মিসওয়াক সম্পর্কিত মাসআলা
মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম
পরিচিতি : খাদ্যকনা ও মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য কাঠি, ডাল বা অনুরূপ কিছু দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করাকে মিসওয়াক বলে।
মিসওয়াক করার হুকুম :
মিসওয়াক করা সুন্নাত। এমনকি ছিয়াম অবস্থায়ও দিনের প্রথম বা শেষ ভাগে যখনই হোক না কেন মিসওয়াক করলে কোন সমস্যা নেই। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মিসওয়াক করার প্রতি জোর তাকীদ প্রদান করেছেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ.
আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘মিসওয়াক হ’ল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়।[1]
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِيْ أَوْ عَلَى النَّاسِ لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহ’লে প্রত্যেক ছালাতের সাথে তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[2]
কখন মিসওয়াক করা যরূরী :
(ক) ওযূ করার সময় মিসওয়াক করা যরূরী। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ وُضُوءٍ.
আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যদি আমি আমার উম্মতের উপর কঠিন মনে না করতাম তাহ’লে প্রত্যেক ওযূর সাথে তাদেরকে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম’।[3]
(খ) মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন দীর্ঘ সময় মুখ বন্ধ থাকে, এতে মুখে গন্ধ হয়। তাই ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পরে এবং অন্য কোন সময় দীর্ঘক্ষণ মুখ বন্ধ রাখলে অথবা মুখের গন্ধ পরিবর্তন হ’লে মিসওয়াক করা যরূরী। হাদীছে এসেছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا قَامَ لِلتَّهَجُّدِ مِنَ اللَّيْلِ يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ.
হুযায়ফা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ ছালাতের জন্য উঠতেন, তখন মিসওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ পরিষ্কার করে নিতেন’।[4]
(গ) কুরআন তেলাওয়াত এবং ছালাত আদায় করার সময় মিসওয়াক করা যরূরী।
(ঘ) মসজিদে এবং বাড়িতে প্রবেশ করলে মিসওয়াক করা যরূরী। হাদীছে এসছে,
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ قُلْتُ بِأَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَبْدَأُ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ قَالَتْ بِالسِّوَاكِ.
মিকদাম ইবনে শুরাইহ (রাঃ) তাঁর পিতা হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন বাড়িতে প্রবেশ করতেন তখন তিনি কি দ্বারা কাজ আরম্ভ করতেন? আয়েশা (রাঃ) বললেন, তিনি মিসওয়াক দ্বারা আরম্ভ করতেন।[5]
কোন্ জিনিস দ্বারা করা মিসওয়াক করা সুন্নাত?
গাছের তরতাজা ডাল, যা মুখকে ক্ষত করে না এমন বস্ত্ত দ্বারা মিসওয়াক করা সুন্নাত।[6]
মিসওয়াক করার উপকারিতা :
মিসওয়াক করার মাধ্যমে আললাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। যেমনটি মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন যে, ‘মিসওয়াক হ’ল মুখ পরিষ্কারকারী এবং আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়।[7]
অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত এই কল্যাণকর কাজ ত্যাগ না করে এই সুন্নাতের বাস্তবায়ন করা। এছাড়া মিসওয়াকের আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন- মিসওয়াক করলে দাঁত মযবুত হয়, মাঢ়ি মযবুত হয়, কন্ঠ পরিষ্কার হয় এবং মনে প্রফুল্লতা আসে।
মানুষের প্রকৃতিগত সুন্নাত :
মানুষের প্রকৃতিগত সুন্নাত পাঁচটি। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : خَمْسٌ مِنَ الْفِطْرَةِ الاِسْتِحْدَادُ وَالْخِتَانُ، وَقَصُّ الشَّارِبِ وَنَتْفُ الإِبْطِ وَتَقْلِيْمُ الأَظْفَارِ.
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘ফিতরাত (অর্থাৎ মানুষের জন্মগত স্বভাব) পাঁচটি : ক্ষুর ব্যবহার করা (নাভির নিমেণ), খাতনা করা, গোঁফ খাটো করা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা ও নখ কাটা’।[8]
[1]. নাসাঈ, ‘মিসওয়াক করার প্রতি উৎসাহ প্রদান’ অনুচ্ছেদ, হা/৫; মিশকাত, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৫১, বাংলা অনুবাদ: এমদাদিয়া ২/৭৪; নাছিরুদ্দীন আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন, ইরওয়াউল গালীল ১/১০৫।
[2]. বুখারী, ‘জুমআর দিন মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৮৮৭, বাংলা অনুবাদ: তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৪১১; মিশকাত, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৪৭, বাংলা অনুবাদ: এমদাদিয়া ২/৭২।
[3]. বুখারী, ‘ছায়েমের জন্য কাঁচা বা শুকনো মিসওয়াক ব্যবহার করা’ অনুচ্ছেদ, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ২/৩০৮।
[4]. বুখারী, ‘তাহাজ্জুদের ছালাত দীর্ঘ করা’ অনুচ্ছেদ, হা/১১৩৬, বাংলা অনুবাদ: তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৫৫২।
[5]. মুসলিম, হা/২৫৩।
[6]. আল-মুলাক্ষাছুল ফিক্বহী, ১/৩৫ পৃঃ, আল-ফিক্বহুল মুয়াস্সার ১৪ পৃঃ।
[7]. নাসাঈ, ‘মিসওয়াক করার উৎসাহ প্রদান’ অনুচ্ছেদ, হা/৫, মিশকাত, ‘মিসওয়াক করা’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৫১, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া ২/৭৪, নাছিরুদ্দীন আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন, ইরওয়াউল গালীল ১/১০৫।
[8]. বুখারী, ‘গোঁফ ছাটা’ অনুচ্ছেদ, হা/৫৮৮৯, বাংলা অনুবাদ: তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৫/৪০৪।
আচ্ছালামুআলাইকুম, যানার জন্য বলছি
ব্রাশ ব্যবহার করলে কি মিসোয়াক করার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবো???
বিশেষ ভাবে জরুরি বিষয়টি!