মিয়ানমারজুড়ে চলছে মুসলিম নির্মূল অভিযান
সম্প্রতি মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এ অঞ্চলে বসবাসরত অনেক মুসলিম বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। তারা দেশটিতে নির্মূল অভিযানের শিকার হচ্ছেন। দাঙ্গার সাথে সরকারের যোগসাজশ রয়েছে বলে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ প্রতিনিধি বলেছেন। গুজবে উত্তেজিত বৌদ্ধরা দলবেঁধে হামলা চালাচ্ছে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানÑ মসজিদ ও মাদরাসায় এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে। রয়টার্স, এএফপি।
মধ্যাঞ্চলের সিত কউয়িন গ্রামের দুই হাজার বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ১০০ জনের মতো মুসলমান বসবাস করতেন। হামলার পর তাদের অনেকেই জীবন বাঁচাকে অজানা জায়গায় চলে গেছে।
তাদের ঘরবাড়ি, দোকান ও ধর্মীয় উপাসনালয় (মসজিদ-মাদরাসা) ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউবা বন্ধু বা আত্মীয়দের বাড়িতে আত্মগোপন করেছেন। অনেককে হত্যাও করেছে উগ্র বৌদ্ধরা। গত শুক্রবারও গ্রামের অবশিষ্ট মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এমনই এক মুসলিম দোকানির কথা বলতে গিয়ে সিত কউয়িনের ২৪ বছর বয়সী ট্যাক্সিচালক অং কো মাইন্ত বলেন, তারা কোথায় আছেন আমরা জানি না, হামলাকারীরা আসার আগমুহূর্তে তিনি পালিয়ে যান।
২০ মার্চ কট্টর বৌদ্ধরা মধ্যাঞ্চলীয় মেকতিলা শহরে দাঙ্গার সূত্রপাত করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন। এরপর আরো ১০টি শহর ও গ্রামে তারা দাঙ্গা বাধিয়েছে।
মুসলিমবিরোধী উসকানিতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে সাধারণ বৌদ্ধরা। টেলিফোন, ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৌদ্ধভিুদের পরিচালিত ‘৯৬৯ আন্দোলন’ এসব গুজব সাধারণ বৌদ্ধদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।
বুদ্ধ থেকে নেয়া এ তিনটি সংখ্যা বুদ্ধের বিভিন্ন রূপ প্রকাশ করে, এর মধ্যে তার শিা ও ভিুত্ব অন্যতম। কিন্তু মিয়ানমারে এটি মুসলিমবিরোধী জাতীয়তাবাদী উগ্রপন্থার প্রতিনিধিত্ব করছে। এ আন্দোলন বৌদ্ধদের মুসলিম পরিচালিত দোকান ও সেবা বয়কট করার আহ্বান জানায়।
চার দিন আগ থেকে সিত কউয়িনে সমস্যা শুরু হয়। ৩০টি মোটরসাইকেলে চড়ে বহিরাগত কিছু লোক গ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে মুসলিম প্রতিবেশীদের বয়কট করার আহ্বান জানায়। এরপর তারা একটি মসজিদ ও মুসলিম মালিকানাধীন এক সারি দোকান ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র নিউ লাইট অব মিয়ানমারের খবরে বলা হয়, বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এ সহিংসতায় জড়িত থাকায় ৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দাঙ্গায় ১১ হাজার ৩৭৬ জন গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এতে আরো বলা হয়, মিয়ানমারের ১৫টি শহরে ১৬৩টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে সরকারিভাবে ৪০ জনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, গুজবে উত্তেজিত হয়ে তারা এখানে আসে। তিনজন বৌদ্ধভিুর নেতৃত্বে ৩০টি শক্তিশালী গোষ্ঠী শুক্রবার একটি মসজিদের দিকে রওনা হয় হলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশি বাধায় ছুরি ও লাঠিধারী দাঙ্গাকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পুলিশ কমান্ডার ফোনি মিন্ত বলেন, এরপর এ ধরনের আর কিছু হতে দেবো না আমি; কারণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তবে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারসংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার বলেছেন, মেকতিলার সাম্প্রতিক সহিংসতায় রাষ্ট্রীয় যোগসাজশ থাকার অভিযোগ পেয়েছেন তারা।
(নয়াদিগন্ত )