রক্তে ভেসে যাচ্ছে গাজা, নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে
ইসরাইলের নৃশংস হামলায় রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। সারা বিশ্ব যখন বিশ্বকাপ উত্তেজনায় কাঁপছে তখন এদিকে যেন কারো নজর নেই। এই সুযোগে ড্রোন, হেলিকপ্টার, এফ-১৬ জঙ্গি বিমান দিয়ে একের পর এক হামলায় ছোট্ট শিশুর রক্তে ভিসে যাচ্ছে গাজার মাটি। গতকাল সকালে এমন হামলায় একই পরিবারের ৮ সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে ৫টি শিশু। সেই শিশুর লাশ বুকে জড়িয়ে ধরে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। গত ১২ই জুন ইসরাইলের তিন টিনেজকে অপহরণের ঘটনায় নতুন করে এ যুদ্ধাপবস্থা দেখা দিয়েছে। ইসরাইল তার পর থেকেই একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে আকাশপথে, স্থলপথে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সাজানো বাড়ি, সংসার। চোখের নিমেষে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সব। ইসলামি যোদ্ধা হাফেজ হামাদ তার পরিবারের চার সদস্য সহ নিহত হয়েছেন। তিনি কিছু সময় আগে গাজায় যেখানে তার বাড়ির সামনে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন সেই এলাকা এখন ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শুধু ধ্বংসস্তূপ। এ দৃশ্য দেখে অঝোরে কাঁদছে জীবিতরা। গতকাল সকালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একই পরিবারের ৮ জন নিহত হয়েছেন। তাদের বাড়ি ধুলোর সঙ্গে মিশে গেছে। একই রাতে গাজায় সমুদ্র সৈকতে একটি বারে সমবেত হয়েছিলেন বেশ কিছু ফিলিস্তিনি যুবক। তারা সেখানে সমবেত হয়েছিলেন আর্জেন্টিনা ও নেদারল্যান্ডসের মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ সেমি ফাইনাল ম্যাচ দেখতে। কিন্তু সেখানেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনি সূত্রের দাবি এতে নিহত হয়েছে ৯ জন। এ নিয়ে গত তিন দিনে গাজার কমপক্ষে ৭৮০ টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তারা হামলা চালিয়েছে ইসলামিক জিহাদি দলের নেতাদের বাড়িতে। কিন্তু তাতে ইসলামিক জঙ্গিরাই শুধু নন, নিহত হয়েছে অনেক নিরপরাধ শিশু, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা। এমন ঘটনার জবাব দিতে হামাস ইসরাইলে রকেট হামলা চালিয়েছে।
নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ-আল-কুদরার উদ্ধৃতি দিয়ে এপি খবর প্রকাশ করেছে, ৪ দিন ধরে চলা এই ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১০০ জন নিহত হয়েছে।
কুদরা আরও বলেছেন, বুরেজি এলাকায় একটি গাড়িকে উদ্দেশ্য করে ইজরায়েলি হামলায় ২ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরেকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। ইসরায়েলি নৃশংসতার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়া আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, এর আগে দুইটি পৃথক হামলায় আরও ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। দক্ষিণের শহর রাফাহতে এক হামাস নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলার সময় আবদেল রাজ্জাক আল গান্নাম নামের সেই নেতা বাড়িতে না থাকলেও, এক নারী ও ৭ বছর বয়সী এক শিশু সহ ৫ জন হামলায় নিহত হয়। সে হামলায় ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র। এই হামলার ঘটনা তখনই ঘটলো, যখন এক ঘন্টা আগেই আরেক হামলায় ৩৩ বছর বয়সী আনাস আবু আল কাস নামের একজন নিহত হয়। এদিকে ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেছে, হামাস ৪২৬টি মর্টার ও রকেট ইসরায়েলে নিক্ষেপ করেছে। এছাড়াও ১২১টি রকেট যুক্তরাষ্ট্রের আংশিক সহায়তায় তৈরি ইসরায়েলের মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম কর্তৃক ধ্বংস করা গেছে। তবে এসব হামলায় কোন ইসরায়েলি নিহত হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার এক ইজরায়েলি সৈনিক এক মর্টার হামলায় আহত হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার ইসরায়েলের দক্ষিণের শহর আশদুদের এক পেট্রল স্টেশনে মর্টার হামলায় এক ব্যাক্তি গুরুতর আহত হয়েছে।
মানবজমিন