গির্জার বিলুপ্তি ঘটছে, দ্রুতহারে কমছে খৃষ্টানদের সংখ্যা
যুক্তরাজ্যের একজন খ্যাতনামা খৃষ্টান ধর্মগুরু হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ‘এক প্রজন্মের মধ্যেই’ বিলুপ্ত হয়ে যাবে ইংল্যান্ডের গির্জা। খবর ডেইলি মেইল’র।সাবেক আর্চবিশপ অব ক্যান্টারবুরি লর্ড ক্যারির এই মতকেই জোরালো সমর্থন করেছেন আরেক খ্যাতনামা খৃষ্টান ধর্মগুরু ইয়র্কের আর্চবিশপ জন সেন্টামু। নতুন ধর্মগুরু এবং পূজারী আকর্ষণে ব্যর্থতাই গির্জার বিলুপ্তি ঘটাবে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।ইংল্যান্ডে খৃষ্টান ধর্মের প্রসারে সবচেয়ে স্বনামখ্যাত এবং সক্রিয় লর্ড ক্যারি ২০০২ সালে লাম্বেথ প্যালেস থেকে পদত্যাগ করেন।আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘ আমাদের লজ্জা হওয়া উচিত। আর এক প্রজন্মের পরই আমরা (খৃষ্টান ধর্ম বা গির্জা) বিলুপ্ত হয়ে যাব। নতুন লোকজনের পেছনে বিনিয়োগ করা না হলে ভবিষ্যতে কেউই (খৃষ্টান) থাকবে না।’ইংল্যান্ডে খৃষ্টান ধর্মের এই করুণ অবস্থা নিয়ে উচ্চ পর্যায় থেকে এভাবে একের পর এক সতর্কতা আসছেই। তারা বলছেন, এখন বহুমুখী আক্রমণের শিকার খৃষ্টান ধর্ম।সাম্প্রতিক গবেষণা দেখা গেছে, ইংল্যান্ডে খৃষ্টান ধর্মানুসারির সংখ্যা ১০ ভাগ কমে যাচ্ছে।এ অবস্থার মধ্যেই গত মাসে দেশটির সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ একজন বিচারক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আদালত এখন আর নৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস মেনে চলার জন্য কাউকে বাধ্য করবে না।অন্যদিকে সমকামী বিয়ের সমর্থনকারী ইংল্যান্ডের মন্ত্রীরা গির্জা কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন, তারা নারীদেরকে বিশপ পদে নিয়োগ দিতে রাজি না হলে সরকার তাদের বাধ্য করবে।এরকম পরিস্থিতি উদ্বিগ্ন লর্ড ক্যারি হলি ট্রিনিটি গির্জায় এক বক্তৃতায় বলেছেন, গির্জায় যাওয়া এখন লোকজনের নিয়মমাফিক কাজের মধ্যে নেই।তিনি বলেন, ‘চারিদিকে এতো সহিংসতা, পরিবারে ভাঙন, চাকুরির নিরাপত্তার অভাব, তরুণদের সামনে একরাশ অন্ধকারের মধ্যে শান্তির জন্য লোকজনের আধ্যত্মিকতা আবশ্যক হয়ে পড়েছে।’অন্যদিকে, জন সেন্টামু বলেছেন, অনুসারির সংখ্যা যদি আরো কমে যায় তবে ইংল্যান্ডে গির্জা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।১৯৬০ এর দশকে রবিবার গির্জায় যত লোক প্রার্থনার জন্য সমবেত হতো, এখন তা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। রোমান ক্যাথলিকদের সংখ্যাও কমছে একই হারে।২০১১ সালের আদমশুমারিতে দেখা যায়, ২০০১ সালের পর এক দশকেই দেশটিতে খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা (যারা নিজেদের খৃষ্টান বলে পরিচয় দেয়) ৪০ লাখ কমে গেছে।২০০১ সালে দেশটিতে খৃষ্টানের সংখ্যা ছিল ৭২ শতাংশ। ২০১১ সালে তা কমে নেমে আসে ৫৯.৩ শতাংশে।২০১১ সালে দেশটির ১ কোটি ৪১ লাখ লোক বলেছেন, তারা কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না। ২০০১ সালে এমন লোকের সংখ্যা ছিল এর ৭৭ লাখ (প্রায় অর্ধেক)।১৯৭০ সালে রবিবার প্রার্থনার জন্য গির্জায় সমবেত হতেন ১৫ লাখ লোক। ২০১১ সালের এই সংখ্যা কমে নেমেছে ৮ লাখে। রোমান ক্যাথলিকদের সংখ্যাও কমেছে একই হারে।তবে ইংল্যান্ডে খৃষ্টান ধর্মের অনুসারির সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেলেও বিশ্বের কিছু কিছু জায়গায় তাদের সংখ্যা বাড়ছে, যেমন- আফ্রিকায়। তবে পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে খৃষ্টান ধর্মের প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইসলাম।ইউরোপজুড়ে গির্জা ভেঙে গড়ে উঠছে মসজিদ