দ. এশিয়ার প্রথম মসজিদটি বাংলাদেশে!
ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসার শুরু হয়েছিল ১২০০ শতকে। কিন্তু নতুন একটি প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের ফলে ইতিহাসটা নতুন করেই লিখতে হতে পারে। সম্প্রতি শৌখিন এক ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ রংপুরের রামজাপুর নামের গ্রামে পেয়েছেন এমন এক মসজিদের ধ্বংসাবশেষ, যেটি সপ্তম শতকে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সত্যতা প্রমাণিত হলে এটিই হয়তো হবে দক্ষিণ এশিয়ায় নির্মিত প্রথম মসজিদের নিদর্শন। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বলা যাবে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই বা তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল ইসলাম ধর্ম। কিন্তু এ ধরনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অবহেলায় থেকে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমার বাইরে। কখনো কখনো অর্থের লোভে দেশীয় অনেক মূল্যবান প্রত্নসম্পদ বহির্বিশ্বে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে আল জাজিরার একটি প্রতিবেদন থেকে।
রামজাপুরের গ্রামটিতে নতুন একটি মসজিদ বানাতে গিয়েই গ্রামবাসী খুঁজে পান সপ্তম শতকের এই মসজিদটি। খোঁড়াখুঁড়ির পরে সেখান থেকে পাওয়া যায় অনেক প্রাচীন ধনসম্পদ ও ইসলাম-সংশ্লিষ্ট নৃতাত্ত্বিক নিদর্শন। পবিত্র কোরআনের বাণী সংবলিত একটি পাথরও পাওয়া যায় এখানে। শৌখিন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ টিম স্টিল এই নতুন আবিষ্কারটিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যদি এটা প্রমাণ করতে পারি, তাহলে হয়তো এটাই হবে দক্ষিণ এশিয়ায় নির্মিত প্রথম মসজিদ। শোনা যায়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনকালে ভারতের কেরালা ও চীনে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ নেই। আর আমরা এখানে একটা মসজিদ খুঁজে পেয়েছি, সেটার কথা কেউ দাবি করেনি, কিন্তু এটা সত্যিকারের একটা প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ। আর এটা নির্মাণ করা হয়েছিল সপ্তম শতকে। মহানবীর জীবদ্দশার কাছাকাছি সময়ে।’ এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে বলে জানান এলাকাবাসী। রমজাপুরের বয়োবৃদ্ধ এক ব্যক্তি বলেন, ‘এখানে যত কিছু পাওয়া গিয়েছিল, সবই কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেছে। আমরা এগুলোর কথা আর পরে কখনো শুনতে পাইনি।’ স্থানীয় একটি জাদুঘরে এসব নিদর্শনের খোঁজ করতে গেলে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি আল জাজিরার প্রতিনিধিকে।
ইন্টারনেটে একটু অনুসন্ধানের পর অনুমান করা যায়, কেন কর্তৃপক্ষ এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে কোনো আলাপ করতে চায় না। এ ধরনের মূল্যবান নিদর্শন কেনাবেচা করা হয় ইন্টারনেটে। এমন বেশকিছু ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, মিউজিয়ামের অনেক প্রত্নসম্পদ, যেগুলো ইন্টারনেটে বিক্রি করা হয়েছে সেগুলোর প্রাপ্তিস্থান বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি আল জাজিরার প্রতিনিধি।
ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ টিম স্টিল বিশ্বাস করেন, রংপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম রমজাপুরের এই মসজিদে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নসম্পদ। এ ধরনের প্রত্নসম্পদ খুঁজে বের করা ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারকে ১২০ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। এখানকার কাদামাটি প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁড়াখুঁড়ির জন্যও আদর্শ স্থান। কিন্তু স্থানীয় গ্রামবাসীর কোনো আস্থা নেই কর্তৃপক্ষের ওপর। কেউ বিশ্বাসও করে না যে সরকার এই স্থানটার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বুঝে কোনো কাজ করবে। তার পরও তাঁরা সযত্নে রক্ষা করে যাচ্ছে প্রত্নতাত্ত্বিক এই স্থানটিকে। কারণ, তাঁদের কাছে এটা খুবই পবিত্র একটা স্থান।
সূত্র: প্রথম আলো