ইহকাল-পরকাল

শেষ দিবস

সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জাহানের পালন কর্তা মহান আল্লাহর জন্য। দরূদ ও সালাম অবতীর্ণ হোক নবীকুলের শিরোমনি মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামের উপর এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের উপর।

শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের ছয়টি মূল ভিত্তি সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি ভিত্তি। কোন মানুষ মুমিন হতে পারে না যতক্ষণ না এ দিবস সম্পর্কে অবতীর্ণ কুরআনের আয়াত ও বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদিসে রাসুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর ওপর ঈমান আনে। মানুষের আত্মার সংশোধন, আল্লাহভীতি ও আল্লাহর দ্বীনে অবিচল-অনঢ় থাকার ক্ষেত্রে শেষ দিবসের জ্ঞান ও অধিকতর স্মরণের বিরাট প্রভাব রয়েছে। উক্ত দিনের ভয়াবহতা, আতংক ও ভীষণ পরিস্থিতির স্মরণ করা থেকে বিমূখ থাকার মত অন্য কোন জিনিস মানুষের অন্তরকে এতো পাষাণ করে না, উদ্বুদ্ধ করে না তাকে পাপ করতে। আল্লাহ তায়ালা সেদিন সম্পর্কে বলেন, “(আজ) যদি তোমরাও সেদিনকে অস্বীকার করো তাহলে আল্লাহর আযাব থেকে (বলো) কিভাবে তোমরা বাঁচতে পারবে, যেদিন (অবস্থার ভয়াবহতা অল্প বয়স্ক) কিশোর বালকদেরও বৃদ্ধ বানিয়ে দেবে” [সূরা আল্ মুয্যাম্মিল (৭৩) : আয়াত ১৭] তিনি সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অনত্র বলেন, “অবশ্যই কেয়ামতের কম্পন হবে একটি ভয়ংকর ঘটনা। সেদিন তোমরা তা নিজেরা দেখতে পাবে, (দেখবে) বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে এমন প্রতিটি নারী (ভয়াবহ আতংকে) তার দুগ্ধপোষ্যকে ভুলে যাবে, প্রতিটি গর্ভবতী (জন্তু) তার (গর্ভস্থিত বস্তুর) বোঝা ফেলে দেবে, মানুষকে যখন তুমি দেখবে তখন (তোমার) মনে হবে তারা বুঝি কিছু নেশাগ্রস্থ মাতাল, কিন্তু তারা আসলে কেউই নেশাগ্রস্থ নয়, (বরং এটা হচ্ছে এক ধরনের আযাব,) আল্লাহ তায়ালার আযাব কিন্তু অতন্ত্য ভয়াবহ।” [সূরা আল্ হাজ্জ্ব (২২) : আয়াত ১ ও ২]

মৃত্যুঃ
১ – এ পৃথিবীতে প্রত্যেক জীবের শেষ পরিণতি হবে মৃত্যু। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক প্রাণীই মরণের স্বাদ ভোগ করবে; (অতঃপর) তোমাদের (জীবনভর) কামাইর প্রতিফল কেয়ামতের দিন আদায় করে দেয়া হবে, যাকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে বাঁচিয়ে দেয়া হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে; সেই হবে সফল ব্যক্তি। (মনে রেখো,) এই পার্থিব জীবন কিছু বাহ্যিক ছলনার মাল সামানা ছাড়া আর কিছুই নয়।” [সূরা আলে ইমরান (৩) : আয়াত ১৮৫] তিনি সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আরো বলেন, “(যমীন ও) তার ওপর যা কিছু আছে তা সবই (একদিন) বিলীন হয়ে যাবে” [সূরা আর রাহমান (৫৫) : আয়াত ২৬] তিনি সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিজের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর উদ্দেশ্যে বলেন, “অবশ্যই (একদিন) তুমি মারা যাবে- তারাও নিঃসন্দেহে একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হবে” [সূরা আঝ ঝুমার (৩৯) : আয়াত ৩০] এ বিশ্ব চরাচরে কোন মানুষের জন্য চিরস্থায়ীত্ব নাই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “(হে নবী,) আমি তোমার পূর্বেও কোনো মানব সন্তানকে অনন্ত জীবন দান করিনি” [সূরা আল আম্বিয়া (২১) : আয়াত ৩৪] মৃত্যু একটি নিশ্চিত বস্তু তাতে কোন সন্দেহ নাই। অথচ অধিকাংশ লোকই তা থেকে গাফেল। একজন মুসলমানের করনীয় যে, মৃত্যুর কথা বেশী বেশী স্মরণ করবে এবং তার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকবে। একইভাবে দুনিয়ায় থাকতে সময় ফুরিয়ে যাবার পূর্বে আখেরাতের পাথেয় সঞ্চয় করবে। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, “পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিষের পূর্বে মূল্যবান মনে করো, তোমার জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে, তোমার সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, তোমার অবসরকে তোমার ব্যস্ততার পূর্বে, তোমার যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে এবং তোমার সচ্ছলতা, প্রাচুর্যকে দারিদ্রতার পূর্বে।” জেনে রাখুন, মৃত ব্যক্তি পার্থিব কোন সম্পদ কবরে বয়ে নিয়ে যাবে না। তার সঙ্গে থাকবে শুধুমাত্র তার আমল সুতরাং ভাল কাজের পাথেয় সংগ্রহ করতে আগ্রহী হোন যা আপনাকে দেবে আনন্দ এবং আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তি ও পরিত্রাণ।

২ – মানুষের জীবনের সময় সীমা এমন একটি রহস্য ও গোপন বস্তু যা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালা জানেন, অন্য কেউ নয়। কেউ জানে না সে কোথায় মরবে এবং কখন মরবে। কারণ, সেটা গায়েবের ইলম্ তথা অদৃশ্য জগতের জ্ঞান যা এক ও একক মহান আল্লাহই জানেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “কোনো মানুষই বলতে পারে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে; না কেউ এ কথা বলতে পারে যে, কোন যমীনে সে মৃত্যুবরণ করবে; নিঃসন্দেহে (এ তথ্যগুলো একমাত্র) আল্লাহ তায়ালাই জানেন, (তিনি) সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।” [সূরা লুকমান (৩১) : আয়াত ৩৪]

৩ – মৃত্যু আসলে তা দমন, প্রতিহত করা বা পিছিয়ে দেয়া কিংবা তা থেকে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ পাক বলেন, “যখন তাদের সে মেয়াদ আসবে, তখন তারা একদন্ড বিলম্বও করবে না, তেমনি তারা এক মুহূর্ত এগিয়েও আসবে না।” [সূরা আল্ আ’রাফ (৭) : আয়াত ৩৪]

৪ – মুমিনের নিকট যখন মৃত্যু আসে তখন মৃত্যুর ফেরেশতা সুন্দর মনোহর রূপ ও আকৃতি নিয়ে উপস্থিত হয়, সুগন্ধে ভরে যায় পরিবেশ আর তার সাথে থাকে রহমতের ফেরেশতারা যারা উক্ত ব্যক্তিকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়। আল্লাহ পাক বলেন, “যারা বলে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন আমাদের মালিক, অতঃপর (এ ঈমানের ওপর) তারা অবিচল থাকে, (মৃত্যুর সময় যখন) তাদের কাছে ফেরেশতা নাযিল হবে এবং তাদের বলবে (হে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দারা,) তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না; (উপরন্তু) তোমাদের কাছে যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছিল, (আজ) তোমরা তারই সুসংবাদ গ্রহণ করো (এবং আনন্দিত হও)।” [সূরা হা-মীম্ আস সাজদা (৪১) : আয়াত ৩০]

কাফেরের কাছে মৃত্যুর ফেরেশতা দুর্গন্ধময় কাপড়, কালো চেহারা ও ভীতিপ্রদ আকৃতি ধারণ করে আসেন এবং তাঁর সাথে থাকে আযাবের ফেরেশতারা যারা তাকে আযাবের দুঃসংবাদ দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যদি (সত্যি সত্যিই) যালেমদের মৃত্যু-যন্ত্রনা (উপস্থিত) হবার সময় (তাদের অবস্থাটা) তুমি দেখতে পেতে! যখন (মৃত্যুর) ফেরেশ্‌তারা তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণবায়ু বের করে দাও; তোমরা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে যেসব অন্যায় কথা বলতে এবং আল্লাহর আয়াতের ব্যাপারে যে (ক্ষমাহীন) ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে, তার জন্যে আজ অত্যন্ত অবমাননাকর এক আযাব তোমাদের দেয়া হবে।” [সূরা আল্ আনয়াম (৬) : আয়াত ৯৩]

মৃত্যু আসলে বাস্তব সত্য উম্মোচিত হয়ে যাবে এবং আসল তত্ত্ব মানুষের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “(যখন) এদের কারো মৃত্যু এসে হাযির হবে, তখন সে বলবে, হে আমার মালিক, তুমি আমাকে (আরেকবার পৃথিবীতে) ফেরৎ পাঠাও, যাতে করে (সেখানে গিয়ে) এমন কিছু নেক কাজ আমি করে আসতে পারি, যা আমি (আগে) ছেড়ে এসেছি (তখন বলা হবে), না, তা আর কখনো হবার নয়; (মূলত) সেটা হচ্ছে একটি (অসম্ভব) কথা, যা সে শুধু বলার জন্যেই বলবে, এ (মৃত) ব্যক্তিদের সামনে একটি যবনিকা (তাদের আড়াল করে রাখবে) সেই দিন পর্যন্ত, যেদিন তারা (কবর থেকে) পুনরুত্থিত হবে!” [সূরা আল মুমিনুন (২৩) : আয়াত ৯৯ ও ১০০]

মৃত্যু আসলে কাফের ও পাপী লোক ভাল ও সৎকাজ করার জন্য পুনরায় পার্থিব জীবনের দিকে ফিরে যেতে চাইবে কিন্তু সময় শেষ হওয়ার পর অনুশোচনা কোন কাজে আসবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তুমি যালেমদের দেখবে, যখন তারা (আল্লাহ তায়ালার) আযাব পর্যবেক্ষণ করবে তখন বলবে, (আজ এখান থেকে) ফিরে যাওয়ার কোনো পথ আছে কি?” [সূরা আশ শূরা (৪২) : আয়াত ৪৪]

৫ – বান্দাগণের উপর অশেষ করুণা ও রহমত যে, যার মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে শেষ বাক্য “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” হবে, সে জান্নাত লাভ করবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, “দুনিয়ায় যার শেষ বাক্য “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” হবে, সে জান্নাত লাভ করবে।” কারণ এমনি মুমূর্ষ অবস্থা ও সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে কালেমার ব্যাপারে নিষ্ঠাবান ব্যক্তি ছাড়া কোন মানুষের পক্ষে তা উচ্চারণ করা সম্ভব হবে না। পক্ষান্তরে নিষ্ঠাহীন ব্যক্তি মৃত্যুর যাতনায় তা ভুলে যাবে। এ কারণেই মৃত্যু ঘনিয়ে আসা ব্যক্তিকে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু” শিক্ষা দেয়া সুন্নত।

কবরঃ
রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, যখন বান্দাকে কবরে দাফন করে তার সঙ্গী সাথীরা ফিরে যাচ্ছে আর সে তাদের জুতোর শব্দ শুনছে, এমতাবস্থায় দু’জন ফেরেশতা এসে বসে যায় এবং তাকে বলে, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বল? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেন, সে যদি মুমিন হয় বলবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূল (ছা.) বলেন, তখন তাঁকে বলা হবে, দেখ! দোযখের স্থান, আল্লাহ তার পরিবর্তে তোমাকে বেহেশতের একটি আসন দান করেছেন। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেন, সে উভয় আসন অবলোকন করবে। কাফের বা মুনাফেককে বলা হবে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কি বল? সে বলবে, আমি জানি না, মানুষ যাই বলত আমি তাই বলতাম। অতঃপর তাকে বলা হবে, না তোমার জ্ঞান ছিল; না যাদের জ্ঞান ছিল তাঁদের অনুসরণ করেছিলে। এরপর তার ওপর লোহার হাতুড়ি দ্বারা এমন এক প্রচন্ড আঘাত করা হবে যার ফলে সে এমন চিৎকার করবে যা মানুষ ও জ্বীন ছাড়া কবরের পার্শ্বস্থ সবকিছু শুনতে পাবে।

কবরে মানুষের দেহে প্রাণ ফিরে আসার বিষয়টি আখেরাত সংশ্লিষ্ট বিষয় হেতু মানুষের বিবেক-বুদ্ধি এ পৃথিবীতে তা অনুধাবন করতে পারে না। মুসলমানের ঐক্যমত বিশ্বাস যে, মানুষ প্রকৃত মুমিন ও অফুরন্ত সুখের যোগ্য হলে সে কবরে আরাম উপভোগ করবে অথবা শাস্তির যোগ্য হলে সে শাস্তি পাবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “(জাহান্নামের) আগুন, যার সামনে তাদের সকাল সন্ধ্যায় হাযির করা হবে” [সূরা আল মুমিন (৪০) : আয়াত ৪৬]

আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, কবরের আযাব থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাও। কোনো সুস্থ বিবেক তা অস্বীকার করে না। মানুষ এ পার্থিব জীবনে তার সাদৃশ্য বা কাছাকাছি বস্তু দেখে। যেমন, ঘুমন্ত ব্যক্তি যদি স্বপ্নে অনুভব করে যে, তাকে কঠিনতর শাস্তি দেয়া হচ্ছে আর সে চিৎকার করে অন্যের সহযোগিতা কামনা করছে, তা কিন্তু তার পাশের ব্যক্তি কিছুই অনুভব করে না। তেমনি জীবন ও মৃত্যুর মধ্যে বিরাট তফাৎ রয়েছে।

কবরে শাস্তি দেহ ও প্রাণ (আত্মা) উভয়ের উপর হবে। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, কবর হচ্ছে আখেরাতের প্রথম মঞ্জিল, যে তা থেকে মুক্তি পাবে পরবর্তীতে আরো সহজে মুক্তি পাবে আর যে কবর থেকে মুক্তি পায়নি পরবর্তীতে আরো কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হবে। মুসলমানের উচিত যে, সে যেন কবরের আযাবের হাত থেকে বিশেষ করে নামাজের সালাম ফেরার পূর্বে আশ্রয় চায়, অনুরূপভাবে পাপ থেকে দূরে থাকে যা কবরের আযাব ও দোযখের আগুন ভোগ করার প্রধান কারণ।

“কবরের আযাব” বলা হয়, কারণ অধিকাংশ মানুষকে কবরে দাফন করা হয়। পানিতে ডুবে গেলে বা আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেলে কিংবা হিংস্র পশু খেয়ে ফেললেও আযাব বা আরাম ভোগ করবে। কবরের আযাব বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে, যেমন লোহা বা অন্য কিছুর হাতুড়ি দ্বারা আঘাত করা, অন্ধকার দিয়ে কবর পূর্ণ করে দেয়া, আগুনের বিছানা বিছিয়ে দেয়া, দোযখের দিকে দরজা খুলে দেয়া, তার খারাপ ও পাপ কাজসমূহ একজন কুৎশ্রী দুর্গন্ধময় কাপড় পরিহিত ব্যক্তির রূপ ধারণ করা ইত্যাদি। মুনাফিক বা কাফের হলে আযাব অব্যাহত থাকবে। পাপী মুমিনের পাপ অনুসারে আযাব বিভিন্ন প্রকার হবে আর সে আযাব নির্দিষ্ট সময়ের পর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পক্ষান্তরে মুমিন কবরে আরাম ও পরম সুখ উপভোগ করবে। কবর তার জন্য প্রশস্ত করে দেয়া হবে, আলো দ্বারা তার কবর সমুজ্জ্বল করা হবে, বেহেশতের দিকে দরজা খুলে দেয়া হবে যা দিয়ে আসবে বেহেশতের সুঘ্রান, বেহেশতের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে এবং তার সৎকাজসমূহ এমন সুদর্শন ব্যক্তির রূপ ধারণ করবে যার সংস্পর্শে সে পাবে স্বস্তি ও সন্তুষ্টি।

কেয়ামত ও তার কিছু নিদর্শনঃ
১ – আল্লাহ পাক এ বিশ্বকে চিরস্থায়িত্বের জন্য সৃষ্টি করেননি। বরং এমন এক দিন আসবে যখন এ দুনিয়া নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে আর সেদিনটাই হবে কেয়ামত দিবস। এটা একটি ধ্রুব সত্য যাতে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অবশ্যই কেয়ামত আসবে, তাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নাই, যারা কবরে (শুয়ে) আছে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাদের পুনরুত্থিত করবেন।” [সূরা আল হাজ্জ (২২) : আয়াত ৭] তিনি সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কাফেরদের সম্পর্কে আরো বলেন যে, “তারা বলে, আমাদের ওপর কখনোই কেয়ামত আসবে না; (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, আমার মালিকের কসম, হ্যাঁ, অবশ্যই তা তোমাদের ওপর আপতিত হবে” [সূরা সাবা (৩৪) : আয়াত ৩]

কেয়ামত নিকটবর্তী একটি সত্য। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “মানুষের জন্যে তাদের হিসাব নিকাশের মূহুর্তটি একান্ত কাছে এসে গেছে, অথচ তারা এখনো উদাসীনতার মাঝে (নিমজ্জিত হয়ে সত্য) বিমুখ হয়ে আছে” [সূরা আল আম্বিয়া (২১) : আয়াত ১] কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়াটা মানুষের অনুমানের মাপকাঠিতে নয়, তাদের জ্ঞান ও জানা-শুনার আলোকে নয়। বরং সেটা আল্লাহর অসীম জ্ঞান এবং দুনিয়ার গত হওয়া সময় হিসাবে খুবই নিকটবর্তী বলা হয়েছে। কেয়ামতের মুহুর্তটির জ্ঞান গায়েবের ইলম্ যা একমাত্র আল্লাহই জানেন। সৃষ্টির কাউকে তিনি এ বিষয়ে অবগত করেননি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “মানুষরা তোমাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, তুমি (তাদের) বলো, তার জ্ঞান তো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে; (হে নবী,) তুমি এ বিষয়টি কি করে জানবে? সম্ভবত কেয়ামত খুব নিকটেই (এসে গেছে)!” [সূরা আল্ আহ্যাব (৩৩) : আয়াত ৬৩] রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম কিছু নিদর্শনের বর্ণনা দিয়েছেন যা কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়া প্রমাণ করবে। তন্মধ্যে অন্যতম একটি নিদর্শন হচ্ছে দাজ্জালের আবির্ভাব। সে মানুষের জন্য এক মহা ফেতনা, বিপর্যয় ও পরীক্ষা। আল্লাহ পাক তাকে অলৌকিক কিছু কাজ করার ক্ষমতা দেবেন। ফলে, অনেক মানুষ ধোকার ধুম্রজালে আটকা পড়বে। সে আকাশকে নির্দেশ দিলে বৃষ্টি বর্ষণ করবে, ঘাসকে নির্দেশ দিলে উৎপন্ন হবে এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারবে, আরো অনেক কিছু। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এও উল্লেখ করেছেন যে, সে কানা হবে, দোযখ ও বেহেশতের দৃশ্য ও নমুনা নিয়ে আসবে। সে যেটাকে বেহেশত বলবে সেটা হবে দোযখ এবং যেটাকে দোযখ বলবে সেটা হবে বেহেশত। এ পৃথিবীতে সে চল্লিশ দিন বাস করবে। যার প্রথম একদিন এক বছরের সমান, আরেকদিন এক মাসের সমান, আরেকদিন এক সপ্তাহের সমান এবং অবশিষ্ট দিনগুলি স্বাভাবিক দিনের মত হবে। মক্কা ও মদিনা ছাড়া পৃথিবীর কোন স্থান অবশিষ্ট থাকবে না যেখানে সে প্রবেশ করবে না।

কেয়ামতের অন্যতম আর একটি নিদর্শন হচ্ছে পূর্ব দামেস্কের একটি সাদা মিনারায় ফজরের নামাজের সময় ঈসা বিন মরিয়ম আলাইহিস সালাতু আস্ সালাম-এর অবতরণ। তিনি লোকদের সাথে ফজরের নামাজ আদায় করবেন। অতঃপর দাজ্জালকে খুজবেন এবং হত্যা করবেন। কেয়ামতের আরেক নিদর্শন হচ্ছে পশ্চিম দিক হতে সূর্যোদয়। মানুষ যখন তা দেখবে তখন ভীত-সন্ত্রস্থ হয়ে ঈমান আনা আরম্ভ করবে কিন্তু সে ঈমান আর কোন কাজে আসবে না। এছাড়াও আরো অনেক কেয়ামতের নিদর্শন রয়েছে।

কেয়ামত ও তার কিছু নিদর্শনঃ (গতকালের পর)
২ – সর্বাপেক্ষা দুষ্ট ও অসৎ লোকের উপর কেয়ামত কায়েম হবে। কারণ, আল্লাহ পাক ইতিপূর্বে সুঘ্রাণময় বাতাস প্রেরণ করবেন যা মুমিনদের প্রাণ কবজ করে নেবে। মহান আল্লাহ যখন সমস্ত সৃষ্টিজগতকে নিশ্চিহ্ন করার ইচ্ছা করবেন তখন ফেরেশতাকে শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার নির্দেশ দেবেন। মানুষ তা শুনামাত্র অজ্ঞান হয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “(যখন প্রথমবার) শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, তখন আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তার (সব কিছুই) বেহুশ হয়ে যাবে, অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যা চান (তার কথা আলাদা); অতঃপর আবার শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, তখন তারা সবাই দন্ডায়মান হয়ে (সে বীভৎস দৃশ্য) দেখতে থাকবে।” [সূরা আঝ ঝুমার (৩৯) : আয়াত ৬৮] আর সে দিনটি হবে শুক্রবার। অতঃপর ফেরেশতাকুল মৃত্যু বরণ করবেন। মহান চিরঞ্জীব আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বেঁচে থাকবেন না।

৩ – মানুষের দেহ কবরে ক্ষয় হয়ে যায়। পিঠের নিম্নভাগের হাড়ের মূলাংশ ছাড়া মাটি সারা দেহ খেয়ে ফেলবে। আম্বিয়ায়ে কেরাম ও শহীদদের দেহ মাটি খেতে পারবে না। আল্লাহ পাক আকাশ হতে বৃষ্টিপাত করে দেহগুলোকে সজীব সতেজ করবেন। যখন তিনি মানুষের পুনরুত্থান ও পুনরুজ্জীবনের ইচ্ছে করবেন তখন শিংগায় ফুঁক দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা ইসরাফিলকে জীবিত করে শিংগায় দ্বিতীয়বার ফুঁক দেয়ার নির্দেশ দেবেন। অতঃপর তিনি সৃষ্টিকুলকে জীবিত করবেন এবং মানুষকে কবর থেকে প্রথমবার সৃষ্টি করার ন্যায় জুতাবিহীন, উলঙ্গদেহ ও খাতনাবিহীন অবস্থায় বের করবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যখন (দ্বিতীয় বার) শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে তখন মানুষগুলো সব নিজেদের কবর থেকে বেরিয়ে নিজেদের মালিকের দিকে ছুটতে থাকবে,” [সূরা ইয়াসিন (৩৬) : আয়াত ৫১] আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “সেদিন যখন এরা (নিজ নিজ) কবর থেকে বের হয়ে আসবে, তখন এমন দ্রুতগতিতে এরা দৌড়াতে থাকবে, (দেখে মনে হবে) তারা (সবাই বুঝি) কোনো শিকারের লক্ষ্যবস্তুর দিকে ছুটে চলেছে, তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনমিত, অপমান ও লাঞ্চনায় তাদের সবকিছু থাকবে আচ্ছন্ন; (তখন তাদের বলা হবে) এ হচ্ছে সেই (মহা) দিবস, তোমাদের কাছে যেদিনের ওয়াদা করা হয়েছিলো।” [সূরা আল মা’য়ারিজ (৭০) : আয়াত ৪৩ ও ৪৪]

কবর হতে সর্ব প্রথম যিনি বের হবেন তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম। অতঃপর মানুষকে হাশরের ময়দানের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। হাশরের ময়দান এক বিরাট প্রশস্ত বিস্তৃত স্থান। কাফেরদের হাশর হবে তাদের মুখের উপর অর্থাৎ চেহারা দিয়ে চলবে, পা দিয়ে নয়। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কিভাবে তাদের মুখমন্ডল দিয়ে হাশর হবে? তিনি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, যে মহান সত্তা তাদেরকে পা দ্বারা চালাতে পারেন তিনি তাদেরকে মুখ দিয়ে চালাতেও সক্ষম। আল্লাহর যিকর হতে বিমুখ ব্যক্তির হাশর হবে অন্ধাবস্থায়। সূর্য মানুষের অতি নিকটে আসবে, মানুষ নিজেদের আমল অনুসারে ঘামে আচ্ছন্ন থাকবে; কেউবা দু গোড়ালী পর্যন্ত, আর কেউ কোমর পর্যন্ত আর কেউ ঘামে সম্পূর্ণ ভাবে নিমজ্জিত থাকবে। কিন্তু সেদিন আল্লাহ নিজের ছায়ায় কয়েক প্রকার লোকদেরকে স্থান দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। আল্লাহর রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, সাত প্রকার লোককে আল্লাহ নিজের ছায়ায় স্থান দেবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না (১) ন্যায় পরায়ণ শাসক, (২) যে যুবক আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে বড় হলো, (৩) যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদের সঙ্গে ঝুলে থাকে, (৪) যে দু’ব্যক্তি আল্লাহর জন্যে ভালবেসে একত্রিত হয়েছে এবং তাঁরই জন্যে ভালবেসে বিচ্ছিন্ন হয়েছে, (৫) সে ব্যক্তি যাকে এক সম্ভ্রান্ত ও সুন্দরী মহিলা (ব্যভিচারের জন্য) আহ্বান করলে সে বলল, আমি আল্লাহকে ভয় করি, (৬) সে ব্যক্তি যে এত গোপনীয়তা রক্ষা করে দান করে যে তাঁর বাম হাত জানেনা যে তাঁর ডান হাত কি খরচ করেছে, (৭) আর সে ব্যক্তি যে আল্লাহকে নিভৃত নির্জন স্থানে স্মরণ করে এবং তাঁর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু বের হয়।

এটা পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট নয় বরং মহিলাদেরকেও কৃত কর্মের হিসাব দিতে হবে। যদি ভাল হয় তো ভাল প্রতিদান পাবে আর মন্দ হলে মন্দ ফলাফল ভোগ করবে। পুরুষের প্রতিদান ও হিসাব-নিকাশ যেমন, তেমনি মহিলারও। এতে কোন ধরণের বৈষম্য নেই। সেদিন মানুষের চরম পিপাসা লাগবে। এবং সে দিনটি হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। কিন্তু এ দীর্ঘ সময় মুমিনদের কাছে এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের মত দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যাবে।

মুসলমানগণ রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম-এর “হাওযে কাওসার”-এ আসবে এবং পান করবে। হাওযে কাওসার, আল্লাহর এক বিশেষ দান যা তিনি আমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লামকে দান করেছেন। কেয়ামতের দিবসে তাঁর উম্মাত এর পানি পান করবে। উক্ত হাওযের পানি দুধের চেয়েও সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি, মিস্কের চেয়েও সুগন্ধময় এবং বাসন-পত্র আকাশের নক্ষত্রের সমান। যে একবার পান করবে সে আর কখনও তৃঞ্চার্ত হবে না।

মানুষ হাশরের মাঠে এক সুদীর্ঘ কাল বিচার ফয়সালা ও হিসাব-নিকাশের অপেক্ষা করবে। সূর্যের প্রচন্ড তাপে ও কঠিন পরিস্থিতিতে যখন অপেক্ষা ও দাড়িয়ে থাকার কাল দীর্ঘ হয়ে যাবে, তখন বিচার শুরু করার জন্য মানুষেরা আল্লাহর নিকট সুপারিশ করতে লোক খুজবে। অতঃপর তাঁরা আদম আলাইহিস ছালাতু আস ছালাম এর কাছে আসলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করবেন। অনূরূপভাবে হযরত নূহ আলাইহিস ছালাতু আস ছালাম, ইবরাহিম আলাইহিস ছালাতু আস ছালাম, মুসা আলাইহিস ছালাতু আস ছালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস ছালাতু আস ছালাম একের পর এক অক্ষমতা ও অপারগতা পেশ করবেন। অবশেষে হযরত মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম এর নিকট আসলে তিনি বলবেন, আমি এ জন্য প্রস্তুত আছি। তিনি আরশের নিচে সেজদাবনত হয়ে আল্লাহর এমন কিছু প্রশংসার বাক্য দিয়ে প্রশংসা করবেন যা সেদিন আল্লাহ তায়ালা তাকে শিখিয়ে দেবেন। অতঃপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম)! তোমার শির তুল এবং প্রার্থনা কর, তোমার প্রার্থনা গৃহিত হবে এবং সুপারিশ কর, কবুল করা হবে। আল্লাহ তায়ালা ফয়সালা ও হিসাব শুরু হওয়ার অনুমতি প্রদান করবেন। উম্মাতে মুহাম্মদীয়ার হিসাব প্রথমেই শুরু হবে।

সর্ব প্রথম বান্দার নামাজ সম্পর্কে হিসাব নিকাশ শুরু হবে, যদি তাঁর নামাজ বিশুদ্ধ ও গৃহিত হয়, অবশিষ্ট অন্যান্য আমলের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হবে। অন্যথায় তাঁর সমস্ত আমল প্রত্যাখ্যাত হবে।

অতঃপর বান্দাকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে, (১) তাঁর জীবন কোথায় অতিবাহিত করল; (২) যৌবন কাল কোথায় ব্যয় করল; (৩) ধন-সম্পদ কি ভাবে উপার্জন করল; (৪) এবং কোথায় ব্যয় করল; (৫) এবং তাঁর ইলম অনুসারে আমল কি করল। সেদিন রক্তপাত সম্পর্কে প্রথমে ফয়সালা শুরু হবে। বিনিময়, দান ও প্রতিশোধ নেয়া সেদিন ভাল-মন্দ উভয় কর্ম দ্বারা সম্পন্ন হবে। ফলে, এক ব্যক্তির ভাল কাজগুলো তাঁর প্রতিপক্ষকে দেয়া হবে। যদি পুন্যময় কাজ শেষ হয়ে যায়, প্রতিপক্ষের গুনাহের কাজগুলো উক্ত ব্যক্তিকে দেয়া হবে।

পুলসেরাত স্থাপন করা হবে। আর তা চুলের চেয়ে সুক্ষ, তরবারীর চেয়ে ধারালো পুল যা জাহান্নামের পৃষ্ঠে স্থাপন করা হবে। মানুষ নিজের আমল অনুসারে এ পুল পাড়ি দেবে। কেউ চোখের পলকের গতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগতি সম্পন্ন ঘোড়ার গতিতে এ পুল অতিক্রম করবে। আবার কেউ কেউ দু’হাটুর উপর অতিক্রম করবে। সে পুলের উপর কিছু কুকুর থাকবে যারা মানুষকে ধরে দোযখে নিক্ষেপ করবে। কাফের ও গুনাহগার মুমিনগন (যাদের জন্য আল্লাহ দোযখের ফয়সালা দেবেন) পুল হতে দোযখে পড়ে যাবে। কাফেররা তো চিরতরে দোযখে থাকবে, তবে পাপীরা আল্লাহ কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করার পর জান্নাত লাভ করবে। আল্লাহ পাক নবী, রাসূল ও সৎলোকদের মধ্যে যাদের জন্য মর্জি হবে সুপারিশের অনুমতি প্রদান করবেন যেন তাঁরা দোযখে নিক্ষিপ্ত মুমিনদের জন্য সুপারিশ করে। অতঃপর আল্লাহ পাক তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবেন।

জান্নাত বাসী পুলসিরাত অতিক্রম করার সময় দোযখ ও বেহেশতের মধ্যবর্তী এক স্থানে থেমে যাবে যেন পরস্পর বিনিময় ও প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে। ফলে এমন কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যার কাছে অপর ভাইয়ের হক রয়ে গেছে যতক্ষন না সে এর বিনিময় নিয়ে নেয় এবং একজন অপর জনের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যায়। যখন জান্নাত বাসী জান্নাতে এবং দোযখীরা দোযখে প্রবেশ করবে তখন মৃত্যুকে এক ভেড়ার আকৃতিতে পেশ করে তাদের (উভয় দলের) দৃষ্টির সামনে যবেহ করা হবে। অতঃপর বেহেশতবাসীকে বলা হবে, চিরস্থায়ী হও এর পর কোন মৃত্যু নেই; হে দোযখবাসী! তোমাদের জন্য চিরন্ততা, এর পর কোন মৃত্যু নাই। কেউ যদি আনন্দ ও উল্লাসের কারণে মৃত্যু বরণ করত, বেহেশতবাসীরা মৃত্যু বরণ করত। আর কেউ যদি দুঃখ ও চিন্তায় মরে যেত, দোযখীরা মৃত্যু বরণ করত।

আল্লাহ তায়ালা বলেন যে, “তোমরা (দোযখের) সেই কঠিন আগুনকে ভয় করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, (আল্লাহ তায়ালাকে) যারা অস্বীকার করে তাদের জন্যেই (এটা) প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।” [সূরা আল বাক্বারা (২) : আয়াত ২৪] রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম স্বীয় সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের এ আগুন দোযখের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। তারা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম)! যদিও এটা যথেষ্ট ছিল। তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম) বলেন, উত্তাপ ও গরম ৬৯ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে দোযখের আগুনে।

দোযখের সাতটি স্তর। প্রত্যেক স্তরের শাস্তি অন্য স্তরের শাস্তি থেকে কঠোর। আমল অনুসারে প্রত্যেক স্তরের জন্য পৃথক পৃথক লোক রয়েছে। মুনাফিকরা জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে। এর শাস্তি সর্বাপেক্ষা কঠোর। কাফেরদের শাস্তি দোযখে অব্যাহত থাকবে, বন্ধ হবে না। বরং যত বারই জ্বলে পুড়ে যাবে পুনরায় অধিকতর শাস্তি ভোগ করার জন্য চামড়া পরিবর্তন করা হবে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে তাদের আমি অচিরেই জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে দেবো, অতঃপর (পুড়ে যখন) তাদের দেহের চামড়া গলে যাবে তখন আমি তার বদলে নতুন চামড়া বানিয়ে দেবো, যাতে করে তারা আযাব ভোগ করতে পারে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মহা পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ কুশলী।” [সূরা আন্ নিসা (৪) : আয়াত ৫৬]

তিনি আরো বলেন, “যারা (দুনিয়ায়) আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করেছে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, (তখন) তারা মরে যাবে তাদের প্রতি এমন আদেশও কার্যকর হবে না, তাছাড়া তাদের আযাবও কোনোরকম লঘু করা হবে না; আমি প্রতিটি অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি” [সূরা ফাতির (৩৫) : আয়াত ৩৬]

জাহান্নামীদেরকে শৃংখলাবদ্ধ করা হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “সেদিন তুমি অপরাধীদের সবাইকে শৃংখলিত অবস্থায় দেখতে পাবে, ওদের পোশাক হবে আলকাতরার (মতো বীভৎস), তাদের মুখমন্ডল আগুন আচ্ছাদিত করে রাখবে।” [সূরা ইবরাহীম (১৪) : আয়াত ৪৯-৫০] জাহান্নামীদের খাবার হবে যাক্কুম বৃক্ষ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অবশ্যই (জাহান্নামে) যাক্কুম (নামের একটি) গাছ থাকবে, (তা হবে) গুনাহগারদের (জন্যে সেখানকার) খাদ্য, গলিত তামার মতো তা পেটের ভেতর ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত গরম পানির মতো!” [সূরা আদ দুখান (৪৪) : আয়াত ৪৩-৪৬] রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম বলেছেন, যদি যাক্কুম বৃক্ষের এক ফোটা এ দুনিয়ায় পড়ে দুনিয়াবাসীর জীবন-যাপনকে তিক্ত করে দেবে। আর যার খাদ্যই তা হবে তার কি অবস্থা হবে? রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম-এর নিম্নোক্ত বানীটি জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা ও প্রচন্ডতা এবং জান্নাতের সুখ বিলাসের মহত্ব খুব পরিস্কার ভাবে বলে দেয়। পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ভোগ বিলাস ও সুখ আনন্দ উপভোগকারী কাফের ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিমিষের জন্য নিক্ষেপ করে বলা হবে, তুমি কি কখনোও সুখ শান্তি ভোগ করেছ? সে বলবে, না, সুখ শান্তির ছোঁয়াও আমি পাইনি। এক মুহুর্তে দুনিয়ার সমস্ত ভোগ বিলাস ভুলে যাবে। অনুরূপভাবে মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দুঃখী মানুষটাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো মাত্র জিজ্ঞেস করা হবে, তুমি দুঃখ ও ক্লেশ বলতে কিছু ভোগ করেছিলে? সে বলবে, না, আমি কখনোও দুঃখ-কষ্ট ভোগ করিনি। এক নিমিষে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট, দারিদ্রতা ভুলে যাবে।

মহান আল্লাহ তায়ালা সেদিন সম্পর্কে আরো বলেন, “(পাপীদের বলা হবে,) হে অপরাধীরা, তোমরা (আজ আমার ঈমানদার বান্দাদের কাছ থেকে) আলাদা হয়ে যাও। হে বনী আদম, আমি কি তোমাদের (এ মর্মে) নির্দেশ দেইনি যে, তোমরা শয়তানের গোলামী করো না, কেননা সে হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন, (আমি কি তোমাদের একথা বলিনি,) তোমরা শুধু আমারই এবাদাত করো, (কেননা) এটিই হচ্ছে সহজ সরল পথ। (আর শয়তান)- সে তো (তোমাদের আগেও) অনেক লোককে (এভাবে) পথভ্রষ্ট করে দিয়েছিলো; (তা দেখেও) তোমরা কি বুঝতে পারলে না? (হ্যাঁ,) এ (হচ্ছে) সেই জাহান্নাম, যার ওয়াদা তোমাদের সাথে (বার বার) করা হয়েছিলো। আজ (সবাই মিলে) তাতে গিয়ে প্রবেশ করো, যা (দুনিয়ার জীবনে) তোমরা অস্বীকার করছিলে! আজ আমি তাদের মুখের ওপর সীলমোহর দেবো, (আজ) তাদের হাতগুলো আমার সাথে কথা বলবে, তাদের পা-গুলো (আমার কাছে) সাক্ষ্য দেবে, এরা কি কাজ করে এসেছে। (অথচ) আমি যদি চাইতাম, (দুনিয়ায়) আমি এদের (চোখ থেকে) দৃষ্টিশক্তি বিলোপই করে দিতাম, তেমনটি করলে (তুমিই বলো) এরা কিভাবে (তখন চলার পথ) দেখে নিতো! (তাছাড়া) আমি যদি চাইতাম তাহলে (কুফরীর কারণে) তাদের নিজ নিজ জায়গাই তাদের আকৃতি বিনষ্ট করে দিতে পারতাম, সে অবস্থায় এরা সামনের দিকেও যেতে পারতো না, আবার পেছনেও ফিরে আসতে পারতো না” [সূরা ইয়াসিন (৩৬) : আয়াত ৫৯-৬৮] “সেদিন (যাবতীয়) দুর্ভোগ তাদের জন্যে, যারা (এসব সত্যকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে! (হে অবিশ্বাসীরা,) কিছুদিনের জন্যে তোমরা এখানে খেয়ে নাও এবং কিছু ভোগ আস্বাদনও করে নাও, নিঃসন্দেহে তোমরা হচ্ছো অপরাধী! (যাবতীয়) দুর্ভোগ সেদিন তাদের (জন্যে) যারা (এসব সত্যকে) মিথ্যা সাবস্ত্য করেছে। এ যালেমদের অবস্থা হচ্ছে, এদের যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর দরবারে নত হও, তখন তারা নত হয় না। (যাবতীয়) দুর্ভোগ সেদিন তাদের (জন্যে) যারা (এসব সত্যকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে।” [সূরা আল মুরসালাত (৭৭) : আয়াত ৪৫-৪৯]

জান্নাতের বিবরণ
জান্নাত চিরস্থায়ীত্ব ও মর্যাদার আবাস। আল্লাহর সৎবান্দারা এমন নেয়ামত উপভোগ করবে যা চক্ষু কখনোও দেখেনি, কান কখনোও শুনেনি, এমন কি মানুষের অন্তরে কখনোও ধারণা ও কল্পনা রূপেও উদিত হয়নি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, কেউ জানেনা যে, তাঁর জন্য জান্নাতে তাঁদের আমলের বিনিময়ে চক্ষুশীতলকারী কি কি সামগ্রী যোগাড় রাখা হয়েছে। মুমিনগণের আমল অনুসারে বেহেশতে তাঁদের স্তর ও শ্রেনী ভিন্ন হবে। আল্লাহ পাক বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই কেয়ামতের দিন তাদের মহামর্যাদা দান করবেন” [সূরা আল মুজাদালাহ (৫৮) : আয়াত ১১]

জান্নাতবাসীরা নিজের কামনা ও রুচি অনুযায়ী যা ইচ্ছা পানাহার করবেন। তাতে আছে স্বচ্ছ পানির নহর, নির্মল দুধের নহর, যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, পরিশোধিত মধুর নহর, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু শরাবের নহর। তাদের সে শরাব দুনিয়ার শরাবের মতো নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ঘুরে ঘুরে বিশুদ্ধ সুরা তাদের পরিবেশন করা হবে, শুভ্র ও সমুজ্জ্বল- যা (হবে) পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু, তাতে কোনো রকম মাথা ঘুরানির মতো ক্ষতিকর কিছু থাকবে না এবং তার কারণে তারা মাতালও হবে না, তাদের সাথে (আরো) থাকবে সলজ্জ, নম্র ও আয়তলোচনা তরুণীরা। তারা যেন (সযত্নে) লুকিয়ে রাখা ডিমের মতো উজ্জ্বল গৌর বর্ণ (সুন্দরী)।” [সূরা আস্ ছাফফাত (৩৭) : আয়াত ৪৫-৪৯] আল্লাহর রাসূল বলেন, জান্নাতের এক তরুণী যদি দুনিয়াবাসীকে একবার উঁকি মেরে দেখে, আসমান ও যমীন আলোকিত হয়ে যাবে এবং ভরে দেবে সুগন্ধে। জান্নাতীদের সর্বাপেক্ষা বড় নেয়ামত মহান রাব্বুল আলামিনের সাক্ষাত লাভ। তাঁরা পেশাব পায়খানা করবে না, ফেলবে না থুথু। চিরুণী হবে স্বর্ণের, ঘাম মিস্কের। এ নেয়ামত অব্যাহত থাকবে কখনোও বন্ধ হবে না। রাসূল (ছা.) বলেন, যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে, সে সব সময় জান্নাতের নেয়ামত উপভোগ করবে কোন দিন এ নেয়ামত থেকে সে বঞ্চিত হবেনা। জান্নাতের সর্ব নিম্ন নেয়ামতও পৃথিবী ও পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে দশ গুণ শ্রেয়। আর এই নেয়ামত সেই ব্যক্তি লাভ করবে যাকে সর্বশেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “(হে নবী,) তুমি (তাদের) বলো, আমি কি তোমাদের এগুলোর (অর্থাৎ দুনিয়ার ভোগ-বিলাসের) চাইতে উৎকৃষ্ট কোনো বস্তুর কথা বলবো? (হ্যাঁ, সে উৎকৃষ্ট বস্তু হচ্ছে তাদের জন্যে,) যারা আল্লাহকে ভয় করে, এমন সব লোকদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে রয়েছে (মনোরম) জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে প্রবহমান থাকবে (অগনিত) ঝর্ণাধারা এবং তারা সেখানে অনাদিকাল থাকবে, আরো থাকবে (তাদের) পূত পবিত্র সংগী ও সংগীনীরা- (সর্বোপরি) থাকবে আল্লাহ তায়ালার (অনাবিল) সন্তুষ্টি।” [সূরা আলে ইমরান (৩) : আয়াত ১৫] “(সেই মনোরম জান্নাতে) তারা (সুসজ্জিত) আসনে হেলান দিয়ে বসবে, সেখানে সূর্যের (তাপ) যেমন তারা দেখবে না, তেমনি দেখবে না কোনোরকম শীত (এর প্রকোপ), তাদের ওপর (জান্নাতে) তার গাছের ছায়া ঝুঁকে থাকবে, তার ফলপাকড়াকে তাদের আয়ত্বাধীন করে দেয়া হবে। তাদের (সামনে খাবার) পরিবেশন করা হবে রৌপ্য নির্মিত পাত্রে আর কাঁচের পেয়ালায় এবং তা হবে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ, রূপালী স্ফটিক পাত্র, (যার সবটুকুই) পরিবেশনকারীরা যথাযথভাবে পূর্ণ করে রাখবে। সেখানে তাদের এমন এক (অপূর্ব) সুরা পান করানো হবে, যার সাথে মেশানো হবে ‘যানজাবীল’ (নামের এক মূল্যবান সুগন্ধ), তাতে রয়েছে জান্নাতের এক অমিয় ঝর্ণা, যার নাম রাখা হয়েছে ‘সালসাবীল’। তাদের চারদিকে ঘোরাঘুরি করবে একদল কিশোর বালক, যারা (বয়সের ভারে বৃদ্ধ হয়ে যাবে না,) চিরকাল কিশোর থাকবে, যখনি তুমি তাদের দিকে তাকাবে মনে হবে এরা বুঝি কতিপয় ছড়ানো ছিটানো মুক্তা। সেখানে যখন যেদিকে তুমি তাকাবে, দেখবে শুধু নেয়ামতেরই সমারোহ, আরও দেখবে (নেয়ামতে উপচে পড়া) এক বিশাল সাম্রাজ্য। বেহেস্তবাসীদের পরনের কাপড় হবে অতি সুক্ষ্ম সবুজ রেশম ও মোটা মখমল, তাদের পরানো হবে রূপার কংকন, (তদুপরি) তাদের মালিক সেদিন তাদের ‘শরাবান তহুরা’ (মহাপবিত্র উৎকৃষ্ট পানীয়) পান করাবেন, (তাদের মালিক বলবেন, হে আমার বান্দারা,) এ হচ্ছে তোমাদের জন্যে (আমার) পুরস্কার এবং তোমাদের (যাবতীয়) চেষ্টা সাধনার স্বীকৃতি!” [সূরা আদ্ দাহর (৭৬) : আয়াত ১৩-২২] “সেখানে তাদের জন্যে (মজুদ) থাকবে (নানা প্রকারের) ফলমূল, (আরো থাকবে) তাদের জন্যে তাদের কাংখিত (ও বাঞ্ছিত) সব কিছু, পরম দয়ালু মালিকের পক্ষ থেকে তাদের (স্বাগত জানিয়ে) বলা হবে, (তোমাদের ওপর) সালাম (বর্ষিত হোক)।” [সূরা ইয়াসিন (৩৬) : আয়াত ৫৭-৫৮]

মন্তব্য করুন

Back to top button