মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমাতে অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন এনজিও প্রতিনিধিদের
আগামী বাজেটে মাদ্রাসা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমানোসহ এই শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমন্বিত একটি কর্মসূচি হাতে নিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতকে অনুরোধ করেছেন দেশের এনজিও প্রতিনিধিরা। দেশে বেড়ে চলা ধর্মীয় উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমে এই মাদ্রাসাগুলোর সংশিষ্টতা বার বার সামনে আসায় তা ঠেকাতে এই আবেদন করেন তারা। মঙ্গলবার আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় প্রতিনিধিরা এ অনুরোধ জানান।
সভায় নগর গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “মাদ্রাসা শিক্ষায় মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। এই শিক্ষার নামে আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের জঙ্গি বানাচ্ছি কী না- তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।” বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা যেনো কোনো অবস্থাতেই জঙ্গি-মৌলবাদের উত্থানে ব্যয় না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান।
পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে সভায় উপস্থিত একজন এনজিও কর্মকর্তা বলেন, “দেশে যে জঙ্গি-মৌলবাদের উত্থান ঘটছে তার প্রধান কারণ মাদ্রাসা শিক্ষা। দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়েদের দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে জঙ্গি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।” এটার যাতে কোনো ভাবেই বিস্তার না ঘটে সেজন্য আগামী বাজেটেই ‘সমন্বিত’ একটি কর্মসূচি নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা নিচ্ছে জঙ্গি-মৌলবাদিরা। তারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনসহ নানা ধরনের জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে।” “এটা বন্ধ করতেই শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে একটি সমন্বয় কর্মসূচি নিতে হবে। “শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সব সময় নজরদারি করতে হবে যাতে তাদের কোনো টাকা জঙ্গি তৎপরতায় ব্যয় না হয়। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে সারা দেশে জঙ্গি ও মৌলবাদ বিরোধী জনসচেতনা কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। আর তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে শক্তভাবে দমন করতে হবে যাতে তারা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিতে না পারে।”
এনজিও প্রতিনিধিদের এ অনুরোধের জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “কওমি মাদ্রাসা ও তার শিক্ষা ব্যবস্থা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক (কওমি মাদ্রাসা অ্যান্ড ইটস সিসটেম আর টেরিবলি ডেঞ্জারাস)। “তারা আমাদের (সরকারের) কাছ থেকে কোনো অর্থ নেয় না। যার ফলে তারা আমাদের নিয়ন্ত্রণেও নাই। এই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় তা নিয়ে ভাবছে সরকার। “দেশে ২৬ থেকে ২৮ হাজার কওমি মাদ্রাসা আছে। এগুলোতে সরকার কোন অর্থ দেয় না। তারা নিজেরাই নানান জায়গা থেকে অর্থ যোগাড় করে পরিচালিত হয়। এগুলো থেকেই এখন জঙ্গি- মৌলবাদের উত্থান ঘটছে। “আমাদের সকলকেই এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।” আলিয়া মাদ্রাসায় প্রচলিত অন্যান্য শিক্ষার মতোই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হয় জানিয়ে মুহিত বলেন, “মাদ্রাসা শিক্ষায় আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য আনা হয়েছে। একটি সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় যা থাকে, এখন আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাতেও তাই আছে। সেখানে শুধু অতিরিক্ত হিসাবে আরবি, কোরআন, হাদিস ইত্যাদি পড়ানো হয়। তাই আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষা স্বাভাবিকভাবেই হচ্ছে।”
রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান, নিজেরা করির সমন্বয়ক নারী নেত্রী খুশি কবির, অ্যারোমা দত্ত, সালমা খান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়্যারম্যান আবু নাসের খান, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান নবিজুর রহমান, পরিকল্পনা সচিব শফিকুল আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।