বিদ্বানগণের উক্তি

অমুসলিমদের যবানীতে হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) – ২

১. বৃটিশ নারী অধিকার কর্মী, সমাজতত্ববিদ ও লেখিকা এ্যানি বেসান্ত (১৮৪৭-১৯৩৩) বলেন, "It is impossible for anyone who studies the life and character of the great Prophet of Arabia, who knows how he taught and how he lived, to feel anything but reverence for that mighty Prophet, one of the great
messengers of the Supreme.  And although in what I put to you I shall say many things which may be familiar to many, yet I myself feel whenever I re-read them, a new way of admiration, a new sense of reverence for that mighty Arabian teacher." (Annie Besant ,The Life And Teachings of Muhammad, Madras, 1932, p. 4).

‘কোন ব্যক্তি যে আরবের মহান নবীর জীবনী ও চরিত্র পর্যবেক্ষণ করেছে এবং যে জানে কিভাবে তিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন কিংবা জানে তার যাপিত জীবন সম্পর্কে, তার পক্ষে এটা অসম্ভব যে, সে সর্বশক্তিমানের প্রেরিত অন্যতম দূত এই মহান নবী সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রম ব্যতীত অন্য কিছু অনুভব করবে। যদিও এ বিষয়ে আমার কথাগুলি অনেকের কাছেই পরিচিত মনে হতে পারে। তবুও বলব, যখনই আমি তাঁর সম্পর্কে পুনর্বার পড়ি, তাঁর প্রতি নতুনভাবে প্রশংসার স্থান খুঁজে পাই, নতুনভাবে অনুভব করি সেই শক্তিমান আরবীয় শিক্ষকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা’।

২. বিখ্যাত জার্মান কবি, নাট্যকার, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদ জে.ডব্লিউ. গ্যেটে (১৭৪৯-১৮৩২) বলেন, He is a prophet and not a poet and therefore his Koran is to be seen as Divine Law, and not as a book of a human being made for education or entertainment (Johann Wolfgang Goethe, Noten und Abhandlungen zum Weststlichen Dvan,WAI,7,32; translator unknown).

‘তিনি একজন নবী, কবি নন এবং সেই কারণেই তাঁর কুরআনকে দেখা হয় ‘স্বর্গীয় আইন’ হিসাবে, মানুষের তৈরী কোন শিক্ষা বা বিনোদনমূলক গ্রন্থ হিসাবে নয়।

৩. নেদারল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পরবর্তীতে ইসলামগ্রহণকারী নওমুসলিম ক্রিশ্চিয়ান স্নোক হারগ্রোঞ্জে (১৮৫৭-১৯৩৬) বলেন, The league of nations founded by the prophet of Islam put the principle of international unity and human brotherhood on such universal foundations as to show candle to other nations…the fact is that no nation of the world can show a parallel to what Islam has done towards the realization of the idea of the League of Nations (Christian Snouck Hurgronje, as quoted in Encyclopaedic Survey of Islamic Culture (1997) by Mohamed Taher, p. 260).

‘ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘লীগ অফ নেশনস’ বা ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ’ স্থাপন করেছে আন্তর্জাতিক ঐক্য এবং মানবিক ভ্রাতৃত্বের মূলনীতি। আর সে মূলনীতি এমনই বৈশ্বিক ও সার্বজনীন ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, যা অন্যান্য জাতিকেও আলোর পথ দেখিয়েছে….বাস্তবিকই বিশ্বের কোন জাতিই ‘জাতিসংঘ’-এর ধারণা উপলব্ধির ক্ষেত্রে ইসলামের সমকক্ষতা অর্জন করতে পারে না।

৩. বৃটিশ আমেরিকান ঐতিহাসিক এবং লন্ডনের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরেটাস বার্নার্ড লুইস (জন্ম : ১৯১৬ইং) বলেন, He had achieved a great deal. To the pagan peoples of western Arabia he had brought a new religion which, with its monotheism and its ethical doctrines, stood on an incomparably higher level than the paganism it replaced. He had provided that religion with a revelation which was to become in the centuries to follow the guide to thought and count of countless millions of Believers. But he had done more than that; he had established a community and a well organized and armed state, the power and prestige of which made it a dominant factor in Arabia…. The modern historian will not readily believe that so great and significant a movement was started by a self-seeking imposter. Nor will he be satisfied with a purely supernatural explanation, whether it postulates aid of divine of diabolical origin; rather, like Gibbon, will he seek ‘with becoming submission, to ask not indeed what were the first, but what were the secondary causes of the rapid growth’ of the new faith…(Bernard Lewis, The Arabs in History (1950), p.45-46)

‘তিনি প্রভূত কিছু অর্জন করেছিলেন। পশ্চিম আরবের পৌত্তলিকদের নিকট তিনি পৌত্তলিকতার স্থলে এমন এক নতুন ধর্মের আহবান নিয়ে এসেছিলেন যা স্র্ষ্টার একত্ব এবং নৈতিক বিধি-বিধানের দিক থেকে পৌত্তলিকতার বহুগুণ উর্ধ্বে এক অতুলনীয় উচ্চতায় অবস্থান করছিল। তিনি সেই ধর্মের সাথে এমন এক ঐশীবাণী সরবরাহ করেছিলেন যা অনাগত শতাব্দীগুলোতে অগণিত লক্ষ লক্ষ ঈমানদার মানুষের চিন্তাধারার পথপ্রদর্শক হতে যাচ্ছিল। কিন্তু তিনি তার চেয়ে আরো বেশীই করেছেন। তিনি একটি সম্প্রদায় এবং একটি সুসংগঠিত ও সমরশক্তি সম্পন্ন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা এই রাষ্ট্রটিকে ক্ষমতা ও মর্যাদার বলে আরবের একটি প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত করেছিল। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এটা অবলীলাক্রমে বিশ্বাস করতে রাজি হবেন না যে, এত বিশাল এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটি আন্দোলন শুরু হয়েছিল একজন ‘স্বার্থান্বেষী ভন্ডে’র মাধ্যমে। আবার এমন অতিপ্রাকৃত ব্যাখ্যাও সন্তুষ্টিচিত্তে গ্রহণ করবেন না যে, এটা সম্ভবত একটা শয়তানী শক্তির স্বর্গীয় সহযোগিতায় সম্পন্ন হয়েছিল। বরং তারা গীবনের মত নতুন এই বিশ্বাসের বিস্ময়কর দ্রুতগামী অগ্রযাত্রাকে অবনত মস্তকে স্বীকৃতি দেয়ার পর এর পিছনের মুখ্য কারণগুলো অনুসন্ধান না করে গৌণ কারণগুলো খুঁজতে থাকবেন’।

৪. লন্ডনের এ্যাংলিকান চার্চের খন্ডকালীন পাদ্রী, প্রাচ্যবিদ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষা শিক্ষক (১৮৫৮-১৯৪০) ডেভিড স্যামুয়েল মারগোলিউথ তাঁর ‘মুহাম্মাদ এবং ইসলামের বিকাশ’ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন, I regard Mohammed as a great man, who solved a political problem of appalling difficulty, — the construction of a state and an empire out of the Arab tribes. I have endeavored, in recounting the mode in which he accomplished this, to do justice to his intellectual ability and to observe towards him the respectful attitude which his greatness deserves (D. S. Margoliouth, Mohammed and the Rise of Islam (1905), Preface)

‘আমি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে একজন মহামানব হিসাবে বিবেচনা করি। যিনি আরবীয় গোত্রসমূহকে একটি রাষ্ট্রে এবং একটি সাম্রাজ্যে পরিণত করে এক ভয়ংকর সংকটাপন্ন রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করেছিলেন। আমি এই গ্রন্থে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কোন পদ্ধতিতে তিনি এই সুকঠিন কাজ সম্পন্ন করেছিলেন তা পুনর্নিরীক্ষণ করতে, তাঁর বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতার প্রতি সুবিচার করতে এবং তাঁর মহত্ব যে শ্রদ্ধাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি লাভের যোগ্য তা প্রদান করতে’।

৫. ইন্ডিয়ার প্রখ্যাত কবি, লেখক, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ সরোজিনী নাইডু (১৮৭৯-১৯৪৯) বলেন, It was the first religion that preached and practiced democracy; for, in the mosque, when the call for prayer is sounded and worshippers are gathered together, the democracy of Islam is embodied five times a day when the peasant and king kneel side by side and proclaim: ‘God Alone is Great’… I have been struck over and over again by this indivisible unity of Islam that makes man instinctively a brother (Sarojini Naidu, Ideals of Islam, vide Speeches & Writings (1918), p. 169)

‘ইসলামই ছিল প্রথম ধর্ম যা গণতন্ত্রের প্রচার ও অনুশীলন করেছে। যেমন মসজিদে ছালাতের জন্য আযান দেয়ার পর মুছল্লীরা একসাথে মসজিদে একত্রিত হয়। দৈনিক এই পাঁচ ওয়াক্তের ছালাতের মধ্যেই ইসলামের গণতন্ত্র নিহিত রয়েছে যেখন কৃষক এবং রাজা পাশাপাশি নতজানু হয়ে একই ঘোষণা উচ্চারণ করে বলে, ‘আল্লাহু আকবার’ (এক আল্লাহ মহান)। ইসলামের এই বিমূর্ত একতা দেখে আমি বার বার হতবাক হয়ে যাই যা একজন মানুষকে সহজাতভাবেই একজন ভাইয়ে পরিণত করে’।

৬. ইন্ডিয়ান দার্শনিক, মনোবিদ ও অধ্যাপক রামাকৃষ্ণ রাও (জন্ম : ১৯৩২ইং) লিখেছেন, The personality of Muhammad, it is most difficult to get into the whole truth of it. Only a glimpse of it I can catch. What a dramatic succession of picturesque scenes. There is Muhammad the Prophet. There is Muhammad the Warrior; Muhammad the Businessman; Muhammad the Statesman; Muhammad the Orator; Muhammad the Reformer; Muhammad the Refuge of Orphans; Muhammad the Protector of Slaves; Muhammad the Emancipator of Women; Muhammad the Judge; Muhammad the Saint. All in all these magnificent roles, in all these departments of human activities, he is alike a hero. (K. S. Ramakrishna Rao, in Muhammad the Prophet of Islam, 1979).

‘মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি সত্যটা জানা  সর্বাধিক কঠিন একটি কাজ। এর কিঞ্চিৎমাত্র আমি ধারণ করতে পারি। ছবির মত দৃশ্যপটে কি নাটকীয় এক পর্যায়! যেখানে একজন নবী মুহাম্মাদ, একজন যোদ্ধা মুহাম্মাদ, একজন ব্যবসায়ী মুহাম্মাদ, একজন রাষ্ট্রনায়ক মুহাম্মাদ, একজন বাগ্মী মুহাম্মাদ, একজন সংস্কারক মুহাম্মাদ, একজন এতীমের আশ্রয়স্থল মুহাম্মাদ, একজন ক্রীতদাসের রক্ষাকবচ মুহাম্মাদ, একজন নারী মুক্তির অগ্রদূত মুহাম্মাদ, একজন বিচারক মুহাম্মাদ, একজন সাধু মুহাম্মাদ-ইত্যাদি সর্বরকম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়েই তিনি উপস্থিত। মানবীয় কর্মকান্ডের এ সকল দিক ও বিভাগে এমন সব চমকপ্রদ ভূমিকায় তাঁর অবস্থান সত্যিই একজন নায়কের নত।

৭. ফরাসী রাষ্ট্রনায়ক নেপোলিয়ান বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১) বলেন, “I hope the time is not far off when I shall be able to unite all the wise and educated men of all the countries and establish a uniform regime based on the principles of Qur’an which alone are true and which alone can lead men to happiness.” (Nepolean Bonaparte – Quoted in Christian Cherfils BONAPARTE ET ISLAM (PARIS 1914).

‘আমি আশা করি এমন একটি সময় বেশী দূরে নয় যখন আমি সকল দেশের সকল বুদ্ধিজীবি এবং বিদ্যান ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ঐক্যমত গড়ে তুলতে পারব এমন একটি একক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য, যা কেবল পবিত্র কুরআনের মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ হল, কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা সত্য এবং মানুষকে সুখ-শান্তির পথে পরিচালিত করে’।  

৮. মেজর আর্থার গ্লীন লিউনার্ড বলেছেন, ‘মুহাম্মদ (ছাঃ) এমন একজন মানুষ যিনি শুধু মহৎ ছিলেন না; বরং মহোত্তমদের অন্যতমও ছিলেন। তিনি শুধু নবী হিসাবেই নন; দেশপ্রেমিক ও নেতা হিসাবেও মহান ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন জাগতিক ও আধ্যাত্মিক নির্মাতা; তিনি গঠন করেছেন একটি মহান জাতি ও এক বিশাল সাম্রাজ্য। কিন্তু এসব ছাড়াও তিনি এমন একটি বিষয় নির্মাণ করে গেছেন, যা তুলনাহীন। আর তা হল, একটি ধর্মবিশ্বাস। তিনি সত্য ছিলেন, সত্য ছিলেন নিজের কাছে, তার অনুসারী ও পরিচিতজনদের কাছে এবং সর্বোপরি তার আল্লাহর কাছে’।

‘মুহাম্মাদ (ছাঃ) তিনটি বিষয়ের শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ছিলেন, যা তখনকার দিনে ছিল না বললেই চলে। ধর্ম প্রবর্তক হিসাবে তার অসামান্য মেধা, রাষ্ট্রনায়ক হিসাবে তার অনন্য সাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং প্রশাসক হিসাবে তার অতুলনীয় দক্ষতা’।

‘পৃথিবীর মধ্যে যদি কোন মানুষ আল্লাহকে দেখে থাকেন, বুঝে থাকেন ও প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর কোন উপকার করে থাকেন, তবে এটা নিশ্চিত যে, তিনি হচ্ছেন আরবের ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মুহাম্মদ’ (Major Arthur Glyn Leonard, ‘Islam, Her Moral and Spiritual Values’)

অনুবাদ : আব্দুল হাসীব

মন্তব্য করুন

Back to top button