আমি কি ছালাত আদায় করি?
ছালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন বা স্তম্ভ। পবিত্র কুরআনের প্রায় ৬৭টি স্থানে ছালাতের কথা বিভিন্নভাবে আলোচিত হয়েছে। পূর্ববতী নবী-রাসূলদের সকলেই ছালাত আদায় করতেন। এমনকি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর উপর ছালাত ফরয হওয়ার আগেও তিনি দু‘রাকাত করে সকাল-সন্ধা ছালাত আদায় করতেন। কিন্তু উম্মতের উপর আমল হিসেবে আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব প্রথম যে ইবাদত ফরয করেন তা হচ্ছে ছালাত। ইসলামের প্রথম বাণী কালেমায়ে তাইয়্যেবা ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’
এর পর প্রথম আদেশ ছিল ছালাতের। ছিল না যাকাত, ছিয়াম, হজ্জ বা কোন কিছুই।
এ ছালাত জিবরীল (আ:)এর মারফত ওহীর মাধ্যমে যমীনে ফরয হয়নি; বরং তা সপ্তাকাশে আরশে আযীমে ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীব শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)কে নিজের কাছে ডেকে নেন। হয় ঐতিহাসিক মে’রাজ। আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের মাঝে সরাসরি কথোপকথোন হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা রাসূলকে পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়ে প্রত্যার্পন করেন। কিন্তু ষষ্ঠাকাশে এসে মূসা (আ:)এর পরামর্শে তিনি ছালাতের সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ্র কাছে দরখাস্ত পেশ করেন। আল্লাহ্ তাঁর দরখাস্ত মুঞ্জর করে নির্ধারণ করেন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত। কিন্তু বলে দিলেন, এই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে প্রদান করা হবে পঞ্চাশ ওয়াক্ত ছালাতের সমপরিমাণ ছওয়াব। (বুখারী ও মুসলিম থেকে সংক্ষেপে)
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এই ছালাতকে যথাযথভাবে সম্পাদন করলেন, তার তাগিদ দিলেন, ছাহাবীদের তথা উম্মতকে শিক্ষা দান করলেন কিভাবে ছালাত আদায় করতে হয়। অতঃপর যখন তিনি সুমহান বন্ধু আল্লাহ্র ডাকে সাড়া দিয়ে ইহধাম ত্যাগ করলেন তখন মূমুর্ষু অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে যে উপদেশ প্রদান করলেন তা ছিল, ছালাত… ছালাত..। (মুসনাদে আহমাদ) সুতরাং দেখা যায় একজন মুমিনের জীবনের প্রথম কাজ হচ্ছে ছালাত এবং শেষ কাজও হচ্ছে ছালাত।
ছালাত বিহীন ব্যক্তিকে মু‘মিন হিসেবে কল্পনাও করা যায় না। অথচ মুসলিম সমাজে আজ সবচেয়ে বেশী গাফলতী, অনীহা ও অলসতা দেখা দেয় শুধুমাত্র ছালাতের ক্ষেত্রেই। একদল মানুষ ছালাত আদায় না করেই নিজেদেরকে পূর্ণ ঈমানদার মনে করে। আবার কিছু লোক নিজের খেয়াল খুশি মত ছালাত আদায় করে থাকে। মনে চাইলে আদায় করল, মনে চাইলে করল না- কখনো তিন ওয়াক্ত বা কখনো চার ওয়াক্ত। আবার কিছু লোক পাঁচ ওয়াক্তই আদায় করে কিন্তু তাদের ছালাত দেখে বুঝা যায় না যে তারা কোন ইবাদত করছে না খেলাধুলা করছে।
ছালাত না পড়লে কি হবে ঈমান ঠিক আছে!
একদল মানুষ খুব জোর গলায় উক্ত দাবী করে থাকে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যদি তাদের মধ্যে ঈমান থাকতো তবে প্রমাণ স্বরূপ তারা ছালাত আদায় করতো। কেননা ঈমানের পরিচয়ই হল ছালাতে। যে ব্যক্তি এই ছালাত পরিত্যাগ করবে তার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহ্তে ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
-আল্লাহ্ বলেন, (فَإنْ تاَبُوْا وَأقاَمُوا الصَّلاَةَ وآتَوا الزَّكاَةَ فَإخْواَنُكُم فِيْ الدِّيْنِ) “যদি তারা তওবা করে এবং ছালাত আদায় করে ও যাকাত প্রদান করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই।” (সূরা তওবা- ১১)
– আল্লাহ্ আরো বলেন, (ماَ سَلَقَكُمْ فِيْ سَقَرٍ، قاَلُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ) “তোমাদেরকে কিসে সাক্বারে (জাহান্নামে) নিক্ষেপ করল? তারা বলবে, আমরা ছালাত আদায় করতাম না।” (সূরা মুদ্দাছ্ছির- ৪২)
– নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, (بَيْنَ الرَّجُلِ والْكُفْرِ والشِّرْكِ تَرْكُ الصَّلاَةِ) “মুসলিম বান্দা এবং কাফের ও মুশরিকের মধ্যে পার্থক্য হল ছালাত পরিত্যাগ করা।” (মুসলিম)
– তিনি আরো বলেন, (الْعَهْدُ الَّذِيْ بّيْنَناَ وَبَيْنَهُمْ الصّلاَةُ فَمَنْ تَرِكَهاَ فَقَدْ كَفَرَ) “তাদের মাঝে এবং আমাদের মাঝে চুক্তি হচ্ছে ছালাতের, যে ব্যক্তি ছালাত পরিত্যাগ করবে সে কাফের হয়ে যাবে।” (আহমাদ, আবূ দাঊদ)
– প্রখ্যাত ছাহাবী আবদুল্লাহ্ বিন শাক্বীক্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)এর ছাহাবীগণ ছালাত ব্যতীত কোন আমল পরিত্যাগ করার কারণে কাউকে কাফের মনে করতেন না।” (তিরমিযী) অর্থাৎ- কোন ব্যক্তি ছালাত ছেড়ে দিলে ছাহাবীগণ মনে করতেন সে কাফের হয়ে গেছে।
বিদ্যানদের অনেকেই ছালাত পরিত্যাগকারী কাফের হওয়ার ব্যাপারে ছাহাবায়ে কেরামের এজমা (ঐকমত্য) বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে ওমর বিন খাত্তাব, আবদুর রহমান বিন আউফ, মু‘আয বিন জাবাল, আবু হুরায়রা, আবদুল্লাহ্ বিন মাসঊদ, আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস, জাবির বিন আবদুল্লাহ্, আবু দারদা প্রমূখ উল্লেখযোগ্য। (মুহাল্লা ইবনু হাযম সূত্র: নামায ত্যাগকারীর বিধান, ইবনু ঊছাইমীন পৃ:১৮)
ওমর বিন খাত্তাব (রা:) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ছালাত পরিত্যাগ করে ইসলামে তার কোন অংশ নেই।’ (মুআত্বা মালেক) অর্থাৎ- সে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। ইমাম ইসহাক বিন রাহ্ওয়াই বলেন, নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নামায ত্যাগকারীর ব্যাপারে বিশুদ্ধ সূত্রে যেগুলো হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তাতে প্রমাণ হয় যে সে কাফের। আর এটাই হচ্ছে নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত আলেমগণের মত যে, ইচ্ছাকৃতভাবে বিনা কারণে নামাযের সময় অতিক্রম করে নামায ত্যাগকারী কাফের। (নামায ত্যাগকারীর বিধান, ইবনু ঊছাইমীন পৃ:১৮) ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বেনামাযীর কাফের হওয়ার ব্যাপারে দশটি দিক উল্লেখ করেছেন। (শারহুল উমদাহ্, ইবনু তাইমিয়া২/ ৮১-৯৪) ইমাম ইবনুল ক্বাইয়েম (রঃ) বেনামাযী কাফের হওয়ার ব্যাপারে ২০টি দলীল উল্লেখ করেছেন। (কিতাবুছ্ ছালাত ১৭-২৬ পৃঃ)
শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রঃ) নামায ত্যাগকারীকে কাফের ও মুরতাদ হিসেবে উল্লেখ করে, তার জন্য নিম্ন লিখিত বিধান সমূহ উল্লেখ করেনঃ
১) বেনামাযী কোন মসুলিম মেয়ের অভিভাবকত্ত করতে পারবে না।
২) সে নিকটাত্মীয়দের মীরাছ থেকে বঞ্চিত হবে।
৩) তার যবেহকৃত প্রাণীর মাংস খাওয়া হারাম।
৪) সে মক্কা ও তার হারাম এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।
৫) তার জানাযা পড়া, মাগফিরাত ও রহমতের জন্য দু‘আ করা হারাম।
৬) কোন মুসলিম মেয়েকে তার সাথে বিবাহ দেয়া হারাম। (নামায ত্যাগকারীর বিধান, ইবনু ঊছাইমীন পৃ: ২৪- ৩৬)
সুতরাং ওহে নামাযত্যাগী সাবধান! আল্লাহ্কে ভয় করুন, তাঁর হক্ব আদায় করুন। দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যশালীদের অন্তর্ভূক্ত হোন।
ছালাত আদায় না করে অন্যান্য নেক আমল যত বেশীই করা হোক না কেন তাতে কোন ফায়দা নেই। কেননা যে ব্যক্তির ছালাত ঠিক নেই তার অন্য কোন আমলের মূল্য নেই। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন,(إنَّ أوَّلَ ماَ يُحاَسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِياَمَةِ الصَّلاَةُ، فإن صَلَحَتْ صَلَحَ سَائِرُ عَمَلِهِ وَإنْ رُدَّتْ رُدَّ ساَئِرُ عَمَلِهِ) “ক্বিয়ামত দিবসে বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে তা হচ্ছে ছালাত। যদি ছালাত গ্রহণীয় হয় তবে সমস- আমল গ্রহণীয় হবে। আর ছালাত যদি প্রত্যাখ্যাত হয় তবে যাবতীয় আমল প্রত্যাখ্যাত হবে।” (হাসান সনদে ত্ববরাণী, ছহীহ্ জামে ছগীর)
ছালাত ব্যতীত জান্নাতের আশা করা কল্পনা মাত্র। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, ক্বিয়ামত দিবসে জান্নাতীদের জান্নাতে এবং জাহান্নামীদের জাহান্নামে দেয়ার পর আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় করুণায় কিছু সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করার জন্য ফেরেস্তারকে আদেশ করবেন- যারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করেছে এবং আল্লাহ্র সাথে কোন কিছুকে শির্ক করেনি। তখন ফেরেস্তাগণ তাদেরকে চিনতে পারবে তাদের সিজদাহ্র স্থান দেখে। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা আদম সন্তানের সিজদা করার অংগগুলোকে জ্বালানো আগুনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। তারপর তারা সেই সমস্ত সিজদাকারী লোকদেরকে তাদের সিজদার চিহ্ন দেখে জাহান্নাম থেকে বের করবেন। (বুখারী ও মুসলিম) এদ্বারা বুঝা যায় বেনামাযীর সিজদার কোন চিহ্ন থাকবে না, সুতরাং তাদের জাহান্নাম থেকে বের হওয়ারও কোন সম্ভাবনা নেই।
এই কারণে বেনামাযী ব্যক্তি ক্বিয়ামত দিবসে জাহান্নামে পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ব্যক্তিদের সাথে বসবাস করবে। আবদুল্লাহ্ বিন আমর বিন আ‘ছ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ছালাতের কথা বলতে গিয়ে এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি ছালাতের হেফাযত করবে তার জন্য তা ক্বিয়ামত দিবসে জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তি স্বরূপ হবে। আর যে ব্যক্তি তা হেফাযত করবে না (যথাযথভাবে আদায় করবে না) তা তার জন্য জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তি হবে না। বরং ক্বিয়ামতের দিন সে কারূন, ফেরআউন, হামান ও উবাই ইবনু খালাফের সাথে অবস্থান করবে।” (মুসনাদে আহমাদ)
মুনাফেক ব্যক্তির ছালাতঃ
যারা লোক দেখানোর জন্য ছালাত আদায় করে বা কিছু ছালাত আদায় করে কিছু করে না তাদের ছালাত মুনাফেকের ছালাতের ন্যায়।
মুনাফেকগণ ছালাত থেকে পিছনে থাকে। ছালাত তাদের নিকট ভারী ও কষ্টকর মনে হয়। সুযোগ পেলে ছালাত আদায় করে, সুযোগ না পেলে করে না। আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে মুনাফেকদের ছালাতের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, (إنَّ الْمُناَفِقِيْن يُخاَدِعُوْنَ اللهَ وَهُوَ خاَدِعُهُمْ، وإذاَ قاَمُوْا إلَى الصَََلاَةِ قاَمُوْا كُسَالَى، يُراَؤُونَ الناَّسَ وَلاَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ إلاَّ قَلِيْلاً) “নিশ্চয় মুনাফেকরা আল্লাহ্কে ধোকা দেয়ার চেষ্টা করে অথচ তিনিই তাদেরকে ধোকা দিবেন (অর্থাৎ- তাদের ধোকাবাজির শাসি- দিবেন।) তারা যখন ছালাতে দন্ডায়মান হয় তখন অলস ভঙ্গিতে দন্ডয়মান হয়। তাদের উদ্দেশ্য মানুষকে দেখানো। আর তারা খুব অল্পই আল্লাহ্কে স্মরণ করে থাকে।” (সূরা নিসা- ১৪২)
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, (لَيْسَ صَلاَةٌ أثْقَلَ عَلىَ الْمُناَفِقِيْنَ مِنْ صَلاَةِ الْفَجْرِ وَالعِشاَءِ وَلَوْ يَعْلَمُوْنَ ماَ فِيْهِماَ لأَتَوْهُماَ وَلَوْ حَبْواً) “মুনাফিক্বদের উপর এশা ও ফজর ছালাতের চাইতে এমন কষ্টকর কোন ছালাত নেই। তারা যদি জানতো এ দু‘ছালাতে কি প্রতিদান রয়েছে তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত।” (বুখারী ও মুসলিম)
শুধু তাই নয় ইচ্ছাকৃতভাবে দেরী করে ছালাত আদায়কারীকেও হাদীছে মুনাফিক বলা হয়েছে। আনাস বিন মালেক (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ্ বলেন, “ঐটা মুনাফেকদের ছালাত ঐটা মুনাফেকদের ছালাত ঐটা মুনাফেকদের ছালাত। যে কিনা ইচ্ছাকৃতভাবে বসে থাকে। সূর্য (অস্ত যাওয়ার পূর্বে) যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং শয়তানের দু‘শিংয়ের মাঝে অবস্থান করে তখন সে চারটি ঠোকর মারে (চার রাকাত ছালাত আদায় করে) আর তাড়াহুড়ার কারণে তাতে খুব অল্পই আল্লাহ্কে স্মরণ করে থাকে।” (আহমাদ, আবু দাঊদ, মালেক)
মুছল্লী কিন্তু জাহান্নামী!
কোন রকম ছালাত আদায় করলেই কি পার পাওয়া যাবে? ছালাত আদায় করতে হয় তাই করলাম। সময়ের প্রতি গুরুত্ব নেই, পদ্ধতি খেয়াল-খুশি মত। এ ধরণের মুছল্লীর পরিণতি যে কত ভয়াবহ, তার স্বাক্ষ্য পবিত্র কুরআনে পাওয়া যায়। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন, (فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ، الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلاَتِهِمْ ساَهُوْنَ) “মুছল্লীদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। যারা ছালাত থেকে উদাসীন।” (সূরা মাঊন ৪-৫) এ আয়াতের তাফসীরে সা‘দ বিন আবী ওয়াক্কাস (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হল, তারা কারা যাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ? তিনি বললেন, “যারা ছালাতের নির্দিষ্ট সময় পার করে দিয়ে ছালাত আদায় করে।” সুতরাং সাবধান হে মুছল্লী ভায়েরা! আমরা যেন এরকম না হই যে, ছালাতও আদায় করলাম এবং জাহান্নামেরও অধিবাসী হলাম!। (আল্লাহ্ আমাদের সাহায্য করুন।)
পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করলেই কি নাজাত পেয়ে যাবে?
আমরা যারা যথারীতি পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করি তারা কি নিশ্চিত যে, আমরা এ ছলাতের মাধ্যমে মুক্তি পেয়ে যাব? জান্নাতে চলে যাব? মু‘মিন ব্যক্তি এরকম নিশ্চয়তা নিয়ে বসে থাকবে না; বরং সে ভয়-ভীতি ও আশা-আকাংখ্যা নিয়ে ইবাদত করবে- ছালাত আদায় করবে। কেননা, আমরা যে ছালাত আদায় করি, আলাদা ভাবে তার হিসেব নেয়া হবে। সত্যিকারভাবে আমরা আল্লাহ্র জন্য ছালাত আদায় করেছি না লোক দেখানোর জন্য করেছি তা সেদিন সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। সে দিন ফাঁকি দেয়ার কোন অবকাশ থাকবে না। কেননা, হৃদয়ের গোপন উদ্দেশ্যের মালিক আল্লাহ্ তা‘আলা। যা বাইরে থেকে কারো দেখা বা বুঝার উপায় নাই।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, … অতঃপর সেদিন মহান আল্লাহ্ স্বীয় পায়ের পর্দা উম্মোচন করবেন, তখন প্রত্যেক মু‘মিন ব্যক্তি যারা পৃথিবীতে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্কে সিজদাহ্ করেছিল তাদেরকে অনুমতি দেয়া হবে- তারা আল্লাহ্র জন্য সিজদায় লুটিয়ে পড়বে। আর যারা মানুষকে দেখানোর জন্য, মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করেছিল তারা সিজদাহ্ করতে পারবে না। তাদের পৃষ্ঠদেশ শক্ত হয়ে যাবে- বাঁকা হবে না। যখনই তারা সিজদাহ্ করার ইচ্ছা করবে তখনই পিছনের দিকে চিৎ হয়ে উল্টে পড়ে যাবে।” (বুখারী ও মুসলিম) আল্লাহ্ বলেন, (يَوْمَ يُكْشَفُ عَنْ ساَقٍ وَّيُدْعَوْنَ إلَى السُّجُوْدِ فَلاَ يَسْتَطِيْعُوْنَ) “সেদিন পায়ের নলা থেকে পর্দা উম্মোচিত করা হবে এবং তাদেরকে সিজদা করার জন্য আহবান করা হবে কিন’ তারা সিজদা করতে সক্ষম হবে না।” (সূরা ক্বলম- ৪২) সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অতি আবশ্যক প্রচেষ্টা হচ্ছে, নিজ ছালাতকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করা, লোক দেখানো ও শ্রুতির নিয়ত পরিত্যাগ করা।
হে আল্লাহ্! আমাদেরকে এবং আমাদের সন-ানদেরকে ছালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানাও। তোমার সন’ষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদেরকে ছালাত আদায় করার তাওফীক দাও। হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের দু‘আ কবূল কর। আমীন॥
সংকলনঃ
মুহা: আবদুল্লাহ্ আল কাফী
দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সঊদী আরব।