এসো কাজ করি : নিজে নিজে
অনেক অভিভাবক আছেন যারা মনে করেন যে, বাচ্চাকে ভালবাসার মানেই হচ্ছে তার সব কাজ করে দেয়া। ছোট থেকে বড় — বাচ্চাদের সব ধরনের দৈনন্দিন কাজ তারা নিজেরা করে দেয় অথবা কোনো সাহায্যকারী নিয়োগ করে, বাচ্চার কাজগুলি করে দেবার জন্য। বাচ্চার প্রতি তাদের অতি 'ভালবাসা' এবং 'মায়া' এর কারণে তারা ৬ বছরের বাচ্চাকেও নিজের হাতে গোসল করিয়ে দেয়, মুখে তুলে খাইয়ে দেয়, চুল আচরিয়ে দেয়, জুতার ফিতা পর্যন্ত বেধে দেয়! এইসব অভিভাবক (বিশেষ করে মায়েরা) মনে করে তাদের বাচ্চারা এতই "ছোট" যে তারা এইসব কাজ নিজেরা করতে অসমর্থ! যদিও কালে-ভদ্রে শিশুটি নিজে থেকে কাজগুলি করতে যায়, তাহলে অনবরত শিশুটির দোষ ধরে তাকে অতিষ্ট করে তুলে এবং এমন একটা ভাব ধরে যেন 'আমাকে (অভিভাবক) ছাড়া আমার বাচ্চা এক মুহূর্ত সারভাইভ করতে পারবে না'! প্রকৃতপক্ষে, এই সব অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে ফেলছে, শিশুটির আত্মবিশ্বাস তৈরী হবার আগেই ধবংস করে ফেলছে এবং এই কঠিন পৃথিবীতে সত্যিকার অর্থে বেচে থাকার অনুপযোগী করে তৈরী করছে।
১০ বছরের একটি শিশু যদি তার নিজের বিছানা বা ঘর গুছাতে না পারে, নিজের ব্যাগ পিঠে করে স্কুলে যেতে না পারে অথবা আশা করে তার অভিভাবক তার জন্য এই কাজ করে দেবে তাহলে সেটি খুবই হতাশাব্যঞ্জক অবস্থা! শিশুটি বস্তুত: অগোছালো, অলস এবং পরনির্ভর হয়ে বড় হচ্ছে বলতে হবে। সবচেয়ে আশংকাজনক হলো, এই প্রবনতাটা মেয়ে শিশুদের থেকে ছেলে শিশুদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায় ( কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া)। অনেক সময় দেখা যায়, ছোটবোন বড়ভাইয়ের সব কাজ করে দিচ্ছে অথবা তাদের মা (দাদী/নানী) বাধ্য করছে ছোট বোনটাকে বড়ভাইয়ের (অনেক সময় ৫-৭ বছরের বড়) কাজগুলি করে দেবার জন্য! অনেক সময় দেখা যায়, একটি শিশু স্কুলে যাচ্ছে তার পাশে তার অর্ধেক বয়সী (বুয়ার ছেলে/মেয়ে) শিশু পাহাড় সমান স্কুল ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে তার পিছনে পিছনে হাটছে! লজ্জা, কি লজ্জা!!
মুসলিম অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে, তারা যে সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করছে তারা একসময় এই উম্মাহর প্রতিনিধিত্ব করবে। এই সন্তান তার সম্পত্তি না,অভিভাবক হলো শুধুমাত্র একজন দেখা-শোনাকারী (custodian). প্রবল মনের জোরে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থেকে উত্তরণ সম্ভব কিন্তু মানসিক পঙ্গুতা থেকে উত্তরণ? বড়ই কঠিন ব্যাপার! যে শিশুটি মানসিক ও সামাজিকভাবে অথর্ব হিসাবে বড় হবে সে কিভাবে এই উম্মাহের সঠিক নেতৃত্ব দিবে?! একটি “mummy’s boys” অথবা "spoilt brats " দিয়ে কি মুসলিম উম্মাহের সঠিক নেতৃত্ব দেয়া যাবে?
একজন বুদ্ধিমান অভিভাবক জানেন যে, একটি শিশুকে ভালোবেসে সাহায্য করার অর্থ হচ্ছে তাকে কোনো কাজ কিভাবে করতে হয় সেটা শিখিয়ে দেয়া, তার সব কাজ করে দেয়া নয়! শিশুটির ব্যক্তিগত এবং পরবর্তিতে গৃহস্থালি কাজকর্মে পারদর্শী করা (ছেলে ও মেয়ে উভয়কে), শিশুটির মানসিক ও সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব গেলে। ছোটবেলায় যে শিশু এই সব কাজ করতে শিখবে না, বড় হয়ে তাদের এইসব করতে ইচ্ছাই করবে না। পরবর্তিতে, এরা সবসময় 'সাহায্যকারী' খুজবে তাদের এইসব কাজ করে দেবার জন্য। সচেতন অভিভাবকদের উচিত তাদের বাচ্চাদেরকে ব্যক্তিগত এবং গৃহস্থালি কাজকর্মে পারদর্শী হওয়ার জন্য উত্সাহিত করা এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতে শেখানো। মহান আল্লাহতালা শিশুটিকে যে শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা দিয়েছেন তার যোগ্য ব্যবহার করতে শেখান। শিশুকে পরনির্ভর নয় বরং স্বনির্ভর হতে সাহায্য করুন।
– Sefat Mehjabin