উচ্চমাধ্যমিকে ইসলাম শিক্ষা বন্ধের আয়োজন
ভর্তির প্রাক্কালে বোর্ড সচিবের আজগুবি বিজ্ঞপ্তি
উচ্চমাধ্যমিকে ইসলাম শিক্ষা বন্ধের আয়োজন
ভর্তির প্রাক্কালে একটি আজগুবি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম শিক্ষা বিদায়ের আয়োজন করেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব ব্রজ গোপাল ভৌমিক। ১৯ মে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চলতি বছর থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার কোনোটিতেই ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি থাকছে না। জাতীয় শিক্ষানীতি ও দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের চিন্তা-চেতনা বিরোধী এ সিদ্ধান্তে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তিচ্ছুক ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও সাধারণ জনগণ মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এ বিষয়ে এনটিসিবি সচিবকে একটি উকিল নোটিশও দেয়া হয়েছে।
বর্তমান সরকারের প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর চেতনার পরিপন্থী উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা জানান, এই শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য দিক হলোÑ এখানে ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সরকার উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দিতে যাচ্ছে মর্মে ইতঃপূর্বে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে এনটিসিবি চেয়ারম্যান প্রকাশিত সংবাদকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেন। সেই সাথে মানবিক শাখায় ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বিগত শিক্ষাবর্ষে যেরূপ ছিল, তেমনি ভবিষ্যতেও থাকবে বলেও তিনি তখন জাতিকে আশ্বস্ত করেন।
এনটিসিবি সচিব ব্রজ গোপাল ভৌমিক কর্তৃক গত বছরের ১৭ অক্টোবর দু’টি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, ‘মানবিক শাখায় নৈর্বাচনিক (আবশ্যিক) ও ঐচ্ছিক (চতুর্থ) বিষয় হিসেবে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে।’ কিন্তু একই ব্যক্তি উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিপ্রক্রিয়া আরম্ভ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শাখাভিত্তিক বিষয়সমূহ অনুসরণের যে নির্দেশনা প্রদান করেন সেখানে মানবিক শাখায় শাখাভিত্তিক আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দেয়া হয়। শুধু ঐচ্ছিক (চতুর্থ) বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তাও আবার ১৯টি বিষয়ের মধ্য থেকে যেকোনো একটি। এটিকে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দেয়ারই নামান্তর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাধীনতার পর থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে সব শাখা তথা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি অধ্যয়ন করার সুযোগ ছিল। পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দেয়া হয়। কেবল মানবিক বিভাগে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি নৈর্বাচনিক (আবশ্যিক) এবং ঐচ্ছিক (চতুর্থ) বিষয় হিসেবে শিক্ষার্থীরা গ্রহণ করার স্বাধীনতা ভোগ করে আসছিল। সর্বশেষ এবার এনটিসিবি কর্তৃপ মানবিক শাখা থেকেও শাখাভিত্তিক আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টিকে বাদ দিয়েছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দেয়ার এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বোকা বানানোর জন্য এনটিসিবির বিজ্ঞাপনে ইসলাম শিক্ষা নামে আলাদা একটি শাখা খোলার কথা উল্লেখ করা হয়। অথচ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ‘ইসলাম শিক্ষা’ শাখাটি স্বাধীনতার পর থেকেই কিছু সরকারি কলেজে চালু থাকলেও উক্ত শাখায় ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে না। কারণ এই শাখাটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী নয়। বর্তমানে কোনো বেসরকারি কলেজেই এই শাখার অনুমোদন নেই। অথচ অনেক আগে থেকেই চালু থাকা এই শাখাটিকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘উচ্চমাধ্যমিকে নতুন বিভাগ হিসেবে ‘ইসলাম শিক্ষা’ শিরোনামে গুরুত্বসহকারে সংবাদ প্রচার করলেও মানবিক শাখা থেকে শাখাভিত্তিক আবশ্যিক বিষয় হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপযোগী ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দেয়ার সংবাদ জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।
বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরামের সভাপতি প্রফেসর ড. মো: শফিকুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এমনিতেই ধাপে ধাপে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টিকে গুচ্ছভুক্ত করে গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের জন্য শাখাভিত্তিক আবশ্যিক বিষয় হিসেবে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি গ্রহণ করে অধ্যয়নের যে সুযোগ ছিল সে স্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কলেজগুলোতে ২০১৩-২০১৪ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির কার্যক্রম চলছে। ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি বাদ দেয়ায় ছাত্র, শিক, অভিভাবকসহ সবাই চরম উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন জানিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর মানবিক শাখার শিক্ষার্থীরা যাতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টি আগের মতো শাখাভিত্তিক আবশ্যিক বিষয় হিসেবে নিতে পারে সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও হস্তপে কামনা করেন তিনি।
– Naya Diganta