শয়তানের কুমন্ত্রণা, আক্রমণ ও ওয়াসওয়াসা থেকে আত্মরক্ষার উপায়
শয়তান মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অসংখ্য রাস্তা বেছে নিয়েছে। প্রয়োজনে নব উদ্ভাবিত পন্থায় মানুষকে ধোঁকা দিতে সদা প্রস্ত্তত। আর মানুষেরও উচিত তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে কুরআন-সুন্নার যথাযথ অনুসরণ করার মাধ্যমে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। ‘মুখতাছার যাদুল মা‘আদ’ গ্রন্থকার বলেন, শয়তানের সাথে জিহাদ দুই প্রকার : (১) যেসব সন্দেহের কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শয়তানের সেসব ওয়াসওয়াসার বিরুদ্ধে জিহাদ করা। (২) যেসব পাপ কাজের জন্য আসক্তি নিক্ষেপ করে তা প্রতিহত করতে জিহাদ করা। হুযায়ফা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوبِ كَالْحَصِيرِ عُودًا عُودًا، فَأَيُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا، نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ، وَأَيُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا، نُكِتَ فِيهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ، حَتَّى تَصِيرَ عَلَى قَلْبَيْنِ، عَلَى أَبْيَضَ مِثْلِ الصَّفَا فَلَا تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ –
‘চাটাই বুননের মত ফিৎনা মানুষের অন্তরে এক এক করে (শয়তানের মাধ্যমে) পেশ করা হয়। যে অন্তর তা গ্রহণ করে নেয় সে অন্তরে একটি করে কালো দাগ দেওয়া হয়। আর যে অন্তর তা প্রত্যাখ্যান করে সে অন্তরে একটি করে শুভ্রোজ্জ্বল চিহ্ন পড়ে। এমনি করে অন্তরগুলো দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি উল্টানো কালো কলসির ন্যায় হয়ে যায়। প্রবৃত্তি তার মধ্যে যা উপস্থাপন করে তা ব্যতীত ভাল-মন্দ কিছুই বুঝে না। আর অপরটি সাদা পাথরের ন্যায়; যতদিন আসমান ও যমীনের স্থায়ীত্ব ততদিন কোন ফিৎনা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[15]
শয়তান থেকে আত্মরক্ষার জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। নিম্নে শয়তান থেকে বাঁচার জন্য কুরআন-সুন্নার আলোকে কিছু আমলের উল্লেখ করা হ’ল :
১। সূরা বাক্বারাহ পাঠ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لَا تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ الْبَقَرَة ‘তোমরা নিজেদের ঘর-বাড়িগুলো কবরে পরিণত কর না। যে বাড়িতে সূরা বাক্বারাহ পাঠ করা হয়, অবশ্যই সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে’।[16]
২। ছাদাক্বা করা : কায়েস ইবনে আবি গারাযা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, يَا مَعْشَرَ التُّجَّارِ، إِنَّ الشَّيْطَانَ وَالإِثْمَ يَحْضُرَانِ البَيْعَ فَشُوبُوا بَيْعَكُمْ بِالصَّدَقَةِ، ‘হে ব্যবসায়ী সমাজ! ব্যবসা ক্ষেত্রে শয়তান ও পাপ এসে উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমরা ব্যবসায় (শয়তান ও পাপ মুক্ত করতে) ছাদাক্বা জড়িত কর’।[17]
৩। আয়াতুল কুরসী পাঠ : আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যাকাতুল ফিতর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। আমি তিন রাত চোর আটক করলাম। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সে ২ রাতে ছুটে গেল। তৃতীয় রাতে সে বলল, আমাকে ছেড়ে দাও তোমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিব, যা দ্বারা তোমার উপকার হবে। আমি বললাম, সেগুলো কি? সে বলল, যখন তুমি ঘুমাতে যাবে তখন ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করবে। তাহ’লে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত করা হয়। আর সকাল পর্যন্ত তার নিকট শয়তান আসতে পারে না। ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করার পর তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা। তুমি কি জান সে কে? সে হ’ল চিরমিথ্যাবাদী কিন্তু তোমার সাথে সত্য বলেছে। সে হ’ল শয়তান’।[18]
৪। শয়তানের হাত থেকে বাঁচার যিকির : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ، ‘যে লোক একশ’বার এ দো‘আটি পড়বে, (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তাঁরই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতা বান)। তাহ’লে দশটি গোলাম আযাদ করার সমান ছওয়াব হবে। তার জন্য ১০০টি ছওয়াব লিখা হবে একশটি গুনাহ মাফ করা হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান হ’তে নিরাপদ থাকবে’।[19]
শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচতে সকাল-সন্ধ্যার দো‘আ : আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বললেন, مُرْنِي بِشَيْءٍ أَقُولُهُ إِذَا أَصْبَحْتُ وَإِذَا أَمْسَيْتُ؟ قَالَ: قُلْ: اللَّهُمَّ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ، قَالَ: قُلْهُ إِذَا أَصْبَحْتَ، وَإِذَا أَمْسَيْتَ، وَإِذَا أَخَذْتَ مَضْجَعَك ‘আমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিন যেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় আমি পড়তে পারব। তিনি বলেন, ‘বল, ‘আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরজি ‘আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাত, রাববা কুল্লা শাইয়িন ওয়া মালিকিহী ওয়া আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি নাফসী ওয়া শাররিশ শাইত্বান ওয়া শিরকিহী। ‘তিনি বলেন, সকাল-সন্ধ্যা এবং যখন বিছানায় শুইতে যাবে তখন এটি পাঠ করবে’।[20] সকাল-সন্ধ্যা দো‘আটি পাঠ করলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবে ইনশাআল্লাহ।
রাসূলের পক্ষ থেকে হাসান-হুসাইনকে ঝাড়ফুঁক :
ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَوِّذُ الْحَسَنَ، وَالْحُسَيْنَ، يَقُولُ: أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ، قَالَ: وَكَانَ أَبُونَا إِبْرَاهِيمُ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيلَ، وَإِسْحَاقَ- ‘নবী করীম (ছাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে ঝাড়ফুঁক করে বলতেন, ‘আঊযুবি কালিমা-তিল্লাহিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হা-ম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিল লা-ম্মাতি’ এবং এই ঝাড়ফুঁক দ্বারা আমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ) ইসহাক ও ইসমাঈলকে ঝাড়ফুঁক করতেন।[21]
ঘুমের মাঝে ভয় পেলে :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যদি ঘুমের মধ্যে ভয় পায় তবে যেন সে এই দো‘আ পাঠ করে, তাহ’লে তার কোন অনিষ্ট হবে না’।أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهِ وَعِقَابِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ ‘আঊযু বিকালিমা-তিল্লাহিত-তা-ম্মা-তি মিন গাযাবিহী ওয়া ইক্বা-বিহী ওয়া শার্রি ‘ইবা-দিহী ওয়া মিন হামাযা-তিশ শায়াত্বীনি ওয়া আই ইয়াহযুরূন’।[22]
গাধার ডাক শুনলে : নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা মোরগের ডাক শুনলে আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে কারণ সে ফেরেশতা দেখেছে। আর গাধার ডাক শুনলে শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কেননা সে শয়তান প্রত্যক্ষ করেছে’।[23]
জিন ও বদনযর হ’তে আশ্রয় : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিন এবং মানুষের কু-দৃষ্টি হ’তে আশ্রয় চাইতেন। এরপর সূরা ফালাক্ব এবং নাস নাযিল হ’লে তিনি এ সূরা দু’টি গ্রহণ করেন এবং বাকীগুলো পরিত্যাগ করেন।[24] বাচ্চাদেরকে বদনযর থেকে রক্ষা করতে উক্ত সূরা দু’টি পাঠ করা যরূরী।
পেশাব-পায়খানায় শয়তান থেকে আশ্রয় : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ هَذِهِ الْحُشُوشَ مُحْتَضَرَةٌ، فَإِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الْخَلَاءَ فَلْيَقُلْ: أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ ‘এই সকল পায়খানার স্থানে সাধারণত শয়তানের উপস্থিতি থাকে। অতএব তোমাদের কেউ যখন পায়খানায় যাওয়ার ইচ্ছা করে তখন সে যেন বলে, ‘আউযুবিল্লাহি মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ’। অর্থাৎ ‘আমি আল্লাহর নিকট স্ত্রী ও পুরুষ উভয় শয়তানের খারাবী থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[25]
অন্য আরেকটি বর্ণনায় আনাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) যখন সৌচাগারে যেতেন, তখন বলতেন, اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الخُبُثِ وَالخَبَائِثِ ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবা-য়িছ’। অর্থ: হে আল্লাহ আমি স্ত্রী ও পুরুষ শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[26]
কুরআন তেলাওয়াতকালে : কুরআন তেলাওয়াতকালে শয়তান থেকে আশ্রয় নিতে মহান আল্লাহ বলেন,فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ‘যখন তুমি কুরআন তেলাওয়াত কর, তখন (শুরুতে) বিতাড়িত শয়তান হ’তে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর’ (নাহল ১৬/৯৮)।
শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচতে বেশী বেশী দো‘আ করতে হবে। যেমন : اللهم اني اعوذبك من همزات الشياطين ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন হামাযা-তিশ শায়াত্বীন’ (মুমিনূন ২৩/৯৭)।
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلَاةِ بِاللَّيْلِ كَبَّرَ، ثُمَّ يَقُولُ: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ، ثُمَّ يَقُولُ: اللهُ أَكْبَرُ كَبِيْرًا، ثُمَّ يَقُولُ: أَعُوذُ بِاللهِ السَّمِيعِ العَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন রাতে ছালাতে দাঁড়াতেন তখন ছালাত শুরু করে বলতেন, ‘আমি অভিশপ্ত শয়তান এবং তার কুমন্ত্রণা, ঝাঁড়ফুঁক ও যাদুমন্ত্র হ’তে সর্বশ্রোতা ও সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[27]
উত্তম কথা বলে শত্রকে বন্ধু বানানোর মাধ্যমে মানবীয় শয়তানকে প্রতিহত করা এবং তার অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করা। মহান আল্লাহ বলেন,وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ ‘ভাল ও মন্দ কখনো সমান হ’তে পারে না। তুমি উত্তম দ্বারা (অনুত্তমকে) প্রতিহত কর। ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে (তোমার) অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/৩৪)।
আবার জিন শয়তানের অনিষ্ট হ’তে বাঁচার পন্থা হিসাবে মহান আল্লাহ বলেন,وَإِمَّا يَنْزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৩৬)।
তবে একথা সব সময় মনে রাখতে হবে যে, ‘শয়তানকে কখনো গালি দেওয়া যাবে না। কারণ শয়তানকে গালি দিলে তার ক্ষমতা বেড়ে যায়। আবু মালিহা একজন ছাহাবী হ’তে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে একই উটের পিঠে আরোহণ করলাম। এমন সময় উট লাফালাফি করতে থাকলে আমি বললাম, শয়তানের সর্বনাশ হোক। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,لَا تَقُلْ تَعِسَ الشَّيْطَانُ، فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَعَاظَمَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الْبَيْتِ، وَيَقُولُ: بِقُوَّتِي، وَلَكِنْ قُلْ: بِسْمِ اللهِ فَإِنَّكَ إِذَا قُلْتَ ذَلِكَ تَصَاغَرَ حَتَّى يَكُونَ مِثْلَ الذُّبَابِ ‘তুমি বল না শয়তানের সর্বনাশ হোক! কেননা এরূপ বললে শয়তান অহংকারে ফুলে উঠে ঘরের সমান হয়ে যায় এবং বলতে থাকে আমি খুবই শক্তিমান। কিন্তু ‘বিসমিল্লাহ’ বল। কারণ যদি বিসমিল্লাহ বল তবে সে আস্তে আস্তে ছোট হয়ে থাকে। এমনকি মাছির সমান হয়ে যায়’।[28]
সহবাস কালে দো‘আ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ قَالَ بِاسْمِ اللهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا، فَقُضِيَ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ لَمْ يَضُرُّهُ، ‘তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলনের পূর্বে যদি বলে ‘আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শাইত্বানা মা রাযাক্বতানা’। অতঃপর এ মিলনে যদি কোন সন্তান হয় তবে তাকে কোন ক্ষতি করতে পারবে না’। মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, ‘শয়তান তাকে কখনো কোন ক্ষতি করতে পারবে না’।[29]
বাড়ীতে প্রবেশকালে যিকির : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ، وَعِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: لَا مَبِيتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يُذْكَرِ اللهَ عِنْدَ دُخُولِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ، فَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ: أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيتَ وَالْعَشَاءَ ‘কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহর নাম স্মরণ করলে শয়তান তার সঙ্গীদের বলে, তোমাদের রাত্রি যাপন ও রাতের আহারের কোন ব্যবস্থা হ’ল না। কিন্তু কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গা পেয়ে গেলে। সে আহারের সময় আল্লাহকে স্মরণ না করলে শয়তান বলে, তোমাদের রাতের আহারের ও শয্যাগ্রহণের ব্যবস্থা হয়ে গেল’।[30]
সুতরাং শয়তানকে প্রতিহত করার একটি বড় মাধ্যম হ’ল প্রতিটি কাজে আল্লাহকে স্মরণ করা। অন্যথা শয়তান তার সাথে অংশগ্রহণ করে।
তিলাওয়াতে সিজদাহ : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, বনী আদম যখন সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করে সিজদায় যায়, তখন শয়তান কাঁদতে কাঁদতে দূরে সরে পড়ে এবং বলতে থাকে হায়! আমার দুর্ভাগ্য! বনী আদম সিজদার জন্য আদিষ্ট হ’ল। তারপর সে সিজদা করল এবং তার বিনিময়ে জান্নাত নির্ধারিত হ’ল। আর আমাকে সিজদার জন্য আদেশ করা হ’লে আমি তা অস্বীকার করলাম ফলে জাহান্নাম নির্ধারিত হ’ল।[31]
জামা‘আতে পায়ে পা মিলানো : জামা‘আতে কাতারবদ্ধ হওয়ার সময় দু’জনের মাঝের ফাঁক বন্ধ করতে হবে। কারণ দু’জনের মাঝের ফাঁকে শয়তান দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ، ‘কাতারের মাঝে শয়তানের জন্য জায়গা রেখ না’।[32]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন,رُصُّوْا صُفُوفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ، فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنِّيْ لَأَرَىْ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ كَأَنَّهَا الْحَذَفُ ‘তোমরা কাতার সমূহে পরস্পরে মিলে দাঁড়াবে এবং পরস্পরকে কাছে টেনে নিবে। তোমাদের ঘাড় সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখবে। আমি ঐ সত্তার কসম করে বলছি, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, নিশ্চয়ই আমি শয়তানকে দেখি সে কাতারের ফাঁক সমূহে প্রবেশ করে কালো ভেড়ার বাচ্চার ন্যায়’।[33]
মানুষ যখন ইবাদত বা ভাল কাজে লিপ্ত হয় তখন হাই উঠে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَأَمَّا التَّثَاؤُبُ: فَإِنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإِذَا قَالَ: هَا، ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ، ‘হাই উঠে শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং যথাসাধ্য সে যেন তা প্রতিহত করতে চেষ্টা করে। কারণ কেউ যদি হাই তোলে ‘হা’ বলে তবে শয়তান তা দেখে হাসতে থাকে’।[34]
অন্যত্র এসেছে, إِذَا تَثَاءَبَ أَحَدُكُمْ، فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهِ عَلَى فِيهِ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ، ‘তোমাদের কারো যদি হাই আসে তবে তার হাত দিয়ে যেন মুখ চেপে ধরে, কারণ শয়তান ভিতরে প্রবেশ করে’।[35]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, غَطُّوا الْإِنَاءَ، وَأَوْكُوا السِّقَاءَ، وَأَغْلِقُوا الْبَابَ، وَأَطْفِئُوا السِّرَاجَ، فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لَا يَحُلُّ سِقَاءً، وَلَا يَفْتَحُ بَابًا، وَلَا يَكْشِفُ إِنَاءً، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلَّا أَنْ يَعْرُضَ عَلَى إِنَائِهِ عُودًا، وَيَذْكُرَ اسْمَ اللهِ، فَلْيَفْعَلْ، فَإِنَّ الْفُوَيْسِقَةَ تُضْرِمُ عَلَى أَهْلِ الْبَيْتِ بَيْتَهُمْ، ‘তোমরা খাদ্য ও পানপাত্র ঢেকে রাখো, মশকের মুখ বন্ধ করো, প্রদীপ নিভিয়ে দাও এবং শয়নকালে ঘরের দরজা বন্ধ রাখ। কারণ শয়তান বন্ধ মশক খুলতে পারে না, বন্ধ দরজা খুলতে পারে না, ঢেকে রাখা পাত্রও খুলতে পারে না। তোমাদের কেউ যদি পাত্র ঢাকার কিছু না পায় তবে সে যেন তার উপর একটি কাঠি আড়াআড়িভাবে দিয়ে দেয় এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করে। কারণ ইঁদুর মানুষের ঘর জ্বালিয়ে দেয়’।[36]
খাবার পড়ে গেলে : খাবার সময় লোকমা পড়ে গেলে শয়তান তাতে অংশগ্রহণ করতে চায়। তাই ঐ খাবার তুলে খেতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيْءٍ مِنْ شَأْنِهِ، حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ، فَإِذَا سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمُ اللُّقْمَةُ، فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذًى، ثُمَّ لِيَأْكُلْهَا، وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ، فَإِذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ أَصَابِعَهُ، فَإِنَّهُ لَا يَدْرِي فِي أَيِّ طَعَامِهِ تَكُونُ الْبَرَكَةُ-
‘নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের সকল ভাল কাজে উপস্থিত হয় এমনকি খাদ্য খাওয়ার সময়েও। অতএব তোমাদের হাতের লোকমা যদি পড়ে যায় তবে ময়লা পরিষ্কার করে তুলে নিবে। কারণ কেউ জানে না কোন খাদ্যে বরকত রয়েছে’।[37]
মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ ‘আর তা যেন শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে’।[38]
অতএব খাবার পড়ে গেলে শয়তানের খাবার থেকে প্রতিহত করতে চাইলে তুলে খেতে হবে। তবেই শয়তান ব্যর্থ হবে। তাছাড়াও শয়তানকে কষাঘাত করতে শিক্ষা দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। নাফে‘ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) যখন ছালাত আদায় করতে তাশাহহুদে বসতেন তখন উভয় হাত উভয় হাঁটুর উপর রাখতেন এবং তার আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। তার দৃষ্টি থাকত ঐ আঙ্গুলের দিকে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَهِيَ أَشَدُّ عَلَى الشَّيْطَانِ مِنَ الْحَدِيْدِ يَعْنِي السَّبَّابَةَ ‘নিশ্চয়ই উহা লেŠহ দন্ডের আঘাতের চেয়েও শয়তানের নিকট কঠিন আঘাত। অর্থাৎ শাহাদাত আঙ্গুল।[39]
আযান দ্বারা শয়তান তাড়ানো : আযানের আওয়াজ শুনলে শয়তান পালিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الشَّيْطَانَ إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ بِالصَّلَاةِ ذَهَبَ حَتَّى يَكُونَ مَكَانَ الرَّوْحَاء، ‘যখন ছালাতের আযান দেওয়া হয় তখন শয়তান আযানের শব্দ শুনে রাওহা নামক স্থান অতিক্রম করে। (রাওহা নামক স্থানটি মদীনা থেকে ছত্রিশ মাইল দূরে অবস্থিত)।[40]
বাড়ী থেকে বের হওয়ার যিকির : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ قَالَ يَعْنِي إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ: بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، يُقَالُ لَهُ: كُفِيتَ، وَوُقِيتَ، وَتَنَحَّى عَنْهُ الشَّيْطَانُ ‘যে ব্যক্তি বাড়ী হ’তে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লা-হি তাওয়াক্কালতু ‘আল্লাল্লা-হি লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। তাকে তখন বলা হয়, (আল্লাহ তা‘আলাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, (সকল অনিষ্ট হ’তে) তুমি হিফাযত অবলম্বন করেছ। আর তার নিকট হ’তে শয়তান দূরে সরে যায়’।[41]
শয়তান অন্যকে বলতে থাকেكَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ؟ ‘ঐ ব্যক্তির সাথে কি করে পেরে উঠা সম্ভব, যাকে হেদায়াত দেওয়া হয়েছে, যার জন্য প্রভু যথেষ্ট হয়েছেন এবং যাকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে’।[42]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেন,
مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ عَشْرَ مَرَّاتٍ عَلَى إِثْرِ المَغْرِبِ بَعَثَ اللهُ لَهُ مَسْلَحَةً يَحْفَظُونَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ حَتَّى يُصْبِحَ، وَكَتَبَ اللهُ لَهُ بِهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ مُوجِبَاتٍ، وَمَحَا عَنْهُ عَشْرَ سَيِّئَاتٍ مُوبِقَاتٍ، وَكَانَتْ لَهُ بِعَدْلِ عَشْرِ رِقَابٍ مُؤْمِنَاتٍ-
‘যে ব্যক্তি মাগরিবের ছালাতের পর ১০ বার বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহ্য়ী ওয়া ইউমীতু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লী শাইয়িন কাদীর’ আল্লাহ তা‘আলা সকাল পর্যন্ত তাকে শয়তান হ’তে নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য অবশ্যম্ভাবী করার ন্যায় ১০টি পুণ্য লিখে দেন, তার ১০টি ধ্বংসাত্মক গুনাহ মুছে দেন, তার জন্য ১০টি ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ ছওয়াব প্রদান করেন’।[43]
রাগ বা ক্রোধ শয়তানের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। কারণ সুলায়মান ইবনু সারদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ)-এর সামনে দু’ব্যক্তি মারামারি করতে উদ্যত হ’ল। তাদের একজনের ভয়ানক রাগে চেহারা লাল হয়ে গেল। তখন নবী করীম (ছাঃ) তাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আমি এমন একটি কালেমা জানি যা পাঠ করলে তার ক্রোধ চলে যাবে। আর তা হ’ল أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ ‘আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[44]
তুচ্ছ অন্যায় করলেও শয়তান খুশি হয়। তাই সরাসরি শয়তানের অনুসরণ যেমন ত্যাগ করতে হবে তেমন ছোটখাট অন্যায়ও ত্যাগ করতে হবে। সুলায়মান ইবনে আহওয়াস (রহঃ) তার পিতার সূত্রে বর্ণণা করেন। তিনি বলেন, আমি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বিদায় হজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছি,أَلَا إِنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ أَيِسَ أَنْ يُعْبَدَ فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا أَبَدًا، وَلَكِنْ سَيَكُوْنُ لَهُ طَاعَةٌ فِي بَعْضِ مَا تَحْتَقِرُوْنَ مِنْ أَعْمَالِكُمْ، ‘জেনে রেখ! তোমাদের এই শহরে শয়তান নিজের জন্য ইবাদত পাওয়ার ব্যাপারে চিরকালের জন্য নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু কতগুলো কাজ যা তোমরা তুচ্ছজ্ঞানে করতে গিয়ে শয়তানের আনুগত্য করো, ফলে তাতে সে খুশি হয়’।[45]
ছোটখাট অন্যায় করলেও যেহেতু শয়তান খুশি হয় সেহেতু সকল প্রকার অন্যায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর হ’তে হবে। যেমন কঠোর ছিলেন ওমর (রাঃ)। আমাদেরও অন্যায়, অনাচার ও শয়তানী কর্মকান্ড থেকে এমন প্রতিবাদী ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন শয়তান পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মনে রাখতে হবে শয়তানের যতই শক্তি, ক্ষমতা থাকুক না কেন মুমিনের একটা ছোট দো‘আই তাকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট। সুতরাং আমরা শয়তান থেকে বাঁচতে বেশী বেশী দো‘আ করব এবং সৎকাজে মশগূল থাকব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে শয়তানের চক্রান্ত থেকে হেফাযত করুন- আমীন!
লেখক: মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম
[15]. মুসলিম হা/১৪৪।
[16]. মুসলিম হা/৭৮০।
[17]. তিরমিযী হা/১২০৮।
[18]. বুখারী হা/২৩১১।
[19]. বুখারী হা/৩২৯৩।
[20]. তিরমিযী হা/৩৩৯৩।
[21]. বুখারী হা/৩৩৭১; তিরমিযী হা/২০৬০।
[22]. তিরমিযী হা/৩৫২৮।
[23]. মুসলিম হা/২৭২৯।
[24]. তিরমিযী হা/২০৫৮।
[25]. আবূদাঊদ হা/৬।
[26]. বুখারী হা/১৪২; ইবনে মাজাহ হা/২৯৮।
[27]. তিরমিযী হা/২৪২; ইবনে মাজাহ হা/৮০৪।
[28]. আবূদাঊদ হা/৪৯৮২;ছহীহুল জামে‘ হা/২৫৮৫; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩১২৮, ৩১২৯।
[29]. বুখারী হা/১৪১; মুসলিম হা/১৪৩৪।
[30]. মুসলিম হা/২০১৮; আবূদাঊদ হা/৩৭৬৫।
[31]. মুসলিম হা/৮১।
[32]. আবূদাঊদ হা/৬৬৬।
[33]. আবূদাঊদ হা/৬৬৭।
[34]. বুখারী হা/৬২২৩।
[35]. মুসলিম হা/২৯৯৫।
[36]. মুসলিম হা/২০১২।
[37]. মুসলিম হা/২০৩৩।
[38]. মুসলিম হা/২০৩৪।
[39]. মুসনাদে আহমাদ হা/৬০০০।
[40]. মুসলিম হা/৩৮৮।
[41]. তিরমিযী হা/৩৪২৬।
[42]. আবূদাঊদ হা/৫০৯৫।
[43]. তিরমিযী হা/৩৫৩৪।
[44]. মুসলিম হা/২৬১০।
[45]. ইবনু মাজাহ হা/৩০৫৫।