সংবাদ

হিজাব পরায় বহিষ্কার, তোলপাড়

দৈনিক মানবজমিন

হিজাব পড়ে ক্লাসে আসায় এক ছাত্রীকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে সর্বত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোড পরিধান না করায় ১২ই সেপ্টেম্বর ইংরেজি বিভাগের স্নাতকের (সম্মান) ৭ম সেমিস্টারের ছাত্রী হাফসা ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের বিষয়টি মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ একজন কর্মকর্তা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ড্রেসকোড শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদিত নয়। শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, বিষয়টি বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের পোশাক পরিধান করবেন তা নিয়ে সরকারের কোন আইন বা নীতিমালা নেই। কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নীতিমালা তৈরি করলে তা একান্তই নিজস্ব। দেশের শিক্ষাবিদরা বলেছেন, নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী কোন ছাত্রীকে বহিষ্কার করতে পারে না কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্রীর আইডি নম্বর ১১৩০৩০০১। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ড্রেসকোডের দোহাই দিলেও গত ২২শে জানুয়ারি একটি নোটিশ জারি করে ড্রেসকোড ও নিরাপত্তার অজুহাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের বোরকা, নেকাব ও হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আশ্চর্যজনক হলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জারি করা ড্রেসকোড সংক্রান্ত নোটিশেও হিজাব, বোরকা ও নেকাব পরিধান করা যাবে না- এমন কিছু বলা হয়নি। এরপরও যেসব ছাত্রী বোরকা, হিজাব ও নেকাব পরিধান করতেন তাদের ২৮শে মে শোকজ করা হয়। হাফসাকেও একই দিনে শোকজ করা হয়। ৩রা জুনের মধ্যে হাফসার কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়। হাফসা জবাব দিলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দ মতো হয়নি। ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ফেরদৌসী আজিম। ৩রা সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইসফাক ইলাহী চৌধুরী স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়- ‘ড্রেসকোড অনুসরণ না করায় কেন তোমাকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে না। তুমি ড্রেসকোড মানতে অস্বীকার করেছো।’ তাতে আরও বলা হয়, ‘তোমার বিষয়টা বোর্ড অব ট্রাস্টিতে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ট্রাস্টি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্র্যাকের ড্রেসকোড অনুসরণ না করলে তুমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিষিদ্ধ হবে। সেই সঙ্গে পরবর্তী সেমিস্টারের রেজিস্ট্রেশন করতে অনুমোদন দেয়া হবে না। শোকজ করার পরও হিজাব ও বোরকা পরা অব্যাহত রাখায় গত ১২ই সেপ্টেম্বর হাফসাকে বহিষ্কার করা হয়। সনাক্তকরণ সমস্যা ও নিরাপত্তা ঝুঁকিকে হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সূত্র জানিয়েছে, হাফসার বিষয়টি তার পরিবারকে জানানো হয়। তার পরিবার হাফসার সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করে তাকেই সমর্থন করে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেন, বিষয়টি ধর্মীয়। এখানে কারও হস্তক্ষেপ চলে না। সূত্র জানিয়েছে, হাফসার পরিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রোববারই এ রিট করার কথা রয়েছে। জানা গেছে, ‘বোরকা পরা আরও কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হাফসার সঙ্গে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চাপে তারা একপর্যায়ে বোরকা ছাড়তে বাধ্য হন। কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে সমর্থন থাকায় হাফসা বোরকা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তার আইডি ব্লক করে দেয়া হয়।
কি আছে ড্রেসকোডে: ড্রেসকোডের বিষয়ে চলতি বছরের ২২শে জানুয়ারি একটি নোটিশ জারি করেন রেজিস্ট্রার। তাতে বলা হয়, ব্যক্তিগতভাবে ফেইস চিহ্নিত করা যায় এমন হতে হবে। শর্ট জামা-কাপড় এবং থ্রি কোয়ার্টার পরিধান করা যাবে না। মিনি এবং মিডি স্কার্টস পরিধান করা যাবে না। বাথরুমে পরিধাণ করা হয় এমন পোশাক পরিধান করা যাবে না। কোন ধরনের অপরাধ সংক্রান্ত স্লোগান সংবলিত পোশাক পরিধান করা যাবে না। পোশাকে ছবি বা চিহ্ন থাকা যাবে না। তবে ওই নোটিশের কোথাও লেখা নেই বোরকা, হিজাব এবং নেকাব পরিধান করা যাবে না।
জরুরি বৈঠক ডেকেছে কর্তৃপক্ষ: বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় নিয়ে আজ সকালে জরুরি বৈঠক ডেকেছে কর্তৃপক্ষ। ওই বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগীয় প্রধানের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সেখানে হাফসা ইসলামের বিষয়টা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির বক্তব্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আইনুন নিশাত বলেন, ওই ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোড অনুসরণ করতে বলা হয়েছিল।  সে তা অনুসরণ করেনি। সে এমন পোশাক পরিধান করে যাতে তাকে সনাক্ত করাই কঠিন। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে- এমন আশঙ্কায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ড. নিশাত বলেন, তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে- বিষয়টি এমন নয়। ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রেসকোড অনুসরণ করলে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ড্রেসকোড সংক্রান্ত সরকারের কোন আইন নেই। আইন থাকলে তা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা যেতো। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালা। নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যায়ের শিক্ষায় পৃথিবীর কোথাও ড্রেসকোড নেই। এটা তার নিজস্ব তৈরি। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ড্রেসকোড ভঙ্গের অজুহাতে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন ছাত্রীকে বহিষ্কার করতে পারে না। এটা মানবাধিকারের ওপর আঘাত। ড্রেসকোড সর্বোচ্চ স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে চলে।
ইউজিসির বক্তব্য: ড্রেসকোড  ইউরোপীয় ধারণা। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কিছু করা উচিত নয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কিছুও করা উচিত নয়।

ইসলামিক ইমেইল নিউজলেটার
নতুন পোস্ট প্রকাশিত হলে সরাসরি আপনার ই-মেইল ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন।
icon

মন্তব্য করুন

Back to top button