهُ يَفْصِلُ بَيْنَ الْمَضْمَضَةِ وَالاِسْتِنْشَاقِ.

তালহা (রাঃ) তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট গেলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি ওযূ করছিলেন। আর পানি তাঁর মুখমন্ডল ও দাড়ি থেকে তাঁর বুকে পড়ছিল। অতঃপর আমি তাকে দেখলাম তিনি কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার সময় পৃথক করলেন।২২

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে লাইছ ও মুছাররফ নামের দু’জন রাবী রয়েছে, যারা ত্রুটিপূর্ণ। এছাড়াও আরো ত্রুটি রয়েছে। এই হাদীছ যঈফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছগণ একমত।২৩ শায়খ ছফিউর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন, তালক বিন মুছাররফের হাদীছ পৃথক করা প্রমাণ করে, কিন্তু তা যঈফ।২৪

(১৬) কান মাসাহ করার সময় নতুন পানি নেওয়া:

ওযূতে কান মাসাহ করার ক্ষেত্রে মাথা ও কান একই সঙ্গে একই পানিতে মাসাহ করবে। কান মাসাহ করার জন্য পৃথকভাবে নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত’।২৫ বায়হাক্বীতে একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ করার ছহীহ হাদীছ এসেছে।২৬ নতুনভাবে পানি নেওয়ার হাদীছটি ছহীহ নয়।

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْخُذُ لِأُذُنَيْهِ مَاءً غَيْرَ الْمَاءِ الَّذِي أَخَذَهُ لِرَأْسِهِ.

আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছেন যে, পানি দ্বারা মাথা মাসাহ করেছেন। অতঃপর তা ব্যতীত কান মাসাহ করার জন্য পৃথক পানি নিয়েছেন।২৭

তাহক্বীক্ব: উক্ত শব্দে বর্ণিত হাদীছ যঈফ। উল্লেখ্য যে, উক্ত বর্ণনার পরে হাদীছটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে ইমাম তিরমিযী ও বায়হাক্বীর যে মন্তব্য ইবনু হাজার আসক্বালানী তুলে ধরেছেন তা মূলতঃ এই হাদীছের ক্ষেত্রে নয়; বরং হাত ধৌত করার পর নতুন করে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করা সংক্রান্ত হাদীছটির ব্যাপারে, যা ছহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।২৮ তাই আব্দুর রহমান মুবারকপুরী (রহঃ) বলেন,

قُلْتُ لَمْ أَقِفْ عَلَى حَدِيْثٍ مَرْفُوْعٍ صَحِيْحٍ خَالٍ عَنِ الْكَلاَمِ يَدُلُّ عَلَى مَسْحِ الْأُذُنَيْنِ لِمَاءٍ جَدِيْدٍ.

‘আমি বলছি, সমালোচনা থেকে মুক্ত এমন কোন মারফূ হাদীছ এ ব্যাপারে আছে বলে আমি অবগত নই, যার দ্বারা নতুন পানি নিয়ে কান মাসাহ করা যাবে’।২৯

عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ يَأْخُذُ الْمَاءَ بِإِصْبَعَيْهِ لأُذُنَيْهِ.

নাফে‘ বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন ওযূ করতেন তখন কান মাসাহ করার জন্য দুই আঙ্গুলে পানি নিতেন।৩০

তাহক্বীক্ব: এ বর্ণনাটিও যঈফ। বায়হাক্বীর মুহাক্কিক মুহাম্মাদ আব্দুল ক্বাদির ‘আতা বলেন, রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ঐ হাদীছগুলো যঈফ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।৩১

উল্লেখ্য যে, ইবনু ওমর (রাঃ)-এর ব্যক্তিগত আমলকে ইবনুল ক্বাইয়িম ছহীহ হওয়ার কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু উক্ত ত্রুটি থাকার কারণে তা যঈফ। যেমন তিনি বলেন, لَمْ يَثْبُتْ عَنْهُ أَنَّهُ أَخَذَ لَهُمَا مَاءً جَدِيْدًا وَإِنَّمَا صَحَّ ذَلِكَ عَنْ عُمَرَ. ‘রাসূল (ছাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়নি যে তিনি দুই কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নিয়েছেন। তবে ইবনু ওমর থেকে সেটা ছহীহ হিসাবে বর্ণিত হয়েছে’।৩২ শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,  لاَ حَاجَةَ لأَِخْذِ مَاءٍ جَدِيْدٍ مُنْفَرِدٍ لِمَسْحِ الْأُذُنَيْنِ غَيْرَ مَاءِ الرَّأْسِ بَلْ يَجْزِِيْ مَسْحُهُمَا بِبَلَلِ مَاءِ الرَّأْسِ.  ‘দুই কান এককভাবে মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। বরং মাথার জন্য ভিজা পানি দ্বারাই দুই কান মাসাহ করা জায়েয’।৩৩

অতএব কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি নেওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং মাথা ও কান একই সঙ্গে মাসাহ করতে হবে।

জ্ঞতব্য: অনেকে কান মাসাহকে ফরয বলেন না। অথচ কানসহ  মাথা  মাসাহ  করা  ফরয।  কারণ  দুই  কান মাথার অন্তর্ভুক্ত।  রাসূল (ছাঃ) বলেন,  ‘দুই কান মাথার অন্তর্ভুক্ত’।৩৪ তাছাড়া রাসূল (ছাঃ) একই পানিতে মাথা ও কান মাসাহ করতেন। যেমন-  ثُمَّ غَرَفَ غَرْفَةً فَمَسَحَ رَأْسَهُ وَأُذُنَيْهِ. ‘অতঃপর তিনি এক অঞ্জলি পানি নিতেন এবং মাথা ও দুই কান মাসাহ করতেন’।৩৫

(১৭) মাথা ও কান মাসাহ করার জন্য নতুন পানি না নেওয়া:

অনেকে দুই হাত ধৌত করার পর সরাসরি মাথা মাসাহ করেন, নতুন পানি নেন না। যেমন আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) বলেছেন, ‘কান ও মাথা মাছহে করার জন্য নতুন পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই, ভেজা হাত দ্বারাই মাছহে করবে’।৩৬ এটি সুন্নাতের বরখেলাফ। কারণ রাসূল (ছাঃ) দুই হাত ধৌত করার পর নতুন পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ করতেন। যেমন- مَسَحَ بِرَأْسِهِ بِمَاءٍ غَيْرِ فَضْلِ يَدِهِ ‘হাতের অতিরিক্ত পানি ছাড়াই তিনি নতুন পানি দ্বারা তাঁর মাথা মাসাহ করতেন’।৩৭

(১৮) মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করা:

মাথা মাসাহ করার ব্যাপারে অবহেলা ও উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। কেউ চুল স্পর্শ করাকেই মাসাহ মনে করেন, কেউ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসাহ করেন এবং কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যায় নেমে পড়েন। কুদূরী ও  হেদায়ার লেখক চার ভাগের এক ভাগ মাসাহ করার কথা উল্লেখ করেছেন। আর দলীল হিসাবে পেশ করেছেন ছহীহ মুসলিমের হাদীছ। অথচ উক্ত হাদীছে পাগড়ী থাকা অবস্থায় মাসাহ করা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, কুদূরী  এবং হেদায়াতে মুগীরা (রা)-এর নামে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ভুল হয়েছে।৩৮ যা হেদায়ার টীকাতেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তারা দুইটি হাদীছকে একত্রে মিশ্রিত করে উল্লেখ করেছেন।৩৯

সুধী পাঠক! শরী‘আতের ব্যাখ্যা হিসাবে হাদীছে রাসূল (ছাঃ) সুন্দরভাবে মাথা মাসাহ করার পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। কারণ পবিত্র কুরআন তাঁর উপরই নাযিল হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) মাথার সামনের দিক থেকে শুরু করে পিছনে চুলের শেষ পর্যন্ত দুই হাত নিয়ে যেতেন এবং সেখান থেকে সামনে নিয়ে এসে শেষ করতেন। এভাবে তিনি পুরো মাথা মাসাহ করতেন। যেমন-

ثُمَّ مَسَحَ رَأْسَهُ بِيَدَيْهِ فَأَقْبَلَ بِهِمَا وَأَدْبَرَ بَدَأَ بِمُقَدَّمِ رَأْسِهِ حَتَّى ذَهَبَ بِهِمَا إِلَى قَفَاهُ ثُمَّ رَدَّهُمَا إِلَى الْمَكَانِ الَّذِي بَدَأَ مِنْهُ.

‘অতঃপর তিনি তাঁর দুই হাত দ্বারা মাথা মাসাহ করেন। এতে দুই হাত তিনি সামনে করেন এবং পিছনে নেন। তিনি মাথার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যেতেন অতঃপর যে স্থান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসেন’।৪০ ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (৬৯১-৭৪১ হিঃ) বলেন,

وَلَمْ يَصِحّ عَنْهُ فِي حَدِيثٍ وَاحِدٍ أَنّهُ اقْتَصَرَ عَلَى مَسْحِ بَعْضِ رَأْسِهِ الْبَتّةَ.

‘রাসূল (ছাঃ) কখনো মাথার কিছু অংশ মাসাহ করেছেন মর্মে কোন একটি হাদীছ থেকেও প্রমাণিত হয়নি’।৪১

উল্লেখ্য, পাগড়ী পরা অবস্থায় থাকলে মাথার অগ্রভাগ মাসাহ করা যাবে।৪২ আরো উল্লেখ্য যে, পাগড়ীর নীচে মাসাহ করতেন বলে যে হাদীছ আবূদাঊদে বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।৪৩

(১৯) ওযূতে ঘাড় মাসাহ করা:

ওযূতে ঘাড় মাসাহ করার পক্ষে ছহীহ কোন প্রমাণ নেই। এর পক্ষে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সবই জাল ও মিথ্যা। অথচ আলেমগণ এর পক্ষে মুসলিম জনতাকে উৎসাহিত করেছেন। আশরাফ আলী থানবী ঘাড় মাসাহ করার দাবী করেছেন এবং এ সময় পৃথক দো‘আ পড়ার কথা উল্লেখ করেছেন।৪৪ ড. শাইখ মুহাম্মাদ ইলিয়াস ফয়সাল (মদীনা মুনাওয়ারাহ) প্রণীত ও মারকাযুদ-দাওয়াহ আল-ইসলামিইয়াহ, ঢাকার শিক্ষক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ অনুদিত ‘নবীযীর নামায’ বইয়ে ওযূর সুন্নাত আলোচনা করতে গিয়ে গর্দান মাসাহ করার কথা বলেছেন। এর পক্ষে জাল হাদীছও পেশ করেছেন।৪৫ এভাবেই ভিত্তিহীন আমলটি সমাজে বিস্তার লাভ করেছে। জাল দলীলগুলো নিম্নরূপ:

(1) عَنْ وَائِلِ بن حُجْرٍ… فِىْ صِفَةِ وَضُوْءِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثُمَّ مَسَحَ عَلَى رَأْسِهِ ثَلاثًا وَمَسَحَ ظَاهَرَ أُذُنَيْهِ وَمَسَحَ رُقْبَتَهُ وَبَاطِنَ لِحْيَتِهِ بِفَضْلِ مَاءِ الرَّأْسِ…

(এক) ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর ওযূর পদ্ধতি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। ..অতঃপর তিনি তিনবার তার মাথা মাসাহ করেন এবং দুই কানের পিঠ মাসাহ করেন ও ঘাড় মাসাহ করেন, দাড়ির পেট মাসাহ করেন মাথার অতিরিক্ত পানি দিয়ে।৪৬

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল।৪৭ ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,

 هَذَا مَوْضُوْعٌ لَيْسَ مِنْ كَلاَمِ النَّبِىِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

‘এটা জাল। নবী (ছাঃ)-এর বক্তব্য নয়।৪৮

(২) عَنْ عَمْرِو بْنِ كَعْبٍ قال رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ َسَلَّمَ تَوَضَّأَ فَمَسَحَ بَاطِنَ لِحْيَتِهِ وَقَفَاهُ.

(দুই) আমর ইবনু কা‘ব বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ওযূ করার সময় আমি দাড়ির পেট এবং ঘাড় মাসাহ করতে দেখেছি।৪৯

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। ইবনুল ক্বাত্ত্বান বলেন, এর সনদ অপরিচিত। মুছাররফসহ তার পিতা ও দাদা সবাই অপরিচিত।৫০

(3) عَنْ طَلْحَةَ بْنِ مُصَرِّفٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ َسَلَّمَ يَمْسَحُ رَأْسَهُ مَرَّةً وَاحِدَةً حَتَّى بَلَغَ الْقَذَالَ وَهُوَ أَوَّلُ الْقَفَا.

(তিন) তালহা ইবনু মুছাররফ তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি তিনি একবার তাঁর মাথা মাসাহ করতেন এমনকি তিনি মাথার পশ্চাদ্ভাগ পর্যন্ত পৌঁছাতেন। আর তা হ’ল ঘাড়ের অগ্রভাগ।৫১

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি মুনকার বা অস্বীকৃত। মুসাদ্দাদ বলেন, তিনি মাথার সামনের দিক থেকে পিছনের দিক পর্যন্ত মাসাহ করেন এমনকি তার দুই হাত কানের নিচ দিয়ে বের করে নেন’ এই কথা ইয়াহইয়ার কাছে বর্ণনা করলে তিনি একে অস্বীকৃতি জানান। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, আমি ইমাম আহমাদকে বলতে শুনেছি, ইবনু উ‘আইনাহ বলতেন, মুহাদ্দিছগণ ধারণা করতেন এটা ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তিনি এটাও বলতেন, তালহা তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে এ কথা কোথায় পেল?৫২

(4) مَسْحُ الرُّقْبَةِ أَمَانٌ مِنَ الْغِلِّ.

(চার) ‘ঘাড় মাসাহ করলে বেড়ী থেকে নিরাপদ থাকবে’।

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল।৫৩ ইমাম সুয়ূত্বী জাল হাদীছের গ্রন্থে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।৫৪

(5) مَنْ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عُنُقَهُ لَمْ يَغِلُّ بِالأَغْلاَلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

(পাঁচ) ‘যে ব্যক্তি ওযূ করবে এবং ঘাড় মাসাহ করবে তাকে ক্বিয়ামতের দিন বেড়ী দ্বারা বেড়ী পরানো হবে না’।৫৫

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল বা মিথ্যা।৫৬ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী উক্ত বর্ণনাকে জাল বলেছেন।৫৭ উক্ত বর্ণনায় মুহাম্মাদ ইবনু আমল আল-আনছারী ও মুহাম্মাদ ইবনু আহমাদ ইবনে মুহাররম নামের দু’জন রাবী ত্রুটিপূর্ণ। মুহাদ্দিছগণ তাদেরকে দুর্বল বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।৫৮
ঘাড় মাসাহ করা সম্পর্কে এ ধরনে মিথ্যা বর্ণনা আরো আছে। এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া যাবে না। বরং ঘাড় মাসাহ করার অভ্যাস ছেড়ে দিতে হবে।

(২০) ওযূর পর অঙ্গ মুছতে নিষেধ করা:

ওযূ করার পর রুমাল, গামছা কিংবা কাপড় দ্বারা অঙ্গ মুছতে পারে। এটা ইচ্ছাধীন।৫৯ যে বর্ণনায় অঙ্গ মুছতে নিষেধ করা হয়েছে তা জাল বা মিথ্যা।

 عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ َسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَمْسَحُ وَجْهَهُ بِالْمِنْدِيْلِ بَعْدَ الْوَضُوْءِ وَلاَ أَبُوْ بَكْرٍ وَلاَ عُمَرُ وَلاَ عَلِىٌّ وَلاَ ابْنُ مَسْعُوْدٍ.

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ), আবুবকর, ওমর, আলী এবং ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ওযূর পর রুমাল দিয়ে মুখ মুছতেন না।৬০

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি জাল। এর সনদে সাঈদ বিন মাইসারা নামে একজন রাবী রয়েছে। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদসহ অন্যান্য মুহাদ্দিছগণ তাকে মিথ্যুক বলেছেন। ইবনু হিববান তাকে জাল হাদীছের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ইমাম বুখারী তাকে মুনকার বলেছেন।৬১ উল্লেখ্য, উক্ত মর্মে যঈফ হাদীছও আছে।

(২১) হাত ধোয়ার সময় কনুই-এর উপরে আরো বেশী করে বাড়িয়ে ধৌত করা: হাত ধৌত করতে হবে কুনই পর্যন্ত। এর বেশি নয়। আল্লাহর নির্দেশ এটাই (সূরা মায়েদাহ ৬)। হাদীছের শেষে ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করার যে বক্তব্য এসেছে তার উদ্দেশ্য অঙ্গ বাড়িয়ে ধৌত করা নয়; বরং ভালভাবে ওযূ সম্পাদন করা।৬২

(২২) চামড়ার মোজা ছাড়া মাসাহ করা যাবে না বলে ধারণা করা: উক্ত ধারণা সঠিক নয়। বরং যেকোন পবিত্র মোজার উপর মাসাহ করা যাবে।৬৩ হাদীছে কোন নির্দিষ্ট মোজার শর্তারোপ করা হয়নি।৬৪

 

৩য় অংশ

(২৩) মোজার উপরে নীচে মাসাহ করা:

অনেককে মোজার উপরে নীচে উভয় দিকে মাসাহ করতে দেখা যায়। অথচ সুন্নাত হ’ল মোজার উপরে মাসাহ করা। উপরে-নীচে উভয় দিকে মাসাহ করা সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সনদ যঈফ এবং ছহীহ হাদীছের বিরোধী। যেমন-

عَنِ الْمُغِيْرَةَ بْنِ شُعْبَةَ قَالَ وَضَّأْتُ النَّبِىَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِىْ غَزْوَةِ تَبُوْكَ فَمَسَحَ أَعْلَى الْخُفَّيْنِ وَأَسْفَلَهُمَا-

মুগীরা ইবনু শু‘বা (রাঃ) বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-কে ওযূ করিয়েছি। তিনি দুই মোজার উপরে এবং নীচে  মাসাহ করেছেন।

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী বলেন, ‘এই হাদীছটি ত্রুটিপূর্ণ। আমি ইমাম আবু যুর‘আহ ও ইমাম বুখারীকে এই হাদীছ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, এই হাদীছ ছহীহ নয়। ইমাম আবূদাঊদও  একে দুর্বল বলেছেন। এই হাদীছের সনদে ছাওর নামক একজন রাবী রয়েছে। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, সে রাজা ইবনু হাইওয়া থেকে না শুনেই বর্ণনা করেছে।

জ্ঞাতব্য : বর্তমানে অনেকেই মোজা পরিহিত অবস্থায় টাখনুর নীচে লুঙ্গি-প্যান্ট পরিধান করাকে জায়েয বলছেন ও পরিধান করছেন। এটা শরী‘আতকে ছোট করার মিথ্যা কৌশল মাত্র। পাশ্চত্য অপসংস্কৃতির সাথে আপোস করে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর আদর্শকে নস্যাৎ করতে চায়।

(২৪) ওযূর পর আকাশের দিকে তাকিয়ে দো পড়া:

ওযূর দো‘আ পড়ার সময় আকাশের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

عَنْ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوْءَ ثُمَّ رَفَعَ نَظْرَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ فُتِحَتْ لَهُ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ مِنْ الْجَنَّةِ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ-

উক্ববা বিন আমের (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করল অতঃপর আকাশের দিকে চোখ তুলে দো‘আ পড়ল তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যেকোন দরজা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে।

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি মুনকার। ‘আকাশের দিকে তাকানো’ অংশটুকু ছহীহ হাদীছের বিরোধী। তাই শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘এই অতিরিক্ত অংশটুকু অস্বীকৃত। কারণ ইবনু আম আবী উক্বাইল এককভাবে বর্ণনা করেছে। সে অপরিচিত’।

(২৫) ওযূর পরে সূরা ক্বদর পড়া:

উক্ত আমল সম্পর্কে কোন দলীল পাওয়া যায় না। অথচ আশরাফ আলী থানবী তার বইয়ে সূরা ক্বদর পড়ার কথা বলেছেন এবং ওযূর পরের দো‘আর সাথে অনেকগুলো নতুন শব্দ যোগ করেছেন যা হাদীছের গ্রন্থ সমূহে পাওয়া যায় না।৭

অতএব ওযূর করার পর শুধু নিম্নের দো‘আ পাঠ করবে-

أَشْهَدُ أنْ لاَّ إلهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ. اَللّهُمَّ اجْعَلْنِى مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِى مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ-

(২৬) রক্ত বের লে ওযূ ভেঙ্গে যায়:

শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হওয়া ওযূ ভঙ্গের কারণ নয়। রক্ত বের হ’লে ওযূ করতে হবে মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيْزِ قَالَ قَالَ تَمِيْمُ الدَّارِيُّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الوضُوْءُ مِنْ كُلِّ دَمٍ سَائِلٍ-

ওমর ইবনে আব্দুল আযীয তামীম দারী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক প্রবাহমান রক্তের কারণেই ওযূ করতে হবে।
তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ।১০ ইমাম দারাকুৎনী (রহঃ) বলেন, ওমর ইবনে আব্দুল আযীয তামীম দারীর নিকট থেকে শুনেননি। আর ইয়াযীদ ইবনু খালেদ ও ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ দুইজনই অপরিচিত।১১

তাছাড়া রক্ত বের হ’লে ছাহাবায়ে কেরাম ওযূ করতেন না মর্মে ছহীহ আছার বর্ণিত হয়েছে। যেমন-

عَنْ بَكْرٍ قَالَ رَأَيْتُ بْنَ عُمَرَ عَصَرَ بَثْرَةً فِيْ وَجْهِهِ فَخَرَجَ شَيْءٌ مِنْ دَمٍ فَحَكَّهُ بَيْنَ أَصْبَعَيْهِ ثُمَّ صَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأ-

বাকর (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবনু ওমর (রাঃ)-কে দেখেছি, তিনি তার মুখমন্ডলে উঠা ফোড়ায় চাপ দিলেন ফলে কিছু রক্ত বের হ’ল। তখন তিনি আঙ্গুল দ্বারা ঘষে দিলেন। অতঃপর ছালাত আদায় করেন কিন্তু ওযূ করেননি।১২

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, রক্ত বের হ’লে ওযূ করা ওয়াজিব হবে মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ নেই। তা কম হোক বা বেশী হোক।১৩

(২৭) বমি লে ওযূ ভেঙ্গে যায়:

ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে বমিকে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন গ্রন্থে। আর মানুষও তাই আমল করে থাকে। অথচ তার পক্ষে কোন ছহীহ হাদীছ নেই।

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَصَابَهُ قَيْءٌ أَوْ رُعَافٌ أَوْ قَلَسٌ أَوْ مَذْيٌ فَلْيَنْصَرِفْ فَلْيَتَوَضَّأْ ثُمَّ لِيَبْنِ عَلَى صَلاَتِهِ وَهُوَ فِي ذَلِكَ لاَ يَتَكَلَّمُ-

আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ছালাতের মধ্যে কারো যদি বমি হয় অথবা নাক থেকে রক্ত ঝরে বা মুখ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য বের হয় কিংবা মযী নির্গত হয় তাহ’লে সে যেন ফিরে যায় এবং ওযূ করে। এরপর পূর্ববর্তী ছালাতের উপর ভিত্তি করে ছালাত আদায় করে। আর এই সময়ে সে কোন কথা বলবে না।১৪

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে ইসমাঈল ইবনু আইয়াশ নামে একজন রাবী আছে, সে যঈফ। সে হিজাযের দুই ব্যক্তি বর্ণনা করেছে কিন্তু তাও যঈফ।১৫

عن زيد بن علي عن أبيه عن جده قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَلْسُ حَدَثٌ.

যায়েদ ইবনু আলী তার পিতার সূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, বমি অপবিত্র।১৬

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি নিতান্ত যঈফ। ইমাম দারাকুৎনী হাদীছটি বর্ণনা করে বলেন, এর সনদে সাওর নামক রাবী রয়েছে সে যায়েদ বা অন্য কারো নিকট থেকে বর্ণনা করেনি।১৭

অতএব বমি হ’লে ওযূ করতে হবে মর্মে কোন ছহীহ বিধান নেই।

জ্ঞাতব্য : হেদায়া ও কুদূরীতে রক্ত বের হওয়া ও বমি হওয়াকে ওযূ ভঙ্গের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।১৮ আর সে কারণেই এই আমল চালু আছে। দুঃখজনক হ’ল, ইমাম দারাকুৎনীর উক্ত মন্তব্য থাকতে হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে তা পেশ করা হ’ল?

(২৮) ওযূ থাকা সত্ত্বেও ওযূ করলে দশগুণ নেকী:

উক্ত ফযীলত সঠিক নয়। কারণ এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ যঈফ।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ فَلَمَّا نُودِىَ بِالظُّهْرِ تَوَضَّأَ فَصَلَّى فَلَمَّا نُودِىَ بِالْعَصْرِ تَوَضَّأَ فَقُلْتُ لَهُ فَقَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ تَوَضَّأَ عَلَى طُهْرٍ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ عَشْرَ حَسَنَاتٍ-

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ওযূ অবস্থায় ওযূ করবে তার জন্য দশটি নেকী রয়েছে।১৯

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। ইমাম তিরমিযী, মুনযেরী, ইরাক্বী, নববী, ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) প্রমুখ মুহাদ্দিছগণ হাদীছটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে একমত।২০ উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুর রহমান ইবনু যিয়াদ ইফরীক্বী ও গুত্বাইফ নামক দুই দুর্বল ও অপরিচিত রাবী আছে।২১

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَوَضَّأَ وَاحِدَةً فَتِلْكَ وَظِيفَةُ الْوُضُوءِ الَّتِي لاَ بُدَّ مِنْهَا وَمَنْ تَوَضَّأَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُ كِفْلَانِ وَمَنْ تَوَضَّأَ ثَلاَثًا فَذَلِكَ وُضُوئِي وَوُضُوءُ الْأَنْبِيَاءِ قَبْلِى-

ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি একবার করে ওযূ করবে সে ব্যক্তি ওযূর নিয়ম পালন করল, যা তার জন্য আবশ্যক ছিল। যে ব্যক্তি দুইবার করে ধৌত করবে সে দ্বিগুণ ছওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি তিনবার করে ধৌত করবে তার ওযূ আমার ও আমার পূর্বের নবীগণের ওযূর ন্যায় হ’ল।২২

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ।২৩ উক্ত যঈফ হাদীছ হেদায়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে।২৪

عَنْ عُثْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  يَقُوْلُ لاَ يُسْبِغُ عَبْدٌ الْوُضُوءَ إِلاَّ غَفَرَ اللهُ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ-

ওছমান (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন বান্দা যখন উত্তমরূপে ওযূ করে তখন আল্লাহ তার সামনের ও পিছনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেন।২৫

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি মুনকার বা অস্বীকৃত।২৬

(২৯) তায়াম্মুমের সময় দুইবার হাত মারা কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা:

তায়াম্মুম করার সময় একবার মাটিতে হাত মারতে হবে এবং কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করতে হবে। দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ত্রুটিপূর্ণ। যেমন:

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنّهُ قَالَ  فِى التَّيَمُّمِ ضَرْبَتَانِ ضَرْبَةٌ لِلْوَجْهِ وَضَرْبَةٌ لِلْيَدَيْنِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ-

ইবনু ওমর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, তায়াম্মুমে দুইবার হাত মারতে হবে। মুখের জন্য একবার আর কনুই পর্যন্ত দুই হাত মাসাহর জন্য একবার।২৭

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে কয়েকজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী আছে। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর আল-উমরা নামক রাবীর স্মৃতিশক্তি দুর্বল হিসাবে যঈফ। আলী ইবনু যাবইয়ান নামক রাবী অত্যন্ত দুর্বল। ইমাম ইবনু মাঈন বলেন, সে মিথ্যুক, অপবিত্র। ইমাম বুখারী বলেন, সে মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী এবং ইমাম নাসাঈ বলেন, সে হাদীছের পরিত্যক্ত রাবী।২৮

প্রশ্ন হ’ল, উক্ত হাদীছ হেদায়া ও কুদূরীতে কিভাবে স্থান পেল?২৯ অথচ ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তায়াম্মুম করার পদ্ধতি সম্পর্কে।৩০ সেই হাদীছ প্রত্যাখ্যান করার কারণ অজানা।

عن نَافِعٌ قَالَ انْطَلَقْتُ مَعَ ابْنِ عُمَرَ فِي حَاجَةٍ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَضَى ابْنُ عُمَرَ حَاجَتَهُ فَكَانَ مِنْ حَدِيثِهِ يَوْمَئِذٍ أَنْ قَالَ مَرَّ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سِكَّةٍ مِنْ السِّكَكِ وَقَدْ خَرَجَ مِنْ غَائِطٍ أَوْ بَوْلٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ حَتَّى إِذَا كَادَ الرَّجُلُ أَنْ يَتَوَارَى فِي السِّكَّةِ ضَرَبَ بِيَدَيْهِ عَلَى الْحَائِطِ وَمَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ ثُمَّ ضَرَبَ ضَرْبَةً أُخْرَى فَمَسَحَ ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ رَدَّ عَلَى الرَّجُلِ السَّلَامَ وَقَالَ إِنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أَرُدَّ عَلَيْكَ السَّلَامَ إِلَّا أَنِّي لَمْ أَكُنْ عَلَى طُهْرٍ-

নাফে‘ বলেন, আমি একদা আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ)-এর সাথে তাঁর এক কাজে গিয়েছিলাম। অতঃপর তিনি তার কাজ সমাধা করলেন। সেই দিন তার কথার মধ্যে এই কথা ছিল যে, কোন এক ব্যক্তি এক গলিতে চলছিল এমন সময় রাসূল (ছা)-এর সাক্ষাৎ পেল। তিনি তখন পায়খানা বা পেসাবখানা থেকে বের হয়েছেন। সে রাসূল (ছাঃ)-কে সালাম দিল কিন্তু তিনি তার উত্তর নিলেন না। এমনকি যখন গলির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি দুই হাত দেওয়ালের উপর মারলেন এবং উহা দ্বারা মুখমন্ডল মাসাহ করলেন। অতঃপর পুনরায় হাত মারলেন এবং দুই হাত মাসাহ করলেন। তারপর লোকটির সালামের উত্তর দিলেন আর বললেন, আমি ওযূ অবস্থায় ছিলাম না। উহাই তোমার সালামের উত্তর দিতে আমাকে বাধা দিয়েছিল।৩১
তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, ‘আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলকে বলতে শুনেছি, মুহাম্মাদ বিন ছাবিত তায়াম্মুম সম্পর্কে একটি মুনকার হাদীছ বর্ণনা করেছে’।৩২ ইমাম বুখারী এবং ইয়াহইয়া ইবনু মাঈনও অনুরূপ বলেছেন। ইবনু হাজার আসক্বালানী তাকে যঈফ বলেছেন। ইমাম খাত্ত্বাবী বলেন, হাদীটি ছহীহ নয়। কারণ মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত আল-আবদী অত্যন্ত দুর্বল। তার হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয় না৩৩ ইমাম আবূদাঊদ আরো বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু ছাবিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দুইবার হাত মারা ও ইবনু ওমরের কাজের যে বর্ণনা করেছে এই ঘটনার ব্যাপারে সে নির্ভরযোগ্য নয়।৩৪

তায়াম্মুমের সঠিক পদ্ধতি:

পবিত্র হওয়ার নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটিতে দুই হাত একবার মারবে।৩৫ অতঃপর ফুঁক দিয়ে ঝেড়ে ফেলে প্রথমে মুখমন্ডল তারপর দুই হাত একবার কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করবে। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,

إِنَّمَا كَانَ يَكْفِيكَ هَكَذَا فَضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَفَّيْهِ الْأَرْضَ وَنَفَخَ فِيهِمَا ثُمَّ مَسَحَ بِهِمَا وَجْهَهُ وَكَفَّيْهِ-

‘তোমার জন্য এইরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তিনি তাঁর দুই হাত মাটির উপর মারলেন এবং ফুঁক দিলেন। অতঃপর দুই হাত দ্বারা মুখমন্ডল ও দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন।৩৬

উল্লেখ্য যে, আবুদাঊদে দুইবার হাত মারা ও পুরো হাত বগল পর্যন্ত মাসাহ করা সংক্রান্ত যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার সনদ বিশুদ্ধ হ’লেও সেগুলো মূলতঃ কতিপয় ছাহাবীর ঘটনা মাত্র। যা রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে শিক্ষা দেওয়ার আগের বিষয়।৩৭ অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তায়াম্মুমের উক্ত পদ্ধতি শিক্ষা দান করেন। যেমন- ইমাম মুহিউস সুন্নাহ বলেন,

هذا حكاية فعلهم لم ننقله عن رسول الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كما حكى عمار عن نفسه التمعك فى حال الجنابة فلما سأل النبى صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وأمره بالوجه والكفين انتهى إليه وأعرض عن فعله.

‘এটা ছাহাবীদের কাজের ঘটনা, যা আমরা রাসূল (ছাঃ) থেকে নকল করতে পারিনি। যেমনটি আম্মার (রাঃ) জুনুবী অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি করার ঘটনা নিজের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর যখন তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন তখন তিনি শুধু মুখমন্ডল ও দুই কব্জি মাসহের নির্দেশ দান করেন। এ পর্যন্তই শেষ করেছেন। আর আম্মার (রাঃ) তার কাজ থেকে ফিরে আসেন।৩৮

শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,

لكن العمل ليس عليه لأن الصحابة لم يفعلوا ذلك بتعليم من النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وإنما العمل على حديثه الآخر الآتي بعده-

‘কিন্তু আমল এর উপর (দুই হাত মারা) ছিল না। কারণ তখন ছাহাবীগণ রাসূল (ছাঃ)-এর শিক্ষা অনুযায়ী করেননি। বরং আমল ছিল শেষ হাদীছের প্রতি, যা পরেই আসছে।৩৯ অতএব রাসূলের আমল ও বক্তব্যই উম্মতের জন্য অনুসরণীয়।

(৩০) মুছল্লীর ওযূতে ত্রুটি থাকলে ইমামের ক্বিরাআতে ভুল হয়:

আলেমদের মাঝে উক্ত বিশ্বাস বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু উক্ত মর্মে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ।

عَنْ شَبِيبٍ أَبِي رَوْحٍ عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَقَرَأَ الرُّومَ فَالْتَبَسَ عَلَيْهِ فَلَمَّا صَلَّى قَالَ مَا بَالُ أَقْوَامٍ يُصَلُّوْنَ مَعَنَا لَا يُحْسِنُوْنَ الطُّهُوْرَ فَإِنَّمَا يَلْبِسُ عَلَيْنَا الْقُرْآنَ أُولَئِكَ-

শাবীব আবী রাওহ ছাহাবীদের কোন একজন থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ছাঃ) একদা ফজরের ছালাত আদায় করলেন এবং সূরা রূম পড়লেন। কিন্তু পড়ার মাঝে কিছু গোলমাল হ’ল। ছালাত শেষে তিনি বললেন, তাদের কী হয়েছে যে, যারা আমাদের সাথে ছালাত আদায় করে অথচ উত্তমরূপে ওযূ করে না। এরাই আমাদের কুরআন তেলাওয়াতে গোলযোগ ঘটায়।৪০

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। উক্ত হাদীছের সনদে আব্দুল মালেক বিন উমাইর নামে একজন ত্রুটিপূর্ণ রাবী রয়েছে।৪১

(২৮) মাথার চুলের গোড়ায় নাপাকি থাকবে মনে করে সর্বদা মাথার চুল ছোট করে রাখা বা কামিয়ে রাখা:

নাপাকি থাকার ভয়ে এক শ্রেণীর মুরববী সর্বদা মাথা ন্যাড়া করে রাখেন বা চুল খুব ছোট করে রাখেন এবং একে খুব ফযীলতপূর্ণ মনে করেন। আলী (রাঃ) এরূপ করতেন বলে তারা এর অনুসরণ করে থাকেন। অথচ উক্ত মর্মে যে বর্ণনা প্রচলিত আছে তা যঈফ, মোটেই আমলযোগ্য নয়।

عَنْ عَلِىٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ تَرَكَ مَوْضِعَ شَعْرَةٍ مِنْ جَنَابَةٍ لَمْ يَغْسِلْهَا فُعِلَ بِهِ كَذَا وَكَذَا مِنَ النَّارِ قَالَ عَلِىٌّ فَمِنْ ثَمَّ عَادَيْتُ رَأْسِىْ فَمِنْ ثَمَّ عَادَيْتُ رَأْسِىْ ثَلاَثًا وَكَانَ يَجِزُّ شَعْرَهُ-

আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নাপাকীর এক চুল পরিমাণ স্থানও ছেড়ে দিবে এবং উহা  ধৌত করবে না তার সাথে আগুনের দ্বারা এই এই ব্যবস্থা করা হবে। আলী (রাঃ) বলেন, সেই অবধিই আমি আমার মাথার সাথে শত্রুতা করেছি। একথা তিনি তিনবার বললেন। তিনি তার মাথার চুল খুব ছোট করে রাখতেন।৪২

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ।৪৩ উক্ত বর্ণনার সনদে ‘আত্বা, হাম্মাদ ও যাযান নামের ব্যক্তি ত্রুটিপূর্ণ।৪৪

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ تَحْتَ كُلِّ شَعْرَةٍ جَنَابَةً فَاغْسِلُوا الشَّعْرَ وَأَنْقُوا الْبَشَرَ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক চুলের নীচেই অপবিত্র রয়েছে। সুতরাং চুলগুলোকে ভালভাবে ধৌত করবে এবং চামড়াকে সুন্দর করে পরিষ্কার করবে।৪৫

তাহক্বীক্ব: বর্ণনাটি যঈফ।৪৬ এর সনদে হারিছ ইবনু ওয়াজীহ নামক এক রাবী আছে। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, তার হাদীছ মুনকার আর সে দুর্বল রাবী।৪৭

عَنْ أَبِى أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيِّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَأَدَاءُ الْأَمَانَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهَا قُلْتُ وَمَا أَدَاءُ الْأَمَانَةِ قَالَ غُسْلُ الْجَنَابَةِ فَإِنَّ تَحْتَ كُلِّ شَعَرَةٍ جَنَابَةً-

আবু আইয়ূব আনছারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত, এক জুম‘আ থেকে অপর জুম‘আ, আমানত আদায় করা- এর মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারা। আমি বললাম, আমানত আদায়ের অর্থ কী? তিনি বললেন, জানাবাতের গোসল করা। কারণ প্রতিটি পশমের গোড়ায় অপবিত্রতা রয়েছে।৪৮

তাহক্বীক্ব : উক্ত হাদীছও যঈফ।৪৯ এর সনদে উতবা ইবনু আবী হাকীম নামে একজন দুর্বল রাবী আছে।৫০

(২৯) ঋতুবতী মহিলা বা অপবিত্র ব্যক্তিদেরকে মুখস্থ কুরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করা:

অপবিত্র ব্যক্তি বা ঋতুবতী মহি’লা কুরআন স্পর্শ না করে মুখস্থ তেলাওয়াত করতে পারে।৫১ মুখস্থও পড়া যাবে না বলে যে কথা প্রচলিত আছে তা সঠিক নয়। অনুরূপ অপবিত্র ব্যক্তি সালাম-মুছাফাহা করতে পারে না, কোন বিশেষ পাত্র স্পর্শ করতে পারে না ও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে না বলে যে কথা সমাজে প্রচলিত আছে তা কুসংস্কার মাত্র। আর এ ব্যাপারে যে সমস্ত কথা বর্ণিত হয়েছে তা যঈফ ও ভিত্তিহীন। যেমন-

عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلَا الْجُنُبُ شَيْئًا مِنْ الْقُرْآنِ-

ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ঋতুবতী অবস্থায় স্ত্রী লোক এবং অপবিত্র ব্যক্তি কুরআনের কোন অংশ পড়বে না।৫২

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি মুনকার। ইমাম তিরমিযী বলেন, আমি ইমাম বুখারীকে বলতে শুনেছি ইসমাঈল বিন আইয়াশ হিজায ও ইরাকের অধিবাসীদের থেকে বর্ণনা করেছে। তার হাদীছগুলো মুনকার। সে যঈফ হাদীছ বর্ণনা করেছে।৫৩

عَنْ عَلِيٍّ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ عَلَى كُلِّ حَالٍ مَا لَمْ يَكُنْ جُنُبًا-

আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) অপবিত্র না থাকলে প্রত্যেক অবস্থাতেই তিনি আমাদের কুরআন পড়াতেন।৫৪

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ।৫৫

عَنْ عَلِيٍّ قَالَ كَانَ النَّبِىُِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  يَخْرُجُ مِنَ الْخَلاَءِ فَيُقْرِئُنَا الْقُرْآنَ وَيَأْكُلُ مَعَنَا اللَّحْمَ وَلَمْ يَكُنْ يَحْجُبُهُ أَوْ قَالَ يَحْجِزُهُ عَنْ الْقُرْآنِ شَيْءٌ لَيْسَ الْجَنَابَةَ-

আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) পায়খানা হ’তে বের হয়ে আমাদেরকে কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সাথে গোশত খেতেন। অপবিত্র ছাড়া কুরআন হ’তে তাকে কোন কিছু বাধা দিতে পারত না।৫৬

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ।৫৭

পবিত্রতা সম্পর্কে প্রসিদ্ধ কয়েকটি যঈফ জাল হাদীছ:

নিম্নে কয়েকটি বর্ণনা পেশ করা হ’ল যেগুলো মানুষের মুখে মুখে খুবই প্রচলিত। অথচ তা যঈফ ও জাল বর্ণনা। এ সমস্ত বর্ণনা প্রচার করা উচিত নয়।

عَنْ أَنَسٍ قَالَ كَانَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْخَلاَءَ وَضَعَ خَاتَمَهُ-

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাঃ) যখন তিনি টয়লেটে প্রবেশ করতেন তখন আংটি খুলে রাখতেন।৫৮

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি মুনকার ও যঈফ। ইমাম আবূদাঊদ বলেন, ‘এই হাদীছ মুনকার বা অগ্রহণযোগ্য’।৫৯

عَنْ عِيسَى بْنِ يَزْدَادَ الْيَمَانِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلْيَنْتُرْ ذَكَرَهُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ-

ঈসা ইবনু ইয়াযদাদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ পেশাব করে তখন সে যেন পুরুষাঙ্গ তিনবার ঝেড়ে নেয়।৬০

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে যাম‘আহ ইবনু ছালেহ আল-জুনদী ও ঈসা ইবনু ইয়াযদাদ নামক দুইজন দুর্বল রাবী আছে।৬১

عَنْ أَّبِي رَافِعٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهَِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ وُضُوْءَ اِلصَّلاةِ حَرَّكَ خَاتَمَهُ فِي إِصْبَعَهِ-

আবু রাফে‘ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাতের জন্য ওযূ করতেন, তখন আপন আঙ্গুলে পরিহিত আংটিকে নেড়ে দিতেন।৬২

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে মা‘মার ও তার পিতা মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুল্লাহ নামে দুইজন দুর্বল রাবী আছে।৬৩

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجِّهُوا هَذِهِ الْبُيُوتَ عَنِ الْمَسْجِدِ فَإِنِّي لَا أُحِلُّ الْمَسْجِدَ لِحَائِضٍ وَلَا جُنُبٍ-

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূল (ছাঃ) বললেন, এই সকল ঘরের দরজা মসজিদের দিক হ’তে (অন্য দিকে) ফিরিয়ে দাও। কারণ আমি মসজিদকে ঋতুবতী ও নাপাক ব্যক্তির জন্য জায়েয মনে করি না।৬৪

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে জাসরা বিনতে দিজাজা নামক একজন বর্ণনাকারী আছে সে অত্যধিক ত্রুটিপূর্ণ।৬৫

عَنْ عَلِيِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمََ لاَ تَدْخُلُ الْمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ صُوْرَةٌ وَلَا كَلْبٌ وَلَا جُنُبٌ-

আলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করে না সেই ঘরে, যাতে কোন ছবি রয়েছে অথবা কুকুর বা নাপাক ব্যক্তি রয়েছে।৬৬

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ।৬৭

عَنْ عَلِيٍّ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ إِنِّي اغْتَسَلْتُ مِنْ الْجَنَابَةِ وَصَلَّيْتُ الْفَجْرَ ثُمَّ أَصْبَحْتُ فَرَأَيْتُ قَدْرَ مَوْضِعِ الظُّفْرِ لَمْ يُصِبْهُ الْمَاءُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ كُنْتَ مَسَحْتَ عَلَيْهِ بِيَدِكَ أَجْزَأَكَ-

আলী (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমি নাপাকীর গোসল করেছি ও ফজরের ছালাত পড়েছি। অতঃপর দেখি এক নখ পরিমাণ জায়গায় পানি পৌঁছেনি, রাসূল (ছাঃ) বললেন, যদি তখন তুমি উহার উপর তোমার (ভিজা) হাত মুছে দিতে, তোমার পক্ষে যথেষ্ট হ’ত।৬৮

তাহক্বীক্ব: হাদীছটি যঈফ। এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু উবায়দুল্লাহ নামে একজন দুর্বল বর্ণনাকারী আছে।৬৯

 


রেফারেন্স:
১ম অংশ:
. ছহীহ মুসলিম হা/৫৫৬, ১/১১৮ পৃঃ; মিশকাত হা/২৮১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৬২, ২/৩৭।
. ছহীহ আবূদাঊদ হা/৬১, ১/৯ পৃঃ; তিরমিযী হা/৩, ১/৫ পৃঃ; মিশকাত হা/৩১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৯১, ২/৫১ পৃঃ।
. ছহীহ আবুদাঊদ হা/১০১, ১/১৪ পৃঃ; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৯৮ ও ৩৯৯, পৃঃ ৩২; মিশকাত হা/৪০৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৭০, ২/৮২, ‘ওযূর সুন্নাত সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/১৫৯, ১ম খন্ড, পৃঃ ৬১-৬২; হাকেম হা/৫১৫; ইবনু খুযায়মাহ হা/১৩৭; মিশকাত হা/৩৮৯।
. আলবানী, মিশকাত হা/৩৮৯-এর টীকা দ্রঃ।
. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা হা/১৮০৩; মুসনাদে বাযযার ১/২৪৪ পৃঃ।
. ঐ, মুন্তাখাব হাদীস, অনুবাদ: মাওলানা মুহাম্মাদ সা‘আদ ছাহেব (ঢাকা: দারুল কুতুব, দ্বিতীয় প্রকাশ: আগস্ট ২০১০), পৃঃ ২৯৯।
.لا نعلم رواه إلا معاوية قلت وهو الصدفي قال الحافظ ضعيف  সিলসিলা যঈফাহ হা/১৫০৩-এর ভাষ্য দ্রঃ; যঈফুল জামে‘ আছ-ছাগীর হা/৩১২৭।
. দারাকুৎনী হা/১৫২৫; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০।
১০. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৪৩।
১১. দারাকুৎনী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ।
১২. مُعَلَّى بْنُ مَيْمُوْنٍ ضَعِيْفٌ مَتْرُوْكٌ -দারাকুৎনী ১/৫৮; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০১৬, ৯/২১ পৃঃ।
১৩. তাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬।
১৪. لم يرو هذا الحديث عن بحر السقاء إلا الحارث بن مسلم  -আল-মু‘জামুল আওসাত্ব হা/৭৪৯৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫২৭৬।
১৫. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/২৮৯, পৃঃ ২৫; আহমাদ হা/২২৩২৩; তাবরানী, কবীর হা/৭৭৯৬; মিশকাত হা/৩৮৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫৬, ২/৭৫ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৮।
১৬. علي بن زيد أبو عبد الملك الألهاني الدمشقي قال فيه البخاري منكر الحديث، وقال ابن حاتم الرازي ضعيف الحديث، أحاديثه منكرة،  মুগাল্লাত্বঈ, শরহে সুনানে ইবনে মাজাহ (সঊদী আরব: মাকতাবাহ নিযার মুছত্বফা আল-বায, ১৪১৯ হিঃ), ১/৬২ পৃঃ।
১৭. যঈফ তিরমিযী হা/১০৮০, ১/২০৬; মিশকাত হা/৩৮২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৫২, ২/৭৪ পৃঃ, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৭।
১৮. মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ফী তাখরীজে আহাদীছি মানারিস সাবীল (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৫/১৯৮৫), হা/৭৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১১৭।
১৯. তাবারাণী, আল-আওসাত, হা/৬৮৯।
২০. আহমাদ ইবনু আলী ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তাহযীবুত তাহযীব (বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪১৫/১৯৯৪), ৯/৩৭১ পৃঃ।
২১. فيه محمد بن محصن العكاشي  وهو كذاب সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৩৬০ ও ৫৫৭০।
২২. তাবারাণী কবীর হা/১৮৩৫৯; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ৩০০।
২৩. ইমাম বুখারী, তারীখুল কাবীর ৩/২৪৭ পৃঃ।
২৪. বায়হাক্বী ১/৪০, ইবনু আদী ৫/৩৩৪।
২৫. اتفقوا على تضعيفه ، بل اتهمه الدارقطني بالوضع সিলসিলা যঈফাহ হা/২৪৭১; ইরওয়াউল গালীল হা/৬৯; যঈফুল জামে হা/৬৪১৫।
২৬. ছহীহ বুখারী হা/১৯৩৪, ১/২৫৯ পৃঃ, ‘ছিয়াম’ অধ্যায়-৩৬, অনুচ্ছেদ-২৭।
২৭. ছহীহ নাসাঈ হা/৫, ১/৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৮১; বঙ্গানুবাদ হা/৩৫১, ২/৭৪ পৃঃ; ইরওয়া হা/৬৬।
২৮. আবুবাকর আহমাদ ইবনু আমর আল-বাছরী আল-বাযযার, মুসনাদুল বাযযার হা/৬০৩, ১/১২১ পৃঃ; সনদ জাইয়িদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১২১৩, ৩/২৮৭ পৃঃ।
২৯. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৪৬৪।
৩০. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪১৯২।
৩১. সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৩১-এর ভাষ্য দ্রঃ।
৩২. (لا نعلم أحدا رواه عن الزهري الا محمد بن عبد العزيز ولا عنه الا ابنه) – তালখীছ, পৃঃ ৪১, দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ।
৩৩. ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী, তালখীছুল হাবীর ফী আহাদীছির রাফইল কাবীর হা/১৫১; দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল হা/৪২, ১/৮২ পৃঃ।
৩৪. আবূদাঊদ হা/৪৪, ১/৭ পৃঃ, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-১, অনুচ্ছেদ-২৩, সনদ ছহীহ; মুস্তাদরাক হাকেম হা/৬৭৩।
৩৫. ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৫৫, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/৩৬৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৪১, ‘পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ; আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৩১, ৩/১১৩ পৃঃ।
৩৬. ইরওয়াউল গালীল হা/৪২।
৩৭. ইরওয়াউল গালীল ১/৮২ পৃঃ।
৩৮. ছহীহ তিরমিযী হা/১৯, ১/১১ পৃঃ; ছহীহ নাসাঈ হা/৪৬, ১/৮ পৃঃ।
২য় অংশ:
. ছহীহ আবুদাঊদ হা/১৬৬ ও ৬৭, ১/২২ পৃঃ; মুসনাদে আহমাদ হা/১৭৫১৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৪১; মিশকাত হা/৩৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৩৮, ২/৬৮ পৃঃ; ছহীহ নাসাঈ হা/১৬৮; মিশকাত হা/৩৬১; বঙ্গনুবাদ মিশকাত হা/৩৩৪, ২/৬৭ পৃঃ।
. ছহীহ আবুদাঊদ হা/২০৭, ১/২৭ পৃঃ।
. ছহীহ বুখারী হা/১৫০-১৫২; ছহীহ মুসলিম হা/৬৪৩; মিশকাত হা/৩৪২; ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৮; ১/১২৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৯৪, ৪১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২য় খন্ড, পৃঃ ৭৭।
. আবূদাঊদ হা/৪৫; নাসাঈ হা/৯৪; মিশকাত হা/৩৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৩৩, ২/৬৬ পৃঃ, ‘পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার’ অনুচ্ছেদ।
. ليس المعنى أنه لا يجوز التوضىء بالماء الباقي من الاستنجاء أو بالإناء الذي استنجى به وإنما أتى بإناء آخر لأنه لم يبق من الأول شيء أو بقي قليل والإتيان بالإناء الآخر اتفاقي كان فيه الماء فأتى به  -আল্লামা মুহাম্মাদ শামসুল হক আযীমাবাদী, আওনুল মা‘বূদ শরহে সুনানে আবী দাঊদ (বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিইয়াহ, ১৪১৫ হিঃ), ১ম খন্ড, পৃঃ ৪৫।
. ছহীহ আবূদাঊদ হা/৩০, ১/৫; তিরমিযী হা/৭, ১/৭।
. ইবনু মাজাহ হা/৩০১, পৃঃ ২৬; মিশকাত হা/৩৭৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৪৫, ২/৭০ পৃঃ; বঙ্গানুবাদ সুনানু ইবনে মাজাহ (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, দ্বিতীয় সংস্করণ: ডিসেম্বর ২০০৫), হা/৩০১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৪৯-১৫০।
. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৩০১।
. ছহীহ বুখারী হা/১; ছহীহ মুসলিম হা/৫০৩৬।
১০. হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ), ‘পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা ও জরুরী মাসআলা মাসায়েল’, সংকলনে ও সম্পাদনায়- মাওলানা আজিজুল হক (ঢাকা: মীনা বুক হাউস, ৪৫, বাংলা বাজার, চতুর্থ মুদ্রণ-আগস্ট ২০০৯), পৃঃ ৪২; উল্লেখ্য যে, মাওলানার নামে বহু রকমের ছালাত শিক্ষা বইয়ের বাংলা অনুবাদ বাজারে চালু আছে। কোনটি যে আসল অনুবাদ তা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
১১. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪৩।
১২. ছহীহ তিরমিযী হা/২৫, ১/১৩ পৃঃ; ছহীহ ইবনে মাজাহ হা/৩৯৭, পৃঃ ৩২, সনদ হাসান।
১৩. তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩২; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ, পৃঃ ১৩, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, হা/৩৩।
১৪. فِيْهِ عُبَادَةُ بْنُ صُهَيْبٍ مُتَّهِمٌ وَقَالَ الْبُخَارِيُّ وَالنَّسَائِيُّ مَتْرُوْكٌ وفيه أحمد بن هاشم اتهمه الدارقطني وقد نص النووي بِبُطْلاَنِ هَذَا الْحَدِيْثِ وَأَنَّهُ لاَ أَصْلَ لَهُ  -তাযকিরাতুল মাওযূ‘আত, পৃঃ ৩২; আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ, পৃঃ ১৩, ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়, হা/৩৩।
১৫. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২।
১৬. ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৮; ১/১২৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৯৪, ৪১১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২য় খন্ড, পৃঃ ৭৭।
১৭. আব্দুর রহমান ইবনু আলী ইবনিল জাওযী, আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ ফিল আহাদীছিল ওয়াহিয়াহ (বৈরুত: দারুল কুতুব আল-ইলমিয়াহ, ১৪০৩), হা/৬০৪; দায়লামী ২/১৬০, হা/২৮১৪; ইমাম সুয়ূত্বী, জামিউল আহাদীছ হা/১১৭২৬।
১৮. জাওয়াযকানী, আল-আবাতিল ১/৩৫৩ পৃঃ।
১৯. আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ হা/৬০৪-এর আলোচনা দ্রঃ।
২০. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/১৯১, ১/৩১ পৃঃ; ছহীহ মুসলিম হা/৫৭৮, ১/১২৩ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৯৪ ও ৪১২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২য় খন্ড, পৃঃ ৭৭।
২১. আবূদাঊদ হা/১৩৯, ১/১৮-১৯ পৃঃ; বুলূগুল মারাম হা/৪৯, পৃঃ ১৮।
২২. যঈফ আবূদাঊদ হা/১৩৯-এর আলোচনা দ্রঃ।
২৩. শরহে বুলূগুল মারাম, পৃঃ ২৬।
২৪. তিরমিযী হা/৩৭, ১/১৬ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৩ ও ৪৪৪, পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪।
২৫. বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬।
২৬. বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/১৯১, ১/২২৯ পৃঃ; বলূগুল মারাম হা/৩৯, পৃঃ ২৩।
২৭. ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২, ১/১২৩ পৃঃ।
২৮. তুহফাতুল আহওয়াযী ১/১২২ পৃঃ, হা/২৮-এর আলোচনা; বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/১০৪৬ ও ৯৯৫; মাজমূউ ফাতাওয়া আলবানী, পৃঃ ৩৬।
২৯. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৩১৪; মুওয়াত্ত্ব হা/৯২।
৩০. وأما ما روي عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه قال الأذنان من الرأس فروى ذلك بأسانيد ضعاف -ঐ, বায়হাক্বী হা/৩১৭-এর ভাষ্য দ্রঃ।
৩১. ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার ১/২০০ পৃঃ; বুলূগুল মারাম, পৃঃ ২৩-এর উক্ত হাদীছের ভাষ্য দ্রঃ।
৩২. সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬-এর ভাষ্য দ্রঃ।
৩৩. তিরমিযী হা/৩৭, ১/১৬ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৩ ও ৪৪৪, পৃঃ ৩৫, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৬; ইরওয়াউল গালীল হা/৮৪।
৩৪. ছহীহ আবূদাঊদ হা/১৩৭; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/২৫৬; নাসাঈ, আস-সুনানুল কুবরা হা/১৬১, সনদ ছহীহ।
৩৫. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২।
৩৬. ছহীহ মুসলিম হা/৫৮২, ১/১২৩ পৃঃ, ‘নবী (ছাঃ)-এর ওযূ’ অনুচ্ছেদ।
৩৭. দ্রঃ ছহীহ মুসলিম হা/৬৪৭, ১/১৩৩ পৃঃ ও হা/৬৫৬, ১/১৩৪ পৃঃ।
৩৮. আবুল হাসান বিন আহমাদ বিন জা‘ফর আল-বাগদাদী আল-কুদূরী, মুখতাছারুল কুদূরী (ঢাকা: ইসলামিয়া কুতুবখানা, বাংলাবাজার ১৯৮২/১৪০৩), পৃঃ ৩; শায়খুল ইসলাম বুরহানুদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনু আবী বকর আল-মারগীনানী (৫১১-৫৯৩ হিঃ), আল-হেদায়াহ (নাদিয়াতুল কুরআন কুতুবখানা (১৪০১), ১/১৭ পৃঃ; বঙ্গানুবাদ (ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় সংস্করণ মার্চ ২০০৬), ১/৬ পৃঃ।
৩৯. ছহীহ বুখারী হা/১৮৫, ১/৩১ পৃঃ; বুখারী (ইফাবা) হা/১৮৫;  মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬২, ২/৭৮ পৃঃ; ছহীহ তিরমিযী হা/৩৪।
৪০. ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/১৮৫ পৃঃ, ‘মাসাহ করার বর্ণনা’।
৪১. ছহীহ মুসলিম হা/৬৫৬, ৫৭, ৫৯, ১/১৩৪ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৯৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৬৭, ২/৮১ পৃঃ; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/১৮৫ পৃঃ, ‘মাসাহ করার বর্ণনা’।
৪২. যঈফ আবূদাঊদ হা/১৪৭; যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৫৬৪।

৪৩. পূর্ণাঙ্গ নামায শিক্ষা, পৃঃ ৪২ ও ৪৪।

৪৪. ঐ, (ঢাকা: মুমতায লাইব্রেরী, ১১, বাংলাবাজার, দ্বিতীয় সংস্করণ, জানুয়ারী ২০১০), পৃঃ ১১৪-১১৫।
৪৫. তাবারাণী কবীর হা/১৭৫৮৪, ২২/৫০।
৪৬. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯ ও ৭৪৪।
৪৭. আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহযযাব ১/৪৬৫ পৃঃ।
৪৮. তাবারাণী কবীর ১৯/১৮১।
৪৯. লিসানুল মীযান ৬/৪২ পৃঃ; তানক্বীহ, পৃঃ ৮৩।
৫০. আবূদাঊদ হা/১৩২, ১/১৭-১৮ পৃঃ।
৫১. وَمَسَحَ رَأْسَهُ مِنْ مُقَدَّمِهِ إِلَى مُؤَخَّرِهِ حَتَّى أَخْرَجَ يَدَيْهِ مِنْ تَحْتِ أُذُنَيْهِ. قَالَ مُسَدَّدٌ فَحَدَّثْتُ بِهِ يَحْيَى فَأَنْكَرَهُ. قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَسَمِعْتُ أَحْمَدَ يَقُولُ ابْنُ عُيَيْنَةَ زَعَمُوا كَانَ يُنْكِرُهُ وَيَقُولُ أَيْشِ هَذَا طَلْحَةُ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ؟ -যঈফ আবুদাঊদ হা/১৩২-এর আলোচনা দ্রঃ।
৫২. সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯, ১/১৬৮ পৃঃ।
৫৩. হাফেয জালালুদ্দীন আস-সুয়ূত্বী, আল-লাআলিল মাছনূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ, পৃঃ ২০৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৮ পৃঃ।
৫৪. আবু নু‘আইম, তারীখুল আছবাহান ২/১১৫ পৃঃ।
৫৫. সিলসিলা যঈফাহ হা/৭৪৪, ২/১৬৭ পৃঃ।
৫৬. আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতুল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ৭৩, দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৯ পৃঃ।
৫৭. সিলসিলা যঈফাহ ১/১৬৯ পৃঃ।
৫৮. বায়হাক্বী, সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০৯৯; ইবনু মাজাহ হা/৪৬৮; আওনুল মা‘বুদ ১/৪১৭-১৮ পৃঃ।
৫৯. ইবনু শাহীন, নাসিখুল হাদীছ ওয়া মানসূখাহু, পৃঃ ১৪৫, দ্রঃ যাকারিয়া বিন গুলামা ক্বাদের পাকিস্তানী, তানক্বীহুল কালাম ফিল আহাদীছিয যঈফাহ ফী মাসাইলিল আহকাম (বৈরুত: দারু ইবনে হাযম, ১৯৯৯/১৪২০), পৃঃ ৯৬।
৬০. আওনুল মা‘বূদ ১/২৮৭ পৃঃ; নায়লুল আওত্বার ১/২২০ পৃঃ; নাসিখুল হাদীছ ওয়া মানসূখাহু, পৃঃ ১৪৫।
৬১. لو صحت هذه الجملة لكانت نصا على استحباب إطالة الغرة و التحجيل لا على إطالة العضد -আলবানী, সিলসিলা  ছহীহাহ হা/২৫২ নং-এর ভাষ্য দ্রঃ, উল্লেখ্য, উক্ত অংশটুকু সংযোজনের ক্ষেত্রে ত্রুটি সাব্যস্ত হয়েছে বলেও মুহাদ্দিছগণ উল্লেখ করেছেন। -দ্রষ্টব্য আহমাদ হা/৮৩৯৪; ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাতহুল বারী হা/১৩৬-এর আলোচনা, ‘ওযূর ফযীলত’ অনুচ্ছেদ; ইরওয়াউল গালীল ১/১৩৩ পৃঃ।
৬২. ছহীহ আবূদাঊদ হা/১৫৯; ছহীহ তিরমিযী হা/৯৯; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৫২৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৮৮, ২/১৩২ পৃঃ।
৬৩. আলোচনা দ্রঃ ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূউ ফাতাওয়া ১/২৬২ পৃঃ; আলবানী, আছ-ছামারুল মাস্তাত্বাব, পৃঃ ১৪-১৫।
৩য় অংশ:
. ছহীহ বুখারী হা/১৮২; মুসলিম হা/৬৪৯; ছহীহ আবূদাঊদ হা/১৬১ ও ১৬২, ১/২২ পৃঃ; তিরমিযী হা/৯৮, ১/২৮-২৯ পৃঃ।
. আবূদাঊদ হা/১৬৫, ১/২২ পৃঃ; তিরমিযী হা/৯৭, ১/২৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫৫০, পৃঃ ৪২; মিশকাত হা/৫২১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৮৬, ২/১৩১ পৃঃ।
. هذا حديث معلول وسألت أبا زرعة ومحمدا يعني البخاري عن هذا الحديث فقالا ليس بصحيح وكذا ضعفه أبوداود- -যঈফ তিরমিযী হা/৯৭, ১/২৮ পৃঃ)।
. যঈফ আবূদাঊদ হা/১৬৫, ১/২২ পৃঃ।
. আহমাদ হা/১২১; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৩।
. وهذه الزياوة منكرة لأنه تفرد بها ابن عم أبي عقيل هذا وهو مجهول. -আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/৯৬ এর আলোচনা, ১/১৩৫ পৃঃ।
. পূর্ণাঙ্গ নামায, পৃঃ ৪৫।
. ছহীহ মুসলিম হা/৪৭৬, ১/১২২ পৃঃ; মিশকাত ৩৯ পৃঃ, হা/২৮৯ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়; ছহীহ তিরমিযী হা/৫৫, ১/১৮ পৃঃ সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/২৮৯; ইরওয়া হা/৯৬, সনদ ছহীহ।
. দারাকুৎনী ১/১৫৭; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০; মিশকাত হা/৩৩৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩০৭, ২/৫৭।
১০. সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০।
১১. দারাকুৎনী ১/১৫৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৩৩৩ – عمر بن عبد العزيز لم يسمع من تميم الداري ولا رآه ويزيد بن خالد ويزيد بن محمد مجهولان
১২. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১৪৬৯, সনদ ছহীহ; আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৭০-এর আলোচনা দ্রঃ, ১/৬৮৩ পৃঃ- ولهذا كان مذهب أهل الحجاز أن ليس في الدم وضوء ، وهو مذهب الفقهاء السبعة من أهل المدينة وسلفهم في ذلك بعض الصحابة
১৩. وَلاَ يَصِحُّ حَدِيْثٌ فِىْ وُجُوْبِ الْوَضُوْءِ مِنَ الدَّمِ كَانَ قَلِيْلاً أَوْ كَثِيْرًا -আলবানী, মিশকাত হা/৩৩৩-এর টীকা দ্রঃ ১/১০৮ পৃঃ।

১৪. ইবনু মাজাহ হা/১২২১, ‘ছালাত কায়েম ও তার সুন্নাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৩৭।

১৫. في إسناده إسماعيل بن عياش . وقد روى عن الحجازيين وروايته عنهم ضعيفة  -যঈফ ইবনে মাজাহ হা/১২২১; যঈফ আবূদাঊদ (আল-উম্ম), পৃঃ ৬৮; যঈফুল জামে‘ হা/৫৪২৬।
১৬. দারাকুৎনী ১/১৫৫ পৃঃ।
১৭. দারাকুৎনী ১/১৫৫ পৃঃ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪০৭৫, ৯/৭২ পৃঃ; যঈফুল জামে‘ হা/৪১৩৯।
১৮. والدم والقيح إذا خرجا من البدن فتجاوزا إلى موضع يلحقه حكم التطهير والقئ ملء الفم. -হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ২৩; বঙ্গানুবাদ ১/৮-৯ পৃঃ; কুদূরী, পৃঃ ৫।
১৯. আবূদাঊদ হা/৬২, ১/৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫১২, পৃঃ ৩৯; তিরমিযী হা/৫৯, ১/১৯ পৃঃ; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৩, ২/৪৩ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৭।
২০. যঈফ আবূদাঊদ হা/১০।
২১. আবূদাঊদ হা/৬২; ইবনু মাজাহ হা/৫১২; তিরমিযী হা/৫৯; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৩, ১/৯৬ পৃঃ।
২২. মুসনাদে আহমাদ হা/৫৭৩৫; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯৪।
২৩. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হা/১৩৬; তাহক্বীক্ব মুসনাদ হা/৫৭৩৫।
২৪. ঐ, ১/১৯ পৃঃ)। এর সনদে যায়েদ আল-আম্মী নামে একজন দুর্বল রাবী আছে। =(যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৪২০।
২৫. মুসনাদুল বাযযার হা/৪২২, ১/৯৩ পৃঃ; মুন্তাখাব হাদীস, পৃঃ ২৯২।
২৬. সিলসিলা যঈফাহ হা/৫০৩৬, ১১/৬২ পৃঃ।
২৭. বায়হাক্বী হা/১০৫৪, ১/২০৭; হাকেম হা/৬৩৪ ও ৬৩৬; আবূদাঊদ হা/৩৩০, ১/৪৭ পৃঃ; দারাকুৎনী ১/১৭৭; বলূগুল মারাম হা/১২৮; বিস্তারিত দ্রঃ তানক্বীহ, পৃঃ ১৯৪-১৯৭।
২৮. وهذا إسناد ضعيف جداً عبد الله بن عمر هو العمري المكبر ضعيف سيىء الحفظ ووقع في المستدرك عبيد الله بن عمرمصغراً ولعله خطأ مطبعي .وعلي بن ظبيان ضعيف جداً . قال ابن معين كذاب خبيث وقال البخاري منكر الحديث وقال النسائي متروك الحديث. -সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৪২৭; যঈফুল জামে‘ হা/২৫১৯; যঈফ আবূদাঊদ হা/৩৩০।
২৯. হেদায়া ১ম খন্ড, পৃঃ ৫০, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ; কুদূরী পৃঃ ১২।
৩০. ছহীহ বুখারী হা/৩৩৮, ১/৪৮ পৃঃ; মুসলিম হা/৮৪৬, ১/১৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৫২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৯৩, ২/১৩৫ পৃঃ।
৩১. আবূদাঊদ হা/৩৩০, ১/৪৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৪৬৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৭, ২/১০৯ পৃঃ, ‘অপবিত্র ব্যক্তির সাথে মিলামেশা’ অনুচ্ছেদ।
৩২. قَالَ أَبُو دَاوُد سَمِعْت أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ يَقُولُ رَوَى مُحَمَّدُ بْنُ ثَابِتٍ حَدِيثًا مُنْكَرًا فِي التَّيَمُّمِ  -যঈফ আবূদাঊদ হা/৩৩০।
৩৩ . لا يصح؛ لأن محمد بن ثابت العبدي ضعيف جداً، لا يحتج بحديثه  যঈফ আবূদাঊদ (আল-উম্ম) হা/৫৮, পৃঃ ১৩৬।
৩৪. لَمْ يُتَابَعْ مُحَمَّدُ بْنُ ثَابِتٍ فِي هَذِهِ الْقِصَّةِ عَلَى ضَرْبَتَيْنِ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَوَوْهُ فِعْلَ ابْنِ عُمَرَ -যঈফ আবূদাঊদ হা/৩৩০।
৩৫. মুত্তাফাক্ব আলাইহ; ছহীহ বুখারী হা/১; মিশকাত হা/১; ছহীহ তিরমিযী হা/২৫, ১/১৩ পৃঃ; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭, পৃঃ ৩২ সনদ হাসান; মিশকাত হা/৪০২।
৩৬. ছহীহ বুখারী হা/৩৩৮, ১/৪৮ পৃঃ; মুসলিম হা/৮৪৬, ১/১৬১ পৃঃ; মিশকাত হা/৫২৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৯৩, ২/১৩৫ পৃঃ।
৩৭. আবূদাঊদ হা/৩১৮, ১/৪৭ পৃঃ; মিশকাত হা/৫৩৬।
৩৮. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৫৩৬-এর টীকা দ্রঃ ১/১৬৭ পৃঃ।
৩৯. ছহীহ আবূদাঊদ হা/৩৪৩, ২/১২৬ পৃঃ।
৪০. নাসাঈ হা/৯৪৭, ১/১১০ পৃঃ; আলবানী, মিশকাত হা/২৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/২৭৫, ২/৪৪।
৪১. তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/২৯৫-এর টীকা দ্রঃ; নাসাঈ হা/৯৪৭; যঈফুল জামে‘ হা/৫০৩৪।
৪২. আবূদাঊদ হা/২৪৯, ১/৩৩ পৃঃ; আহমাদ হা/১১২১; মিশকাত হা/৪৪৪; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪০৮।
৪৩. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৩০; ইরওয়াউল গালীল হা/১৩৩; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৪, ১/১৩৮ পৃঃ।
৪৪. সিলসিলা যঈফাহ হা/৯৩০, ২/২৩২ পৃঃ।
৪৫. আবূদাঊদ হা/২৪৮, ১/৩৩ পৃঃ; তিরমিযী হা/১০৬, ১/২৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৫৯৭, পৃঃ ৪৪; আলবানী, মিশকাত হা/৪৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪০৭, ২/৯৭ পৃঃ।
৪৬. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১।
৪৭. الحارث بن وجيه حديثه منكر وهو ضعيف – যঈফ আবূদাঊদ হা/২৮৪; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৩, ১/১৩৮ পৃঃ।
৪৮. ইবনু মাজাহ হা/৫৯৮, পৃঃ ৪৪, ‘পবিত্রতা অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১০৬।
৪৯. যঈফ ইবনে মাজাহ হা/৫৯৮।
৫০. সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৮০১, ৮/২৭২।
৫১. ছহীহ বুখারী হা/৩০৫ ও ৩০৬, ‘ঋতু’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭।
৫২. তিরমিযী হা/১৩১; মিশকাত হা/৪৬১; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩২, ২/১০৮।
৫৩. سَمِعْت مُحَمَّدَ بْنَ إِسْمَعِيلَ يَقُولُ إِنَّ إِسْمَعِيلَ بْنَ عَيَّاشٍ يَرْوِي عَنْ أَهْلِ الْحِجَازِ وَأَهْلِ الْعِرَاقِ أَحَادِيثَ مَنَاكِيرَ كَأَنَّهُ ضَعَّفَ -যঈফ তিরমিযী হা/১৩১।
৫৪. আহমাদ, আবূদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু হিববান, বলূগুল মারাম হা/১০০।
৫৫. যঈফ তিরমিযী হা/১৪৬।
৫৬. আবূদাঊদ হা/২২৯; নাসাঈ হা/২৬৫; মিশকাত হা/৪৬০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩১, ২/১০৭।
৫৭. ইরওয়াউল গালীল হা/৪৮৫।
৫৮. আবূদাঊদ হা/১৯; তিরমিযী হা/১৭৪৬; নাসাঈ হা/৫২১৩; মিশকাত হা/৩৪৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩১৬, ২/৬২।
৫৯. যঈফ আবূদাঊদ হা/১৯ هَذَا حَدِيثٌ مُنْكَرٌ-
৬০. ইবনু মাজাহ হা/৩২৬; বলূগুল মারাম হা/৯০।
৬১. তাহক্বীক্ব মুসনাদ হা/১৯০৭৬; যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৩২৬; সিলসিলা যঈফাহ হা/১৬২১।
৬২. দারাকুৎনী ১/৯৪; ইবনু মাজাহ হা/৪৪৯; মিশকাত হা/৪২৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৩৯৫।
৬৩. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৪৪৯; যঈফুল জামে‘ হা/৪৩৬১।
৬৪. আবূদাঊদ হা/২৩২; মিশকাত হা/৪৬২; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৩, ২/১০৮ পৃঃ।
৬৫. إسناده ضعيف من أجل جسرة بنت دجاجة قال البخاري عندها عجائب وقد ضعف الحديث جماعة كما قال الخطابي ومن هؤلاء: البيهقي وابن حزم، فقال هذا باطل وأبو محمد عبد الحق فقال لا يثبت. -যঈফ আবূদাঊদ হা/২৩২; ইরওয়াউল গালীল হা/১২৪, ১৯৩, ৯৬৮।
৬৬. আবুদাউদ হা/২২৭, ৪১৫২; নাসাঈ হা/২৬১; মিশকাত হা/৪৬৩; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৩৪, ২/১০৮।
৬৭. যঈফ আবুদাউদ হা/২২৭, ৪১৫২; যঈফ নাসাঈ হা/২৬১; মিশকাত হা/৪৬৩।
৬৮. ইবনু মাজাহ হা/৬৬৪, পৃঃ ৪৮; মিশকাত হা/৪৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪১৩, ২/৯৮।
৬৯. যঈফ ইবনু মাজাহ হা/৬৬৪; তাহক্বীক্ব মিশকাত হা/৪৪৯-এর টীকা দ্রঃ।

মন্তব্য করুন

Back to top button