নারীবাদ : অধিকার না অত্যাচার?
লিখেছেন: মুসলিম ভ্রাতা
ইউরোপে সংঘটিত শিল্পবিপ্লবের কথা আমাদের সকলেরই কমবেশী জানা। শিল্পবিপ্লব ইউরোপে সৃষ্টি করেছিল উদ্দীপনা আর কর্মচাঞ্চল্য। ইউরোপীয়দের মাথায় এইসময় কেবলই ঘুর্ণিপাক ছিলো কিভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়। তারই প্রেক্ষিতে তাদের মানদন্ডে তারা এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলো। তারা চিন্তা করলো অর্ধেক জনসংখ্যাকে [অর্থ্যাৎ নারীদের] এই উৎপাদনের কাজে লাগালে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শতভাগ জনশক্তির সংস্থান আর উৎপাদনের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এই নিযুক্তি বাস্তবায়িত হলো আর বেশ ক’বছর বলবৎ ছিলো। এরপরেই উদ্ভব হলো এমন এক সমস্যা যা তারা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করে নি। পূর্ববর্তী প্রজন্মের লোকজন বুড়িয়ে গেলো। আর যে সমস্যা গুলো উদ্ভব হলো:
-নতুন আর তরুণ শ্রমিকের সংকট দেখা দিলো,
-বৃদ্ধের সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেলো,
-সরকারকে অবসরপ্রাপ্তদের বেতনভাতা আর চিকিৎসাসেবা বাবদ খরচ চালিয়ে যেতো হলো আর
-কারখানাগুলোর উৎপাদনও আশংকাজনকহারে কমে গেলো।
এসব সমস্যা কেবল তাদেরই মানদন্ডে নেয়া আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া। আর তাদের দ্বারা কৃত এসকল নারীদের প্রতি অন্যান্য অত্যাচারের কথা ভাবুন।
এরপর তারা সিদ্ধান্ত নিলো: ‘Let the women get back to kitchen and produce children’.
এই ঘটনায় লোভী সোঁনার ডিম পাড়া হাঁসের মালিকের মিল খুজে পান কিনা? পশ্চিমা বিশ্ব এখনো লোভাতুর সেই হাঁসের মালিকের ন্যায়।এখনো তারা নিত্যনতুন ফন্দি আঁটছে নারীদের ঘরছাড়া করার জন্য; যাতে তারা ফায়দা লুঠতে সমর্থ হয়।
আমি কেবল একটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনেছি। এছাড়াও তাদের নারীদের নিয়ে যে পরীক্ষণের মহড়া তার শিকার পৃথিবীর অধিকাংশ নারী। তারাই ঠিক করে নারীর প্রতীকী রং Pink, নারীদের কোমরের মাপ থেকে শুরু করে ভোগবাদী সমাজে তাদের turn off, turn on, being social drinker, showbiz diva ইত্যাদির বিভ্রমের বিছানো জাল। ফ্রান্সে হিজাব নিয়ে এত বাড়াবাড়ি কেন? ইহুদি মালিকানাধীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রসাধনী কোম্পানী Loreal Paris এর মূল উৎপাদন কেন্দ্র যে ফ্রান্স। আর হিজাবপড়ুয়া যে কোন নারী তাদের এসব কৃত্রিম প্রসাধনী পণ্যের বিকিকিনি আর নারীবাদের আওড়ানো মিথ্যে বুলির জন্য চরম হুমকি। তারা এসবকে তাদের অস্তিত্বের জন্য প্রতিপক্ষই সাব্যস্ত করেছে। সত্যিই তাই। পশ্চিমাবিশ্বে উচ্চশিক্ষিত নারীরা আজ যে তাদের মুক্তির বাণী খুজে পেয়েছে ইসলামে। তাদের হিজাব আর ইসলামের বিরুদ্ধে মরিয়া হয়ে উঠাটা তাদের নীতিগত পরাজয় আর আদর্শগত শূণ্যতার বার্তা বয়ে আনে।
আমি দুটো কথা বলেই শেষ করতে চাই। মাছ পানিতে বিচরণশীলতায় স্বচ্ছন্দ; তাকে ডাঙ্গায় তুলে মুক্ত করার কথা বলা অধিকার না অত্যাচার তা ভেবে দেখুন।
আর কোন ব্যক্তি কি যদি গাড়ীর চাকার ভিতরের অংশের নরম টিউব দ্বারা গাড়ী চালানোর চেষ্টা করে তাকে আপনি প্রকৃতিস্থ বলবেন না অপ্রকৃতিস্থ।
আল্লাহ্ প্রদত্ত বিধান অমান্যকারীদের জীবনে সংকীর্ণতা ব্যতীত আর কিছুই নেই।
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের চারপাশে মরিচিকার যে বিভ্রম তা দুর করে দিন। সত্যকে জানার, নিজের প্রকৃত অধিকার বোঝার তাওফীক দিন। আমীন।