সংবাদ

হজযাত্রীদের সাথে এজেন্সির প্রতারণা

ওলামা লীগের নেতা মুফতি মাসুম বিল্লাহ এবং তরিকত ফেডারেশনের সক্রিয় সদস্য খাজা বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরীসহ চার ট্রাভেলস মালিক হজে গমনেচ্ছুদের টাকা মেরে পালিয়েছেন। এর প্রতিবাদে হজে গমনেচ্ছুরা গতকাল দুপুরের পর বিক্ষোভ করেছেন। রাস্তা অবরোধ করে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যাতে তারা হজে যেতে পারেন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আজ ভোররাত ৪টায় শেষ হজ ফাইট। প্রতারিতরা হয়তো এবার হজে যেতে পারবেন না।

হজক্যাম্প সূত্র জানায়, সৌদি হজ এয়ার সার্ভিস ১৫০ জনের, সন্দীপ ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল ৪৯ জন এবং মেরিডিয়ান এয়ার সার্ভিসের ৫২ হজযাত্রীর টাকা মেরে পালিয়েছে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির মালিকেরা। সৌদি হজ এয়ার সার্ভিসের মালিক হচ্ছেন মোকাররম হোসেন ও মাহফুজ বিন সিরাজ। এই এজেন্সি ১৫৫ জনের কাছ থেকে দুই কোটি ৯৬ লাখ টাকা মেরেছে। ওলামালীগের নেতা মুফতি মাসুম বিল্লাহ এবং তরিকত ফেডারেশনের সদস্য খাজা বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরীর সন্দীপ ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল। তারা ৪৯ জনের কাছ থেকে মেরেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা। গতকাল বেলা ৩টার দিকে এরা হজক্যাম্প থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এয়ারপোর্টের সামনে গিয়ে রাস্তা অবরোধ করেন। প্রায় আধঘণ্টা তারা বিক্ষোভ করে আবারো ক্যাম্পে চলে যান।

আজ ভোররাত ৪টায় সৌদি এয়ারের একটি ফাইটের মধ্য দিয়ে এই বছরের সর্বশেষ হজ ফাইট ঢাকা ত্যাগ করার কথা। এ ছাড়া শেষ মুহূর্তে এসে হজে যেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় আরো কয়েক শ’ হজযাত্রীকে। হাবের হস্তক্ষেপে গতকাল শেষ দিন মেরেডিয়ান ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির ১৬০ জনের যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। এ ছাড়া শুভ্রা ট্রাভেলস নামে আরেকটি এজেন্সির ৯ জন নিজেরা টাকা জোগাড় করে টিকিট কেটে কোনোভাবে যেতে সক্ষম হন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি এজেন্সির কিছু হজযাত্রী এজেন্সি মাালিক ও গ্রুপ লিডারকে না পেয়ে নিজেরা সৌদি এয়ারের সর্বশেষ ফাইটে যাওয়ার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

গতকাল সন্ধ্যায় আশকোনা হজ অফিসে সাউথ এশিয়ান ট্রাভেলসের শতাধিক হজযাত্রী হজে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছিলেন। কিন্ত তাদের সান্ত্বনা দেয়ার কেউ ছিলেন না। গ্রুপ লিডারের হাতে টাকা দিয়ে প্রতারিত এই হজ গমনেচ্ছুরা নানা চেষ্টা করেও হজ অফিসের কোনো কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে পারেননি। হজ অফিসের পরিচালক বজলুল হক বিশ্বাস দুপুরে সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সহকারী হজ অফিসার আব্দুল মালেক অফিস আওয়ার শেষ হওয়ার কথা বলে সন্ধ্যার পরই অফিস ত্যাগ করেন বলে জানা যায়। তবে হজ অফিসের অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনি ভয়ে রুম থেকে বের হচ্ছেন না। কারণ এই সময়ে হজ অফিসের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নেই। তা ছাড়া এ সময়ে তাদের সমস্যার সমাধান করারও আর কোনো সুযোগ নেই। ওই কর্মকর্তা জানান, সব মিলিয়ে এবার দুই শতাধিক লোক এভাবে প্রতারিত হয়ে হজে যেতে পারছেন না বলেই মনে হচ্ছে।

এ দিকে রফিক ট্রাভেলসের ৬০ জন হজযাত্রীও টাকা দিয়ে হজে যেতে পারছেন না বলে গতকাল পত্রিকা অফিসে ফোন করে অভিযোগ করেন হজযাত্রীরা। এ ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল কবির খান জামান জানান, রফিক ট্রাভেলস এর ২৯জন হজযাত্রী নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছেন। তবে রফিক ট্রাভেলস এর কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে তিনি জানান। এ ছাড়া সন্দীপ ট্রাভেলসের বেশ কিছু হজযাত্রীরও ফাইট নিয়ে সমস্যার কারণে হজে যাওয়ার অনিশ্চিত বলে হাব কর্মকর্তারা জানান। এ ব্যাপারে হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শেষ মুহূর্তে যত দূর সম্ভব হজযাত্রীদের পাঠানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সৌদি এয়ারলাইন্সের শেষ ফাইটে কিছু সিট খালি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেভাবে হোক হাজীদের ওই ফাইটে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।

আব্দুল কবির খান জামান জানান, হজযাত্রীদের অনেকে গ্রুপ লিডার ও এজেন্সি মালিকের অনুস্থিতিতে নিজেরা টাকা জোগাড় করেও টিকিট করছেন। তিনি বলেন, আসলে শেষ পর্যন্ত কয়টি এজেন্সির কতজন হজে যেতে পারছেন না সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

এ দিক ম্যারেডিয়ান ট্রাভেলসের মালিককে হাবের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার পুলিশ গ্রেফতার করার পর দুই দফায় তার ১৬০ জনের যাওয়ার ব্যবস্থা হয়। গতকাল সকালে বাংলাদেশ বিমানের শেষ ফাইটে ১০০ জন গেছেন। ভোররাতে সৌদিয়ার ফাইটে বাকি ৬০ জনের টিকিট হয়েছে বলে জানান আব্দূল কবির খান জামান।

শুভ্রা টাভেলসের যে ১১ জন সমস্যায় পড়েছিলেন তাদের মধ্যে ৯ জন গতকাল নিজেরা টাকা দিয়ে টিকিট করে সৌদি আরব গিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সুপার খিদমাহ এজেন্সির মালিক মুফতি ইব্রাহীম এই টাকা পরে ফেরত দেয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মূলত মুফতি ইব্রাহীমের এজেন্সির মাধ্যমেই যাওয়ার জন্য হজযাত্রীরা টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু মুফতি ইব্রাহীম তার টাকা অন্য কাজে খরচ হয়ে গেছে এবং সব টাকা পাননি নানা অজুহাত দেখিয়ে হজযাত্রীদের বিমান টিকিট করেননি। ওই ট্রাভেলসের বাকি দুইজন টাকা জোগাড় করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি। গতকাল তাদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।

গতকাল সর্বশেষ ফাইট পর্যন্ত মোট ৮৭ হাজার ৪১১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছান বলে হজ অফিসের আইটি শাখা থেকে জানা গেছে। গত ভোররাত সৌদি এয়ারের ফাইটে আরো ৪১৯ জন যাওয়ার কথা। এ বছর হজের জন্য ভিসা হয় ৮৭ হাজার ২১৩টি। এসব ভিসা ছাড়াও হজ প্রশাসনিক দল, মেডিক্যাল টিম, হজ সহায়ক দলসহ স্টিকারের মাধ্যমে গিয়েছেন ৯৪৩ জন। মোট হজযাত্রীর সাথে এই সংখ্যাকেও যোগ করা হয়েছে। এই পর্যন্ত যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন এক হাজার ৬০১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ৮৫ হাজার ৬১২জন। এ দিকে এবার হজ ভিসার জন্য আবেদনকারী ৩৩৩ জনকে অনুপযুক্ত ঘোষণা করে ভিসার জন্য ছাড়পত্র দেয়নি হজ অফিস। অবশেষে কয়েক শ’ হজযাত্রীর দুর্ভোগের বিষয়ে জানার চেষ্টা করে হজ অফিসের ঊর্ধ্বতন কাউকে পাওয়া যায়নি। আগামী ১৪ অক্টোবার পবিত্র হজ পালিত হবে।

– নয়া দিগন্ত

মন্তব্য করুন

Back to top button