জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি
আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। উদ্দেশ্য হল: মানুষ এক আল্লাহর দাসত্ব করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, সার্বিক জীবন একমাত্র অহীর বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করবে, রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর আদর্শকেই একমাত্র আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষে মানব জাতির জন্য ইসলামকে একমাত্র দ্বীন হিসেবে মনোনীত করে তার যাবতীয় বিধি-বিধান অহী মারফত জানিয়ে দিয়েছেন। পথ প্রদর্শক হিসেবে যুগে-যুগে নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের সম্মানিত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন জান্নাত। আর অমান্যকারীদের লাঞ্চিত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন জাহান্নাম। মৃত্যুর পরেই মানুষের অবস্থান স্থল নির্ধারিত হবে। সৎকর্মশীল হলে জান্নাতে এবং অসৎকর্মশীল হলে জাহান্নামে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। জান্নাতের সূখ যেমন- মানুষের কল্পনার বাইরে। জাহান্নামের শাস্তিও তেমনি মানুষের কল্পনার বাইরে। এ বিষয়ে আমরা কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জাহান্নামের শাস্তির স্বরূপ তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইন্শাআল্লাহ।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে সৃষ্টি করে পার্থিব জীবন পরিচালনার জন্য ভাল-মন্দ দু’টি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন এবং বান্দার প্রতিটি কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভাল কাজের প্রতিদান স্বরূপ জান্নাত এবং মন্দ কাজের প্রতিদান স্বরূপ জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। আর এটি হল অহংকারী ও পাপীদের মর্মান্তিক আবাসস্থল। চূড়ান্ত দুঃখ, ধিক্কার ও অনুতাপস্থল। যুগ যুগ ধরে দগ্ধীভূত চূড়ান্ত দাহিকাশক্তি সম্পন্ন ভয়ংকর আগুনের লেলিহান বহ্নিশিখা এই জাহান্নামের স্বরূপ ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।
জাহান্নামের অস্তিত্ব :
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর আনুগত্যশীল বান্দাদের জন্য জান্নাত ও অমান্যকারীদের জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যা বর্তমানে বিদ্যমান এবং কখনই তা ধ্বংস হবে না। তিনি মানুষ ও জ্বিন জাতি সৃষ্টি করার পূর্বেই জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তার অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন। এ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তবে মু‘তাযিলা ও ক্বাদারিয়াগণ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেন- আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন জান্নাত ও জাহান্নামকে সৃষ্টি করবেন।*১*
জাহান্নামের বিদ্যমানতা সম্পর্কে কুরআন থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা জাহান্নামকে ভয় কর যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য’ {সূরা আল-ইমরান: ১৩১}।
দ্বিতীয় দলীল : আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নাম গোপন ফাঁদ। সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রত্যাবর্তন স্থল’ {সূরা নাবা: ২১-২২}।
জাহান্নামের বিদ্যমানতা সম্পর্কে হাদীছ থেকে দলীল :
প্রথম দলীল : হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (ছা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থানস্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থানস্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থানস্থল দেখানো হয়) আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি।*২*
দ্বিতীয় দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আমি আমর ইবনু আমির ইবনে লুহাই খুযআহ্কে তার বহির্গত নাড়িভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সা-য়্যিবাহ্ উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে।*৩*
তৃতীয় দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল (ছা.)-এর সময় সূর্যগ্রহণ হল। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমিতো জান্নাত দেখছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া কায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচারণ কর, অতঃপর সে তোমার হতে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না।*৪*
চতুর্থ দলীল : অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন জান্নাত সৃষ্টি করলেন, তখন জিবরাইল (আ.)-কে বললেন, যাও, জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা এবং উহার অধিবাসীদের জন্য যেই সমস্ত জিনিস আল্লাহ তা‘আলা তৈরী করে রেখেছেন, সবকিছু দেখে আসলেন, এবং বললেন, হে আল্লাহ! তোমার ইজ্জতের কসম! যে কেহ এই জান্নাতের অবস্থা সম্পর্কে শুনবে, সে অবশ্যই উহাতে প্রবেশ করবে। (অর্থাৎ, প্রবেশের আকাঙ্খা করবে)। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের চারপার্শে কষ্টসমূহ দ্বারা বেষ্টন করে দিলেন, অতঃপর পুনরায় জিবরাইল (আ.)-কে বললেন, হে জিবরাইল! আবার যাও এবং পুনরায় জান্নাত দেখে আস। তিনি গিয়ে উহা দেখে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! এখন যা কিছু দেখলাম, উহার প্রবেশপথ যে কষ্টকর। আমার আশংকা হচ্ছে যে, কোন একজনই উহাতে প্রবেশ করবে না। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা যখন জাহান্নামকে সৃষ্টি করলেন, তখন বললেন, হে জিবরাইল! যাও, জাহান্নাম দেখে আস। তিনি দেখে এসে বলবেন, হে আল্লাহ! তোমার ইজ্জতের কসম! যে কেহ এই জাহান্নামের ভয়ংকর অবস্থার কথা শুনবে, সে কখনও উহাতে প্রবেশ করবে না। (অর্থাৎ, এমন কাজ করবে, যাতে উহা হতে বেঁচে থাকতে পারে)। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের চারপার্শে প্রবৃত্তির আকর্ষণীয় বস্তু দ্বারা বেষ্টন করলেন এবং পুনরায় জিবরাইলকে বললেন, আবার যাও এবং দ্বিতীয়বার উহা দেখে আস। তিনি গেলেন এবং এবার দেখে এসে বললেন, হে আল্লাহ! তোমরা ইজ্জতের কসম করে বলছি, আমার আশংকা হচ্ছে, একজন লোকও উহাতে প্রবেশ ব্যতীত বাকী থাকবে না।*৫*
জাহান্নামের সৃষ্টি সম্পর্কে বিরোধীদের যুক্তি ও তার জবাব
যুক্তি : যদি বর্তমানে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তা (জান্নাত ও জাহান্নাম) এবং তার অধিবাসীরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলার বাণী- তাঁর (আল্লাহ) সত্ত্বা ছাড়া সকল বস্তুই ধ্বংসশীল। {সূরা কাছাছ: ৮৮} প্রত্যেক জীবকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। {সূরা আলে-ইমরান: ৮৫} সুতরাং প্রত্যেক জিনিস যেহেতু ধ্বংস হবে, তাই পূর্বে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি হলে তা অনর্থক হয়ে যায়। আর আল্লাহ তা‘আলা অনর্থক কোন কাজ করেন না।
জবাব : আল্লাহ তা‘আলা যে সকল বস্তু সৃষ্টি করে তার ধ্বংস লিপিবদ্ধ করেছেন ক্বিয়ামতের দিন সে সকল বস্তু অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু জান্নাত ও জাহান্নামকে আল্লাহ তা‘আলা ধ্বংস করার জন্য সৃষ্টি করেননি। অনুরূপভাবে আল্লাহ্র আরশ যা জান্নাতের ছাদ হিসাবে থাকবে*৬* তাও ধ্বংস হবে না।*৭*
জাহান্নামের অবস্থান
ওলামায়ে আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামা‘আত ঐক্যমত পোষণ করেন যে, বর্তমানে জাহান্নাম সৃষ্ট অবস্থায় বিদ্যমান, পূর্বের পর্বে উল্লেখিত দলীল সমূহ যার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। কিন্তু বর্তমান অবস্থান নিয়ে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়, যা পর্যালোচনা করলে তিনটি মত পাওয়া যায়। প্রথম মত : বর্তমানে জাহান্নাম মাটির নীচে অবস্থিত। দ্বিতীয় মত : বর্তমানে তা আসমানে অবস্থিত। তৃতীয় মত : জাহান্নামের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাই অধিক জ্ঞাত যা মানুষের জ্ঞানের বাইরে। আর এই মতটিই ছহীহ। কারণ, জাহান্নামের অবস্থান সম্পর্কে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ থেকে কোন দলীল পাওয়া যায় না।
হাফেয সুয়ূতী (রহ.) বলেন, জাহান্নামের বর্তমান অবস্থান আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। আর আমার নিকটে এমন কোন অকাট্য দলীল নাই যার উপর ভিত্তি করে জাহান্নামের অবস্থান নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।*৮*
শায়খ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহ.) বলেন, জান্নাত ও জাহান্নামের নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কোন স্পষ্ট দলীল নাই। বরং তা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি ও বিশ্বজগৎ আমাদের আয়ত্তের বাইরে।*৯* আল্লামা ছিদ্দীক হাসান খান এই মতটিকেই ছহীহ মত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হাশরের দিনের ভয়াবহ অবস্থা
হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, কাফিরদেরকে হাশরের মাঠে মুখের মাধ্যমে হাঁটিয়ে উপস্থিত করা হবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! মুখের ভরে কাফিরদেরকে কিভাবে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে? তিনি বললেন, দুনিয়াতে যে সত্তা দু’পায়ের উপর হাঁটান, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন মুখের ভরে হাঁটাতে পারবেন না? তখন কাতাদাহ (রা.) বললেন, আমাদের প্রতিপালকের ইয্যতের কসম! অবশ্যই পারবেন।*১০*
অন্য হাদীছে এসেছে, আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, মানুষকে হাশরের মাঠে উঠানো হবে শূন্য পা, উলঙ্গ দেহ এবং খাৎনা বিহীন অবস্থায়। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তখন বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছা.)! তখন তাহলে পুরুষ ও নারীগণ একে অপরের দিকে তাকাবে। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, হে আয়েশা! এরকম ইচ্ছে করার চেয়ে তখনকার অবস্থা হবে অতীব সংকটময়। (কাজেই কি করে একে অপরের দিকে তাকাবে)।*১১*
জাহান্নামের স্তর
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের পাপ অনুযায়ী শাস্তি প্রদান করার জন্য জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর এবং স্তরভেদে তাপের তারতম্য সৃষ্টি করেছেন। যেমন- তিনি মুনাফিকদের স্তর উল্লেখ করে বলেছেন, ‘মুনাফিকগণ জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে’ {সূরা নিসা: ১৪৫}।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘প্রত্যেকে যা করে তদনুসারে তার স্থান রয়েছে।’ {সূরা আনআম: ১৩২}
তিনি অন্যত্র বলেন,
‘যে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছে সেকি তার মত যে আল্লাহ্র ক্রোধ নিয়ে ফিরে এসেছে? আর তার আশ্রয়স্থল জাহান্নাম এবং তা কতই না মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল। তারা আল্লাহ্র নিকট বিভিন্ন মর্যাদার। আর তারা যা করে, আল্লাহ তার ওপর সজাগ দৃষ্টি রাখেন।’ {সূরা আলে-ইমরান: ১৬২-১৬৩}।
জাহান্নামের দরজা সমূহ
জাহান্নামের দরজা মোট সাতটি যা আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই জাহান্নাম তাদের সকলেরই প্রতিশ্রুত স্থান, উহার সাতটি দরজা আছে, প্রত্যেক দরজার জন্য পৃথক পৃথক শ্রেণী আছে’ {সূরা হিজির: ৪৩-৪৪}।
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে কাছীর (রহ.) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেন, জাহান্নামের প্রত্যেক দরজায় শয়তান ইবলীসের অনুসারীদের কিছু অংশের প্রবেশের কথা লিখা আছে, তারা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, পালানোর কোন পথ থাকবে না।*১২*
প্রত্যেক জাহান্নামী তাদের আমল অনুযায়ী জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং তার নিম্নতম স্তরে অবস্থান করবে। আলী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘জাহান্নামের সাতটি দরজা আছে যা পর্যায়ক্রমে একটি অপরটির উপর অবস্থিত, সর্বপ্রথম প্রথমটি, অতঃপর দ্বিতীয়টি, অতঃপর তৃতীয়টি পূর্ণ হবে, অনরূপভাবে সবগুলো দরজাই পূর্ণ হবে’।*১৩*
এখানে দরজা বলতে স্তরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে যা একটি অপরটির উপর অবস্থিত এবং তা পর্যায়ক্রমে পূর্ণ হবে।
যখন কাফিরদেরকে জাহান্নামের নিকটে নিয়ে আসা হবে তখন তার দরজা সমূহ খুলে দেয়া হবে, অতঃপর তারা চিরস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য সেখানে প্রবেশ করবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘কাফিরদেরকে জাহান্নামের দিকে দলে দলে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, যখন তারা জাহান্নামের নিকটে উপস্থিত হবে তখন ইহার প্রবেশদ্বারগুলি খুলে দেয়া হবে এবং জাহান্নামের রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, তোমাদের নিকটে কি তোমাদের মধ্য হতে রাসূল আসেনি যারা তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের আয়াত তেলাওয়াত করত এবং এই দিনের সাক্ষাত সম্বন্ধে তোমাদেরকে সতর্ক করত? তখন তারা বলবে অবশ্যই এসেছিল। বস্তুত কাফিরদের প্রতি শাস্তির কথা আজ বাস্তবায়িত হয়েছে’ {সূরা যুমার: ৭১}।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে লক্ষ করে বলবেন, ‘জাহান্নামের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।’ {সূরা যুমার: ৭২}।
জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের পর তার দরজাসমূহ এমনভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে যা হতে বের হওয়ার কোন অবকাশ থাকবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছে, তারাই হতভাগ্য। তারা পরিবেষ্টিত হবে অবরুদ্ধ অগ্নিতে’ {সূরা বালাদ: ১৯-২০}।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে, যে অর্থ জমায় ও তা বার বার গননা করে, সে ধারণা করে যে, তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে, কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়, তুমি কি জান হুতামা কি? ইহা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে, নিশ্চয়ই ইহা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে’ {সূরা হুমাযাহ্: ১-৯}।
জাহান্নামের প্রহরী
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী নিযুক্ত করেছেন যারা আল্লাহর আদেশ পালনে সদা প্রস্তুত থাকে, কখনোই তা অমান্য করে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘হে মু’মিনগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ তাঁদেরকে যা আদেশ করেন তা পালনে। আর তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই পালন করে’ {সূরা আত-তাহরীম: ৬}।
আর জাহান্নামের প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের সংখ্যা ১৯ জন। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘আমি তাদেরকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ। তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না। ইহা গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে। সাকার-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে উনিশজন প্রহরী’ {সূরা মুদ্দাছছির: ২৬-৩০}।
আয়াতে উল্লেখিত সংখ্যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। কারণ, তারা ধারণা করে যে, এই অল্প সংখ্যক ফেরেশতার শক্তির সাথে বিপুল পরিমাণ জাহান্নামীদের বিজয়লাভ সম্ভব। কিন্তু তারা জানেনা যে, একজন ফেরেশতার শক্তি দুনিয়ার সকল মানুষের চেয়েও বেশী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী নিযুক্ত করেছি, কাফিরদের পরীক্ষাস্বরূপই আমি তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি যাতে কিতাবীদের দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে, বিশ্বাসীদের বিশ্বাস বৃদ্ধি হয় এবং বিশ্বাসীরা ও কিতাবীগণ সন্দেহ পোষণ না করে’ {সূরা মুদ্দাছছির: ৩১}।
জাহান্নামের প্রশস্ততা ও গভীরতা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অবাধ্য বান্দাদের শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যার প্রশস্ততা বিশাল এবং গভীরতা অনেক যার প্রমাণ নিম্নরূপ:
১- পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। জাহান্নামীদের সংখ্যার আধিক্য বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এর পরেও আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদেরকে বিশাল আকৃতির দেহ দান করবেন। যেমন- তাদের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান, এক কাঁধ থেকে অপর কাঁধের দুরুত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের পথ, চামড়া হবে তিন দিনের পথ পরিমান মোটা, যা জাহান্নামীদের দেহ অবয়ব অধ্যায়ে আলোচনা করব ইন্শাআল্লাহ। এতো বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তা পূর্ণ হবে না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের পাঁ জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে বলবেন: ‘সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? জাহান্নাম বলবে, আরও কিছু আছে কি?’ {সূরা ক্বাফ: ৩০}।
এই উত্তর শুনে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ পাঁ জাহান্নামের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামে অনবরত (জ্বিন-মানুষ) কে নিক্ষেপ করা হবে। তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরো অধিক কিছু আছে কি? এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ পাঁ প্রবেশ করাবেন। তখন জাহান্নামের একাংশ অপর অংশের সাথে মিলে যাবে এবং বলবে, তোমার মর্যাদা ও অনুগ্রহের কসম! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।*১৪*
২- জাহান্নামের গভীরতা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর সাথে ছিলাম। যখন তিনি একটি শব্দ শুনলেন তখন বললেন, তোমরা কি জান এটা কি? তখন আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, এটি এক খন্ড পাথর যা জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে ৭০ বছর পূর্বে, এখন পর্যন্ত সে নিচের দিকে অবতরণ করছে জাহান্নামের তলা খুজে পাওয়া অবধি। অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) একদা একটি বড় পাথর খন্ডের দিকে ইশারা করে বলেন যে, যদি এই পাথরটি জাহান্নামের কিনারা দিয়ে তার ভিতরে নিক্ষেপ করা যায়, তবে ৭০ বছরেও সে তলা পাবেনা।*১৫*
৩- জাহান্নাম এতো বিশাল যে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে টেনে আনতে বিপুল পরিমাণ ফেরেশতার প্রয়োজন হবে। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে, যার ৭০ টি লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা থাকবে, তাঁরা তা টেনে আনবে।*১৬*
৪- ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর দু’টি বিশাল সৃষ্টি চন্দ্র-সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, যার প্রমাণে বায়হাক্বীতে বর্ণিত হয়েছে: হাসান বাছরী (রহ.) বলেন, আবু হুরায়রাহ (রা.) আমাদেরকে রাসূল (ছা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে দুটি পনিরের আকৃতি বানিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন হাসান বাছরী জিজ্ঞেস করলেন, তাদের অপরাধ কি? জবাবে আবু হুরায়রাহ বললেন, আমি রাসূল (ছা.) হতে এ ব্যাপারে যা কিছু শুনেছি, তাই বর্ণনা করলাম, এই কথা শুনে হাসান বাছরী নীরব হয়ে গেলেন।*১৭*
উপরোল্লিখিত দলীল সমূহ থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে, জাহান্নামের বিশালত্ব অকল্পনীয়। কারণ এত বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন জাহান্নামী এবং পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড় সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পরেও যদি তার পেট পূর্ণ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিজের পাঁ প্রবেশ করানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে তা কত বিশাল হতে পারে তা আমাদের কল্পনার বাইরে। আল্লাহ আমাদের তা হতে রক্ষা করুন। আমীন!
জাহান্নামের জ্বালানী
মহান আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে পাথর এবং পাপিষ্ঠ কাফিরদেরকে নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফিরিশতাগণ, যারা অমান্য করেনা তা, যা আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেন। আর তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে’ {সূরা আত-তাহরীম: ৬}।
অত্র আয়াতে মানুষ বলতে কাফির-মুশরিকদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে। আর পাথর বলতে কোন প্রকারের পাথর যা আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে ব্যাবহার করবেন তা আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। তবে বলা হয়ে থাকে, ইহা ঐ সমস্ত মুর্তি, কাফির-মুশরিকরা যাদের ইবাদত করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সকলে উহাতে প্রবেশ করবে’ {সূরা আম্বিয়া: ৯৮}*১৮* কিছু সংখ্যক সালাফে ছালেহীন বলেছেন, ইহা গন্ধক পাথর যা আগুনকে প্রজ্জ্বলিত করে।*১৯*
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, এটা গন্ধক পাথর যা আগুনকে প্রজ্জ্বলিত করে, যা আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যমীন সৃষ্টির সময় সৃষ্টি করে কাফিরদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।*২০*
ইবনে রজব (রহ.) বলেন, অধিকাংশ মুফাসসিরগণ পাথর বলতে গন্ধক পাথরকে বুঝিয়েছেন যা আগুনকে প্রজ্জ্বলিত করে এবং বলা হয়ে থাকে এই আগুনে পাঁচ প্রকার শাস্তি বিদ্যমান। ১- দ্রুত আগুন প্রজ্জ্বলিতকরণ। ২- অতি দুর্গন্ধময়। ৩- অতিরিক্ত ধোঁয়া নিসৃতকরণ ৪- কঠিনভাবে শরীরের সাথে আগুনের সংযুক্তকরণ। ৫- তাপের প্রখরতা।*২১*
মানুষ আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যে সকল ব্যক্তি বা বস্তুকে মা‘বুদ হিসাবে গ্রহণ করেছে, আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জ্বালানী হিসাবে মানুষ এবং পাথরের সাথে সে সকল মা‘বুদদেরকেও জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলিতো জাহান্নামের ইন্ধন, তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে। যদি তারা ইলাহ হতো তবে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না, তাদের সকলেই তাতে (জাহান্নামে) স্থায়ী হবে’ {সূরা আম্বিয়া: ৯৮-৯৯}।
জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা এবং ধোঁয়ার আধিক্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! তারা থাকবে তীব্র গরম হাওয়া এবং প্রচন্ড উত্তপ্ত পানিতে, আর প্রচন্ড কালো ধোঁয়ার ছাঁয়ায়, যা শীতলও নয়, সুখকরও নয়’ {সূরা ওয়াকি‘আহ: ৪১-৪৪}।
অত্র আয়াত সমূহ থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিনের প্রচন্ড তাপ থেকে মানুষকে ঠান্ডা করবেন তিনটি বস্তু দ্বারা, তা হল: ১- পানি ২- বাতাস এবং ৩- ছাঁয়া, যার সামান্যটুকুও জাহান্নামীদেরকে দেয়া হবে না।
অতএব, জাহান্নামের বাতাস যা তার অধিবাসীদেরকে দেয়া হবে, তা প্রচন্ড গরম বাতাস। আর পানি যা পান করতে দেয়া হবে, তা প্রচন্ড গরম পানি। আর ছাঁয়া যা তাদেরকে আচ্ছাদন করে রাখবে, তা জাহান্নামের আগুন নিসৃত ধোঁয়ার ছাঁয়া। এগুলো জাহান্নামীদের কোন উপকারে আসবে না, বরং এগুলো তাদের অধিক শাস্তির কারণ হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘চল তিন শাখাবিশিষ্ট ছাঁয়ার দিকে, যে ছাঁয়া শীতল নহে এবং যা রক্ষা করে না অগ্নিশিখা হতে, উহা উৎক্ষেপ করবে বৃহৎ স্ফুলিংগ অট্টালিকাতুল্য, উহা পীতবর্ণ উষ্ট্রশ্রেণী সদৃশ’ {সূরা মুরসালাত: ৩০-৩৩}।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের আগুন নিসৃত ধোঁয়ার তিনটি প্রকার উল্লেখ করেছেন, ১- ছাঁয়া সদৃশ ধোঁয়া যা শীতল করে না। ২- এই ধোঁয়া জ্বলন্ত অগ্নিশিখা থেকে রক্ষা করতে পারে না। ৩- এই ধোঁয়া মোটা কালো উষ্ট্রি সদৃশ।
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি তাকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ, তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিতাবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না, ইহা তো গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে’ {সূরা মুদ্দাছছির: ২৬-২৯}।
অতএব, জাহান্নামের আগুন জাহান্নামীদের সবকিছু খেয়ে ধ্বংস করে ফেলবে। তারা সেখানে না পারবে মরতে, না পারবে বাঁচতে। জাহান্নামীদের চামড়া-মাংস পুড়িয়ে হাড্ডি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে এবং পেটের ভেতরের সবকিছু বের করে ফেলবে।
জাহান্নামের আগুনের প্রখরতা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, তোমাদের আগুন জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! জাহান্নামীদেরকে শাস্তি দেওয়ার জন্য দুনিয়ার আগুনই তো যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেন, দুনিয়ার আগুনের উপর জাহান্নামের আগুনের তাপ আরো উনসত্তর গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, প্রত্যেক অংশে তার সমপরিমাণ উত্তাপ রয়েছে।*২২*
আর জাহান্নামের আগুনের তাপ কখনো প্রশমিত হবেনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর তোমরা আস্বাদ গ্রহণ কর, আমি তো তোমাদের শাস্তিই শুধু বৃদ্ধি করব’ {সূরা নাবা: ৩০}।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যখনই উহা (জাহান্নামের আগুন) স্তিমিত হবে আমি তখনই তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব’ {সূরা বানী ইসরাঈল: ৯৭}।
যার কারণে জাহান্নামীরা কখনো সামান্যটুকু বিশ্রামের অবকাশ পাবে না এবং তাদের থেকে শাস্তির কিছুই কমানো হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সুতরাং তাদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং তারা কোন সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না’ {সূরা বাক্বারহা: ৮৬}।
ইবনে উমার (রা.)-এর স্বপ্নে জাহান্নাম দর্শন
ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর বেশ কয়েকজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর যুগে স্বপ্ন দেখতেন। অতঃপর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর কাছে তা বর্ণনা করতেন। আর রাসূলুল্লাহ (ছা.) এগুলোর ব্যাখ্যা দিতেন যা আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। আমি তখন অল্প বয়সের যুবক। আর বিয়ের পূর্বে মসজিদই ছিল আমার ঘর। আমি মনে মনে নিজেকে সম্বোধন করে বললাম, যদি তোমার মধ্যে কোন কল্যাণ থাকত তাহলে তুমি তাঁদের মত স্বপ্ন দেখতে। আমি এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বললাম, হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন যে, আমার মধ্যে কোন কল্যাণ আছে তাহলে আমাকে কোন একটি স্বপ্ন দেখান। আমি ঐ অবস্থায়ই (ঘুমিয়ে) থাকলাম। দেখলাম আমার কাছে দু’জন ফেরেশতা এসেছেন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতেই লোহার একটি করে হাতুড়ি। তারা আমাকে নিয়ে (জাহান্নামের দিকে) এগোচ্ছে। আর আমি তাঁদের দু’জনের মাঝে থেকে আল্লাহর কাছে দু’আ করছি, হে আল্লাহ! আমি জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর আমাকে দেখানো হল যে, একজন ফেরেশতা আমার কাছে এসেছেন। তাঁর হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। সে আমাকে বলল, তোমার অবশ্যই কোন ভয় নেই। তুমি খুবই ভাল লোক, যদি অধিক করে ছালাত আদায় করতে! তাঁরা আমাকে নিয়ে চলল, অবশেষে তাঁরা আমাকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় কারালেন, (যা দেখতে) কূপের মত গোল আকৃতির। আর কূপের মত এরও রয়েছে অনেক শিং। আর দু’শিং-এর মাঝখানে একজন ফেরেশতা, যার হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। আর আমি এতে কিছু লোককে (জাহান্নামে) শিকল পরিহিত দেখলাম। তাদের মাথা ছিল নিচের দিকে। কুরাইশের এক ব্যক্তিকে সেখানে আমি চিনে ফেললাম। অতঃপর তারা আমাকে ডান দিকে নিয়ে ফিরল। এ ঘটনা (স্বপ্ন) আমি হাফছাহ (রা.)-এর নিকট বর্ণনা করলাম। আর হাফছাহ (রা.) তা রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর নিকট বর্ণনা করলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, আব্দুল্লাহ তো নেককার লোক। নাফে’ (রহ.) বলেন, এরপর থেকে তিনি সর্বদা অধিক করে (নফল) ছালাত আদায় করতেন।*২৩*
নিশ্চয়ই ইহা তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে দীর্ঘায়িত স্তম্ভসমূহে’ {সূরা হুমাযাহ্: ১-৯}।
জাহান্নামের প্রহরী
মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী নিযুক্ত করেছেন যারা আল্লাহর আদেশ পালনে সদা প্রস্তুত থাকে, কখনোই তা অমান্য করে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ‘হে মু’মিনগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ তাঁদেরকে যা আদেশ করেন তা পালনে। আর তাঁরা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই পালন করে’ {সূরা আত-তাহরীম: ৬}।
আর জাহান্নামের প্রহরী হিসাবে নিয়োজিত ফেরেশতাগণের সংখ্যা ১৯ জন। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন: ‘আমি তাদেরকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ। তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিত অবস্থায় রাখবে না এবং মৃত অবস্থায়ও ছেড়ে দেবে না। ইহা গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে। সাকার-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে উনিশজন প্রহরী’ {সূরা মুদ্দাছছির: ২৬-৩০}।
আয়াতে উল্লেখিত সংখ্যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। কারণ, তারা ধারণা করে যে, এই অল্প সংখ্যক ফেরেশতার শক্তির সাথে বিপুল পরিমাণ জাহান্নামীদের বিজয়লাভ সম্ভব। কিন্তু তারা জানেনা যে, একজন ফেরেশতার শক্তি দুনিয়ার সকল মানুষের চেয়েও বেশী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমি ফেরেশতাগণকে জাহান্নামের প্রহরী নিযুক্ত করেছি, কাফিরদের পরীক্ষাস্বরূপই আমি তাদের এই সংখ্যা উল্লেখ করেছি যাতে কিতাবীদের দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে, বিশ্বাসীদের বিশ্বাস বৃদ্ধি হয় এবং বিশ্বাসীরা ও কিতাবীগণ সন্দেহ পোষণ না করে’ {সূরা মুদ্দাছছির: ৩১}।
জাহান্নামের প্রশস্ততা ও গভীরতা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর অবাধ্য বান্দাদের শাস্তি দেয়ার জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন যার প্রশস্ততা বিশাল এবং গভীরতা অনেক যার প্রমাণ নিম্নরূপ:
১- পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। জাহান্নামীদের সংখ্যার আধিক্য বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এর পরেও আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদেরকে বিশাল আকৃতির দেহ দান করবেন। যেমন- তাদের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান, এক কাঁধ থেকে অপর কাঁধের দুরুত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের পথ, চামড়া হবে তিন দিনের পথ পরিমান মোটা, যা জাহান্নামীদের দেহ অবয়ব অধ্যায়ে আলোচনা করব ইন্শাআল্লাহ। এতো বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও তা পূর্ণ হবে না। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের পাঁ জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামকে বলবেন: ‘সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, তুমি কি পূর্ণ হয়ে গেছ? জাহান্নাম বলবে, আরও কিছু আছে কি?’ {সূরা ক্বাফ: ৩০}।
এই উত্তর শুনে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ পাঁ জাহান্নামের মধ্যে প্রবেশ করাবেন। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামে অনবরত (জ্বিন-মানুষ) কে নিক্ষেপ করা হবে। তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে, আরো অধিক কিছু আছে কি? এভাবে ততক্ষণ পর্যন্ত বলতে থাকবে, যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ পাঁ প্রবেশ করাবেন। তখন জাহান্নামের একাংশ অপর অংশের সাথে মিলে যাবে এবং বলবে, তোমার মর্যাদা ও অনুগ্রহের কসম! যথেষ্ট হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।*১৪*
২- জাহান্নামের গভীরতা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর সাথে ছিলাম। যখন তিনি একটি শব্দ শুনলেন তখন বললেন, তোমরা কি জান এটা কি? তখন আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (ছা.) বললেন, এটি এক খন্ড পাথর যা জাহান্নামের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে ৭০ বছর পূর্বে, এখন পর্যন্ত সে নিচের দিকে অবতরণ করছে জাহান্নামের তলা খুজে পাওয়া অবধি। অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) একদা একটি বড় পাথর খন্ডের দিকে ইশারা করে বলেন যে, যদি এই পাথরটি জাহান্নামের কিনারা দিয়ে তার ভিতরে নিক্ষেপ করা যায়, তবে ৭০ বছরেও সে তলা পাবেনা।*১৫*
৩- জাহান্নাম এতো বিশাল যে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে টেনে আনতে বিপুল পরিমাণ ফেরেশতার প্রয়োজন হবে। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এমন অবস্থায় উপস্থিত করা হবে, যার ৭০ টি লাগাম হবে এবং প্রতিটি লাগামের সাথে ৭০ হাজার ফেরেশতা থাকবে, তাঁরা তা টেনে আনবে।*১৬*
৪- ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর দু’টি বিশাল সৃষ্টি চন্দ্র-সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, যার প্রমাণে বায়হাক্বীতে বর্ণিত হয়েছে: হাসান বাছরী (রহ.) বলেন, আবু হুরায়রাহ (রা.) আমাদেরকে রাসূল (ছা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে দুটি পনিরের আকৃতি বানিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন হাসান বাছরী জিজ্ঞেস করলেন, তাদের অপরাধ কি? জবাবে আবু হুরায়রাহ বললেন, আমি রাসূল (ছা.) হতে এ ব্যাপারে যা কিছু শুনেছি, তাই বর্ণনা করলাম, এই কথা শুনে হাসান বাছরী নীরব হয়ে গেলেন।*১৭*
উপরোল্লিখিত দলীল সমূহ থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে, জাহান্নামের বিশালত্ব অকল্পনীয়। কারণ এত বিশালাকৃতির হাজারে নয়শত নিরানব্বই জন জাহান্নামী এবং পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুণ বড় সূর্যকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পরেও যদি তার পেট পূর্ণ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিজের পাঁ প্রবেশ করানোর প্রয়োজন হয়, তাহলে তা কত বিশাল হতে পারে তা আমাদের কল্পনার বাইরে। আল্লাহ আমাদের তা হতে রক্ষা করুন। আমীন!
ক্বিয়ামতের পূর্বে কেউ স্বচক্ষে জাহান্নাম দর্শন করেছেন কি?
রাসূলুল্লাহ (ছা.) তাঁর জীবদ্দশাতেই জাহান্নামকে দেখেছেন, যেমনিভাবে তিনি জান্নাতকে দেখেছেন। যার প্রমাণে বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর সময় সূর্যগ্রহণ হল।…লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা দেখলাম, আপনি নিজের জায়গা হতে কি যেন ধরছেন, আবার দেখলাম, আপনি যেন পিছনে সরে এলেন। তিনি বললেন, আমিতো জান্নাত দেখছিলাম এবং এক গুচ্ছ আঙ্গুরের প্রতি হাত বাড়িয়েছিলাম। আমি তা পেয়ে গেলে দুনিয়া ক্বায়িম থাকা পর্যন্ত অবশ্য তোমরা তা খেতে পারতে। অতঃপর আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়, আমি আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি। আর আমি দেখলাম, জাহান্নামের অধিকাংশ বাসিন্দা নারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কী কারণে? তিনি বললেন, তাদের কুফরীর কারণে। জিজ্ঞেস করা হল, তারা কি আল্লাহর সাথে কুফরী করে? তিনি জবাব দিলেন, তারা স্বামীর অবাধ্য থাকে এবং ইহসান অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো প্রতি সারা জীবন সদাচারণ কর, অতঃপর সে তোমার হতে (যদি) সামান্য ত্রুটি পায়, তাহলে বলে ফেলে, তোমার কাছ থেকে কখনো ভাল ব্যবহার পেলাম না।*২৪*
অন্য হাদীছে এসেছে, আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ছা.) একবার সূর্যগ্রহণের ছালাত আদায় করলেন।…অতঃপর ছালাত শেষ করে ফিরে বললেন, জান্নাত আমার খুবই নিকটে এসে গিয়েছিল। এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তাহলে জান্নাতের একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একেবারে নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমি বলে উঠলাম, হে আল্লাহ আমিও কি তাদের সাথে? আমি একজন স্ত্রীলোককে দেখতে পেলাম। আবু হুরায়রাহ্ (রা.) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, একটি বিড়াল তাকে খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ স্ত্রীলোকটির এমন অবস্থা কেন? ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন, সে একটি বিড়ালকে আটকিয়ে রেখেছিল, ফলে বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত স্ত্রীলোকটি তাকে খেতেও দেয়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে আহার করতে পারে।*২৫*
অনুরূপভাবে মৃত্যুর পরে মানুষ তার বারযাখী জীবনে তাদের অবস্থান অবলোকন করবে। মুমিন ব্যক্তিগণ জান্নাত এবং কাফিরগণ জাহান্নাম অবলোকন করবেন। অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল (ছা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ মারা গেলে অবশ্যই তার সামনে সকাল ও সন্ধ্যায় তার অবস্থান স্থল উপস্থাপন করা হয়। যদি সে জান্নাতী হয়, তবে (অবস্থান স্থল) জান্নাতীদের মধ্যে দেখানো হয়। আর সে জাহান্নামী হলে, তাকে জাহান্নামীদের (অবস্থান স্থল দেখানো হয়) আর তাকে বলা হয়, এ হচ্ছে তোমার অবস্থান স্থল, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাকে পুনরুত্থিত করা অবধি।*২৬*
জাহান্নামীদের দেহের আকৃতি
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদেরকে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি দেয়ার লক্ষে তাদেরকে বিশালাকৃতির দেহ দান করবেন। যেমন- তাদের এক কাঁধ থেকে অপর কাঁধের দূরত্ব হবে দ্রুতগামী ঘোড়ার তিন দিনের পথ, এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান, চামড়া হবে তিন দিনের পথ সমতুল্য পোর বা মোটা। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) সূত্রে নবী (ছা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কাফিরের দু’কাধের মাঝের দূরত্ব একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহীর তিন দিনের ভ্রমণপথের সমান হবে।*২৭*
অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, কাফিরের এক একটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান এবং শরীরের চামড়া হবে তিন দিনের সফরের দূরত্ব পরিমাণ মোটা।*২৮*
অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন কাফিরের দাঁত হবে উহুদ পাহাড়সম বড়, রান বা উরু হবে বাইযা পাহাড়সম বিশাল এবং তার নিতম্বদেশ হবে রাবাযার মত তিন দিনের চলার পথের দূরত্ব পরিমাণ বিস্তৃত।*২৯*
অন্য হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে কাফিরের শরীরের চামড়া হবে বিয়াল্লিশ হাত মোটা, দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান এবং জাহান্নামে তার বসার স্থান হবে মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী ব্যবধান পরিমাণ।*৩০*
জাহান্নামীদের খাদ্য-পানীয় এবং পোষাক-পরিচ্ছদ
জাহান্নামীদের খাদ্য হবে যাক্কুম এবং কাঁটাযুক্ত এক প্রকার গাছ। আর পানীয় হবে রক্ত-পুঁজ মিশ্রিত গরম দূর্গন্ধময় পানি। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন, ‘তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না কাঁটাযুক্ত ফল ব্যতীত, যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবৃত্তি করবে না’ {সূরা গাশিয়া: ৬-৭}।
আয়াতে বর্ণিত (দ্বারী’ইল্) হচ্ছে এক প্রকার কাঁটাযুক্ত গাছ, যা হিজায-এ পাওয়া যায়।
উল্লেখিত খাদ্য যা জাহান্নামীগণ ভক্ষণ করবে। কিন্তু এতে তারা কোন স্বাদ অনুভব করবে না এবং শারীরিক কোন উপকারে আসবে না। অতএব, এই খাদ্য তাদেরকে শাস্তি স্বরূপ প্রদান করা হবে।
জাহান্নামীদের খাদ্য হিসাবে নির্ধারিত যাক্কুম সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই যাক্কূম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য, গলিত তামার মত তাদের উদরে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত’ {সূরা দুখান: ৪৩-৪৬}।
আর যাক্কুম-এর আকৃতি উল্লেখ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আপ্যায়নের জন্য কি ইহাই শ্রেয় না যাক্কুম বৃক্ষ? যালিমদের জন্য আমি ইহা সৃষ্টি করেছি পরীক্ষাস্বরূপ, এই বৃক্ষ উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে, ইহার মোচা যেন শয়তানের মাথা, তারা ইহা হতে ভক্ষণ করবে এবং উদর পূর্ণ করবে ইহা দ্বারা। তদুপরি তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। আর তাদের গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্জ্বলিত অগ্নির দিকে’ {সূরা ছাফফাত: ৬২-৬৮}।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘অতঃপর হে বিভ্রান্ত অস্বীকারকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাক্কুম বৃক্ষ হতে এবং উহা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে, পরে তোমরা পান করবে উহার উপর গরম পানি, আর পান করবে পিপাষিত উটের ন্যায়। ক্বিয়ামতের দিন ইহাই হবে তাদের আপ্যায়ন {সূরা ওয়াকিয়াহ: ৫১-৫৬}।
উল্লেখিত আয়াত সমূহ থেকে বুঝা যায় যে, যাক্কুম বৃক্ষ যা আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের খাদ্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন তা অতীব নিকৃষ্ট, যা উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে। আর উহার ফল দেখতে কুৎসিত যা আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের মাথা স্বদৃশ বলে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদেরকে প্রচন্ড ক্ষুধা প্রদান করবেন, আর এই ক্ষুধার্থ জাহান্নামীদের খাদ্য হিসাবে কাঁটাযুক্ত বৃক্ষ যাক্কুম প্রদান করবেন। প্রচন্ড ক্ষুধার যন্ত্রণায় যখন তারা এই যাক্কুম বৃক্ষ খাওয়ার চেষ্টা করবে তখন তাদের গলায় এমনভাবে আটকিয়ে যাবে যা নিচেও নামবে না বের হয়েও আসবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার নিকট আছে শৃংখল ও প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, আর আছে এমন খাদ্য, যা গলায় আটকিয়ে যায় এবং মর্মন্তুদ শাস্তি’ {সূরা মুযযাম্মিল: ১২-১৩}।
এমতাবস্থায় জাহান্নামীরা আল্লাহর নিকটে পানি পানের আবেদন করবে। পান করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এমন গরম পানি দান করবেন, যা জাহান্নামীরা পিপাসিত উটের ন্যায় পান করবে। অতঃপর তাদের নাড়িভুঁড়ি এমনভাবে ফুটতে থাকবে যেমনভাবে গরম তেল ফুটতে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এবং যাদেরকে (জাহান্নামী) পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিবে’ {সূরা মুহাম্মাদ: ১৫}।
অর্থাৎ যখন তারা তাদের জন্য নির্ধারিত ফুটন্ত পানি পান করবে তখন তাদের পেটের ভেতরের সবকিছুই ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে বের হয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমীন!
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের পানীয় হিসাবে নির্ধারণ করেছেন জাহান্নামীদের শরীর হতে গড়িয়ে পড়া রক্ত পুঁজ মিশ্রিত গরম তরল পদার্থ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘অতএব এই দিন সেথায় তার কোন সহৃদ থাকবে না এবং কোন খাদ্য থাকবে না ক্ষত নিঃসৃত স্রাব ব্যতীত, যা অপরাধী ব্যতীত কেহ খাবে না’ {সূরা হাক্কাহ: ৩৫-৩৭}।
তিনি আরো বলেন, ‘ইহা সীমালংঘনকারীদের জন্য। সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ। আরও আছে এইরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি’ {সূরা ছাদ: ৫৭-৫৮}।
আয়াতে বর্ণিত ফুটন্ত পানি ও পুঁজ অর্থ হলো, জাহান্নামীদের শরীর হতে গড়িয়ে পড়া রক্ত পুঁজ মিশ্রিত গরম তরল পদার্থ। অথবা বলা হয়ে থাকে যেনাকারী মহিলাদের লজ্জাস্থান হতে দুর্গন্ধযুক্ত যা বের হয় তা।
জাহান্নামীদের পানীয় হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা আরো নির্ধারণ করেছেন গরম পানি। তিনি ইরশাদ করেন: ‘এবং যাদেরকে (জাহান্নামী) পান করতে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়িভূঁড়ি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিবে’ {সূরা মুহাম্মাদ: ১৫}।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, ইহা নিকৃষ্ট পানীয় ও অগ্নি কত নিকৃষ্ট আশ্রয়’ {সূরা কাহফ: ২৯}।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের জন্য পরিণামে জাহান্নাম রয়েছে এবং প্রত্যেককে পান করানো হবে গলিত পুঁজ, যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে এবং উহা গলাধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সর্বদিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না এবং সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই থাকবে’ {সূরা ইবরাহীম: ১৬-১৭}।
অতএব, উল্লেখিত আয়াত সমূহ থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে, জাহান্নামীদের পানীয় হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা চার প্রকারের বস্তু নির্ধারণ করেছেন। যেমন:
১- গরম পানি যার উত্তপ্ততা শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার পরে অধিক গরম করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে। {সূরা আর-রাহমান: ৪৪} তিনি আরো বলেন, তাদের পান করানো হবে ফুটন্ত ঝর্ণা থেকে। {সূরা গাশিয়াহ: ৫} আয়াতে তাপের শেষ পর্যায়কে বুঝানো হয়েছে যার পরে অধিক গরম করা সম্ভব নয়।
২- জাহান্নামীদের শরীর হতে গড়িয়ে পড়া রক্ত পুঁজ মিশ্রিত গরম তরল পদার্থ। অথবা বলা হয়ে থাকে যেনাকারী মহিলাদের লজ্জাস্থান হতে দুর্গন্ধযুক্ত যা বের হয় তা।
৩- জাহান্নামীদের গোশত এবং চামড়া নিঃসৃত পুঁজ।
৪- গলিত তামা।
আর পোষাক হিসাবে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের জন্য আগুনের তৈরী পোষাক নির্ধারণ করেছেন। যেমন- তিনি বলেছেন, ‘যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোষাক, আর তাদের মাথার উপর ঢালা হবে ফুটন্ত পানি’ {সূরা হাজ্জ: ১৯}।
তিনি আরো বলেন, ‘সেই দিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃংখলিত অবস্থায়, আর তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল’ {সূরা ইবরাহীম: ৪৯-৫০}।
এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু মালেক আল-আশ‘আরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, (মৃতের জন্য) বিলাপ করে ক্রন্দনকারিণী তার মৃত্যুর পূর্বে তাওবাহ না করলে ক্বিয়ামতের দিন তাকে আলকাতরার তৈরী পোষাক এবং দস্তার তৈরী বর্ম পরিয়ে উঠানো হবে।*৩১*
জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তিলাভের ব্যর্থ চেষ্টা
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর বিভিন্ন প্রকার অত্যন্ত ভয়ংকর শাস্তি নির্ধারণ করেছেন, যা থেকে জাহান্নামীরা জীবনের সবকিছুর বিনিময়ে মুক্তিলাভের চেষ্টা করবে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যারা কুফরী করে এবং কাফিররূপে যাদের মৃত্যু ঘটে তাদের কারো নিকট হতে পৃথিবী পূর্ণ স্বর্ণ বিনিময়-স্বরূপ প্রদান করলেও তা কখনও কবুল করা হবে না। এরাই তারা যাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে, এদের কোন সাহায্যকারী নাই’ {সূরা আল-ইমরান: ৯১}।
তিনি আরো বলেন, ‘যারা কুফরী করেছে ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি হতে মুক্তি লাভের জন্য পণ-স্বরূপ দুনিয়ায় যা কিছু আছে তাদের তার সমস্তই থাকে এবং তার সহিত সমপরিমাণ আরও থাকে তবুও তাদের নিকট হতে তা গৃহীত হবে না এবং তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে’ {সূরা মায়িদা: ৩৬}।
হাদীছে এসেছে, আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে দুনিয়ার সর্বাধিক মালদার-সম্পদশালী ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে ঢুকিয়ে তোলা হবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনও আরাম-আয়েশ দেখেছ? পূর্বে কখনও তোমার নেয়ামতের সুখ অর্জিত হয়েছিল? সে বলবে, না, আল্লাহর কসম, হে পরওয়ারদেগার! (আমি কখনও সুখ ভোগ করিনি)।*৩২*
অন্য হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা কম ও সহজতর শাস্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিকে বলবেন: যদি গোটা পৃথিবী পরিমাণ সম্পদ তোমার থাকত, তাহলে তুমি কি সমূদয়ের বিনিময়ে এই আযাব হতে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করতে? সে বলবে, হাঁ, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: আদমের ঔরসে থাকাকালে এর চাইতেও সহজতর বিষয়ের আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, আমার সহিত কাউকে শরীক কর না, কিন্তু তুমি তা অমান্য করেছ এবং আমার সহিত শরীক করেছ।*৩৩*
জাহান্নামীদের শাস্তি
(ক) অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির তারতম্য :
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কোন বান্দার উপর যুলুম করবেন না, বিধায় তিনি জাহান্নামকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করেছেন এবং স্তরভেদে আযাবের তারতম্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকদের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে’ {সূরা নিসা: ১৪৫}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘এবং যেদিন ক্বিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে ফিরআউন সম্প্রদায়কে নিক্ষেপ কর কঠিন শাস্তিতে’ {সূরা মু’মিন: ৪৬}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘যারা কুফরী করে এবং আল্লাহর পথে বাধাদান করে, আমি তাদের শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করব। কারণ, তারা অশান্তি সৃষ্টি করে’ {সূরা নাহল: ৮৮}।
উল্লেখিত আয়াত সমূহ হতে প্রতীয়মাণ হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের পাপ-এর কম-বেশীর কারণে জাহান্নামের শাস্তি কম-বেশী করবেন। যার প্রমাণ এ হাদীছ, সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে কোন কোন লোক এমন হবে, জাহান্নামের আগুন তার পায়ের টাখনু পর্যন্ত পৌঁছবে। তাদের মধ্যে কারো হাঁটু পর্যন্ত আগুন পৌঁছবে, কারো কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো কারো গর্দান পর্যন্ত পৌঁছবে।*৩৪*
রাসূলুল্লাহ (ছা.) সবচেয়ে কম শাস্তি প্রাপ্ত জাহান্নামীর কথা উল্লেখ করেছেন। হাদীছে এসেছে, নু’মান ইবনু বাশীর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (ছা.)-কে বলতে শুনেছি যে, ক্বিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তির সর্বাপেক্ষা লঘু আযাব হবে, যার দু’পায়ের তলায় দু’টি প্রজ্জ্বলিত আঙ্গার রাখা হবে। এতে তার মগয টগবগ করে ফুটতে থাকবে। যেমন- ডেক বা কলসী ফুটতে থাকে।*৩৫*
অন্য হাদীছে এসেছে, নু’মান ইবনু বাশীর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তি ঐ ব্যক্তির হবে, যাকে আগুনের ফিতাসহ দু’খানা জুতা পরান হবে, এতে তার মগয এমনভাবে ফুটতে থাকবে, যেমনভাবে তামার পাত্র ফুটতে থাকে। সে ধারণা করবে, তার অপেক্ষা কঠিন আযাব কেহ ভোগ করছে না, অথচ সে হবে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি।*৩৬*
আর সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি হবেন রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর চাচা আবু ত্বালেব। এ মর্মে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আবু সা’ঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ছা.)-কে বলতে শুনেছেন, যখন তাঁর কাছে তাঁর চাচা আবু ত্বালিব সম্পর্কে উল্লেখ করা হল। তখন তিনি বললেন, ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা’আত সম্ভবত তাঁর উপকারে আসবে। আর তখন তাকে জাহান্নামের অগ্নিতে রাখা হবে যা পায়ের গিরা পর্যন্ত পৌঁছবে। তাতে তার মাথার মগয টগবগ করে ফুটতে থাকবে।*৩৭*
(খ) জাহান্নামীদের গাত্রচর্ম দগ্ধকরণ :
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের তিন দিনের পথ সমপরিমাণ পোর বা মোটা চামড়াকে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে উনসত্তর গুণ বেশী তাপ সম্পন্ন জাহান্নামের আগুন দ্বারা ভাজা-পোড়া করবেন। চামড়া পুড়ে ছাই হয়ে গেলে পুনরায় নতুন চামড়া তৈরী করে পোড়াবেন। এইভাবে অনবরত পোড়াতে থাকবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যারা আমার আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করে তাদেরকে অগ্নিতে দগ্ধ করবই, যখনই তাদের চর্ম দগ্ধ হবে তখনই তার স্থলে নতুন চর্ম সৃষ্টি করব, যাতে তারা শাস্তি ভোগ করে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ {সূরা নিসা: ৫৬}।
(গ) মাথায় গরম পানি ঢেলে শাস্তি প্রদান :
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের মাথার উপর এমন গরম পানি ঢেলে শাস্তি প্রদান করবেন যার পরে অধিক গরম করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা কুফরী করে তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আগুনের পোষাক, আর তাদের মাথার উপর ঢালা হবে ফুটন্ত পানি, যা দ্বারা তাদের পেটে যা আছে তা এবং তাদের চর্ম বিগলিত করা হবে’ {সূরা হাজ্জ: ১৯-২০}।
হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, জাহান্নামীদের মাথায় গরম পানি ঢালা হবে, এমনকি তা পেটের মধ্যে প্রবেশ করবে, ফলে পেটের ভিতরে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু বিগলিত হয়ে পায়ের দিক দিয়ে নির্গত হবে। পুনরায় তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে (পুনরায় উহা ঢালা হবে এমনিভাবে শাস্তিও প্রক্রিয়া চলতে থাকবে)।*৩৮*
(ঘ) মুখমণ্ডল দগ্ধকরণ :
আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে মানুষকে একমাত্র তার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষের শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা মুখমণ্ডলকে দান করেছেন সর্বাপেক্ষা বেশী মর্যাদা। যার কারণে রাসূলুল্লাহ (ছা.) মুখমণ্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু যারা আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন না করে তাঁর নাফরমানী করবে তাদের মুখমণ্ডলের মর্যাদাকে ধুলায় ধুসরিত করে সর্বপ্রথম মুখমণ্ডলকেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যে কেহ অসৎকর্ম নিয়ে আসবে, তাকে অধোমুখে নিক্ষেপ করা হবে অগ্নিতে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে’ {সূরা নামল: ৯০}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘হায়! যদি কাফিরেরা সেই সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাৎ হতে অগ্নি প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না’ {সূরা আম্বিয়া: ৩৯}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘অগ্নি তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা তথায় থাকবে বীভৎস চেহারায়’ {সূরা মু’মিনুন: ১০৪}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘তাদের জামা হবে আলকাতরার এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল’ {সূরা ইবরাহীম: ৫০}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন তার মুখমণ্ডল দ্বারা কঠিন শাস্তি ঠেকাতে চাইবে, সে কি তার মত যে নিরাপদ? সীমালংঘনকারীদেরকে বলা হবে, তোমরা যা অর্জন করতে তার শাস্তি আস্বাদন কর’ {সূরা যুমার: ২৪}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘যেদিন তাদের মুখমণ্ডল অগ্নিতে উলট পালট করা হবে সে দিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম এবং রাসূলের আনুগত্য করতাম’! {সূরা আহযাব: ৬৬}।
জাহান্নামীদের মুখমণ্ডল মাটিতে রেখে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের কঠিন শাস্তি দেয়ার জন্য তাদের মুখমণ্ডল মাটিতে রেখে এবং পাঁ উপর দিকে উঠিয়ে তাদের গলায় বেড়ি ও শৃংখলিত করে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যারা অস্বীকার করে কিতাব ও যা সহ আমার রাসূলকে প্রেরণ করেছি তা, শীঘ্রই তারা জানতে পারবে যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃংখলিত থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে অগ্নিতে’ {সূরা মু’মিন: ৭০-৭২}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় অন্ধ, মুক ও বধির করে। আর তাদের আবাস স্থল জাহান্নাম, যখনই উহা স্তিমিত হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নিশিখা বৃদ্ধি করে দেব’ {সূরা বানী ইসরাইল: ৯৭}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘অপরাধীরা বিভ্রান্ত ও বিকারগ্রস্ত, যেদিন তাদেরকে উপুড় করে মুখের উপর ভর করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহান্নামের দিকে, সে দিন বলা হবে, জাহান্নামের যন্ত্রণা আস্বাদন কর’ {সূরা ক্বামার: ৪৭-৪৮}।
হাদীছে এসেছে, আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত, (রাসূলুল্লাহ বললেন, কাফিরদেরকে হাশরের মাঠে মুখের মাধ্যমে হাঁটিয়ে উপস্থিত করা হবে) তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল! মুখের ভরে কাফিরদেরকে কিভাবে হাশরের ময়দানে উঠনো হবে? তিনি বললেন, দুনিয়াতে যে সত্তা দু’পায়ের উপর হাঁটান, তিনি কি ক্বিয়ামতের দিন মুখের ভরে হাঁটাতে পারবেন না? তখন ক্বাতাদাহ (রা.) বললেন, আমাদের প্রতিপালকের ইয্যতের কসম! অবশ্যই পারবেন।*৩৯*
জাহান্নামীদের কুৎসিত চেহারা
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদের এমন কালো কুৎসিত চেহারায় পরিণত করবেন, যেন তা অন্ধকার রাত্রি সমতুল্য।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘সেদিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে এবং কতক মুখ কালো হবে, যাদের মুখ কালো হবে তাদেরকে বলা হবে, ঈমান আনয়নের পর কি তোমরা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিলে? সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর, যেহেতু তোমরা সত্য প্রত্যাখ্যান করতে’ {সূরা আল-ইমরান: ১০৬}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘যারা মন্দ কাজ করে তাদের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ এবং তাদেরকে হীনতা আচ্ছন্ন করবে, আল্লাহ হতে তাদেরকে রক্ষা করার মত কেউ নাই, তাদের মুখমণ্ডল যেন রাত্রির অন্ধকার আস্তরণে আচ্ছাদিত। তারা অগ্নির অধিবাসী, সেথায় তারা স্থায়ী হবে’ {সূরা ইউনুস: ২৭}।
জাহান্নামীরা আবদ্ধ থাকবে আগুনের বেষ্টনীতে
কাফিরগণ যারা জাহান্নামের চিরস্থায়ী অধিবাসী, তাদের পাপ যেমন তাদেরকে বেষ্টন করে আছে, তেমনি জাহান্নামের আগুন তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ধরবে। সেখান থেকে তাদের পালানোর কোনই পথ থাকবে না। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা ইহুদীদের কথার জবাবে বলেন, ‘হাঁ, যারা পাপকার্য করে এবং যাদের পাপরাশি তাদেরকে পরিবেষ্টন করে তারাই অগ্নিবাসী। সেখানে তারা স্থায়ী হবে’ {সূরা বাক্বারাহ: ৮১}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘তাদের শয্যা হবে জাহান্নামের এবং তাদের উপরের আচ্ছাদনও (হবে জাহান্নামের)’ {সূরা আ‘রাফ: ৪১}। অর্থাৎ জাহান্নামের আগুন জাহান্নামীদের উপর এবং নীচ হতে আচ্ছাদন করবে।
যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘সেদিন শাস্তি তাদেরকে আচ্ছাদন করবে উপর এবং পাঁয়ের নীচ হতে এবং তিনি বলবেন, তোমরা যা করতে তার স্বাদ গ্রহণ কর’ {সূরা আনকাবুত: ৫৫}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘তাদের জন্য থাকবে তাদের উপর দিকে অগ্নির আচ্ছাদন এবং নীচের দিকেও আচ্ছাদন’ {সূরা যুমার: ১৬}।
অতএব জাহান্নামীগণ তাদের চতুর্দিক হতে আগুন দ্বারা বেষ্টিত থাকবে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে বেষ্টন করে আছে’ {সূরা তাওবা: ৪৯}।
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘আমি সীমালংঘনকারীদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর ন্যায় পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে; ইহা নিকৃষ্ট পানীয় ও অগ্নি কত নিকৃষ্ট আশ্রয়’ {সূরা কাহফ: ২৯}।
জাহান্নামের আগুন জাহান্নামীদের হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে
পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, জাহান্নামীগণ দেহ অবয়বে বিশালাকৃতির অধিকারী হবে। এই বিশালাকৃতির দেহ জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে। এমনকি হৃৎপিণ্ড পর্যন্ত আগুন পৌঁছে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আমি তাকে নিক্ষেপ করব সাকার-এ, তুমি কি জান সাকার কি? উহা তাদেরকে জীবিতাবস্থায় রাখবে না ও মৃত অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। ইহা তো গাত্রচর্ম দগ্ধ করবে’ {সূরা মুদ্দাছছির: ২৬-২৯}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়, তুমি কি জান, হুতামা কি? ইহা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন, যা হৃদয়কে গ্রাস করবে’ {সূরা হুমাযাহ: ৪-৭}।
অতএব, আগুন জাহান্নামীদের হাড্ডি, মাংস, মস্তিষ্ক সব খেয়ে ফেলবে, তবুও তারা মৃত্যুবরণ করবে না। যখনই আগুন দেহের সবকিছু খেয়ে ফেলবে তখনই পুনরায় নতুনভাবে সৃষ্টি করা হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এইভাবে অনবরত শাস্তি চলতে থাকবে। আল্লাহ আমাদের তা থেকে হেফাযত করুন। আমীন!
জাহান্নামীরা তাদের নাড়িভুঁড়ির চারপাশে গাধার ন্যায় ঘুরতে থাকবে
জাহান্নামীদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন তাদের পেট হতে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর তারা তাদের নাড়িভুঁড়ির চারপার্শ্বে গাধার ন্যায় ঘুরতে থাকবে, যেমন- গাধা চাকা ঘুরিয়ে গম পিষে থাকে।
হাদীছে এসেছে, উসামাহ ইবনে যাইদ রাসূলুল্লাহ (ছা.) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন আগুনে পুড়ে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। এ সময় সে ঘুরতে থাকবে যেমন- গাধা তার চাকা নিয়ে তার চারপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামবাসীরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না আমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতে আর অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতে? সে বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎ কাজের আদেশ করতাম বটে, কিন্তু আমি তা করতাম না আর আমি তোমাদেরকে অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করতাম, অথচ আমিই তা করতাম।*৪০*
আর যারা জাহান্নামের মধ্যে তাদের নাড়িভুঁড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকবে তাদের মধ্যে একজন হল আমর ইবনু লুহাই, যে সর্বপ্রথম আরবে দ্বীনের পরিবর্তন ঘটিয়েছিল।
এ সম্পর্কে হাদীছে উল্লেখিত হয়েছে, আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছা.) বলেছেন, আমি আমর ইবনু আমির ইবনে লুহাই খুযআহ্কে তার বহির্গত নাড়িভুঁড়ি নিয়ে জাহান্নামের আগুনে চলাফেরা করতে দেখেছি। সেই প্রথম ব্যক্তি যে সা-য়্যিবাহ্ উৎসর্গ করার প্রথা প্রচলন করে।*৪১*
জাহান্নামীদেরকে গলায় লোহার শিকল দিয়ে আগুনের মধ্যে বেঁধে রাখা হবে
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামবাসীদেরকে তাদের গলায় লোহার শিকল দিয়ে এমনভাবে বেঁধে রাখবেন, যেখান থেকে তারা পালাতে পারবে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আমি অকৃতজ্ঞদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি শৃংখল, বেড়ী ও লেলিহান অগ্নি’ {সূরা দাহার: ৪}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘আমার নিকট আছে শৃংখল, প্রজ্জ্বলিত অগ্নি, আর আছে এমন খাদ্য যা গলায় আটকিয়ে যায় এবং মর্মন্তুদ শাস্তি’ {সূরা মুযযাম্মিল: ১২-১৩}।
আয়াতে বর্ণিত হয়েছে বেড়ীর কথা, যা গলায় পরানো হয়। যেমন- পশুর গলায় বেড়ি পরানো হয়। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আমি কাফিরদের গলদেশে শৃংখল পরাব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে’ {সূরা সাবা: ৩৩}।
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ‘যখন তাদের (জাহান্নামীদের) গলদেশে বেড়ি ও শৃংখল থাকবে, আর উহাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে’ {সূরা মু’মিন: ৭১}।
উক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছে শৃংখলিত করা বা বেঁধে রাখা সম্পর্কে। যেমন- পশুকে বেঁধে রাখা হয়।
আর জাহান্নামীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা প্রস্তুত রেখেছেন লোহার আকড়শি। জাহান্নামের কঠিন যন্ত্রণা-কাতর হয়ে যখন জাহান্নামীগণ তা হতে বের হওয়ার চেষ্টা করবে তখন এই আকড়শিগুলো তাদেরকে টেনে জাহান্নামের তলদেশে নিক্ষেপ করবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘এবং উহাদের জন্য থাকবে লোহার মুদগর। যখনই উহারা যন্ত্রণা-কাতর হয়ে জাহান্নাম হতে বের হতে চাইবে তখনই তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে উহাতে, আর তাদেরকে বলা হবে, আস্বাদন কর দহন যন্ত্রণা’ {সূরা হজ্জ: ২১-২২}।
জাহান্নামীরা এবং তাদের মা‘বুদরা একত্রে জাহান্নামে অবস্থান করবে
কাফির-মুশরিকগণ আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যেই মা‘বুদদের সম্মান করে, তাদের ইবাদত করে এবং তাদের পথেই নিজেদের জান-মাল বিলিয়ে দেয়। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এবং তাদের ইবাদতকারীদেরক এক সঙ্গে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে তাদের অপমানিত ও লাঞ্চিত করবেন এবং তাদের অক্ষমতা প্রমাণ করবেন। তখন তারা জানতে পারবে যে, তারা দুনিয়াতে ছিল পথভ্রষ্ট এবং তারা এমন কিছুর ইবাদত করত যারা কোন উপকার বা ক্ষতি কিছুই করতে সক্ষম নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমরা এবং আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন, তোমরা সকলেই উহাতে প্রবেশ করবে, যদি উহারা ইলাহ হতো তাহলে উহারা জাহান্নামে প্রবেশ করতনা, তাদের সকলেই উহাতে স্থায়ী হবে’ {সূরা আম্বিয়া: ৯৮-৯৯}।
ইবনে রজব (রহ.) বলেছেন, কাফিরগণ যখন আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্য কোন মা’বুদের ইবাদত করে, আর বিশ্বাস করে তারা তাদের জন্য আল্লাহর নিকট শাফা’আত করবে এবং তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী করবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা কাফির এবং তাদের মা‘বুদগণকে এক সঙ্গে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে তাদের অপমানিত ও লাঞ্চিত করবেন। আর তারা যাদের কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে তারা পরষ্পরে জাহান্নামের শাস্তির সঙ্গী হয়ে তীব্র ব্যাথা অনুভব করবে এবং আফসোস করতে থাকবে।*৪২*
আর এই কারণেই আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন চন্দ্র এবং সূর্য-এর ইবাদতকারীদের ভর্ৎসনা করার জন্য এতদ্ব উভয়কে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। হাদীছে এসেছে, হাসান বাছরী (রহ.) বলেন, আবু হুরায়রাহ (রা.) আমাদেরকে রাসূল (ছা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্রকে দুটি পনিরের আকৃতি বানিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তখন হাসান বাছরী জিজ্ঞেস করলেন, তাদের অপরাধ কি? জবাবে আবু হুরায়রাহ বললেন, আমি রাসূল (ছা.) হতে এ ব্যাপারে যাকিছু শুনেছি, তাই বর্ণনা করলাম, এই কথা শুনে হাসান বাছরী নীরব হয়ে গেলেন।*৪৩*
অতএব, জাহান্নামীদেরকে কঠিন শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন শয়তানগণ অর্থাৎ তারা যাদের ইবাদত করত তাদের সাথে এক সঙ্গে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয় আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান, অতঃপর সেই হয় তার সহচর। শয়তানরাই মানুষকে সৎপথ হতে বিরত রাখে, অথচ মানুষ মনে করে তারা সৎপথে পরিচালিত হচ্ছে। অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে শয়তানকে বলবে, হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকত। কত নিকৃষ্ট সহচর সে। আর আজ তোমাদের এই অনুতাপ তোমাদের কোন কাজে আসবে না, যেহেতু তোমরা সীমালংঘন করেছিলে, তোমরা তো সকলেই শাস্তিতে শরীক’ {সূরা যুখরুফ: ৩৬-৩৯}।
*১* ড: ওমর সুলাইমান আব্দুল্লাহ আল-আশক্বার, আল-জান্নাহ্ ওয়ান নার, দারুস সালাম, পৃঃ ১৩।
*২* বুখারী, ‘মৃত ব্যক্তির সম্মুখে সকাল ও সন্ধ্যায় (জান্নাত ও জাহান্নাম তার আবাস স্থল) পেশ করা’ অধ্যায়, হা/১৩৭৯, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ২/৭২, মুসলিম, হা/২৮৬৬।
*৩* বুখারী, ‘খুযা’আহ গোত্রের কাহিনী’ অধ্যায়, হা/৩৫২১, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৩/৪৭৬।
*৪* বুখারী, ‘সূর্যগ্রহণ-এর সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা’ অধ্যায়, হা/১০৫২, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৪৯১, মুসলিম, হা/৯০৭।
*৫* আবু দাউদ, হা/৪৭৪৬, তিরমিযী, হা/২৫৬০, নাসাঈ, হা/৩৭৬৩, মিশকাত, হা/৫৪৫২, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৭২।
*৬* তিরমিযী, হা/২৫৩১, তাহক্বীক: ছহীহ, নাছেরুদ্দীন আলবানী, মাকতাবাহ মা‘আরেফ, রিয়াদ ছাপা, পৃঃ ৫৭০।
*৭* ড: ওমর সুলাইমান আব্দুল্লাহ আল-আশক্বার, আল-জান্নাহ্ ওয়ান নার, দারুস সালাম, পৃঃ ১৮।
*৮* ছিদ্দীক হাসান খান, ইয়াক্বযাতু উলিল ই‘তিবার মিম্মা ওরাদা ফী যিকরিল জান্নাতি ওয়ান নার, দারুল আনছার ছাপা, আল-ক্বাহেরাহ, প্রথম প্রকাশ ১৩৯৮ হিজরী ও ১৯৭১ খৃষ্টাব্দ, পৃঃ ৪৭।
*৯* ঐ।
*১০* বুখারী, ‘হাশরের অবস্থা কেমন হবে’ অধ্যায়, হা/৬৫২৩, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৫২।
*১১* বুখারী, ‘হাশরের অবস্থা কেমন হবে’ অধ্যায়, হা/৬৫২৭, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৫৩।
*১২* তাফসীর ইবনে কাছীর, দারুল আন্দালুস ছাপা, বৈরূত, ৪/১৬৪।
*১৩* তাফসীর ইবনে কাছীর, দারুল আন্দালুস ছাপা, বৈরূত, ৪/১৬৪।
*১৪* বুখারী, ‘আল্লাহর ইযযত, গুণাবলী ও কালেমাসমূহের কসম করা’ অধ্যায়, হা/৬৬৬১, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ৬/১১৪, মুসলিম, হা/২৮৪৮, মিশকাত, হা/৫৪৫১, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৭২।
*১৫* মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ‘আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামীদের জন্য যা প্রস্তুত রেখেছেন’ অধ্যায়, হা/৩৫২৮৪, ছহীহ আল-জামে’ আছ-ছাগীর, হা/৫২১৪।
*১৬* মুসলিম, ‘জাহান্নামের আগুনের তাপের প্রখরতা’ অধ্যায়, হা/২৮৪২, মিশকাত, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৬০, হা/৫৪২২।
*১৭* সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ, ১/৩২, হা/১২৪, মিশকাত, হা/৫৪৪৮, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৬৯।
*১৮* তাফসীর ইবনে কাছীর, তাহক্বীক: আব্দুর রায্যাক মাহদী, দারুল কিতাবিল আরাবী, ৬/২৫৯।
*১৯* ঐ।
*২০* ঐ।
*২১* আত-তাখবীফ মিনান নার, ইবনে রজব, মাকতাবাহ ইলমিয়্যাহ, বৈরূত, পৃঃ ১০৭।
*২২* বুখারী, ‘জাহান্নামের বিবরণ আর তা হচ্ছে সৃষ্ট বস্তু’ অধ্যায়, হা/৩২৬৫, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ৩/৩৪৬, মিশকাত, হা/৫৪২১ বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৬০।
*২৩* বুখারী, ‘স্বপ্নে নিরাপদ মনে করা ও ভীতি দূর হতে দেখা’ অধ্যায়, হা/৭০২৮-৭০২৯, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৩০৯, মুসলিম, হা/২৪৭৯।
*২৪* বুখারী, ‘সূর্যগ্রহণ-এর সালাত জামা‘আতের সঙ্গে আদায় করা’ অধ্যায়, হা/১০৫২, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ১/৪৯১, মুসলিম, হা/৯০৭।
*২৫* বুখারী, ‘তাকবীরে তাহরীমার পরে কি পড়বে’ অধ্যায়, হা/৭৪৫,২৩৬৪, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ১/৩৪৫।
*২৬* বুখারী, ‘মৃত ব্যক্তির সম্মুখে সকাল ও সন্ধ্যায় (জান্নাত ও জাহান্নাম তার আবাস স্থল) পেশ করা’ অধ্যায়, হা/১৩৭৯, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ২/৭২. মুসলিম, হা/২৮৬৬।
*২৭* বুখারী, ‘জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ’ অধ্যায়, হা/৬৫৫১, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৬৪।
*২৮* মুসলিম, হা/৭৩৬৪, মিশকাত, ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বর্ণনা’ অধ্যায়, হা/৫৪২৮, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৬২।
*২৯* তিরমিযী, ‘জাহান্নামীদের বিশালাকৃতি’ অধ্যায়, তাহক্বীক আলবানী, হা/২৫৭৮, মিশকাত, ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বর্ণনা’ অধ্যায়, হা/৫৪৩০, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া ১০/১৬৩।
*৩০* তিরমিযী, ‘জাহান্নামীদের বিশালাকৃতি’ অধ্যায়, তাহক্বীক আলবানী, হা/২৫৭৭, মিশকাত, ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বর্ণনা’ অধ্যায়, হা/৫৪৩১, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া ১০/১৬৩।
*৩১* মুসলিম, ‘অতিরিক্ত বিলাপকারী’ অধ্যায়, হা/২২০৩, রিয়াযুছ ছালেহীন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা হারাম’ অনুচ্ছেদ, হা/১৬৬৪, বাংলা অনুবাদ, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা, ৪/১৩১।
*৩২* মুসলিম, হা/৭২৬৬, মিশকাত, ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসিদের বর্ণনা’ অধ্যায়, হা/৫৪২৫, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া ১০/১৬১।
*৩৩* বুখারী, ‘জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ’ অধ্যায়, হা/৬৫৫৭, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৬৫।
*৩৪* মুসলিম, হা/৭৩৪৯, মিশকাত, ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসিদের বর্ণনা’ অধ্যায়, হা/৫৪২৭, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৬২।
*৩৫* বুখারী, ‘জান্নাত ও জাহান্নামের বিবরণ’ অধ্যায়, হা/৬৫৬২, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৬৭।
*৩৬* মুসলিম, ‘জাহান্নামীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সহজতর শাস্তি’ অধ্যায়, হা/৫৩৯, মিশকাত, ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসিদের বর্ণনা’ অধ্যায়, হা/৫৪২৩, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া ১০/১৬১।
*৩৭* বুখারী, ‘আবু তালেবের কিছ্ছা’ অধ্যায়, হা/৩৮৮৫, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৩/৬২৮।
*৩৮* তিরমিযী, ‘জাহান্নামের বিবরণ’ অধ্যায়, হা/২৫২০, মিশকাত, ‘জাহান্নাম ও তার অধিবাসীদের বর্ণনা’ অধ্যায়, হা/৫৪৩৫, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া ১০/১৬৪।
*৩৯* বুখারী, ‘হাশরের অবস্থা কেমন হবে’ অধ্যায়, হা/৬৫২৩, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৬/৫২।
*৪০* বুখারী, ‘জাহান্নামের বিবরণ আর তা হচ্ছে সৃষ্ট বস্তু’ অধ্যায়, হা/৩২৬৭, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৩/৩৪৬।
*৪১* বুখারী, ‘খুযা’আহ গোত্রের কাহিনী’ অধ্যায়, হা/৩৫২১, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৩/৪৭৬।
*৪২* হাফেয আবুল ফারজ ইবনুল জাওযী, আত-তাখবীফ মিনান নার ওয়াত তা‘রীফ বিদ্বারে আহলিল বাওয়ার, আল-মাকতাবাহ্ আল-ইলমিয়্যা, বৈরূত, পৃঃ ১০৫।
*৪৩* সিলসিলাতুল আহাদীছিছ ছহীহাহ, ১/৩২, হা/১২৪, মিশকাত, হা/৫৪৪৮, বাংলা অনুবাদ, এমদাদিয়া, ১০/১৬৯।